ও-ব্যাটাই! চেঁচালো রবিন। বেড়ালটা পেয়ে গেছে।
ধরো, ধরো চোরটাকে! রাগে চিৎকার করে উঠলো রবি।
রবির গলা শুনে ফিরে তাকালো লোকটা। ছেলেদের দেখলো, বোরিসকে দেখলো, তারপর ঘুরে দিলো দৌড়। একদৌড়ে গিয়ে ঢুকে গেল বাড়ির পেছনে গাছপালার ভেতরে।
খেপা ষাঁড়ের মতো গোঁ গোঁ করতে করতে পিছু নিলো বোরিস। কিন্তু বিশালদেহী ব্যাভারিয়ানের তুলনায় লোকটা অনেক দ্রুতগতি। বোরিস আর ছেলেরা গাছের জটলার ভেতরে থাকতেই রাস্তায় উঠে গেল সে।
বোরিসকে ছাড়িয়ে গেল মুসা, রাস্তায় উঠলো। পেছনে হাঁপাতে হাঁপাতে আসছে অন্যেরা। সবাই দেখলো, রাস্তার পাশে রাখা নীল গাড়িটাতে উঠলো চোর। ইঞ্জিন স্টার্ট নিলো, শাঁ করে বেরিয়ে গেল গাড়ি।
নাহ, পারলাম না! দাঁড়িয়ে পড়লো মুসা।
গেল! পাশে এসে দাঁড়ালো রবি।
যাবে কোথায়? আশা ছাড়তে পারছে না রবিন। লাইসেন্স নম্বর আছে, পুলিশ খুঁজে বের করে ফেলবে।
তাতে সময় লাগবে, নথি, গোয়েন্দাপ্রধানের কণ্ঠে হতাশার সুর। তবে তাড়াতাড়িতে কোনো সূত্র ফেলে গিয়ে থাকতে পারে। চলো, বাড়ির ভেতরে চলো। দেখি খুঁজে। ৩
বাড়ির কাছে এসে দেখলো, সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছেন একজন সুন্দরী মহিলা, পেছনে একটা ছেলে। দলটাকে দেখে সতর্ক হলেন তিনি, চোখে সন্দেহ। চোরটাকে চেনো তোমরা?
চিনি, ম্যাডাম, কিশোর বললো। পাজী লোক। এ-বাড়িতে আসবে, জানতাম। তাই পিছে পিছে এসেছি। দেরি না হলে…
তোমরা চোর ধরতে এসেছো? বিশ্বাস করতে পারছেন না মহিলা। ওরকম। একটা ক্রিমিন্যালকে? তোমরা তো ছেলেমানুষ।
কালো হয়ে গেল কিশোরের চেহারা। এই ছেলেমানুষ কথাটা শুনলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তার। বয়েস কম হলেই যেন বুদ্ধিশুদ্ধি থাকতে নেই, ক্ষমতা থাকতে পারে না, অবহেলার যোগ্য। আমরা ছেলেমানুষ সন্দেহ নেই, ম্যাডাম, ইচ্ছে থাকলেও কণ্ঠের ঝাঁঝ পুরোপুরি চাপতে পারলো না সে। কিন্তু অনেক বুড়ো মানুষের চেয়ে আমরা অভিজ্ঞ, অন্তত চোর ধরার ব্যাপারে। শুধু চোর নয়, ঝানু। ঝানু ডাকাত, ধরেছি। …আপনি নিশ্চয় মিসেস ট্যানার?
তুমি কি করে নাম জানলে? মহিলা অবাক।
চোরটা যে এখানেই আসবে, জানতাম, মহিলার প্রশ্নের জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করলো না কিশোর। তার কপাল ভালো, আটকে ফেলেছিলো আমাদেরকে। এখানে এসে ওকে পাবো, তা-ই আশা করিনি। তা আপনি বোধহয়। এই এলেন?
হ্যাঁ, ডিককে নিয়ে বাইরে বেরিয়েছিলাম। কয়েক মিনিট আগে এসেছি। এসেই ওপরে চলে গেল সে। গিয়েই চিৎকার শুরু করলো।
দশ-এগারোর বেশি না ছেলেটার বয়েস। বললো, চিৎকার করবো না তো কি। সিঁড়িতে দেখি চোরটা, ঘাপটি মেরে ছিলো। আমাকে দেখেই নেমে এসে আমার হাত থেকে বেড়ালটা কেড়ে নিলো!
ওটা নিয়েই বেরিয়েছিলে নাকি? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
হ্যাঁ। পুরস্কার পেয়েছি তো, বন্ধুদের দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম।
এই জন্যেই। বোঝা গেল, মাথা দোলালো কিশোর। এজন্যেই এতো দেরি করেছে। খুঁজেছে, বেড়ালটা পায়নি। বসেছিলো। যেই তোমার হাতে দেখেছে, খাবলা মেরে নিয়ে পালিয়েছে।
ডিকের হাত থেকে নিয়ে নামছিলো, আমাকে দেখে আবার উঠে গেছে, মিসেস ট্যানার বললেন। বোধহয় দোতলার জানালা দিয়ে বেরিয়েছে।
বেরিয়ে দেয়াল বেয়ে নেমেছে, মুসা বললো।
মাছিমানবের মতো, যোগ করলো রবিন।
ডিক, জিজ্ঞেস করলো কিশোর। বেড়ালটার ভেতরে কিছু পেয়েছো? ছিলো?
কি করে জানবো? আমি কি খুলেছি নাকি?
কথাটা ঠিক। কেন খুলতে যাবে ডিক?
যা দরকার, নিয়ে পালিয়েছে, আফসোস করলো রবিন। আর শয়তানটাকে খুঁজে পাবো না।
লাইসেন্স নম্বর তো আছে, মুসা বললো। পাবো না কেন?
পেতে সময় লাগবে, মুসা,একই কথা আরেকবার বললো কিশোর। এখন…
এখন আর আমাদের কিছু করার নেই, বাধা দিয়ে বললো বোরিস। পুলিশকে ফোন করো।
পুলিশকে? কিশোরের ইচ্ছে নেই। কিন্তু বোরিসভাই…
কোনো কিন্তু নয়। এখুনি যাও, ফোন করো। লোকটা আস্ত বদমাশ। কখন যে কি করে বসে ঠিক নেই। পুলিশকে অবশ্যই জানানো দরকার।
রবিনও বোরিসের সঙ্গে একমত হয়ে বললো, ঠিকই, কিশোর, এখন আর। আমাদের কিছু করার নেই।
করো না, মুসাও বললো। মিস্টার ফ্লেচারকেই ফোন করে সব কথা বলো।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো কিশোর। ঝুলে পড়লো কাধ। বেশ, হাতের তালু চুলকালো সে। মিসেস ট্যানার, আপনার ফোনটা ব্যবহার করা যাবে?
নিশ্চয়। করো।
দল বেঁধে ঘরে ঢুকলো সবাই। কিশোরই ফোন করলো থানায়। পুলিশ চীফ, ইয়ান ফ্লেচারকে পাওয়া গেল। শুনে বললেন, আসছেন। লাইন কেটে রিসিভার হাতে রেখেই রবিনকে বললো কিশোর, এক কাজ করো না। তোমার বাবাকে, ফোন করে জিজ্ঞেস করো, কারনিভলের কোনো কর্মচারী অনুপস্থিত কিনা।
অনুপস্থিত? কি সাংঘাতিক, কিশোর, তোমাকে আগেই বলেছি, ওরকম টাই ওলা কেউ নেই আমাদের কারনিভলে।
ছদ্মবেশ নেয়া কঠিন কিছু না। হাতের টাট্টু ঢেকে রাখাও সহজ।
হু। ঠিক আছে, করছি। বাবাকে পাওয়া মুশকিল হবে। শো-এর সময় এখন, নিশ্চয় খুব ব্যস্ত। তবু, দেখি।
হ্যাঁ, দেখো, রবিন বললো।
ডায়াল করে রিসিভার কানে ধরে রইলো রবি। ওপাশে রিঙ হয়েই চলেছে, ধরছে না কেউ। বললাম না পাওয়া যাবে না। অফিসে নেই। বক্স অফিসে বলে দেখি, ডেকে আনতে পারে কিনা।
পুলিশের সাইরেন শোনা গেল। রিসিভার তখনও কানেই ঠেকিয়ে রেখেছে। রবি। বাড়ির বাইরে এসে থামলো গাড়ি। কয়েকজন পুলিশ নিয়ে ঢুকলেন ইয়ান ফ্লেচার।