পনেরো মিনিট পর, ৩৩ স্যান রোকুই ওয়ে-র সীমানায় পাম গাছের একটা জটলায় ঢুকলো তিন কিশোর। ইটের তৈরি ছোট একটা বাড়ি, রাস্তা থেকে দূরে। রঙচটা একটা সাইনবোর্ড বুঝিয়ে দিলো, একসময় ওটা এক ঘড়ি মেরামতকারীর অফিস-কাম-বাড়ি ছিলো। মেঘলা বিকেলে অস্বাভাবিক নির্জন লাগছে বাড়িটা। জানালায় পর্দা নেই, ভেতরে আলো জ্বলছে না।
তবে রাস্তা নির্জন নয়। দলে দলে আসছে ছেলেমেয়েরা। হাতে, বগলের তলায় স্টাফ করা বেড়াল। নানা জাতের, নানা রঙের, নানা ধরনের। যার কাছে যা আছে, নিয়ে এসেছে, বিজ্ঞাপনের সঙ্গে মিলুক না মিলুক। একশো ডলার অনেক টাকা, বিক্রির জন্যে সবাই উদ্বিগ্ন।
বেশির ভাগই তো মেলে না, রবিন বললো। তবু এনেছে।
লোকে কিছু না দিয়েই টাকা নিতে চায়, তিক্তকণ্ঠে বললো রবি। শুটিং গ্যালারি চালাই তো, লোকের স্বভাব-চরিত্র আমার জানা।
ওরা ভাবছে, কিশোর বললো। ওদেরটা পছন্দ হয়ে যেতেও পারে। হলেই কড়কড়া একশো ডলার। একটার দামও দশের বেশি হবে না, নব্বই ডলারই লাভ।
এই সময় নীল একটা গাড়ি ঢুকলো বাড়ির আঙিনায়, ঘুরে চলে গেল ওপাশে। গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত হেঁটে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালো একজন লোক। দূর। থেকে তার চেহারা ভালোমতো দেখলো না ছেলেরা, চিনতে পারলো না।
দরজার তালা খুলে ভেতরে ঢুকলো লোকটা। হুড়মুড় করে ঢুকতে শুরু করলো। ছেলেমেয়ের দল।
গাছের আড়ালে হুমড়ি খেয়ে থাকতে থাকতে উত্তেজিত হলো রবি। আমরা কি করবো, কিশোর?
নীল গাড়িটা চিনেছো? জবাব না দিয়ে প্রশ্ন করলো কিশোর।
আরেকবার তীক্ষ্ণ চোখে দেখলো রবি। না। আগে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কারনিভলের সবার গাড়িই এরচে বড়, ট্রেলার টানতে হয় তো!
বেশ, মাথা কাত করলো কিশোর। আমরা দুজন এখানে থাকছি। বেড়াল নিয়ে রবিন যাক। কয়েক মিনিট পর আমরা একজন গিয়ে কাছে থেকে দেখবো গাড়িটা। হুশিয়ার থাকতে হবে আমাদের, যাতে দেখে না ফেলে। চোরটা যাতে বুঝতে না পারে কেউ তাকে সন্দেহ করেছে, পিছু নিয়েছে। কারনিভলের লোক, হলে তোমাকে চিনবেই।
আমি গিয়ে কি কি করবো? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
বেড়াল বিক্রির চেষ্টা করবে। হয়তো কিনবে না সে। না কিনুক। তোমার। আসল কাজ হবে, তার চেহারা দেখে আসা। জেনে আসা, বেড়াল নিয়ে কি করে সে।
বেশ, যাচ্ছি, আবার সাইকেলে চাপলো রবিন।
বেড়ালটা বগলে চেপে, সাইকেল চালিয়ে এসে বাড়ির দরজায় থামলো সে। সাইকেল স্ট্যাণ্ডে তুলে মিশে গেল ছেলেমেয়েদের স্রোতে। = বড় একটা হলঘরে ঢুকলো। বাচ্চারা গিজগিজ করছে ওখানে। আসবাব। বলতে কয়েকটা কাঠের চেয়ার, আর একটা লম্বা টেবিল। টেবিলের ওপাশে বসে আছে একজন মানুষ, চেয়ার-টেবিলের বেড়ার ওপাশে আত্মগোপন করতে চাইছে। যেন। এক এক করে বেড়াল নিয়ে পরীক্ষা করছে। ও
দুঃখিত, বললো সে। এই তিনটে চলবে না। খসখসে কণ্ঠস্বর। বিজ্ঞাপনেই বলেছি কেমন বেড়াল চাই।…না, তোমার ওটাও চলবে না, সরি।
আরেকটা বেড়াল নিয়ে এগিয়ে গেল একটা ছেলে। হাত বাড়িয়ে বেড়ালটা প্রায় কেড়ে নিলো লোকটা। ওরকম জিনিসই পুরস্কার জিতে আবার হারিয়েছে মুসা। লোকটার বাহুতে একটা টাট্টু আঁকা দেখলো রবিন, পালতোলা একটা জাহাজের ছবি, স্পষ্ট।
গুড, লোকটা বললো। এই জিনিসই চাই। এই নাও তোমার একশো ডলার।
রবিনের কানে ঢুকছে না যেন কথা। ভাবছে, ওই লোকটা কি কারনিভলের কেউ?, তাহলে নিশ্চয় চিনতে পারবে রবি। ওই টাট্ট তার চোখে না পড়ার কথা নয়। বাদামী চামড়ার লোক, সোজা তাকালো রবিনের দিকে। এই, এই ছেলে, তুমি। দেখি এদিকে এসো, তো।
চমকে গেল রবিন। তাকে কি সন্দেহ করলো লোকটা? দুরুদুরু বুকে এগিয়ে গিয়ে বেড়ালটা রাখলো টেবিলে। ওটার দিকে একবার চেয়েই হাসলো লোকটা। হু, মেরামত করা হয়েছে। মন্দ না। আমার বাচ্চারা পছন্দ করবে। এই নাও, তোমার টাকা।
থ হয়ে গেল রবিন। হাত বাড়িয়ে নিলো একশো ডলার, বিশ্বাস করতে পারছে না। চেয়ে আছে লোকটার দিকে। কিন্তু লোকটা গুরুত্ব দিলো না তাকে। আরেকটা ছেলের দিকে তাকালো।
টেবিলের কাছ থেকে সরে এলো রবিন। দেখলো, টেবিলের ধারে মেঝেতে বেড়ালের স্তূপ। তারটা সরিয়ে রাখা হয়েছে একপাশে। ওটার সঙ্গে ওরকম আরও একটা। খানিক দূরে রাখা আরও দুটো, মুসা যেটা পুরস্কার পেয়েছিলো অবিকল সেরকম।
ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে আসছে ভিড়। অস্বস্তি লাগছে রবিনের। বেরিয়ে যাবে, না থাকবে?- কিছুই তো জানা হলো না এখনও, যায় কি করে? আবার থাকলেও যদি সন্দেহ করে লোকটা? ঝুঁকি নেয়াই ঠিক করলো সে। থাকবে আরও কিছুক্ষণ।
দেখো, খোকা, ওরকম বেড়াল চাইনি আমি, নাছোড়বান্দা একটা ছেলেকে বোঝাচ্ছে লোকটা। দেখতে পাচ্ছি তোমারটা ভালো, কিন্তু আমি অন্য জিনিস চাই। বাচ্চাকে বড়দিনের উপহার দেবো। আমার পছন্দ না হলে দিই কি করে, তুমিই বলো? ছেলেটাকে চওড়া হাসি উপহার দিলো সে। হাত নাড়তে আবার পাল-তোলা-জাহাজটা চোখে পড়লো রবিনের।
কি জিনিস চান, বুঝতে পারছি, ছেলেটা বললো। ওই দুটোর মতো তো? একটার খবর আপনাকে দিতে পারি। আমার বন্ধু ডিক ট্যানারের কাছে আছে। কারনিভলে পুরস্কার পেয়েছে।
তাই? ভুরু কুঁচকে গেল লোকটার, ঠোঁট সামান্য ফাঁক। নিশ্চয় আমার বিজ্ঞাপন দেখেনি। আমার হাতেও আর সময় নেই, শুধু আজকের দিনটাই।