স্যাবোটাজ! রবিন বলে উঠলো।
হ্যাঁ। ঠিকই আন্দাজ করেছিলে তোমরা, গোলমাল চলছে এই কারনিভলে। কেউ ধ্বংস করে দিতে চাইছে।
না, স্যার, কিশোর বললো। কারনিভলের ক্ষতি করার জন্যে করছে না ডাকাতটা।
ডাকাত? মানে ব্যাংক ডাকাত? কিশোরের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কনর। স্যান মেটিওতে যে ডাকাতি হয়েছিলো?
হ্যাঁ। আপনার কারনিভলেরই লোক সে।
জ্বলে উঠলেন মিস্টার কনর। বুঝে শুনে কথা বলো, ছেলে! পুলিশ অনেক খোঁজাখুঁজি করেছে, পায়নি।
আপনার কারনিভলের লোক বলেই তো পায়নি। আগুন লাগিয়ে সবার নজর অন্যদিকে সরিয়ে দিয়েছে। পুলিশকে তো ফাঁকি দিয়েছেই, সেই সুযোগে ছদ্মবেশ খুলেছে, কানা বেড়ালের ভেতরেও কিছু লুকিয়েছে।
তুমি ভুল করছো, কিশোর। ওই চেহারার কেউ নেই এখানে। ওরকম টাট্ট কারও হাতে নেই।
কি করে বুঝবেন? বলে ফেললো মুসা। ছদ্মবেশে থাকে। হাতের টাট্টাও নকল।
নীরবে তিন গোয়েন্দার ওপর চোখ বোলালেন কনর। হ্যাঁ, সেটা সম্ভব। কিন্তু কে…।
আমি জানি, বাধা দিয়ে বললো কিশোর। আমি শিওর, ডাকাতটা মাছিমানব টিটানভ।
টিটানভ? কি বলছো!
ঠিকই বলছি। ওর পালানোর ধরন, আলমারিতে পাওয়া কাপড়, সবই প্রমাণ করে লোকটা ওই মাছিমানব…
না, কিশোর, হাত তুলে তাকে থামালেন কনর। টিটানভ নয়। তোমার কথায় যুক্তি আছে, স্বীকার করছি। কিন্তু পুলিশ্নের মুখে সব শোনার পর আমার প্রথমেই মনে হয়েছিলো ওর কথা। আমিও ভেবেছি, এই কারনিভলে লুকিয়ে আছে। সে, আমি চিনতে পারছি না। কারনিভলের পোশাক পরা থাকলে, সাজ ধরে থাকলে চেনা কঠিন। তাই সবাইকে পোশাক ছাড়া দেখেছি। টিটানভের মতো। লাগেনি কাউকে।
দে-দেখেছেন…, তোতলাতে শুরু করলো কিশোর।
দেখেছি। বেশির ভাগই ওরা বয়স্ক। আরেকটা কথা, কারনিভলে ডাকাত থাকলে আগুন লাগা আর কিঙের ছাড়া পাওয়ার ব্যাপারটা নাহয় বোঝা গেল, কিন্তু পনি রাইডের কথা কি বলবে? আর এখন এই নাগরদোলা নষ্ট করা?
দমে গেছে কিশোর। মনে তো হচ্ছে গোলমাল পাকানোর জন্যে।
ঠিক তাই। গোলমাল পাকিয়ে কারনিভলের সর্বনাশ করে দিতে চায়, বলতে দ্বিধা করছেন কনর। শেষে বলেই ফেললেন, হয়তো এর মূলে রবির নানী। ডাকাতটাই কানা বেড়ালের পেছনে লেগেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সে বাইরের লোক। যা চাইছিলো, পেয়ে গেছে, আর এখানে আসার দরকার নেই তার। নাগরদোলা নষ্ট করায় তার হাত নেই।
হতে পারে, মুসা বললো।
তবু, চোখ খোলা রাখতে বলবো তোমাদের। আর কোনো দুর্ঘটনা যাতে ঘটাতে না পারে কেউ। আমার কাজ আছে। যাও, তোমরা গিয়ে কারনিভল দেখো, নজরও রাখো। খুব সাবধানে থাকবে।
থাকবো, কথা দিলো রবি।
হাসলেন কনর।
সরে এলো ছেলেরা। নিচের ঠোঁট কামড়ালো কিশোর। বললো, আমি এখনও বিশ্বাস করি, আমার অনুমানই ঠিক। .
কিন্তু মিস্টার কনরের কথায়ও যুক্তি আছে, রবিন বললো। নাগরদোলা নষ্ট করার কোনো কারণই নেই ডাকাতটার।
এতোক্ষণে হয়তো বহুদূরে পালিয়েছে সে, বললো রবি।
আমার মনে হয় না, জোর দিয়ে বললো কিশোর। এখানেই আছে এখনও। কারনিভল বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে অন্য কর্মীদের ভিড়ে মিশে যেতে পারে সে, যাওয়ার সময় কারো সন্দেহ না হয়।
পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করবে না? প্রশ্ন তুললো রবি।
হয়তো করবে। আচ্ছা, ঠিক করে বলো তো পাঁচটাই বেড়াল ছিলো তো? না আরও বেশি?
পাঁচটাই।
বুঝতে পারছি না…, আনমনে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। বেড়ালের ভেতর থেকে পড়ে-উড়ে যায়নি তো? হয়তো বেড়ালের ভেতরে পায়নি। তাহলে নিশ্চয় গিয়ে ট্রেলারটায় খুঁজবে, যেটাতে বেড়ালগুলো রাখা ছিলো! রবি, কোথায় ট্রেলারটা?
যেখানে এখন থাকার কথা। শুটিং গ্যালারির কাছে। সারাক্ষণ যাতে চোখ রাখতে পারি।
কিন্তু এখন রাখছ না! চেঁচিয়ে উঠলো কিশোর। রাখতে পারোনি, কারণ, নাগরদোলাটা পড়ে যাওয়ায় দেখতে চলে এসেছে!
খাইছে! চমকে উঠলো মুসা। আরেকবার!
কেন নয়? এরকম করে দুবার সফল হয়েছে আগে। দোলাটার ক্ষতি সামান্য। কারনিভল বন্ধের চেষ্টায় থাকলে ওটা একেবারে বিকল করে দিতো। জলদি, শুটিং গ্যালারিতে। কুইক! বলতে বলতেই দৌড় দিলো সে।
দর্শকের ভিড় বেড়েছে।
তাদের পাশ কাটিয়ে গ্যালারির পেছনে চলে এলো ছেলেরা। আলো এখানে কম, ছায়া বেশি। কিন্তু দেখতে অসুবিধে হলোনা, মাটিতে ছড়িয়ে আছে পুতুল, খেলনা, পুরস্কারের নানা জিনিস।
আরি, ভেঙে ফেলেছে? আঁতকে উঠলো রবি।
দেখো দেখো! হাত তুললো রবিন।
চারজনেই দেখলো, ট্রেলারের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো একটা মূর্তি। দৌড় দিলো অন্ধকারের দিকে। খোলা জায়গার পরে একসারি তাঁবু পেরিয়ে, বেড়ার ফোকর গলে পার্কে ঢুকে যাওয়ার ইচ্ছে।
ধরো ব্যাটাকে! বলেই পেছনে ছুটলো মুসা।
.
১৬.
বেড়ার ওপাশে চলে গেল চোরটা।
এক এক করে ফোকর গলে ছেলেরাও চলে এলো। ছায়ায় ঢাকা নীরব পার্ক। চাঁদ উঠছে। পর্বতের দিক থেকে আসা বাতাসের জোর বেড়েছে আরও। ঝুঁকি দিয়ে কাঁপিয়ে দিচ্ছে পুরনো, নড়বড়ে নাগরদোলার স্তম্ভগুলোকে, ক্যাঁচকোঁচ করছে ওগুলো, নিষ্প্রাণ গোঙানি।
কই? নিচু কণ্ঠে বললো রবিন। গেল কই!
চুপ, ফিসফিসিয়ে বললো কিশোর। শোনো।
বেড়ার ছায়ায় গা ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে ওরা। মেরামত করা নাগরদোলার শব্দ হচ্ছে ভীষণ, বহুদূর থেকে শোনা যাবে। পার্কের অন্ধকার ছায়া থেকে কাউকে বেরোতে দেখা গেল না, কেউ নড়লো না। বায়ে, টানেল অভ লাভ-এ ছলাত-ছল করে আছড়ে পড়ছে পানি। মাঝে সাঝে মৃদু হুটোপুটির শব্দ, নিশ্চয় ইঁদুর। এছাড়া আর কোনো আওয়াজ নেই।