অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছে ছেলেরা, চীফ নিজে, এবং মিস্টার কনর। চলে যাচ্ছে লোকটা। গেটের কাছে প্রায় পৌঁছে গেছে, হঠাৎ একটা বুদের আড়াল থেকে লাফ দিয়ে বেরিয়ে এলো আরেকজন। লম্বা ভড় কিছু করার আগেই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।
কোহেন। পিস্তল ঘোরানোর চেষ্টা করলো লম্বা, পারলো না। লোহার মতো কঠিন আঙুল কব্জি চেপে ধরলো তার। সেই আঙুল ছাড়ানোর সাধ্য হলো না তার, হাত থেকে খসে পড়লো পিস্তল। স্ট্রংম্যানের কবলে পড়ে একেবারে অসহায় হয়ে গেল লম্বা।
যাক, ব্যাটাকে ধরলাম শেষ পর্যন্ত। খুশি হয়ে বললো কোহেন।
নিজের লোকদের ডাকলেন চীফ। ছুটে এলো তারা। শো শেষ হলেও দর্শকরা সব বেরিয়ে যায়নি, ভিড় জমাতে লাগলো। দুজন পুলিশ গেল ভাঁড়কে ধরতে, অন্যেরা লোক সরানোয় ব্যস্ত হলো।
হেসে বললো, কোহেন, গিয়ে ঘাপটি মেরে ছিলাম। জানতাম, আজ বেরোবেই ব্যাটা। কিন্তু ভাঁড়ের ভেতর থেকে যে বেরোবে, কল্পনাও করিনি।
লাফালাফি থামিয়ে দিয়েছে খাটো ভড়। চুল, মুখোশ সব টেনে টেনে খুললো। হাসিমুখে বললো কিশোর, ভাড় সাজার ইচ্ছে আমার অনেকদিনের।
কয়েক সেকেণ্ড স্তব্ধ হয়ে রইলেন চীফ। তারপর কথা ফুটলো মুখে, খুলে বলো সব। কি করে বুঝলে, লম্বুই ডাকাত? আর ভাড় সাজতেই বা গেলে কেন?
বলছি, শুরু করলো কিশোর। লোকটা আমাদের অলক্ষ্যে পার্ক থেকে সরে আসার পরই বুঝেছি, ছয় নম্বর বেড়ালটা নিতে গেছে। আমরা পৌঁছার আগেই বের করে নিয়ে লুকিয়ে ফেলবে। তারপর তাকে চেনা খুব মুশকিল হয়ে যাবে। তাই আপনাদের সঙ্গে না গিয়ে অন্যদিকে গেলাম। বুঝেছি, বেড়ালটা নিয়েই মিশে যাবে লোকের ভিড়ে। যেখানে তাকে চেনা সহজ হবে না।
ওরকম জায়গা কোনটা? দড়াবাজদের তাঁবু। ওরা তখনও খেলা দেখাচ্ছে। ওদিকে পা বাড়াতে যাবো, দেখি ট্রেলারের দিক থেকে একটা লোক দৌড়ে আসছে। চিনলাম। লম্বা ভাঁড়। দৌড়াতে দৌড়াতেই জিনিসটা ঢুকিয়ে ফেললো ঢোলা পাজামার ভেতরে। আমাকে ওখানে ওই অবস্থায় দেখে ফেললে নিশ্চয় চিনে। ফেলতো। তাড়াতাড়ি ঢুকে পড়লাম কাছের তাঁবুটাতে। ঢুকেই চমকে গেলাম। ঢুকেছি ভাঁড়দের তাঁবুতেই।
খাইছে! আঁতকে উঠলো মুসা। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত… একেবারে বাঘের ঘরে ঢুকে গিয়েছিলে!
মাথা ঝোঁকালো কিশোর। ভয় পেয়েছি খুব। দ্রুত ভাবছি, কি করা যায়। শো দেখানোর অন্যান্য তাঁবুর মতোই ওটারও দুটো অংশ। পেছনের অংশে থাকে অভিনেতাদের মেকাপের সরঞ্জাম, যারা ট্রেলারে মেকাপ নেয় না তাদের জন্যে, জানোই। সোজা ঢুকে পড়লাম সেখানে। বাইরে তার পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তখন। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। পেছনে ঢুকবে কিনা, জানি না। ঢুকতেও পারে…
কি সাংঘাতিক! চোখ বড় বড় হয়ে গেছে রবির। ভালো ফাঁদে পড়েছিলে! ছুরি-টুরি মেরে বসতে পারতো।
পারতো, সায় জানালো কিশোর। ভয় তো পেয়েছি সেকারণেই। দেখি, খাটো ভাঁড়ের সাজপোশাক পড়ে আছে। খেলা শেষ। সাজপোশাক খুলে রেখে গেছে সে। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে পরে ফেললাম। ভাগ্যিস, গায়ে লেগেছে। মুখোশ পরাও শেষ করলাম, এই সময় লম্বু ঢুকলো। আমাকে চিনতে পারলো না। অনুরোধ করতে লাগলো, দড়াবাজদের তাঁবুতে গিয়ে আরেকবার যেন খেলা। দেখাই। খেলা দেখানোর নেশায় নাকি পেয়েছে তাকে। আমি তো বিশ্বাস করিইনি, খাটো ভাড়ও করতো কিনা কে জানে। আসলে তখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। লম্বু মিয়া। পুলিশকে ফাঁকি দেয়ার জন্যে। বেড়ালটা নিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগের জন্যে। প্রথমে চেয়েছিলো, বেড়ালের ভেতর যে সে জিনিস। লুকিয়েছে, এটা কেউ না জানুক। পরে দেখলো, সবাই জেনেই গেছে। আর চালাকি করে লাভ নেই। কোনোমতে বেড়ালটা নিয়ে পালিয়ে যেতে পারলেই তখন হাঁপ ছাড়ে।–
হু, বুঝলাম, বললেন চীফ। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে, আমাদের কাছে এসে কেন বললে না, লম্বুই ডাকাত? ভাঁড়ামির কি দরকার ছিলো?
আমি জানতাম, স্যার, ওর কাছে পিস্তল আছে। আমার ভয় ছিলো, সরাসরি আপনাকে বললে বেপরোয়া হয়ে উঠবে সে। পিস্তল বের করে যথেচ্ছা গুলি চালাতে শুরু করলেও অবাক হতাম না। তাতে মারাত্মক কিছু ঘটে যেতে পারতো। তাই চাইছিলাম, ওকে না জানিয়ে কোনোভাবে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। বোঝাতে চাইছিলাম, আমি আসলে খাটো ভাড় নই। তা-ও যখন বুঝলেন না, মাটিতে প্রশ্নবোধক আঁকলাম। রবিনের চোখে পড়েছিলো বলেই…।
হ্যাঁ, আরেকটু হলেই দিয়েছিলাম কাচিয়ে, স্বীকার করলেন চীফ। যাক, ভালোয় ভালোয় সব শেষ হলো। বেড়ালটা কোথায়?
ওর পাজামার ভেতরে, লম্বা ভাঁড়কে দেখালো কিশোর।
অস্বাভাবিক ঢোলা পাজামার ভেতর থেকে বের করা হলো বেড়ালটা। ওটার। ভেতর থেকে বেরোলো ছোট একটুকরো কার্ডবোর্ড।
লেফট-লাগেজ টিকেট! টুকরোটা হাতে নিয়ে বিড়বিড় করলেন চীফ। টাকাগুলো নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রেখেছে ওখানে। আরেকটা রহস্যের সমাধান। হলো। এখন দেখা যাক, ভঁড়ের আড়ালে লুকিয়ে আছেন কোন মহাজন।
ভাঁড়ের পরচুলা আর উইগ নিজের হাতে খুললেন চীফ। পিছিয়ে গেলেন এক পা। বোকা হয়ে গেছেন যেন।
ভাঁড়ের মুখোশের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসেছে সাদা-চুল এক বৃদ্ধ। বয়েস পঁয়ষট্টির কম নয়।
ও…ও ডাকাত নয়! মাথা নাড়ছেন চীফ। ও নয়!