হু, মাথা দোলালো মুসা। ওরকম একটা ছবি সবার চোখেই পড়ে।
সবাইকে দেখানোর জন্যেই লাগিয়েছে। আসল হলে কিছুতেই দেখাতো না, বরং লুকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতো। আমার বিশ্বাস, লোকটার বয়েস বেশি না, টাট্টুও নেই। নিশ্চয় মাছিমানব টিটানভ। কারনিভলের অভিজ্ঞ কর্মী বলেই মিস্টার কনরকে বোকা বানাতে পেরেছে।
কিন্তু মাছিমানবের খেলা তো দেখায় না।
অন্য খেলা দেখাচ্ছে।
কিন্তু তাকে চিনতে পারছেন না কেন, মিস্টার কনর?
হয়তো কাছে থেকে দেখেননি আগে। তাছাড়া অনেক দিন জেলে ছিলো টিটানভ। এতোদিনেও চেহারা বদলায়নি, এটা জোর করে বলা যায় না। তার ওপর হয়তো এমন কোনো সাজ নিয়েছে, যাতে চেহারার আরও পরিবর্তন হয়। এসব করতে কোনো অসুবিধে হয় না তার। কারনিভলে প্রত্যেক কর্মীরই আলাদা। ট্রেলার আছে।
বুঝলাম, হাত তুললো মুসা। আচ্ছা, বেড়ালগুলো কেন দরকার তার? ভেতরে টাকা রেখেছিলো?
সেটা তো সম্ভবই না। এতো টাকা, জায়গাই হবে না। তবে, টাকাগুলো কোথায় লুকিয়েছে, সেই নির্দেশ রয়েছে হয়তো। কিংবা লকার-টকারের চাবি।
হু, রবিন বললো। তা-ই করেছে। আগুন লাগানোর পরই কাজটা করেছে। যাতে তাকে সার্চ করা হলেও পুলিশ কিছু না পায়।
আমারও তাই মনে হচ্ছে, একমত হলো মুসা।
বেড়াল নিয়ে তো যথেষ্ট হাঙ্গামা করলো। টাকাগুলো বের করবে কখন? এখনি বের করে নিয়ে পালাবে, নাকি আরও কিছুদিন থাকবে কারনিভলে?
থাকাটাই তো স্বাভাবিক, কিশোর বললো। ওখানেই নিরাপদ। আমি হলে তা-ই ভাবতাম–যদি বুঝতাম আমার চেহারা চিনছে না কেউ, আমাকে ডাকাত বলে সন্দেহ করছে না। পুলিশ কড়া নজর রেখেছে। হুট করে কেউ এখন কারনিভল ছাড়লেই তাকে সন্দেহ কররে। নাহ, সে বেরোবে না। রকি বীচে থাকতে কিছুতেই নয়।
তো, আমাদের এখন কি করা? মুসা জিজ্ঞেস করলো। কারনিভলে আর যাবো-টাবো?
হ্যাঁ, যাবো। চলো।
দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরোলো ওরা। সাইকেল নিয়ে রওনা হলো কারনিভলে। সাঁঝ হয়েছে তখন। পর্বতের দিক থেকে আসা বাতাসের বেগ বাড়ছে।
কারনিভলের কাছে এসে গেটের বাইরে সাইকেল পার্ক করলো তিন গোয়েন্দা। লোক ঢুকতে আরম্ভ করেছে। তাদের সঙ্গে মিশে গেল ওরাও।
হঠাৎ শোনা গেল চিৎকার। এদিক ওদিক দৌড় দিলো কেউ, কেউ ছুটে গেল সামনে।
কারনিভলে কিছু হয়েছে! চেঁচিয়ে বললো মুসা।
অ্যাকসিডেন্ট! বলে উঠলো রবিন।
দৌড়াতে শুরু করেছে ততোক্ষণে কিশোর।
.
১৫.
ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এলো তিন গোয়েন্দা। কাত হয়ে মাটিতে পড়ে আছে নাগরদোলাটা। চেঁচিয়ে রাফনেকদের আদেশ নির্দেশ দিচ্ছেন মিস্টার কনর।
রবিকেও পাওয়া গেল সেখানে।
কি হয়েছে, রবি? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
জানি না, ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললো রবি। ঘুরছিলো। সওয়ারি নিতে তৈরি, হঠাৎ ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়া বেরোতে শুরু করলো। কাত হয়ে পড়ে গেল দোলাটা। তিনটে ঘোড়া ভেঙেছে, দেখো।
নাগরদোলাটা আবার খাড়া করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে রাফনেকরা। ভাঙা ঘোড়াগুলো মেরামতে ব্যস্ত কয়েকজন। ইঞ্জিন পরীক্ষা করছেন মিস্টার কনর।
কয়েকজন কর্মী এসে ঘিরে দাঁড়ালো তাঁকে। উঠে দাঁড়িয়ে কপালের ঘাম। মুছলেন তিনি।
আর কতো অ্যাকসিডেন্ট দেখবো, কনর? কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলো কোহেন।
আপনার যন্ত্রপাতিই খারাপ হয়ে গেছে, বললো মারকাস দ্য হারকিউলিস। আমরা ভয় পেতে শুরু করেছি।
যন্ত্রপাতি যে খারাপ হয়নি, কনর বললেন। ভালো করেই জানো।
নাগরদোলা অতো সহজে ভাঙে না, বিষণ্ণ কণ্ঠে বললো সদাবিষঃ লম্বা ভড়। এটা আগাম হুঁশিয়ারি! আনলাকি শো। অবশ্যই বন্ধ করে দেয়া উচিত।
হ্যাঁ, আনলাকি শো! আগুনখেকোও একমত। হয়তো কিঙের ছাড়া পাওয়াটাও দুর্ঘটনাই ছিলো। তাহলে আরও তিনটে দুর্ঘটনার শুরু হলো।
গুঞ্জন উঠলো কর্মীদের মাঝে। কেউ মাথা ঝাঁকালো, কেউ দোলালো।
বন্ধই করে দেয়া উচিত, মিস্টার কনর, বললো এক দড়াবাজ।
বড় জোর আজকের রাতটা চালাতে পারেন, লম্বা ভাড় বললো। তারপর আর একটা শো-ও নয়।
চালাবেন কি করে? কোহেন জানতে চাইলো। নাগরদোলা না চললে তো আমাদের বেতনই দিতে পারবেন না…
অসহায় ভঙ্গিতে হাত নাড়লেন কনর। কাজ করতে করতে উঠে এসে জরুরী গলায় তাকে কি বললো একজন রাফনেক। কনরের উদ্বিগ্ন চেহারায় হাসি ফুটলো। আধঘন্টার মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে নাগরদোলা। একটা বিয়ারিং ভেঙেছে, আর কিছু না। যাও, যার যার কাজে যাও।
আরও খারাপ অ্যাকসিডেন্ট হবে, আমি জানি, বিড়বিড় করলো লম্বা ভাঁড়।.
তবে বেশির ভাগ কর্মীর মুখেই হাসি ফুটলো আবার। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চলে গেল যার যার বুদের দিকে, কোহেন ছাড়া।
শো দেখানো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, কনর, বললো স্ট্রংম্যান। এতো অ্যাকসিডেন্ট! শো বন্ধ করে দেয়া উচিত, বলে আর দাঁড়ালো না।
চেয়ে রইলেন কনর। চোখ ফেরালেন ছেলেদের দিকে। উৎকণ্ঠা ঢাকতে পারছেন না, ঢাকার চেষ্টাও করলেন না। তার ভবিষ্যৎ, তাঁর ছেলের ভবিষ্যৎ, সব নির্ভর করছে এই কারনিভলের ওপর।
কাজ করবে ওরা, বাবা? রবি জিজ্ঞেস করলো।
করবে। বেশি আশা করে না কারনিভলের লোকে। গণ্ডগোলের কথা সহজে। ভুলে যায়। আর কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেই হলো।
নাগরদোলাটা ঠিক হবে?
হবে, গম্ভীর হয়ে গেলেন। সে-জন্যে ভাবি না আমি। ভয় পাচ্ছি অন্য কারণে। মেকানিক বললো, বিয়ারিঙে শক্ত কিছু ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিলো। কয়েকটা বন্টু আলগা করে দিয়েছিলো। ঘোরার সময় বিয়ারিঙ আটকে যাওয়ায় প্রচণ্ড চাপে ছিঁড়ে গেছে বল্টুগুলো।