কোহেন আমাদের বোকা বানিয়েছে, স্যার, আঁঝালো কণ্ঠে বললো রবিন। ও-ই ডাকাত। মুসা আর কিশোর কোথায়, জানে।
কোহেন? কি বলছো? কী প্রমাণ আছে?
আমি শিওর, রবির ট্রেলারের কাছে সে একাই ছিলো। তাকেই তাড়া করেছিলাম আমরা।
দ্বিধা করলেন কনর। এটা তো প্রমাণ হলো না। ভুলে যেও না, কোহেন আমাদের সিকিউরিটি ইনচার্জ। সবখানে চোখ রাখা তার দায়িত্ব। কিন্তু তোমাকেও অবিশ্বাস করতে পারছি না। দাঁড়াও, কোহেনকে জিজ্ঞেস করি।
আবার গিয়ে ফান হাউসে ঢুকলেন তিনি।
বাইরে অপেক্ষা করছে ছেলেরা। অস্বস্তি বোধ করছে। এক এক করে দশ মিনিট পেরোলো। অন্ধকারে পায়চারি শুরু করলো রবিন। সে কি ভুল করেছে?
ফিরে এলেন কনর। থমথমে চেহারা। ফান হাউসে নেই কোহেন! রাফনেকদের নাকি বলে গেছে, কারনিভলে যাচ্ছে। কই, আমাকে তো বললো না! বলতে পারতো। চলো, দেখি।
তাড়াতাড়ি কারনিভলে ফিরে এলো ওরা। কোহেনকে তার তাঁবুতে পাওয়া গেল না, ট্রেলারেও নেই। কেউ তাকে দেখেনি। মুসা আর কিশোরকেও না।
এবার তো আর পুলিশের কাছে না গিয়ে উপায় নেই, শঙ্কিত হয়ে বললেন মিস্টার কনর।
.
কালো ছায়াটার দিকে হাত তুলে চেঁচিয়ে উঠলো মুসা, কিশোর, ওটা অ্যানাপামু আইল্যাণ্ড! আশোঁপাশের সবচেয়ে ছোট দ্বীপ। তীর থেকে মাইলখানেকও হবে না। ওটাতে উঠতে পারলেও হয়।
পারবো। ওদিকেই তো ভেসে যাচ্ছি।
নৌকার ধার খামচে ধরে বসে রইলো দুজনে। কাছে আসছে দ্বীপটা। খাড়া পাড়, গাছপালা আর পাথর চোখে পড়ছে এখন। পাড়ের নিচে সাদা ফেনার রেখা।
ওইই, ওখানে সৈকত, বাঁয়ে দেখালো মুসা। মনে হয়…, কথা শেষ না করেই ডাইভ দিয়ে পানিতে পড়লো সে। নৌকার পেছনে ধরে ঠেলে, সাঁতরে নিয়ে চললো তীরের দিকে। অসংখ্য ছোট-বড় পাথর মাথা তুলে রেখেছে এখানে। সেখানে। সেগুলোর ফাঁক দিয়ে নৌকাটাকে ঠেলে নিয়ে এলো তীরের কাছে।
অল্প পানিতে নেমে পড়লো কিশোর। দুজনে মিলে টেনেহিঁচড়ে এনে শুকনোয় তুললো নৌকা।
যাক, বাঁচলাম! বালিতে বসে পড়লো মুসা।
কিশোর বসলো তার পাশে। বাঁচলাম আর কই? দ্বীপান্তরে পাঠানো হয়েছে আমাদের। মুসা, এখুনি ফিরে যেতে হবে, নইলে ডাকাতটাকে আটকাতে পারবো না।
বেশি বড় না, দেখছো? কিশোরের কথায় কান নেই মুসার, দ্বীপ দেখছে। ছোট। মানুষজন কিছু নেই। খালি গাছ আর পাথর। কালকের আগে যেতে পারবো না এই দ্বীপ থেকে, তা-ও কপাল ভালো হলে। যদি ধার দিয়ে কোনো নৌকা-টৌকা যায়।
কাল অনেক দেরি হয়ে যাবে। এখানকার প্রায় সব দ্বীপেই ইমারজেন্সি শেল্টার আছে শুনেছি। এটাতেও থাকতে পারে। চলো তো দেখি, কোথায়?
আগে আগে চললো মুসা। বেশি খুঁজতে হলো না। ছোট একটা কেবিন পাওয়া গেল। ভেতরে একটা কাঠের টেবিল, কয়েকটা চেয়ার আর বাঙ্ক। একটা স্টোভ আর টিনজাত কিছু খাবারও সংরক্ষিত আছে। কেবিনের পেছনে একটা ছাউনি। তাতে রয়েছে দুটো ছোট নৌকার মাস্তুল, হাতলশুদ্ধ একটা ছোট হাল, দড়ির বাণ্ডিল, বোর্ড, আর নৌকার জন্যে দরকার আরও কিছু টুকিটাকি জিনিস। হাতুড়ি আর পেরেকও আছে।
রেডিও নিই, কিশোর, মুসা বললো। যে-আশায় এসেছে। কাল সকাল পর্যন্ত থাকতেই হচ্ছে আমাদের। যদি তার আগে কেউ উদ্ধার না করে।
জবাব দিলো না কিশোর। ছাউনির জিনিসগুলোর দিকে তাকিয়ে কি ভাবছে।
মুসা, হঠাৎ বললো সে। পাল হলে তো আমাদের নৌকাটাকে চালানো যায়, তাই না?
যায়। পাল আর হাল থাকলে।
মাস্তুল আর হাল তো এখানেই আছে। নৌকায় আছে ক্যানভাস। পাল তৈরি করা যায়।
বেশি বড় মাস্তুল, বিশেষ ভরসা করতে পারছে না মুসা। স্টেপিং থাকলেও লাগানো যাবে কিনা সন্দেহ।
স্টেপিং?
কিশোর পাশাও তাহলে অনেক কিছু জানে না, হাসলো মুসা। বিদ্যে ঝাড়ার দুর্লভ একটা সুযোগ পেলো। সকেট আর সাপোর্টিং ফ্রেমে মাস্তুল আটকানোর ব্যবস্থাকে নাবিকরা বলে স্টেপিং। মাস্তুলের গোড়া তো কোথাও আটকাতে হয়, নাকি?
এখানে দুটো বুম দেখতে পাচ্ছি। ওগুলোর একটা দিয়ে স্টেপ বানানো যায় না?
নাক চুলকালো মুসা। হয়তো যায়। সীটের মধ্যে গর্ত করে ঢুকিয়ে দিতে পারলে বোর্ড তো আছেই। টুলবক্সে করাত আর বাটালি থাকলে বানিয়ে ফেলা। যাবে। না না, কিশোর, হবে না, ভুলে গিয়েছিলাম!
কেন হবে না?
কীলই নেই নৌকাটার, তিক্তকণ্ঠে বললো মুসা। সেন্টারবোর্ড, সাইডবোর্ড, কিছু নেই। পালে বাতাস ধাক্কা দিলেই নৌকা উল্টে যাবে। আর যদি নেহায়েত কপালগুণে না-ও ওল্টায়, চালানো যাবে না। কিছুতেই সোজা চালানো যাবে না নৌকা।
ধপ করে বসে পড়লো কিশোর। আঙুল কামড়াতে শুরু করলো। তাকিয়ে আছে মাস্তুল আর বুমগুলোর দিকে। খানিক পরে বললো, মুসা, মাস্তুলগুলো ভাসবে?
ভাসতে পারে। কেন, মাস্তুলে চড়ে বাড়ি যাবার কথা ভাবছো নাকি?
মুসার রসিকতায় কান দিলো না কিশোর। মাস্তুলের সঙ্গে যদি পেরেক মেরে বোর্ড লাগিয়ে দিই? বোর্ডের আরেক ধারে পেরেক মেরে লাগিয়ে দিই নৌকার সঙ্গে, তাহলে…
খাইছে, কিশোর, খাইছে! চটাস করে নিজের উরুতে চাটি মারলো মুসা। বাজিমাত করে ফেলেছো! হবে, কাজ হবে এতে! আর যেতে তো হবে মাত্র এক মাইল। বাতাসের গতি ঠিক থাকলে ভারসাম্য বজায় থাকবে নৌকার। চমৎকার!
তাহলে আর দেরি কেন? উঠে পড়লো কিশোর। এসো, চটপট সেরে ফেলি।
.
১৯.
চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে সব কথা যে বলেছে রবিন, সে-ও প্রায় দুই ঘন্টা হয়ে গেছে। খুজতে বেরিয়েছে পুলিশ। কিন্তু এখনও কিশোর, মুসা কিংবা কোহেনের হদিস করতে পারেনি। কারনিভলের ভেতরে-বাইরে অস্থিরভাবে পায়চারি করছেন চীফ। শো চলছে। উপভোগ করছে দর্শকরা। বুঝতেই পারছে না, সাংঘাতিক ব্যাপার। ঘটে গেছে ভেতরে ভেতরে। উক্তষ্ঠিত হয়ে আছেন মিস্টার কনর, রবি আর রবিন।