প্রহরীরা চলে গেল।
গ্যালারির দিকে হাঁটতে হাঁটতে মুসা বললো, গ্যালারিতে কেন আবার? শুটিং। করে পুরস্কার নিতে?
চেষ্টা করতে দোষ কি? তবে সেজন্যে যাচ্ছি না। যাচ্ছি, সোনালি চুল ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করতে, জিনিসটা কেন ছিনিয়ে নিচ্ছিলো চোর, মুসার হাতের জানোয়াটার দিকে ইঙ্গিত করলো কিশোর।
এই প্রথম ওটাকে ভালো করে দেখার সুযোগ পেলো তিন গোয়েন্দা। স্টাফ করা একটা বেড়াল, লাল-কালো ডোরা। পা-গুলো বিচিত্র ভঙ্গিতে বাঁকানো, শরীরটাও। হা করা মুখে সাদা ধারালো দাঁত। এক কান খাড়া, আরেক কনি নিচে নামানো। একটা মাত্র চোখ, লাল, আরেকটা কানা। গলায় পাথর বসানো লাল। কলার। এরকম অদ্ভুত বেড়াল জীবনে এই প্রথম দেখছে ওরা।
এই জিনিস চাইছিলো কেন লোকটা? কিশোরের প্রশ্ন। দেখে তো দামি কিছু মনে হয় না।
হয়তো স্টাফ করা জানোয়ার সংগ্রহের বাতিক আছে, রবিন বললো। পছন্দের জিনিস জোগাড়ের জন্যে চুরি করতেও দ্বিধা করে না অনেকে।
কিন্তু তাই বলে স্টাফ করা বেড়াল? মুসা মানতে পারলো না। তা-ও আবার কারনিভলের শুটিং গ্যালারি থেকে? কতো আর দাম ওটার, বলো?
দামের ব্যাপারে মাথা ঘামায় না ওরা, কিশোর বললো। কোটিপতি লোকও চুরি করে। কিন্তু আমাদের এই চোরটাকে সেরকম, কেউ মনে হলো না। কে জানে, হয়তো হেরে গিয়ে জেদের বশেই করেছে কাজটা।
হেরে গেলেও অবশ্য আমি করতাম না। তবে, আমাকে ঠকানোর চেষ্টা করলে অন্য কথা…..
শুটিং গ্যালারিতে ঢুকলো ওরা। কাউন্টারের ওপাশ থেকে হেসে সাগত জানালো ওদেরকে সোনালি-চুল ছেলেটা। কি সাংঘাতিক! চোরটাকে ধরেছে? জিজ্ঞেস করলো সে।
পালিয়েছে, হাতের বেড়ালটা দেখালো মুসা। এটা ফেলে। যার জিনিস তাকে ফিরিয়ে দিলো সে।
যাবে কোথায়? পুলিশ ধরে ফেলবে, বলতে বলতে রেগে গেল ছেলেটা। পাঁচটা হাঁসের মাত্র তিনটা ফেলেছে, অথচ বলে কিনা আমি ঠকিয়েছি, আবার.. হাসলো সে। আমি রবি কনর। এই বুঁদ আমার। তোমরা কি এ-লাইনের?
চোখ মিটমিট করলো রবিন। মানে?
ও বলতে চাইছে, কিশোর বুঝিয়ে দিলো, আমরাও ওর মতো কারনিভল কিংবা সার্কাসের লোক কিনা।…না, রবি, আমরা অন্য কাজ করি। রকি বীচেই থাকি। আমি কিশোর পাশা…ও মুসা, আমান…আর ও হলো রবিন মিলফোর্ড। তিনজনে একই ইস্কুলে একই ক্লাসে পড়ি, বন্ধু।
খুব খুশি হলাম, তারপর গর্বিত ভঙ্গিতে যোগ করলো সোনালি-চুল, আমি কিন্তু এ-লাইনের ফুল অপারেটর। পাঙ্ক কিংবা রাফনেক নই।
কি বললো ও? কিশোরের দিকে চেয়ে ভুরু নাচালো মুসা। ভিনগ্রহের ভাষা?
না, এই গ্রহেরই। পাঙ্ক হলো কারনিভলের শিক্ষানবিস, আর রাফনেক শ্রমিক গগাছের লোক। রবি, তোমার বয়েসে ফুল অপারেটর হওয়া একটু অস্বাভাবিক না?
এই কারনিভলের মালিক আমার বাবা তো, বলেই বুঝলো বোকামি হয়ে গেছে, কথা ঘুরিয়ে ফেললো রবি। বাবা বলে, যেকোনো কারনিভলে ফুল অপারেটরের কাজ চালাতে পারবো আমি। তা তোমরা খেলবে নাকি? পুরস্কার জিততে চাও?
ওই কানা বেড়ালটা জিততে চাই আমি, মুসা বললো।
বাহ্, ভালো নাম দিয়ে ফেলেছো তো! কানা বেড়াল…হাহ্ হাহ্!
যাও না, দেখো চেষ্টা করে, কিশোর বললো মুসাকে। রবি, বেড়ালটা পুরস্কারের জন্যে তো?
হাসলো রবি। নিশ্চয়। তবে পাঁচ গুলিতে পাঁচটা হসিই ফেলতে হবে। আমি নাম দিয়েছিলাম বাকা বেড়াল, কিন্তু কানা বেড়াল শুনতে ভাল্লাগছে। ঠিক আছে, কানা বেড়ালই সই। ওটা ফার্স্ট প্রাইজ। জেতা কঠিন। তা-ও জিতে নিয়ে গেছে লোকে, চারটে। আর মাত্র একটাই আছে।
বেশ, পঞ্চমটা আমি জিতবো, সদম্ভে ঘোষণা করলো মুসা। এগিয়ে গিয়ে কাউন্টারের সঙ্গে শেকল দিয়ে বাঁধা রাইফেলটা তুলে নিলো।
দাঁড়াও, দাঁড়াও! হাত নাড়লো রবি। প্রায় লাফ দিয়ে এসে দাঁড়ালো কাছে।
.
০৩.
কী? সচকিত হলো মুসা।
পয়সা, হেসে, খাঁটি পেশাদারি ভঙ্গিতে হাত বাড়ালো রবি। আগে পয়সাটা দিয়ে নাও।
এরকম করেই কথা বলো নাকি তুমি? রবিনও অবাক হয়েছে।
পকেট থেকে পয়সা বের করে দিলো মুসা। সেটা হাতে নিয়ে রবি বললো, বাবা বলে, আমার রক্তেই রয়েছে কারনিভল। জাত কারমিভল-ম্যান।
রাইফেল কাঁধে ঠেকিয়ে নিশানা করলো মুসা। সাবধানে টিপলো ট্রিগার পড়ে গেল একটা খেলনা হাঁস। পর পর গুলি করে আরও দুটো ফেলে দিলো।
বাহ, ভালো হাত তো তোমার, হাততালি দিলো রবি। সাবধান। এখনও দুটো বাকি।
আবার গুলি করলো মুসা। ফেলে দিলো চতুর্থটা।
আরি! মুসাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করার জন্যে বললো রবি, ঘাবড়ে দিয়ে তার হাত কাপিয়ে দিতে চায়। সত্যি জাত কারনিভল-ম্যান, ভুল বলে না তার বাবা। সাংঘাতিক তো! তবে শেষটা ফেলা খুব কঠিন। ভালো মতো সই করো।
রবির উদ্দেশ্য বুঝে কিশোর বললো, কাকে কি বলছো, রবি? আফ্রিকায়। সিংহ শিকারে যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছে ও, উড়ন্ত ঘুঘু ফেলে দেয়, আর এ-তো। কিছুই না। মারো, মুসা, ফেলে দাও। বেড়ালটা আমাদের দরকার।
ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছে রবি। বুঝতে পারছে, বিফল হয়েছে সে। স্থির। হয়ে আছে মুসার হাত, রাইফেল ধরা আঙুলগুলো নিথর। ট্রিগারে আলতো চাপ।
পড়ে গেল পঞ্চম হাঁসটাও।
জিতেছি! চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। গলা কাঁপছে। ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড উত্তেজিত, গুলি করার সময় অনেক কষ্টে চেপে রেখেছিলো।
দারুণ দেখিয়েছো, মুসা, গোয়েন্দা-সহকারীর পিঠ চাপড়ে দিলো রবি। চমৎকার নিশানা। বেড়ালটা তার হাতে দিতে দিতে বললো, এই নাও, ফার্স্ট প্রাইজ শেষ। নতুন কোনো পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। অ্যানটিক কয়েকটা ছুরি আছে, ওয়েস্টান কাউবয়রা ব্যবহার করতো।