চোখ চকচক করে উঠলো কিশোরের। ছুরি তার খুব পছন্দ। ওয়েস্টান কাউবয়দের জিনিস শুনে লোভ সামলাতে পারলো না। তাড়াতাড়ি পয়সা বের করে দিলো রবির হাতে। রাইফেল তুলে নিলো।
পাঁচটা ফেলতে হবে কিন্তু, মনে করিয়ে দিলো রবি।
পর পর দুটো হাঁস ফেললো কিশোর। পরের তিনটে মিস করলো। একবারের বেশি সুযোগ দেয়ার নিয়ম নেই, মুখ কালো করে সরে দাঁড়ালো সে।
আমি দেখি তো, রবিন এগিয়ে এলো। পয়সা দিয়ে রাইফেল তুলে নিলো। ছুরিটা পেলে কিশোরকে উপহার দেবে।
সে-ও দুটোর বেশি ফেলতে পারলো না।
ইতিমধ্যে জমে উঠছে কারনিভল, ভিড় বাড়ছে। শুটিং গ্যালারিতেও বেশ লোক জমেছে।
তিন গোয়েন্দাকে অনুরোধ করলো রবি, তোমরা একটু থাকবে এখানে? আমি চট করে গিয়ে ছুরিগুলো নিয়ে আসি। এই কাছেই আছে।
তিনজনকেই থাকতে হবে? মুসা বললো।
কেন, আসতে চাও? বেশ, এসো। ইচ্ছে করলে আরও একজন আসতে পারো। এখানে একজন থাকলেই চলবে।
রবিন, তুমি যাও, কিশোর বললো। আমি থাকি।
গ্যালারির পেছনে দুই গোয়েন্দাকে নিয়ে এলো রবি। কারনিভলের মূল এলাকার চেয়ে আলো এখানে কম। ছোট একটা ব্যাগেজ ট্রেলার দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
কাছেই রাখি, কারণ জানালো রবি, চোরের ভয়ে। সুযোগ পেলেই এটা ওটা। নিয়ে চলে যায়। তাই চোখে চোখে রাখতে হয়।
ঢাকনা খুলে ভেতর থেকে একটা পোটলা বের করলো রবি। সেটা থেকে ছুরির বাক্স বের করে রবিনের হাতে দিলো, ধরো, আমি ঢাকনা, হঠাৎ থেমে গেল সে। মুসার পেছনে তাকিয়ে আছে, চোখ বড় বড়। কি সাংঘাতিক! একদম চুপ! নড়বে না কেউ! ফিসফিসিয়ে বললো।
ভ্রূকুটি করলো রবিন। বোকা বানানোর চেষ্টা কোরো না, রবি। ওসব। কারনিভলের কায়দা…
চুপ! রবির কণ্ঠে, ভয় মেশানো উত্তেজনা। আস্তে, খুব আস্তে ঘোরো। কিং!
স্থির হয়ে গেল দুই গোয়েন্দা। ঢোক গিললো মুসা। ধীরে ধীরে ঘুরলো দুজনেই। শুটিং গ্যালারির পরে আরেকটা বুদ, কোনো ধরনের খেলা দেখামোর জায়গা। কারনিভলে ঢোকার মূল গলিপথ থেকে দেখা যায় না ওই বুদের পেছনটা। মাঝে ঘাসে ঢাকা একটুকরো ভোলা জায়গা। সেখানে, ছেলেদের কাছ থেকে বড় জোর বিশ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে আছে কালো কেশরওয়ালা এক মস্ত সিংহ।
.
০৪.
শুটিং গ্যালারির দিকে পিছিয়ে যাও, নিচু গলায় বললো রবি। তাড়াহুড়ো করবে না। বুনো নয় কিং, পোষা, ট্রেনিং পাওয়া। কিন্তু চমকে গেলে বিপদ বাধাবে। বুদে ঢুকতে পারলেই আমরা নিরাপদ। ফোন আছে ওখানে, সাহায্য চাইতে পারবো।
ছেলেরা ছাড়া আর কারও চোখে পড়েনি এখনও সিংহটা। জুলজুলে হলুদ চোখ। হা করে বিকট হলদে দাঁত দেখালো। ঝাঁকি দিলো রোমশ কালো লেজের ডগা।
না, রবি, মুসার কণ্ঠ কাঁপছে। রাস্তার দিকে চলে যেতে পারে সিংহটা।
কিন্তু আর কি করবো? মারকাস ছাড়া সামলাতে পারবে না ওকে।
সিংহের চোখে চোখ রাখলো মুসা। ফিসফিসিয়ে বললো, তুমি রবিনকে নিয়ে। চলে যাও। জানোয়ার সামলানোর অভিজ্ঞতা আছে আমার, দেখি চেষ্টা করে। তুমি গিয়ে মারকাসকে পাঠাও।
মুসাআ! বন্ধুকে বিপদে ফেলে যেতে চাইছে না রবিন।
তার কণ্ঠ শুনে মৃদু গর্জন করে উঠলো সিংহটা।
জলদি যাও! ফিসফিসিয়ে জরুরী কণ্ঠে বললো মুসা। তাকিয়ে আছে সিংহের দিকে।
পিছাতে শুরু করলো রবিন আর রবি। ওদের দিকে চেয়ে এক কদম আগে বাড়লো সিংহ। খাঁচা থেকে বেরিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেছে, অস্বস্তিতেও বোধহয়। শান্ত, দৃঢ়কণ্ঠে আদেশ দিলো মুসা, থামো, কিং। শোও…শুয়ে পড়ো।
চট করে ফিরে তাকালো সিংহ। পা বাড়াতে গিয়ে থেমে গেল। হলুদ চোখে সতর্কতা।
এই তো, লক্ষী ছেলে, লক্ষ্মী কিং।
ধীরে ধীরে লেজ দোলাচ্ছে সিংহ। অচেনা একটা ছেলের মুখে নিজের নাম আর আদেশ শুনে অবাক হয়েছে যেন। কোনো দিকেই তাকালো না মুসা। ক্ষণিকের জন্যেও চোখ সরালো না সিংহের, চোখ থেকে। আবার বললো, শোও…শুয়ে পড়ো, কিং।
এক মুহূর্ত বিরতি দিয়ে গলা সামান্য চড়িয়ে শেষবার আদেশ দিলো, শোও, কিং! কথা শোনো!
চাবুকের মতো লেজ আছড়ালো সিংহ। আশোঁপাশে তাকিয়ে কী যেন বোঝার চেষ্টা করলো, তারপর ধপ করে গড়িয়ে পড়লো ঘাসের ওপর। বিশাল মাথা তুলে বেড়ালের মতো তাকালো মুসার দিকে, ঘড়ঘড় শুরু করবে বুঝি এখুনি।
গুড, কিং।
হঠাৎ পেছনে কথা সোনা গেল। লম্বা পায়ে মুসার পাশ দিয়ে সিংহের দিকে। এগিয়ে গেল মারকাস। হাতে একটা বেত আর একটা শেকল। মোলায়েম গলায় কথা বলতে বলতে যাচ্ছে, খানিক আগে মুসা যেরকম করে বলেছিলো। বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে কেশরে ঢাকা মোটা গলাটায় শেকল পরিয়ে দিলো। তারপর টানতে টানতে নিয়ে চললো খাঁচার দিকে। সিংহটাও প্রতিবাদ করলো না, শান্ত সুবোধ প্রভুভক্ত কুকুরের মতো চলেছে পিছে পিছে।
ঢোক গিললো মুসা। উত্তেজনা প্রশমিত হতেই ফ্যাকাসে হয়ে গেল মুখ। বিড়বিড় করলো, খাইছে!
পাশে এসে দাঁড়ালো রবিন, কিশোর আর রবি।
দারুণ দেখিয়েছো! রবি বললো।
সত্যিই দারুণ, সেকেণ্ড! এভাবে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা সাধারণত করে না গোয়েন্দাপ্রধান, লোকের দোষই বেশি দেখে। আর খুঁতখুঁত করে। কিং যে ছুটেছে, কেউ জানে না। একটা দুর্ঘটনা বাঁচিয়েছো।
এতো প্রশংসায় লজ্জা পেলো মুসা। জবাব দেয়ার আগেই দেখলো ফিরে আসছে মারকাস দ্য হারকিউলিস। কাছে এসে শক্ত করে চেপে ধরলো মুসার কাধ। খুব, খুবই সাহসী তুমি, ইয়াং ম্যান। বলা যায় দুঃসাহসই দেখিয়ে ফেলেছে। এমনিতে কিং শান্ত, কিন্তু লোকে ভয় পেয়ে হৈ-চৈ শুরু করলে ঘাবড়ে যেতো সে। বিপদ ঘটতো।