কোহেন?
হ্যাঁ, সে তাড়া করাতেই..ডাকাতটা কি খুঁজেছে, এবং সেটা কোথায় আছে, জানি এখন।
ও পায়নি?
না, সবাই আমরা ভুল জায়গায়…
ভীষণ দুলে উঠলো নৌকা। ধার খামচে ধরলো কিশোর। ক্যানভাসের তলায় ঝট করে উঠে বসলো মুসা। কান পেতে শুনছে। বললো, কিশোর, বড় বেশি দুলছে না? ঘষার শব্দও পাচ্ছি না আর। কি হয়েছে? ক্যানভাস তোলো তো।
দুজনে ঠেলে সরালো ক্যানভাসের চাদর। মুখে আঘাত হানলো বাতাস। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে চিত হয়ে পড়লো কিশোর, নৌকার দুলুনিতে।
খোলা সাগরে চলে এসেছি! চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। চারপাশে দেখছে।
পরিত্যক্ত পার্কের কালো ছায়াগুলো এখন অনেক পেছনে, ছোট হয়ে আসছে, কারনিভলের আলোকসজ্জা।
নৌকা বাঁধার দড়িটা দেখলো কিশোর। কেটে দিয়েছে! পুলে উঠে দড়ি কেটে দিয়ে চলে গেছে ব্যাটা।
এখন ভাটা, পানির দিকে তাকিয়ে আছে মুসা। স্রোতে পড়েছে নৌকা। দেখছো, কি জোরে ভেসে যাচ্ছি?
জলদি ফেরাও, মুসা!
কি করে? দাঁড় নেই, মোটর নেই। সাঁতরে যে যাবো, তারও উপায় নেই। যা স্রোত আর ঢেউ, সাহস হচ্ছে না।
হুঁ। তুমি না পারলে আমি পারবো? নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। এক কাজ করা যায়। সিগন্যাল।
পকেট থেকে হোমারটা বের করলো কিশোর। কয়েকবার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলো। নৌকার তলায় পানি জমে আছে, তাতে ভিজে গেছে পকেট, পকেটে রাখা যন্ত্রটা। হবে না, হতাশ ভঙ্গিতে হাত নাড়লো কিশোর। নষ্ট হয়ে গেছে।
সাহায্যের জন্যে চিৎকার শুরু করলো দুজনে। কিন্তু বাতাসের শব্দে হারিয়ে গেল চিৎকার। তীর থেকে অনেক সরে এসেছে। চারপাশে থৈ থৈ করছে সাগরের কালো পানি। একটা নৌকা চোখে পড়লো না। তীরের আলো এখন দূরে। বড় বড় ঢেউ ভাঙছে নৌকার গায়ে, কিনার দিয়ে ভেতরে ঢুকছে, ছিটে লেগে ভিজছে শরীর।
নৌকার তলায় ঝনঝন করছে দুটো টিনের পাত্র, গায়ে গায়ে বাড়ি লেগে। পানি সেঁচার জন্যে রাখা হয়েছে ওগুলো। একটা তুলে নিলো মুসা। আরেকটা কিশোরকে নিতে বলে সেঁচতে শুরু করলো নৌকায় জমা পানি।
যে ভাবেই হোক, কিশোরকে বললো। ফিরে যেতেই হবে আমাদের।
পারবো না। যা স্রোত। বাতাস অবশ্য বিপরীত দিক থেকে বইছে, অনেক খানি ঠেকিয়ে রাখছে নৌকাটাকে। স্রোতের টানে নইলে এতোক্ষণে আরও দূরে। ভেসে যেতো। বার দুই পাত্র বোঝাই করে ছপাত ছপাত করে পানি ফেললো। মুসা। দাঁড় ছাড়া হবে না, থেমে গেল সে। কিশোরের দিকে তাকালো।
মুসার কাঁধের ওপর দিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে গোয়েন্দাপ্রধান। মুসা! ওটা।
ঝট করে ঘুরে চাইলো মুসা।
সামনে বিশাল এক কালো ছায়া। সাগরের নিচ থেকে উঠছে যেন, মাথা তুলেছে ওদের মাথা ছাড়িয়ে অনেক ওপরে।
.
১৮.
ঘুরে, যেখান থেকে শুরু করেছিলো, সেখানে এসে দাঁড়ালো আবার রবি আর রবিন। কিশোর বা মুসাকে দেখলো না।
রবি, কিছু হয়েছে, চারপাশে দেখতে দেখতে বললো রবিন। এখানেই তো ওদের আসার কথা।
দেখো! ফান হাউসের দেয়ালে বড় একটা ফোকর দেখালো রবি। নতুন হয়েছে গর্তটা। আমি শিওর।
জ্যোৎস্নায় আরও বিষণ্ণ লাগছে পরিত্যক্ত পার্কটা।
চেঁচিয়ে ডাকলো রবিন, কিশোওর! মুসাআ!
কে জানি আসছে! বলে উঠলো রবি।
ছুটন্ত পায়ের আওয়াজ এসে থামলো বেড়ার ওপাশে, ফোকর গলে ভেতরে ঢুকলো দুজন লোক।
তোমার বাবা, রবি।
কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার কনর, কি ব্যাপার?
আমাদের কিছু হয়নি, বাবা, আমরা ঠিকই আছি। মুসা আর কিশোরকে পাচ্ছি না। আমার ট্রেলারে কি জানি খুঁজছিলো একটা লোক। তাকে তাড়া করে এলাম এখানে। দুভাগ হয়ে খুঁজতে গেলাম। আমি আর রবিন একদিকে, কিশোর আর মুসা আরেকদিকে। তারপর আর ওদের খবর নেই।
কোহেন তাহলে ঠিকই বলেছে!
মিস্টার কনরের পেছনে এসে দাঁড়ালো দাড়িওয়ালা স্ট্রংম্যান। চাঁদের আলোয় চকচক করছে তার ঘামে ভেজা নয় কাধ, আর কালো বুট। বললো, আমিও দেখেছি, রবির ট্রেলারে খুঁজছে। পিছে পিছে ছুটে এলাম এখানে। ফান হাউসে ঢুকে গায়েব হয়ে গেল ব্যাটা।
মুসা আর কিশোরকে দেখেননি? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
না তো।
রবি, কনর বললেন। দৌড়ে যাও তো। বাতি নিয়ে এসো। কয়েকজন রাফনেককে আসতে বলবে।
ছুটে চলে গেল রবি।
রবিন আর কোহেনকে নিয়ে পরিত্যক্ত পার্কে খুঁজতে শুরু করলেন কনর। মুসা আর কিশোরকে পাওয়া গেল না।
বাতি আর রাফনেকদের নিয়ে এলো রবি। শক্তিশালী বৈদ্যুতিক লণ্ঠন নিয়ে খুঁজতে বেরোলেন কনর। কোহেন আর রাফনেকদের সঙ্গে নিলেন। ফান হাউসের বাইরে দাঁড়াতে বলে গেলেন রবিন আর রবিকে।
রবি, রবিন বললো। কোহেনও নাকি ট্রেলারের কাছে লোকটাকে দেখেছে। আমরা তাহলে দুজনকে না দেখে একজনকে দেখলাম কেন?
বুঝতে পারছি না, রবিন। দেখা তো উচিত ছিলো।
আমার মনে হয় না দুজন। কোহেনকেই তাড়া করেছি।
কোহেনই ডাকাত?
মাথা আঁকালো রবিন। প্রথম থেকেই ওকে কিশোরের সন্দেহ। তোমরা ওর আসল নাম জানো না। আড়িপাতা স্বভাব। আমাদের ওপর চোখ রাখে। কারনিভল। বন্ধ করার জন্যে বোঝায় তোমার বাবাকে। কিশোর আর মুসাকে সে-ই আটকে রেখে এখন ধোকা দিতে চাইছে, আমাদের। চলো, দেখি তোমার বাবা কি করছেন?
দ্রুত ফান হাউসের দিকে চললো ওরা। ফাঁকফোকর দিয়ে বেরোচ্ছে লণ্ঠনের আলো। ঢোকার মুখেই দেখা হয়ে গেল কনরের সঙ্গে, বেরিয়ে আসছেন।
নাহ, কোনো চিহ্নই নেই, কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন তিনি। যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে!