গিয়ে তাহলে কথা বলুন ওর সাথে, ছেলেটা বললো। আমাদের বাড়ির কাছেই থাকে। টোয়েন্টি ফোর কেলহ্যাম স্ট্রীট।
এহহে, দেরি হয়ে গেল, হঠাৎ যেন তাড়াহুড়া বেড়ে গেল লোকটার। ক্ষণিকের জন্যে তাকালো রবিনের দিকে। জ্বলে উঠলো না? নাকি চোখের ভুল? ঠিক বুঝতে পারলো না রবিন। অল্প কয়েকটা ছেলে রয়েছে আর ঘরে। ওরা যতোক্ষণ থাকে, সে-ও থাকবে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো।
আরেকটা ছেলের কাছে একটা লাল-কালো ডোরাকাটা কানা বেড়াল কিনলো লোকটা। আর কারও কাছে নেই ওরকম বেড়াল। হাত নেড়ে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বললো লোকটা। বাধ্য হয়ে বেরিয়ে আসতে হলো রবিনকে। সাইকেল নিয়ে তাড়াতাড়ি চললো পাম গাছগুলোর কাছে।
অনেকক্ষণ থাকলে, রবি বললো।
জানার চেষ্টা করলাম, হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছলো রবিন। লোকটা লম্বা, বাদামী চামড়া, বাহুতে একটা পাল-তোলা-জাহাজের টাট্টু। কারনিভলের কেউ?
পাল-তোলা-জাহাজ? চিবুক ডললো রবি। না, ওরকম কেউ তো নেই। কয়েকজন রাফনেকের হাতে টাট্টু আছে, তবে জাহাজ নয়। আর চেহারাও…নাহ, মেলে না কারও সাথে।
চিন্তিত লাগছে কিশোরকে। কারনিভলে হয়তো লুকিয়ে রাখে, বললো সে। আর মেকআপ নিয়ে মুখের রঙ বদলানোও কিছু না। রবিন, রবি গিয়ে ওর গাড়িটা দেখে এসেছে। কোনো সূত্র পায়নি। লাইসেন্দ্র নম্বর লিখে নিয়েছি।
আসল কথাটাই বলিনি এখনও, কিশোর। ও আমাদের বেড়াল কিনেছে।
বাড়ি পড়লো যেন কিশোরের মাথায়। কিনেছে! নকলটা!
পকেট থেকে একশো ডলার বের করে দেখালো রবিন। এই যে, টাকা। ওরকম দেখতে আরও চারটে কিনেছে। তারমধ্যে তিনটে আসল মনে হলো।
তোমাকে চিনেছে?
কি করে? আগে কখনও দেখা হয়নি তো।
কাল রাতের চোরটাই না তো? নিজেকেই করলো প্রশ্নটা। যদি সে হয়, আর তোমাকে চিনে থাকে, তাহলে আমাদের বোকা বানানোর জন্যেই কিনেছে বেড়ালটা।
আসল তাহলে তিনটে পেয়েছে? রবি বললো।
আরও একটার খোঁজ দিলো একটা ছেলে। কারনিভলে নাকি পুরস্কার পেয়েছে। থাকে চব্বিশ নম্বর কেলহ্যাম স্ট্রীটে। নাম ডিক ট্যানার।
এটাই আসল খবর, রবিন! চুটকি বাজালো কিশোর। তিনটে কিনেছে, আমার ধারণা, চার নম্বরটাও কিনতে যাবে। আমরাও যাবো ডিকের বাড়িতে। তার আগে দেখি বেড়াল তিনটে নিয়ে লোকটা কি করে…
কিশোর, বলে উঠলো রবি। শেষে যে ছেলেটা ঢুকেছিলো, সে-ও বেরোচ্ছে।
ছেলেটার বগলে একটা সাদা বেড়াল। বিক্রি করতে পারেনি। লোকটাকেও দেখা গেল দরজায়। আর কেউ আসছে কিনা বোধহয় দেখতে বেরিয়েছে। নির্জন। পথে চোখ বোলালো, তারপর ঢুকে গেল আবার ভেতরে।
এসো, বলে, উঠে দাঁড়ালো কিশোর।
কালচে হয়ে আসছে ধূসর গোধূলি। পা টিপে টিপে বাড়িটার কাছে চলে এলো ওরা। সাবধানে মাথা তুলে লিভিং রুমের জানালা দিয়ে সাবধানে ভেতরে তাকালো।
আগের জায়গাতেই বসা লোকটা। সামনে টেবিলে রেখেছে এখন তিনটে কানা বেড়াল, যেগুলো মুসারটার মতো দেখতে। একটা বেড়াল হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে শুরু করলো।
হ্যাঁ, ওগুলোই পুরস্কার দিয়েছি, ফিসফিসিয়ে বললো রবি।
ওই যে, দুটো ফেলে রেখেছে, কিশোর বললো। কোণের দিকে দেখো৷
রবি আর রবিনও দেখলো। দুটোই নকল। তার একটা রবিন নিয়ে গিয়েছিল।
ফেলে দিয়েছে, আবার বললো কিশোর। তারমানে তোমারগুলোই চায়, রবি।
শশশ! হুঁশিয়ার করলো রবিন।
তৃতীয় বেড়ালটাও দেখা শেষ করেছে লোকটা। রেখে দিয়েছে টেবিলে। হাতে বেরিয়ে এসেছে ইয়া বড় এক ছুরি।
.
১১.
নড়তে ভুলে গেছে যেন ছেলেরা। ছুরিহাতে উঠে দাঁড়িয়েছে লোকটা। আচমকা, একটা বেড়াল টেনে নিয়ে পোঁচ মারলো। চিরে ফেললো পেট। দ্বিতীয়টার চিরলো। তৃতীয়টারও। তারপর টেনে টেনে বের করতে লাগলো ভেতরের তুলা, ছোবরা, কাঠের গুঁড়ো। সমস্ত কিছু ছড়াতে লাগলো টেবিলে। ছোবড়া আর তুলার। ভেতর খুঁজতে লাগলো কি যেন।
জোরে জোরে নিঃশ্বাস পড়ছে। ছুরিটা টেবিলে ফেলে হতাশ ভঙ্গিতে বসে পড়লো চেয়ারে। কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেঁড়া বেড়ালগুলোর দিকে, পারলে চোখের আগুনেই ভস্ম করে ফেলে।
পায়নি, ফিসফিস করে বললো রবিন।
না, কিশোর বললো। ডিকেরটার ভেতরে থাকতে পারে। চলো, চলো, ও বেরোবে! কুইক!
লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে লোকটা। হাত বাড়ালো চেয়ারে রাখা হ্যাঁটের দিকে।
কাছেই হিবিসকাসের গোটা তিনেক ঘন ঝোপ। ওগুলোর ভেতরে এসে প্রায়। হুমড়ি খেয়ে পড়লো তিনজনে। বেরিয়ে, দরজা লাগিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো। লোকটা। ঝোপের দিকে চোখ তুলে তাকালো না। লম্বা পা ফেলে হারিয়ে গেলে বাড়ির আড়ালে। গাড়ির দরজা বন্ধ করার শব্দ হলো। স্টার্ট নিলো, ইঞ্জিন। শা করে ছুটে বেরিয়ে গেল নীল গাড়িটা।
বেড়াল নিতে যাচ্ছে! রবিন বললো।
চলো, আমরাও যাই, বললো রবি।
আমাদের সাইকেল, ওর গাড়ি। আর কেলহ্যাম স্ট্রীট এখান থেকে পাঁচ মাইল। তোমাদের কারনিভলের কাছাকাছি।
হতাশ দৃষ্টিতে পরস্পরের দিকে তাকালো ওরা।
কিছুই করতে পারছি না আমরা! গুঙিয়ে উঠলো রবিন। কিশোর, কিছু একটা করো!
কি করবো? ঝোপ থেকে বেরোলো কিশোর। থমথমে চেহারা। বাড়িটার দিকে চেয়ে হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। পারবো হয়তো! দেখো দেখো, টেলিফোনের তার! বলতে বলতেই দৌড় দিলো সে। দরজা দিয়ে ঢুকতে পারলো না। তালা লাগানো।
জানালা! চেঁচিয়ে উঠলো রবি।