এই সময় মনে পড়লো হোমারটার কথা। পকেটেই তো রয়েছে। বিপদে পড়লে জরুরী সঙ্কেত পাঠাবে কিশোর।
তাড়াতাড়ি পকেট থেকে যন্ত্রটা বের করলো মুসা। নাহ, নীরব। লাল আলোও জ্বলছে না।
.
১২.
মেঝেতে বসে মুখ তুলে গোয়েন্দাপ্রধানের দিকে তাকালো রবি। সিগন্যাল কতদূর। যাবে, কিশোর?
তিন মাইল, বলেই আরেকবার গুঙিয়ে উঠলো কিশোর। উঁহুহু, কারনিভল এখান থেকে পাঁচ মাইল। মুসা আমাদের সঙ্কেত পাবে না।
আবার একে অন্যের দিকে তাকালো ওরা।
আবার চেঁচালে কেমন হয়? রবিন পরামর্শ দিলো। কেউ না কেউ, একসময় না একসময় আমাদের চিৎকার শুনতে পাবেই।
যদি ততোক্ষণ গলায় জোর থাকে আমাদের, বললো কিশোর। শোনো, বেরোনোর উপায় আমাদেরকেই করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমন কোনো ঘর নেই, চেষ্টা করলে যেটা থেকে বেরোনো যায় না। কোথাও না কোথাও দুর্বলতা, থাকেই। সেটা পাই কিনা, খুঁজে দেখি।
কিন্তু কোথায় খুঁজবো? রবি বললো।
হয়তো কিছু একটা মিস করেছি আমরা। রবিন, দেয়ালগুলো দেখো তুমি। পাইপ গেছে যেখান দিয়ে, সেসব জায়গা ভালোমতো দেখবে। আমি জানালাগুলো দেখছি। রবি, তুমি দরজা দেখো। কোণের আলমারিটাও বাদ দেবে না।
নতুন উদ্যমে কাজে লাগলো ওরা।
কিন্তু অল্পক্ষণ পরেই আবার দমে গেল রবি। দরজাগুলো আগের মতোই লাগলো তার কাছে, কোথাও দুর্বলতা পেলো না। দেয়ালে কিছু পেলো না রবিন।
থামলে কেন? চালিয়ে যাও, উৎসাহ দিলো কিশোর। চালিয়ে যাও। কিছু না। কিছু পাওয়া যাবেই।
জানালার প্রতিটি ইঞ্চি পরখ করছে গোয়েন্দাপ্রধান। চার হাতপায়ে ভর দিয়ে এখন দেয়ালের নিচের অংশ দেখছে রবিন।
আলমারির ভেতরে খুঁজছে রবি। হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো, দেখে যাও! দেখে যাও! হাতে একপাতা টাইপ করা কাগজ, আলমারিতে পেয়েছে। কারভিলের ইটিনর্যারি। কোথায় কোথায় যাবে, কোনখান থেকে কোনখানে, সেই তালিকা। আমাদেরটার। ক্যালিফোর্নিয়ার পুরো শিডিউল রয়েছে।
তাহলে এই লোকটা তোমাদের কারনিভলেই কেউ, নিজের যুক্তির স্বপক্ষে প্রমাণ পেয়ে খুশি হলো কিশোর।
কিংবা ওদের কারনিভলকে অনুসরণ করছে, অন্য যুক্তি দেখালো রবিন।
রবি, জিজ্ঞেস করলো কিশোর। লোকটার গলা চিনেছো? কথা যে বললো, চেনা চেনা লাগলো?
না কখনও শুনিনি।
মিনিটখানেক চুপ করে রইলো কিশোর, ভাবলো। গলাও হয়তো নকল। করেছে। খসখসে ভাবটা কেমন যেন মেকি।
রবি আর রবিন দুজনেই গিয়ে আলমারিতে খুঁজতে লাগলো আবার। কয়েকটা তাকে মলাটের বাক্স আর পুরনো হার্ডবোর্ড বোঝাই। এক তাকে অদ্ভুত একটা পোশাক পেয়ে টেনে বের করলো রবিন। দেখো তো, এটা কি? আমি চিনতে পারলাম না।
কালো কাপড়ে তৈরি, আলখেল্লার মতো একটা পোশাক, তবে ঢোলা নয়, আঁটো। কাঁধের সঙ্গে জোড়া দেয়া হুড–তাতে মাথা, কান, গাল সব ঢেকে যায়, শুধু মুখের সামনের দিকটা খোলা থাকে।
ভুরু কোঁচকালো কিশোর। কারনিভলের পোশাক-টোশাক না তো? রবি?
অবাক হয়ে পোশাকটা দেখছে রবি। নীরবে-এগিয়ে এসে হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো। ইতিমধ্যে তাক থেকে একজোড়া জুতো বের করলো। রবিন। ওগুলো অদ্ভুত। কালো ক্যানূভাসে তৈরি, রবারের সোল। তলাটা বিচিত্র, অনেকটা সাকশন কাপের মতো দেখতে।
দেখে আরও অবাক হলো রবি।
কি, চিনেছো? কিশোর জিজ্ঞেস করলো।
মাথা নাড়লো রবি। আমাদের কারনিভলে কেউ পরে না, কিন্তু, আবার মাথা নাড়লো সে। বলতে দ্বিধা করছে। ঠিক শিওর না, তবে যদূর মনে পড়ে, মাছিমানব টিটানভ পরতো ওরকম পোশাক।
কী মানব? রবিন অবাক।
মাছিমানব। আমি তখন ছোট, নানীর কাছে থাকি। শিকাগোর এক ছোট সার্কাসে পার্টটাইম কাজ করতো বাবা। টিটানভ শো দেখাতো তখন ওই সার্কাসে। তার শো আমি দেখেছি। বেশিদিন থাকতে পারেনি ওখানে। চুরির দায়ে চাকরি যায়। পরে শুনেছি, জেলে গেছে। হয়তো আবারও চুরি করে ধরা পড়েছিলো পুলিশের হাতে।
জেল! কিশোর বললো। টাট্টু আঁকা লোকটার সঙ্গে তার চেহারার মিল আছে?
চেহারা মনে নেই। তবে বয়েসের মিল আছে। মাছিমানবের পোশাক ছাড়া দেখিনি তো কখনও..,
এই পোশাকটা কি ঠিক ওরকম?
হ্যাঁ। জুতোগুলোও। এরকম জুতো ছাড়া খেলা দেখাতে পারে না। মাছিমানবেরা। তলায় সাকশন কাপ দেখছে না, উঁচু দেয়াল বেয়ে উঠতে কাজে লাগে। প্রায় যে-কোনো দেয়াল…
কিন্তু রবির কথাই কানে ঢুকছে না কিশোরের। আনমনে বিড়বিড় করলো, সেদিনের সেই বুড়ো চোর…পার্ক থেকে গায়েব হয়ে গেল…উঁচু বেড়া ডিঙিয়ে… তুড়ি বাজালো। ঠিক! মাছিমানবের পক্ষেই সম্ভব!
জন্তুজানোয়ারও সামলাতে পারতো টিটানভ, আরেকটা জরুরী তথ্য জানালো রবি। সিংহও।
জলদি বেরোতে হবে এখান থেকে! মাথা ঝাড়া দিলো কিশোর। নইলে বেড়ালটা হাতিয়ে নিয়ে যাবে চলে। আর ধরা যাবে না। চেঁচাও, চেঁচাও! ফাটিয়ে ফেলো গলা!
জানালার কাছে সমবেত হয়ে আবার চিৎকার শুরু করলো ওরা।
.
ইস, এখনও আসছে না কেন কিশোররা? উৎকণ্ঠা বাড়ছে মুসার। শেষে আর থাকতে না পেরে মনস্থির করে ফেললো, খুঁজতেই বেরোবে।
আধঘন্টা পর সাইকেল চালিয়ে স্যালভিজ ইয়ার্ডে ঢুকলো সে। সন্ধ্যা ঘনিয়েছে। বোরিসকে দেখা গেল, ছোট ট্রাকটা থেকে মাল নামাচ্ছে। নামানো প্রায়। শেষ।
সাইকেল থেকে না নেমেই জিজ্ঞেস করলো মুসা, বোরিসভাই, কিশোর আর রবিনকে দেখেছেন?