বাইরে চেঁচিয়ে চলেছে বারকার। ইতিমধ্যেই দর্শক জমেছে কয়েকজন।
নাগরদোলায় চড়লো তিন গোয়েন্দা। কয়েক চক্কর ঘুরে নেমে এলো। ব্রাস রিঙের কাছে এসে ছোঁয়ার চেষ্টা করলো। রবিন আর কিশোর ব্যর্থ হলো, মুসা। পারলো একবার। ভাড়ের ভাড়ামি দেখলো কিছুক্ষণ, তারপর চললো গেম বুদের। দিকে, যেখানে ডার্ট ছেঁড়া, রিং নিক্ষেপ আর রাইফেল শুটিঙের প্রতিযোগিতা হয়। ই আমার মনে হয় ফাঁকিবাজি আছে, খানিকক্ষণ দেখে বললো রবিন। দেখছো
কি সহজেই জায়গামতো লাগিয়ে দিচ্ছে।
না, মাথা নাড়লো কিশোর। মারতে মারতে ওস্তাদ হয়ে গেছে ওরা। হিসেব করে, মারে…
তার কথা শেষ হলো না। চিৎকার শোনা গেল, ফাঁকিবাজ! দাও, দাও ওটা! আমি পুরস্কার পেয়েছি!
চেঁচাচ্ছে লম্বা এক প্রৌঢ়, মাথায় ব্লাউচ হ্যাট। পুরু গোঁফ। চোখে কালো কাঁচের চশমা। অন্ধকার হয়ে আসছে, এ-সময় সাধারণত ওরকম চশমা পরে না। লোকে। শুটিং গ্যালারির দায়িত্বে এক সোনালি চুল কিশোর, তাকেই গালিগালাজ করছে লোকটা। ছেলেটার হাতে একটা স্টাফ করা জানোয়ার। হঠাৎ ওটা কেড়ে নিয়ে তিন গোয়েন্দার দিকে দৌড়ে এলো প্রৌঢ়।
চেঁচিয়ে উঠলো সোনালি চুল ছেলেটা, ধরো, ধরো ওকে! চোর, চোর!
.
০২.
ছেলেটার চিৎকারে পেছনে তাকাতে গিয়ে সোজা এসে কিশোরের গায়ের ওপর পড়লো লোকটা। তাল সামলাতে না পেরে তাকে নিয়ে পড়লো মাটিতে।
আঁউউ করে উঠলো কিশোর।
ছুটাছুটি শুরু করলো কয়েকজন দর্শক। দৌড়ে এলো প্রহরী।
এই, এই, থামো! কালো চশমাওয়ালাকে বললো এক প্রহরী।
উঠে দাঁড়িয়েছে লোকটা। জানোয়ারটা বগলের তলায় চেপে রেখে কিশোরকে ধরলো। আরেক হাতে বেরিয়ে এসেছে একটা লম্বা ছুরি। কর্কশ কন্ঠে হুমকি দিলো, খবরদার, কাছে আসবে না! কিশোরকে টেনে নিয়ে চললো গেটের দিকে।
বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রবিন আর মুসা। চোরটাকে ধরার জন্যে এগোলো দুই প্রহরী। ওদেরকে দেখে ফেললো সে। ক্ষণিকের জন্যে অসতর্ক হলো, মুহূর্তটার সদ্ব্যবহার করলো কিশোর। ঝাড়া দিয়ে লোকটার হাত থেকে ছুটে দিলো দৌড়। গাল দিয়ে উঠে তাকে ধরার জন্যে হাত বাড়ালো সে, ধরতে পারলো না। কিশোরের কাঁধে বাড়ি লেগে হাত থেকে ছুটে গেল ছুরিটা। উড়ে গিয়ে পড়লো মাটিতে।
তোলার সময় নেই বুঝে সে-চেষ্টা করলো না চোরটা। বগলের জানোয়ার টাকে হাতে নিয়ে ঝেড়ে দৌড় দিলো গেটের দিকে।
প্রহরীরা পিছু নিলো। ছেলেরাও ছুটলো ওদের পেছনে। ঘুরে সাগরের ধার দিয়ে দৌড়াতে লাগলো লোকটা। উঁচু কাঠের বেড়ার এক ফাঁক দিয়ে ঢুকে গেল পরিত্যক্ত পার্কের ভেতরে।
পিস্তল বের করলো দুই প্রহরী। ইশারায় ছেলেদেরকে আসতে বারণ করে নিজেরা সাবধানে ঢুকলো পার্কের ভেতরে। আর ফেরার নাম নেই। অধৈর্য হয়ে উঠলো কিশোর। বললো, নিশ্চয় কিছু হয়েছে। চলো তো দেখি!
বেড়ার ধার ঘুরেই থেমে গেল আবার। প্রহরীরা দাঁড়িয়ে আছে। চোরটা নেই।
ঘাসে ঢাকা ছোট্ট একটুকরো খোলা জায়গা। ডানে উঁচু বেড়া, বাঁয়ে মহাসাগর। পানিতে গিয়ে নেমেছে বেড়ার একমাথা। বেড়ার ওই অংশ কাঠের বদলে চোখা শিকের তৈরি। ওরা যেদিক দিয়ে ঢুকেছে, একমাত্র সেদিকটাই খোলা।
গেল কোনখান দিয়ে! বিড়বিড় করলো এক প্রহরী।
সাঁতরে যায়নি তো? রবিন বললো।
না। তাহলে দেখে ফেলতাম।
কিন্তু এখানেই তো ঢুকতে দেখলাম, ভোঁতা গলায় কিশোর বললো।
চারপাশে দেখতে দেখতে আচমকা চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। দেখো! এগিয়ে। গিয়ে কি একটা জিনিস কুড়িয়ে নিলো। সবাই দেখলো, সেই স্টাফ করা জানোয়ারটা, যেটা নিয়ে পালাচ্ছিলো চোর। তারমানে ব্যাটা এখানে এসেছিলো।
নিয়ে পালাতে অসুবিধে হচ্ছিলো বোধহয়, রবিন মন্তব্য করলো। ফেলে। গেছে। কিন্তু পালালো কিভাবে?
নিশ্চয় বেড়ায় কোনো ফাঁকফোকর আছে, বললো আরেক প্রহরী।
কিংবা দরজা, বললো দ্বিতীয় প্রহরী।
বেড়ার নিচে সুড়ঙ্গও থাকতে পারে, মুসার অনুমান। বেড়ার একমাথা থেকে আরেকমাথা ভালোমতো খুঁজে দেখলো ওরা। মানুষ পালাতে পারে, এরকম কোনো গুপ্তপথই দেখলো না।
নাহ, কিচ্ছু নেই, আনমনে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর।
ব্যাটার নিশ্চয় পাখা গজিয়েছে, এক প্রহরী বললো। উড়ে যাওয়া ছাড়া তো আর কোনো পথ দেখি না।
তাই তো, বললো দ্বিতীয় প্রহরী। বারো ফটু উঁচু বেড়া। ওড়া ছাড়া উপায় কী?
চিন্তিত ভঙ্গিতে বেড়ার ওপরের দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। সাঁতরে যায়নি বলছেন। বেড়ার নিচে সুড়ঙ্গ নেই। মানুষের পাখা গজানোও সম্ভব নয়। বেড়া পেরোনোর একটাই পথ, ডিঙিয়ে যাওয়া।
মাথা খারাপ! বললো প্রথম প্রহরী। ওই বেড়া ডিঙাবে কি করে?
কিশোর, মুসাও বললো। কিভাবে? বেয়ে ওঠা অসম্ভব।
আমিও তাই বলি, একমত হলো রবিন।
যাওয়ার আর যখন কোনো পথ নেই, অসম্ভবকেই কোনোভাবে সম্ভব করেছে, কিশোর বললো। এছাড়া বিশ্বাস যোগ্য আর কি ব্যাখ্যা আছে?
আর কোনো ব্যাখ্যা দিতে না পেরে এক প্রহরী বললো, চলে যখন গেছে, ওটা নিয়ে ভেবে আর লাভ নেই। আমাদের জিনিস তো ফেলে গেছে। চলো, যাই। জানোয়ারটার জন্যে মুসার দিকে হাত বাড়ালো সে।
বেড়ার দিকে তখন তাকিয়ে আছে কিশোর। প্রহরীর দিকে ফিলো। গ্যালারিতেই যাচ্ছি। আমরাই নিয়ে যাই।
তাহলে তো ভালোই হয়। আমাদের সময় বাঁচে। নিয়ে যাও। আমরা থানায় যাচ্ছি ডায়েরী করাতে।