কে গেল? এদিক ওদিক তাকালেন চীফ।
কি জানি, স্যার! বললো একজন পুলিশ। আমরা তো সবাই আছি।
কে যেন দাঁড়িয়েছিলো আমার পেছনে, একজন রাফকে বললো, মনে করতে পারছি না।
চেঁচিয়ে উঠলো রবিন, কোহেন কোথায়?
আশেপাশে কোথাও নেই কোহেন।
জলদি চলুন, কিশোর বললো। কুইক। ছয় নম্বর বেড়ালটার কথা জেনে গেছে!
ছুটতে ছুটতে বেড়ার কাছে চলে এলো সবাই। ফোকর গলে ঢুকলো। কারনিভলের সীমানায়। কিছু দর্শক রয়েছে এখনও। কৌতূহলী হয়ে তাকালো ওরা ছুটন্ত দলটার দিকে।
ছুটে ট্রেলারে ঢুকলো রবি। পরক্ষণেই বেরিয়ে এসে হাত ঝাড়া দিলো। নেই! বেড়ালটা নেই!
সব পথ বন্ধ করে দাও! আদেশ দিলেন চীফ।
খোঁজো, খোঁজো! কনর বললেন। সমস্ত কারনিভল চষে ফেলো!
তাড়াহুড়া করে চলে গেল পুলিশ আর রাফনেকরা।
আর পালাতে পারবে না, চীফ বললেন।
চীফ, কোহেনই নিয়েছে? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
বুঝতে পারছি না। একের পর এক মিথ্যে বলে যাচ্ছিলো!
নানী গোয়েন্দা ভাড়া করেনি, রবি বললো। করেছে একটা ডাকাতকে।
অনেক শখের গোয়েন্দাকেই নষ্ট হতে দেখেছি আমি, চীফ বললেন। ক্রিমিনালদের সঙ্গে মেশার সুযোগ বেশি ওদের। খারাপ হতে সময় লাগে না। হতে পারে, ডাকাতটার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কোহেনও।
কোহেন না হলে আর কে, স্যার? মুসার প্রশ্ন। তাকে তো আমরা চিনি না। ধরবো কিভাবে? বেড়ালটা জাস্ট লুকিয়ে ফেলবে। ব্যস, আর চেনা যাবে না। তাকে।
বেড়ালটা নিয়ে প্রমাণ করে দিলো, সে আছে। পালাতে আর দেবো না। যেভাবেই হোক, ধরবোই। কিশোর…আরে, কিশোর গেল কোথায়?
কোন ফাঁকে চলে গেছে কিশোর, কেউ খেয়াল করেনি।
কিশোর? মুসা ডাকলো।
কিশোর? কোথায় তুমি? জোরে ডাকলেন চীফ।
জবাব নেই।
আমাদের সঙ্গে কি এসেছিলো এখানে? মনে করতে পারছে না রবিন।
পার্ক থেকে বেরোনোর আগে পর্যন্ত ছিলো, কনর বললেন।
বেশিদূরে যেতে পারেনি, চীফ বললেন। কাছাকাছিই থাকবে।
যদি ডাকাতটার পিছু নেয়? মুসার গলা কাঁপছে।
শান্ত হও, মুসা, কনর বললেন। চলো, খুঁজি।
এক এক করে সমস্ত ট্রাক আর ট্রেলার খুঁজলো ওরা। তারপর চলে এলো যেখানে শো চলছে সেখানে। পনেরো মিনিট খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে এলো শুটিং গ্যালারির পাশের চওড়া পথটায়। সেখানেও নেই কিশোর।
শো শেষ, কনর বললেন। দেখি ওদেরকে জিজ্ঞেস করে, কিশোরকে দেখেছে কিনা।
বেরোনোর সব পথ বন্ধ, চীফ বললেন। বেড়ার কাছেও লোক আছে। ওদের ফাঁকি দিয়ে পার্কে ঢুকতে পারবে না। ভেতরেই আছে কিশোর।
মারকাস দ্য হারকিউলিসের তাঁবুর কাছে কর্মীদের ডেকে জড়ো করালেন কনর। পুলিশ দেখে অস্বস্তি বোধ করছে অনেকেই। কিশোরকে দেখেছে কিনা জিজ্ঞেস করা হলো।
আমি দেখিনি, অস্বস্তিতে নাক কুঁচকালো লায়ন ট্রেনার।
আগুনখেকো আর দড়াবাজরা মাথা নাড়লো। বিচিত্র ভঙ্গিতে দুই লাফ দিলো খাটো ভাড়, এখনও অভিনয় করছে। হাত তুলে দেখালো বিষণ্ণ লম্বা ভাঁড়কে। ভাঙা ঝাড়ু দিয়ে তলাহীন বালতিতে ময়লা তোলার অভিনয় করলো লম্বা। কিন্তু হাসাতে পারলো না কাউকে। হাসার সময় নয় এটা।
মনে হয় আমি দেখেছি, কেঁদে ফেলবে যেন লম্বা। তাঁবুর পেছনে।
দেখেছো? কাটা কাটা শোনালো চীফের কথা। কার সঙ্গে? কোন তাঁবুর। পেছনে?
জানি না, বিষণ্ণ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো লম্বা। মনে করতে না পারায় বড় দুঃখ পেয়েছে যেন।
হাতে ভর দিয়ে উল্টো হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে পড়ে গেল বেঁটে। তিড়িং তিড়িং করে আবার দুই লাফ দিলো লম্বাকে ঘিরে।
গুঙিয়ে উঠলো রবিন। কিশোরকে ধরে নিয়ে গেছে! আমি জানি!
হ্যাঁ, মুসাও প্রায় ককিয়ে উঠলো। জিম্মি করার অভ্যেস তো আছেই। ডাকাতটার!
শান্ত হও, শান্ত হও, বললেন বটে, কিন্তু চীফ নিজের উদ্বেগই ঢাকতে পারলেন না। যাবে কোথায়? ধূরে নিয়ে গিয়ে বাঁচতে পারবে না।
ধরেই যদি নিয়ে থাকে, প্রশ্ন তুললো রবি। এখনও বেরিয়ে আসছে না। কেন? জিম্মি তো আছেই।
তা-ও তো কথা। বুঝতে পারছি না কিছু।
লম্বা ভাঁড় বলে উঠলো, জিম্মি? মনে পড়েছে। লোকটা পার্কের বেড়ার দিকে দৌড়াচ্ছিলো, ছেলেটাও। ধরে নিলো কিনা বুঝলাম না।
সাগরের দিকে? অবাক হলেন চীফ।
নিশ্চয় সাঁতরে পালানোর চেষ্টা করবে, বললেন কনর। পাহারা পরে বসিয়েছি আমরা, তার আগেই নিশ্চয় বেরিয়ে গেছে।
ইতিমধ্যে দৌড় দিয়েছে মুসা আর রবি। চীফ আর কনরও পিছু নিলেন। কিন্তু রবিন নড়লো না। মাটির দিকে চেয়ে আছে। চীফ! ডাকলো সে। দেখে যান।
ফিরে এলো চারজনেই। আঙুল তুলে দেখালো রবিন। মাটিতে মস্ত এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন আঁকা।
খাটো ভাঁড় তখনও লম্বাকে ঘিরে নাচছে। বুড়ো আঙুল নেড়ে বার বার দেখাচ্ছে লম্বা ভাঁড়কে।
.
২১.
আমাদের সাঙ্কেতিক চিহ্ন! বিড়বিড় করলো মুসা। দুই ভাড়ের দিকে তাকালো একবার।
নিশ্চয় কিশোর, বললো রবিন। আমাদের…, বলতে বলতে থেমে গেল। সে। খাটো ভাড়ের দিকে তাকিয়ে আছে স্থির দৃষ্টিতে। চীফ…!
এবারেও রবিনের কথা শেষ হলো না। হঠাৎ ঢোলা জামার পকেট থেকে লম্বা ভঁড়ের হাতে বেরিয়ে এলো একটা পিস্তল। সেটা তাক করে কোনো কথা না বলে। ধীরে ধীরে পিছিয়ে যেতে শুরু করলো প্রধান প্রবেশ পথের দিকে। রঙ করা ফ্যাকাসে-সাদা চেহারায় ধকধক করে জ্বলছে কালো চোখের তারা।
খবরদার, কেউ নড়বে না! সতর্ক করলেন চীফ। যেতে দাও।