আমাদের দেখেছে বলে চিৎকার করছিলো। যে তাড়া করে সে-ই ওভাবে। চেঁচায়, যাকে তাড়া করা হয়, সে নয়। আসল ডাকাতটা বরং লুকিয়েই থেকেছে আমাদের কাছ থেকে।
হ্যাঁ, যুক্তি আছে। কিন্তু…
তাছাড়া, চীফকে কথা শেষ করতে দিলো না কিশোর, কোহেনের কোমর পর্যন্ত নগ্ন, কোনো কাপড় ছিলো না। শুধু আঁটো পাজামা। হাত খালি। পিস্তল আর ছুরি লুকিয়ে রাখার জায়গাই নেই। অথচ, নৌকার দড়ি কেটে আমাদের ভাসিয়ে দিয়েছিলো, যে লোকটা, তার কাছে ছুরিও ছিলো, পিস্তলও।
ছেলেটা আপনাদের চেয়ে অনেক চালাক, আন্তরিক প্রশংসা করলো স্ট্রংম্যান।
আরও একটা ব্যাপার, কিশোর বললো। রকম পায়ের আওয়াজ শুনেছি। ভারি বুট আর রাবার সোল নরম জুতো। কোহেনের পায়ে বুট, তারমানে ডাকাতটার নরম জুতো ছিলো।
হেসে উঠলো কোহেন। নিন, এবার হলো তো। আমি যে ডাকাত নই, দিলো। প্রমাণ করে।
তবে আপনিও দুধে ধোয়া নন, মিস্টার কোহেন, তাকে ধরলো এবার কিশোর। ছদ্মবেশে ছিলেন, এটা তো ঠিক। কিছু একটা গোপন করে রেখেছেন সবার কাছ থেকে। নিশ্চয় কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ঢুকেছেন কারনিভলে। আশা করি, চীফের কাছে বলবেন কারণটা। স্ট্রংম্যানের দিকে চেয়ে ঠাণ্ডা হাসি হাসলো সে।
ভুরু কুঁচকে কোহেনের দিকে তাকালেন চীফ।
জোরে নিঃশ্বাস ফেলে হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গি করলো কোহেন। তুমি সাংঘাতিক চালাক, কিশোর পাশা। দেখে কিন্তু মনেই হয় না। ধরা যখন পড়েছি, না বলে আর উপায় কি? সত্যিই স্ট্রংম্যান ছিলাম আমি, সার্কাসে, কয়েক বছর আগে ছেড়ে দিয়েছি। গোয়েন্দাগিরিতে বেজায় শখ, তাই শখের গোয়েন্দা হয়েছি চাকরি ছাড়ার পর। আমার আসল নাম ডেনমার বোলার। রবির নানী ভাড়া করেছে আমাকে নাতির ওপর চোখ রাখার জন্যে। মহিলা জানতে চান, কারনিভল সত্যি সত্যি পছন্দ করে কিনা রবি। আর তার কাজে বিপদের সম্ভাবনা কতটা।
দুর্ঘটনাগুলো তাহলে তুমি ঘটাওনি? কঠোর হয়ে উঠেছে কনরের দৃষ্টি।
না। তবে ঘটাতে উদ্বিগ্ন হয়েছি। আপনাকে বার বার কারনিভল বন্ধ করতে অনুরোধ করেছি সেজন্যেই। রবির জন্যে ভয় হচ্ছিলো। ওর কোনো ক্ষতি হলে। ওর নানী আমাকে আস্ত রাখতো না। তাছাড়া, এটাও বুঝতে চাইছিলাম. ওগুলো আসলেই দুর্ঘটনা কিনা?
রবিকে নিরাপদে রাখতে চাইছিলে?
হ্যাঁ, কনর। সেই দায়িত্বই দেয়া হয়েছে আমাকে।
ভ্রূকুটি করলো কিশোর। চমৎকার, মিস্টার কোহেন। নাকি, মিস্টার বোলার? যা-ই হোক, সব কথা বলেননি। আরও কিছু আছে। রবিকে দেখা আপনার দায়িত্ব, তার ট্রেলার দেখা নয়। ওখানে গিয়েছিলেন কেন? নিশ্চয় সন্দেহ করেছিলেন, ডাকাতটা ওখানে খুঁজতে যাবে। ডাকাতের পেছনে কেন লেগেছেন?
দীর্ঘ এক মুহূর্ত চুপ করে রইলো কোহেন, ওরফে বোলার। তারপর মাথা ঝাঁকালো। নাহ, তোমাকে ফাঁকি দেয়া মুশকিল। ঠিকই ধরেছো, স্যান মেটিওতেই বুঝেছি, ডাকাতটা কারনিভলেরই লোক। আমি গোয়েন্দা। পেশাদারী একটা মনোভাব রয়েছে। আশা করেছি, ডাকাতটাকে ধরতে পারলে আমার সুনাম বেড়ে যাবে রাতারাতি। কাজেই তদন্ত শুরু করলাম। কিন্তু অনেক খুঁজেও পেলাম না, ডাকাতটার চেহারার সঙ্গে কারনিভলের কারও চেহারা মেলে না। তারপর কানা বেড়াল চুরি গেল। বুঝলাম, ওগুলোর ভেতরেই জরুরী কিছু লুকিয়েছে ডাকাতটা। থেমে হাত নাড়লো সে। কিন্তু বেড়ালের ভেতরে সে নিজেই খুঁজে পেলো না।
কি সাংঘাতিক! বলে উঠলো রবি। নিশ্চয় ভেতর থেকে পড়ে গেছে।
তার কথায় সায় জানাতে পারলো না কিশোর। আমার তা মনে হয় না, বললো সে। বেড়ালের ভেতরেই রয়েছে এখনও।
.
২০.
কিন্তু কিশোর, প্রতিবাদ করলো রবি। আমার পাঁচটা বেড়ালই ছিলো। ডাকাতটা সবগুলো নিয়ে গেছে।
না, রবি, তুমিও ভুল করছো। আসলে বেড়াল ছিলো ছটা। আমরা দেখেছি।
দেখেছি? হাঁ হয়ে গেছে মুসা। কোথায়?
কোথায়, কিশোর? রবিন জানতে চাইলো।
ধরতে গেলে আমাদের নাকের নিচে। সেজন্যেই দেখেও দেখিনি। রবিদের ট্রেলারে উঠেছিলাম, মনে আছে? ভাঙা, নষ্ট…
পুরস্কার! চেঁচিয়ে উঠলো রবি। মেরামত করার জন্যে রেখেছি ঝুড়িতে। আরেকটা কানা বেড়াল আছে ওখানে! স্যান মেটিওয় পুড়ে গিয়েছিলো।
তারমানে আগুন লাগার সময় শুটিং গ্যালারিতে ছিলো ওটা, বললো কিশোর। ওটাতেই জিনিসটা লুকিয়েছিলো ডাকাত। আগুনে বেড়ালটা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রবি নিয়ে গিয়ে ঝুড়িতে ফেলে রেখেছে। সেকথা ভাবেইনি ডাকাতটা, তার নিশ্চয় জানা ছিলো না, বেড়াল ছটা আছে। নৌকায় সময় পেয়েছি ভাবার। আমাদের ভাসিয়ে দেয়াটা একটা কথাই প্রমাণ করে, যা খুঁজছে তখনও পায়নি সে। আমরা তার কাজে বাগড়া দেবো বলেই সরিয়ে দিতে চেয়েছে। অনেক ভাবলাম, কোথায় থাকতে পারে জরুরী জিনিস? হঠাৎ মনে পড়লো, ঝুড়িতে ফেলে রাখা বেড়ালটার কথা।
খাইছে! কিশোর, একবারও ভাবিনি আমরা।
আমিও না, তিক্তকণ্ঠে বললো রবি। অথচ আমার হাতের কাছেই রয়েছে।
ডাকাতটাও ভাবেনি, হেসে বললেন চীফ। খুব ভালো কাজ দেখিয়েছো, কিশোর। তোমাকে আমার জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে পেলে খুশিই হবো। করবে চাকরিটা? অনারারি পোস্ট।
মৃদু হেসে প্রশ্ন এড়িয়ে গেল কিশোর। বললো, যখন বুঝলাম…! থেমে গেল সে। সতর্ক হয়ে উঠেছে। তাড়াতাড়ি চারপাশে দেখলো। চীফ! কে যেন গেল?
অন্ধকার ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছে মুসা। আমিও শুনলাম!