তোমার ধারণা কোহেনই ব্যাংক ডাকাত? আরেকবার রবিনকে জিজ্ঞেস করলেন চীফ।
হ্যাঁ।
রকি বীচ থেকে পালালো কিনা বুঝতে পারছি না। অনেকেই দেখেছে বলেছে, অথচ কেউ দেখেনি।
কিশোরও তাই মনে করে।
ওর মনে করার যথেষ্ট কারণ নিশ্চয় আছে। ফালতু কথা বলে না কিশোর।
ওর অনুমান, ডাকাতটা এখনও তার জিনিস খুঁজে পায়নি। আর আমা অনুমান, কোহেনই রবির ট্রেলার ঘেঁটেছে তখন। তারমানে সে-ই ডাকাত লুকানো জিনিস খুঁজছিলো।
হ্যাঁ, হতে পারে।
লোকটা অদ্ভুত, মিস্টার কনর বললেন। সব সময় আলাদা আলাদা থেকেছে আমাদের কাছ থেকে। কারও সঙ্গে মিশতে পারেনি।
হুঁ, চোয়াল শক্ত করে ফেললেন চীফ। খুঁজে বের করবোই তাকে।
দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে পুলিশ, আর কনরের রাফনেকরা। চষে ফেলছে পুরো এলাকা। খোলা অঞ্চল, কারনিভলের তাঁবু, বুদ, ট্রেলার, ট্রাক, কিছু বাদ রাখছে না। সব কটা গাড়ি আর ট্রাক যথাস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, কোনোটা নিখোঁজ হয়নি।
কয়েকবার করে পরিত্যক্ত পার্কটায় খুঁজতে গেল ওরা, সাগরের ধারে খুঁজলো। এমনকি কারনিভলের কাছাকাছি পথ, অলি-গুলি-ঘুপচি, বাড়িঘরেও খুঁজে দেখলো।
পেরোলো আরও এক ঘন্টা। তিনজনের একজনকেও পাওয়া গেল না।
এবার সত্যি চিন্তা লাগছে! চীফ বললেন। গেল কোথায়? ওই পার্কটাতেই সূত্র মিলবে। আমিও একবার গিয়ে দেখি।
রাফনেকদের নিয়ে কয়েকজন পুলিশ তখনও পার্কে খুঁজছে। চীফ কাছে যেতে যেতেই চিৎকার শোনা গেল।
ওই যে, প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন ফ্লেচার। নিশ্চয় কিছু পেয়েছে। বেড়ার ফোকর গলে দ্রুত পার্কে ঢুকলেন তিনি। পেছনে ঢুকলেন কনর আর দুই কিশোর। পানির কিনারে জটলা করছে পুলিশ আর রাফনেকরা। কাকে যেন ধরেছে।
ছুটে গেলেন চীফ। জিজ্ঞেস করলেন, ছেলেদের পাওয়া গেছে?
না, চীফ, একজন পুলিশ বললো। একে পেয়েছি।
ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে এগিয়ে এলো কোহেন। আমাকে এভাবে ধরেছে কেন, জিজ্ঞেস করুন তো? আমি কি চোর নাকি?
আগে বলো তুমি এখানে কি করছো? কঠিন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন কনর।
সেটা আমার ব্যাপার।
আর চুপ থাকতে পারলো না রবিন। ও-ই ডাকাত! ওকে জিজ্ঞেস করুন, মুসা আর কিশোরকে কি করেছে!
ডাকাত? গর্জে উঠলো কোহেন। আমি ডাকাত নই, গাধা কোথাকার। ডাকাতটাকে তাড়া করেছিলাম। বলেছিই তো।
গত তিন ঘন্টা তাহলে কি করছিলেন? প্রশ্ন করলেন চীফ। আমরা খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। কোথায় ছিলেন?
ডাকাতটাকে খুঁজতে এসেছি। আমার সন্দেহ…
মিথ্যে বলছে ও! রাগে চেঁচিয়ে উঠলো রবিন। ওর দাড়িও নকল।
কোহেন সরে যাওয়ার আগেই হাত বাড়িয়ে তার দাড়ি চেপে ধরলেন চীফ। হ্যাঁচকা টান দিতেই খুলে চলে এলো আলগা দাড়ি। সবাই তাকিয়ে রইলো লোকটার দিকে।
বেশ, কোহেন বললো। নাহয় নকলই হলো। তাতে কি? নিজে নিজেই টেনে খুলে ফেলতে লাগলো আলগা চুল, গালের জডুল। বেরিয়ে এলো খাটো করে ছাটা চুল, চেহারার বুনো ভাব দূর হয়ে গেল, ভদ্র চেহারার এক তরুণে পরিণত হলো স্ট্রংম্যান। কারনিভলে সবাই চোখে পড়ার মতো পোশাক পরে। মেকাপ নেয়। চুল-দাড়ি আর জড়ুল ছাড়া স্ট্রংম্যানকে লোকে পছন্দ করবে কেন!
কিন্তু আমাকেও তুমি ধোকা দিয়েছে, কোহেন, কনর বললেন। ওসব পরেই চাকরি নিতে এসেছিলে। বুঝিয়েছে, ওগুলো আসল।
মস্ত থাবা নাড়লো স্ট্রংম্যান। আগে সার্কাসে কাজ করেছি, বলেছি আপনাকে। সার্কাস থেকে কারনিভলে আসে না কেউ। কারনিভল থেকেই সার্কাসে যায়, ভালো করেই জানেন। সম্মান খোয়াতে চায় কে? তাই চেহারা লুকিয়ে রেখেছি।
ও স্ট্রংম্যানই নয়, বলে উঠলো রবি। তাই না, বাবা? নিশ্চয় মাছিমানব টিটানভ।
না, ও টিটানভ নয়।
কিন্তু মিথ্যে বলছে, সন্দেহ নেই! রবিন বললো।
কাঁধ ঝাঁকালো স্ট্রংম্যান, ফুলে উঠলো কাঁধের পেশী। তাই নাকি, খোকা? তাহলে… সাগরের দিকে চোখ পড়তে থেমে গেল সে। আরে…?
চীফ, দেখুন, দেখুন, চিৎকার করে বললো একজন পুলিশ।
সাগরের দিকে তাকালো সবাই। কালো পানি চিকচিক করছে চাঁদের আলোয়। এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখলো ওরা বিচিত্র একটা নৌকা এগিয়ে আসছে পাল তুলে। একপাশে কাত হয়ে আছে নৌকাটা, চ্যাপ্টা কি যেন একটা আটকে রয়েছে একধারে, বোঝা যায় না। আরও কাছে এলে চেনা গেল আরোহীদের, মুসা আর কিশোর।
ওরাই! বলে দৌড় দিলো রবিন।
কিশোওর! মুসাআ! চেঁচিয়ে উঠে রবিও দৌড়ালো।
নৌকা তীরে ভিড়তেই লাফিয়ে নেমে ছুটে এলো দুই গোয়েন্দা। কয়েক মিনিটেই অন্যদের জানা হয়ে গেল, দুজনের সাগর-অভিযানের কাহিনী।
ওটায় চড়ে এসেছো? বিশ্বাস করতে পারছেন না যেন চীফ।
দেখলেনই তো, হেসে বললো কিশোর। মুসা খুব বড় নাবিক। চলুন, কারনিভলে। ডাকাতটা কি খুঁজছিলো, জানি। আমার ধারণা, এখনও পায়নি ওটা।
আর পাবেও না, রবিন বললো। ডাকাতটা ধরা পড়েছে। কোহেনকে দেখালো সে।
না, কোহেন ডাকাত নয়।
গোঁ গোঁ করে বললো কোহেন, সেকথাই তো বলছি ওদের এতোক্ষণ। বিশ্বাসই করে না।
ছদ্মবেশে ঢুকেছে ও, কিশোর, কনর বললেন। রবির ট্রেলার ঘাটতে দেখেছো ওকেই।
না, স্যার, শান্ত, দৃঢ়কণ্ঠে বললো, গোয়েন্দাপ্রধান। নৌকার ক্যানভাসের নিচে লুকিয়ে থাকার সময় বুঝেছি লোক একজন নয়, দুজন। ডাকাতকে তাড়া করেছে কোহেন। ফান হাউসে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম আমরা, মনে করেছে আমরাই বুঝি ডাকাত।
কি করে বুঝলে? চীফ জিজ্ঞেস করলেন।