আমিও তাই বলতে চাইছিলাম, কনর বললেন। ডাকাতি করার বয়েসই নেই। আর যা-ই করুক, বয়েস কেউ লুকাতে পারে না। আর দেয়াল বেয়ে ওঠাও তার কর্ম নয়।
আমি ডাকাত নই, দীর্ঘশ্বাস ফেললো ভাড়, গোবেচারা চেহারা। দশ হাজার ডলারের লোভ দেখিয়ে আমাকে দিয়ে ট্রেলার থেকে বেড়ালটা চুরি করিয়েছে। পিস্তলটা ও-ই দিয়েছে। কি করে ব্যবহার করতে হয়, তাই জানি না। আপনাদের ভয় দেখিয়ে খুব অন্যায় করেছি। আ-আমাকে…আমাকে মাপ করে দিন।
কে ভাড়া করেছে? চীফ জিজ্ঞেস করলেন।
আড়চোখে কোহেনের দিকে তাকালো ভড়। বললো, কোহেন। আমাকে দশ হাজার ডলার দেবে বলেছে।
লাল হয়ে গেল স্ট্রংম্যান। চেঁচিয়ে উঠলো, মিথ্যে কথা? ব্যাটা মিথ্যুক! আমি…আমি…
আমি সত্যি বলছি, জোর গলায় বললো ভাঁড়। আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে ও এখন স্বীকার করতে চাইছে না।
কোনো কথা বলছে না কিশোর। স্থির চোখে তাকিয়ে আছে ভাঁড়ের হাতের দিকে। হাসি ফুটলো মুখে। আমাদের বুড়ো ভাঁড়ই মিথ্যে কথা বলছে, চীফ।
কি করে বুঝলে?
ও মোটেও বুড়ো না।
অ্যাঁ? কি বলছো? বিশ্বাস হচ্ছে না মুসার।
হ্যাঁ, সেকেণ্ড। আমরা ভেবেছি, ছদ্মবেশ পরে গিয়ে ডাকাতি করেছে বাদামী চামড়ার লোকটা। আসলে পরে গিয়ে নয়, খুলে গিয়ে করেছে। প্রথম দিন বেড়াল চুরি করার সময় অবশ্য আরেকটা ছদ্মবেশ পরেছিলো। তবে কারনিভলে সব সময়ই ছিলো বুড়ো মানুষের ছদ্মবেশে।
ছাড়া পাওয়ার জন্যে জোরাজুরি শুরু করলো ভাড়, কিন্তু দুজন পুলিশ তাকে দুদিক থেকে চেপে ধরে রাখলো। চুল ধরে টানলেন চীফ, মুখোশ খোলার চেষ্টা করলেন। চুলও খুললো না, মুখের ভাঁজ পড়া চামড়াও আগের মতো রইলো।
ভালো করে দেখলেন আবার চীফ। লোকটার গলার কাছে সূক্ষ্ম একটা দাগ দেখতে পেলেন। নখ দিয়ে খুটে বুঝলেন আলগা। আঙুল ঢুকিয়ে জোরে ওপর দিকে টানতেই খুলে চলে এলো প্লাস্টিকের মুখোশ গলা, মুখ, চুল, সব একটাতে। আলগা কিছু নয়।
বেরিয়ে পড়লো আরেক চেহারা। বাদামী চামড়া।
টিটানভ! সঙ্গে সঙ্গে চিনতে পারলেন কনর। মাছিমানব থেকে ব্যাংক ডাকাত!
টাট্টু কোথায়, দেখুন তো? মুসা বললো।
পাওয়া যাবে না, বললো কিশোর। ওটা আলগা। সময়মতো লাগিয়ে নিতো।
জাহান্নামে যাও; বিচ্ছু কোথাকার! হিসিয়ে উঠলো টিটানভ। হাঁদা ছেলে!
বিচ্ছু ঠিকই, টিটানভ, কঠিন হাসি ফুটলো চীফের ঠোঁটে। তবে হাঁদা বলতে পারবে না। তোমাকেই বরং হাঁদা, গাধা, সব বানিয়ে ছেড়েছে। কিশোরের দিকে ফিরলেন। অনেক প্রশ্নের জবাবই তো দিলে, কিশোর। আর একটা প্রশ্ন। কি করে বুঝলে, ওর মুখে মুখোশ? টেনেও তো কিছু বোঝা যাচ্ছিলো না।
অতি-ধূর্ত অপরাধীও কিছু না কিছু ভুল করেই ফেলে, স্যার। আপনি খুব ভালো করেই জানেন। এই লোকও হাত ঢাকতে ভুলে গিয়েছিলো। বোধহয় তাড়াহুড়োয়। সবসময় তো দস্তানা পরেই থাকতো, দেখেছি। কোথায় খুলে রেখেছিলেন, টিটানভ? পার্কে? আমাদের নৌকার দড়িকাটার সময়? নাকি বেড়ালটা চুরির সময়? . জবাব দিলো না মাছিমানব। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো আরেকদিকে। তার হাতের দিকে এখন সবার চোখ। বাদামী চামড়া সবাই দেখতে পাচ্ছে।
হাঁদা আমাকে বলতে পারো, টিটানভ, বিরক্ত কণ্ঠে বললেন চীফ। চোখ ভোঁতা হয়ে গেছে আমার। নইলে এটা দেখলাম না!
হাসলো কিশোর। নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো, সহজ ব্যাপারগুলোই সহজে, চোখ এড়িয়ে যায়।
.
পরদিন, কেসের রিপোর্ট ফাইল নিয়ে বিখ্যাত পরিচালক ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে ঢুকলো তিন গোয়েন্দা।
মন দিয়ে ফাইলটা পড়লেন পরিচালক। মুখ তুলে বললেন, চমৎকার কাহিনী। ভালো ছবি হবে।…এখন, কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দাও তো। কারনিভলে ঢুকলো কেন টিটানভ? ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা আগেই ছিলো?
ওহিওতে ডাকাতির অপরাধে খুঁজছিলো তাকে পুলিশ, রবিন জানালো। কারনিভলে ঢুকে তাই লুকিয়ে থাকতে চেয়েছে।
আরও একটা কারণ আছে, বললো কিশোর। সে শুনেছে, কারনিভল নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় আসবেন মিস্টার কনর। দলে ঢুকতে পারলে পুলিশের চোখ এড়িয়ে সহজে বেড়িয়ে আসতে পারবে টিটানভ। ভাঁড়ের ছদ্মবেশে ঢুকে পড়েছে। কারনিভলে কাজের অভিজ্ঞতা তার আগে থেকেই ছিলো। ভাঁড়ের অভিনয় করতে কোনো অসুবিধে হয়নি। স্যান মেটিওতে আসার পর ব্যাংক ডাকাতির চিন্তা ঢুকলো মাথায়।
বুদ্ধিমান ডাকাত, চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন পরিচালক। ডাকাতি করে টাকা নিয়ে গিয়ে লেফট-লাগেজে রাখলো। ভাঁড়ের ছদ্মবেশে আরেকবার ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেল পুলিশকে।
রকি বীচ থেকেও বেরিয়ে যেতো। শুধু যদি জানতো, বেড়াল পাঁচটা নয়, ছটা।
হু। চুপ করে ভাবলেন কিছুক্ষণ পরিচালক। জিজ্ঞেস করলেন, রবি কি বাবার কাছেই থাকবে ঠিক করেছে? নাকি নানীর কাছে চলে যাবে?
বাবার কাছেই থাকবে, মুসা বললো। কোহেন, মানে বোলার রিপোর্ট করেছে তার নানীর কাছে, কারনিভলে ভয়ের কিছু নেই। নিরাপদেই থাকবে রবি। তাছাড়া কাজটা সে পছন্দ করে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিয়েছেন মহিলা, যোগ করলো কিশোর। ছেলে বাবার কাছে থাকলেই ভালো।
বোলার কি চলে গেছে?
না, রবিন বললো। কারনিভলেই রয়ে গেছে, সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবে। গোয়েন্দাগিরি করেছে বটে কিছুদিন, কাজটী তার ভালো লাগেনি।
হুঁ। সব কাজ সবার জন্যে নয়। ঘড়ি দেখলেন পরিচালক, মুখে না বলেও বুঝিয়ে দিলেন হাতে সময় কম। আর একটা প্রশ্ন, তারপরেই তোমাদের ছেড়ে দেবো। ওই পনি রাইডের ব্যাপারটা কি? কে বিষ খাওয়ালো ঘোড়াগুলোকে?