আরমানে তুমি ভুল করছে। এখানে নেই সে।
পত্রিকাগুলো ভালোমতো দেখে, তবেই বলছি। সাতজন লোক সাত জায়গায় দেখেছে লোকটাকে, দুশো মাইলের ব্যবধানে। সে-কারণেই বলা যায়, কেউই দেখেনি তাকে। ওরা মিথ্যে বলেছে।
মাথা আঁকিয়ে রবিন বললো, তোমার কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু সে যে এখানেই আছে, এ-ব্যাপারে শিওর হলে কি করে?
উঠে ছোট ঘরটায় পায়চারি শুরু করলো কিশোর। ওই ব্যাংক ডাকাতির ওপর লেখা যতোগুলো খবর বেরিয়েছে, সব পড়লাম। তিনটে কাগজে লিখেছে, স্যান মেটিওর দুটোয়, আর লস অ্যাঞ্জেলেসের একটাতে। আজ সকালে স্যান মেটিওতে গিয়েছিলাম।
কোথায় গিয়েছিলে? লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো মুসা।
স্যান মেটিওতে, হাসলো কিশোর। তোমরা তখন ব্যস্ত। একজন ঘর পরিষ্কার করছিলে, আরেকজন বাগান সাফ…আমারটাও কাজই, তবে অন্যরকম। পুরনো মাল কিনতে পাঠালো চাচা, বোরিস আর রোভারকে সঙ্গে দিয়ে…
দীর্ঘশ্বাস ফেললো মুসা। ধপ করে বসে পড়লো আবার টুলে। কিছু মানুষের। কপালই থাকে ভালো। কাজের মাঝেও আনন্দ। আর আমি শালার কপালপোড়া, সেদিন করলাম বাগান সাফ, আজ করতে হলো ঘরবাড়ি পরিষ্কার, নাক দিয়ে বিচিত্র শব্দ করে ক্ষোভ প্রকাশ করলো সে। ওই করে করেই মরবো।
ডাকাতির ব্যাপারে কি জানলে, কিশোর? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
অনেক কিছু। কারনিভলে শুক্রবার রাতে আগুন লেগেছে। সেদিন, স্যান। মেটিওতে ব্যাংক খোলা ছিলো বিকেল ছটা পর্যন্ত। আর যেহেতু উইকএণ্ড, কারনিভল শুরু হয়েছিলো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই। তাছাড়া সেদিন ওখানে কারনিভলের শেষ দিন। রাতেই স্যান মেটিও ছাড়ার কথা, রকি বীচে এসে খোলার কথা শনিবারে।
খাইছে! ডাকাতটা কারনিভলের লোক হলে মহা সুযোগ।
হ্যাঁ, সুযোগটা নিয়েছিলো সে। আগাগোড়া কালো পোশাক, মাথায় কালো হুড, পায়ে কালো টেনিস শু পরে ডাকাতি করতে গিয়েছিলো।
মাছিমানব টিটানভ! রবিন বললো।
মাথা নেড়ে সায় জানালো কিশোর। অনেকেই তার হাত দেখতে পেয়েছে। শার্টের হাতা গুটিয়ে কনুইর ওপর তুলে রেখেছিলো।
নিশ্চয় টাট্টুও দেখেছে লোকে।
হ্যাঁ। ছটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে ব্যাংকে ঢুকলো সে। একজন গার্ডকে ধরে নিয়ে ভল্টে ঢুকলো। ওকে জিম্মি করেই বেরিয়ে এলো টাকা নিয়ে। তারপর মাথায় বাড়ি মেরে লোকটাকে বেহুশ করে ব্যাংকের পেছনের গলি দিয়ে দিলো দৌড়। সে দৌড় দিতেই ব্যাংকের ঘন্টি বাজিয়ে দেয়া হলো। কয়েক মিনিটেই পৌঁছে গেল পুলিশ।
ডাকাতটাকে নিশ্চয় ধরতে পারেনি? মুসা বললো।
না, পারেনি। কি করে যে পালালো, সেটাই বুঝতে পারেনি কেউ। গলিটায়। তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে পুলিশ। অন্ধগলি ওটা, একদিক খোলা। তিনদিকে তিনটা বিরাট উঁচু বাড়ি, সব জানালা বন্ধ। গলি থেকে যে বাড়িতে ঢুকবে সে উপায়ও ছিলো না। ভোলা মুখ দিয়ে ঢুকেছে পুলিশ। সেদিক দিয়েও যেতে পারেনি। ডাকাতটা। অথচ, গায়েব।
পার্ক থেকে যেভাবে গায়েব হয়েছিলো, বিড়বিড় করলো রবিন।
দেয়াল বেয়ে উঠেছে, বললো মুসা। মাছিমানব।
আমার তাই ধারণা, নিচের ঠোঁটে টান দিয়ে ছেড়ে দিলো কিশোর। দেখতে দেখতে ছড়িয়ে পড়লো খবর। কারনিভলের বাইরে তখন পাহারায় ছিলো একজন। পুলিশ। ডাকাতির খবর সে-ও শুনেছে। কারনিভলে ঢোকার জন্যে হুড়োহুড়ি করছে লোকে, ওদেরকে শান্ত করার জন্যে এগিয়ে গেল সে। লোকের ধাক্কায় পড়ে গেল একজুন, কোট গেল উল্টে। তার কালো শার্ট দেখে ফেললো পুলিশ। সন্দেহ হলো। গিয়ে লোকটার হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে কোটের হাতা নামিয়ে দিলো। দেখে ফেললো টাট্টু…
কাকতালীয় হয়ে গেল না? মুসা বললো। লোকটার পড়ে যাওয়া। আর পড়বি তো পড় একেবারে পুলিশের সামনে।
হ্যাঁ, হয়েছে। তবে এটা নতুন কিছু না। অনেক বড় বড় রহস্য সমাধান। হয়েছে এরকম কাকতালীয় ঘটনা থেকে। বলা যায়, অপরাধীদের দুর্ভাগ্যই এসব। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়, প্রবাদটা তো আর খামোকা হয়নি। যাই হোক, ভিড়ের মধ্যে লোকটাকে আটকাতে পারলো না পুলিশ। এক ঝাড়া মেরে হাত ছাড়িয়ে দৌড় দিলো। কাছেই আরেকজন পুলিশ ছিলো, চেঁচিয়ে সাহায্যের জন্যে তাকে ডাকলো প্ৰথমজন। খবর পেয়ে আরও পুলিশ ছুটে এলো। ঘিরে ফেলা। হলো পুরো এলাকা। নিশ্চিত হলো, ডাকাতটাকে ধরে ফেলবেই। কিন্তু
আগুন লেগে গেল! বলে উঠলো রবিন।
হ্যাঁ। ডাকাত ধরার চেয়ে আগুন নেভাননা জরুরী। সেদিকে নজর দিলো পুলিশ। আগুন নেভার পর আবার ডাকাত খুঁজতে লাগলো। কিন্তু পেলো না। না। ডাকাত, না টাকা।
কোথায় গেল? রবিনের প্রশ্ন।
যাবে আবার কোথায়? কারনিভলেই ছিলো। ভালো করেই জানে সে, পুলিশের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্যে ওটাই সব চেয়ে নিরাপদ জায়গা। স্যান মেটিও থেকে বেরিয়ে আসার জন্যেও। সেসব বুঝে, ভেবেচিন্তেই প্ল্যান করেছে সে। কখন। ডাকাতি করবে, কোনদিক দিয়ে পালিয়ে এসে কোথায় লুকোবে, সবু। সহজ, নিরাপদ পরিকল্পনা।
কিন্তু পুলিশ দেখে ফেলায়, বললো রবিন। অসুবিধায় পড়লো ডাকাতটা। আগুন লাগিয়ে দিলো, সবার নজর সেদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্যে। এই সুযোগে ছদ্মবেশ খুলে বেরিয়ে এলো সে।
তারমানে, মুসা বললো। আমরাও সেদিন ওকে ছদ্মবেশেই দেখেছি?
তাই তো মনে হয়, বললো কিশোর। মুখে রঙ লাগিয়েছিলো, কিংবা প্লাস্টিকের মুখোশ। চুলেও রঙ করেছিলো নিশ্চয়। হয়তো নাকটাও আলগা। হাতে নকল টাট্ট।