সংক্ষেপে তাকে সব জানালো ছেলেরা।
যাক, নম্বর রেখে কাজের কাজ করেছে, চীফ বললেন। পাওয়া যাবে। তা, বেড়ালগুলো কেন চায়, বুঝেছো?
না, স্যার, রবিন বললো।
ভেতরে দামি কিছু থাকতে পারে, বললো মুসা। কিশোরের ধারণা, স্মাগলিং কেস।
মাথা ঝোঁকালেন চীফ। অসম্ভব না। ঠিক আছে, সীমান্ত রক্ষীদের হুশিয়ার করে দিচ্ছি, নীল গাড়িটা আর কানা বেড়াল দেখলেই যেন আটকায়, বলেই বেরিয়ে গেলেন তিনি।
তখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রবি।
কিশোর চুপ করে আছে। বেড়ালের ভেতর কি আছে, জানার আগেই পুলিশ ডাকতে হলো বলে তার মন খারাপ। পুলিশকে সব জানিয়ে চমকে দেয়া আর হলো না। এতো দেরি লাগছে? …রেখো না, চেষ্টা করো।
আবার ডায়াল করলো রবি।
কিছুক্ষণ পর ফিরে এলেন ফ্লেচার। আগের চেয়ে গম্ভীর। কিসে হাত দিয়েছো, জানো না তোমরা। খবর নিতে গিয়ে জানলাম, ওরকম একটা লোক, হাতে টাট্টু আঁকা, গত হপ্তায় ব্যাংক ডাকাতি করে পালিয়েছে। সাত লাখ ডলার। নিয়ে গেছে।
নিশ্চয় স্যান মেটিওতে, তাই না, স্যার? ইয়ান ফ্লেচার বলার আগেই বলে। ফেললো কিশোর।
তুমি কি করে জানলে? কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইলেন চীফ।
কারনিভলে আগুন, স্যার। স্যান মেটিওতে লেগেছিলো। আমার স্থির বিশ্বাস, ওই বেড়াল-চোর রবিদের কারনিভলের কেউ। ডাকাতির পর আগুন লাগার জন্যে সে-ই দায়ী।
তুমি শিওর?
শিওর। কাকতালীয় ঘটনা এতো বেশি ঘটতে পারে না। আপনি কারনিভলে গিয়ে…
পেয়েছি, কিশোর, বলে উঠলো রবি। বাবাকে পেয়েছি।
বাবার সঙ্গে কথা বলছে রবি, চুপ করে শুনছে সবাই। কি জবাব আসে শোনার জন্যে অধীর। একজন পুলিশ এসে ডাকতে আবার বেরিয়ে গেলেন চীফ।
হ্যাঁ, বাবা, কি সাংঘাতিক, রবি বলছে। আমি দুঃখিত, বাবা। সবাই আছে? হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি এখুনি আসছি, রিসিভার রেখে দিয়ে কিশোরের দিকে ফিরলো সে। বাবা বলছে আমি ছাড়া সবাই আছে এখন। শো শুরু হয়েছে। এক্ষুণি যেতে হচ্ছে আমাকে। গিয়ে খাওয়ার সময়ও পাবো না, গ্যালারিতে ঢুকতে হবে।
খাওয়ার কথায় চমকে উঠলো মুসা। খাইছে রে খাইছে! এতোক্ষণ না খেয়ে আছি! মনেই ছিলো না। হায় হায় হায়, নাড়ি তো সব হজম।
কিশোর ছাড়া সবাই হাসলো। সে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন।
ফিরে এলেন চীফ। জানালেন, গাড়িটা পাওয়া গেছে। এখান থেকে মাত্র চার ব্লক দূরে, রাস্তার পাশে বেড়ালটাও ছিলো গাড়িতে। পেট কাটা, ভেতরে কিছু নেই। ঘাসের ওপর চাকার দাগ। হয় চোরটা আরেকটা গাড়ি রেখে এসেছিলো ওখানে, নয়তো অন্য কোনো গাড়ি এসে নিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে, যা দরকার, পেয়ে গেছে। যতো তাড়াতাড়ি পারে রকি বীচ থেকে পালানোর চেষ্টা করবে এখন। তবে পুলিশও সতর্ক, পালাতে দেবে না। ধরা পড়বেই। সময় লাগবে আরকি, কিশোরের দিকে তাকালেন। তোমাদের আর কিছু করার নেই। বাড়ি চলে যাও।
.
১৪.
পরদিন রবিন বা মুসা, দুজনের কেউই বেরোতে পারলো না। বাড়িতে জরুরী কাজ, ব্যস্ত থাকতে হলো। কাজ করলো বটে, কিন্তু মন পড়ে রইলো ইয়ার্ডে। চোরটাকে ধরতে পারেনি, সেটা একটা ব্যাপার। তার ওপর কয়েকবার ফোন করেও কিশোরকে পায়নি। সে নেই।
ডিনারের সময় অন্যমনস্ক হয়ে রইলো রবিন।
হেসে বললেন তার বাবা, চীফের কাছে শুনলাম, একটা ডাকাতকে ধরতে ধরতেও নাকি ধরতে পারোনি।
জানতামই না যে ও ডাকাত, বাবা। কারনিভলের একটা ছেলেকে সাহায্য করতে গিয়েছিলাম। কেঁচো খুঁড়তে বেরোলো সাপ।
পারলে মানুষকে সাহায্য করা উচিত। ঠিকই করেছ।
ডাকাতটার আর কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে, বাবা? চীফ কিছু বললেন?
ধরতে পারেনি এখনও। পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
এই খবরে খুশি হতে পারলো না রবিন। খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লো, ইয়ার্ডে যাবে। ভাবছে, এই প্রথম একটা কেসে সফল হতে পারলো না তিন গোয়েন্দা।
হেডকোয়ার্টারে পাওয়া গেল কিশোরকে। সামনে একগাদা খবরের কাগজ, পড়ছে, মাঝে মাঝে নোট নিচ্ছে।
কি করছো? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
মাথা নাড়লো গোয়েন্দাপ্রধান, বোঝালো এখন কথা বলতে চায় না। কিছুটা বিরক্ত হয়েই কয়েকটা শামুক আর ঝিনুক দেখতে লাগলো রবিন, স্কিন ডাইভিঙের। সময় ওগুলো তুলে এনেছে ওরাই। সময় কাটে না। শেষে গিয়ে চোখ রাখলো সর্ব দর্শনে। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে স্যালভিজ ইয়ার্ডটাই দেখতে শুরু করলো। রোদেলা দিন ছিলো, গোধূলি তাই যেতে দেরি করছে এখনও।
ট্রাক বোঝাই করে মাল এনেছেন রাশেদ আঙ্কেল, রবিন জানালো।
আনমনে ঘোঁৎ করলো একবার কিশোর। পড়া বাদ দিয়ে চোখ বন্ধ করে। ভাবনায় ডুবে গেল।
আবার সর্ব-দর্শনে চোখ রাখলো রবিন। কিছুক্ষণ পর বললো, মুসা আসছে।
এবার ঘোঁৎও করলো না কিশোর।
ট্রাপডোর দিয়ে উঠে এসে দীর্ঘ এক মুহূর্ত কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইলো মুসা। রবিনের দিকে চেয়ে ভুরু নাচালো, কি করছে?
আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন? দেখছো না?
এতো খবরের কাগজ কেন? আবারও রবিনকেই জিজ্ঞেস করলো মুসা। টাট্টুওলার জন্যে বিজ্ঞাপন দেবে নাকি পেপারে?একটা টুলে বসলো।
চোখ মেললো কিশোর, হাসলো। তার আর দরকার হবে না, সেকেণ্ড। লোকটা কোথায় আছে, জানি।
জানো? চেঁচিয়ে উঠলো রবিন। কোথায়?
যেখানে ছিলো, সেখানেই। রকি বীচে। কারনিভলে।
বাবা বললো, লোকটাকে নাকি ছয় জায়গায় দেখা গেছে? চীফ নাকি বলেছেন তাকে।
আসলে সাত জায়গায় হবে।