খাইছে, কিশোর, নিশ্চয় দামি কিছু আছে বেড়ালটার ভেতর।
থাকার সম্ভাবনা বেশি, একমত হলো কিশোর। রবি, বেড়ালটার কোনো বিশেষত্ব আছে?
জানি না।
নিচের ঠোঁটে দুবার চিমটি কাটলো কিশোর। ভাবছে। অধীর হয়ে আছে অন্যেরা। ঠোঁট কামড়ালো একবার, সে, বললো, হতে পারে কোনো খেপাটে, সংগ্রহ করে রাখতে চাইছে তার সংগ্রহশালার জন্যে, বিজ্ঞাপন সে-ই দিয়েছে। : কিংবা হয়তো বিশেষ কিছু রয়েছে ওই বেড়ালগুলোর মধ্যে…
কাকাতুয়াগুলোর যেমন ছিলো? বলে উঠলো রবিন। ওই যে, তোতলা কাকাতুয়া…
হ্যাঁ, মাথা ঝোঁকালো কিশোর। দামি কিছু থাকতে পারে।…রবি, কারনিভল নিয়ে মেকসিকোতে গিয়েছিলে তোমরা? কিংবা সীমান্তের কাছে?
না, কিশোর। শুধু ক্যালিফোর্নিয়া।
মেকসিকোতে গেলে কি হতো? রবিন জানতে চাইলো।
স্মাগলিঙের কথা ভাবছি আমি, নথি। ওরকম জিনিসের ভেতর মাল লুকায়। চোরাচালানীরা, পুলিশের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্যে। রবি, বেড়ালগুলো কোত্থেকে কিনেছো?
শিকাগো। এক প্রাইজ সাপ্লাইয়ারের কাছ থেকে কিনেছে বাবা।
গাল চুলকালো কিশোর। যা-ই হোক; বেড়ালগুলোর বিশেষত্ব আছে। রবি, কাল রকি বীচে তোমাদের তৃতীয় দিন ছিলো, না? .
হ্যাঁ। মাত্র দুটো শো দিয়েছি। স্যান মেটিওতে দুই শো দেখিয়ে রাতারাতিই চলে এসেছি এখানে।
বেড়ালগুলো কবে থেকে দিতে শুরু করেছো?
এখানে এসে, পয়লা শো থেকেই। শেষটা দিয়েছি কাল রাতে, মুসাকে। সেটা পঞ্চম বেড়াল।
প্রথম রাতেই চারটে দিয়ে দিলে কেন? চারজনেই ফার্স্ট হলো?
কড়াকড়ি কম করেছিলাম সেরাতে। চারটে হাঁস ফেলতে পারলেই ফার্স্ট ধরেছিলাম। বিজ্ঞাপনের জন্যে করেছিলাম এটা। লোকে বাড়ি গিয়ে বলাবলি করবে, প্রাইজ দেখাবে। তাতে আরও বেশি লোক আসবে পরের শো-তে।
ফার্স্ট প্রাইজ কি শুধু বেড়ালই দিয়েছো?
এখানে এসে প্রথম শো-তে বেড়াল।
কাল দেখলাম, একটা ট্রেলারে রাখো প্রাইজগুলো। নিরাপদ?
সব সময় তালা দিয়ে রাখি। শো যখন বন্ধ থাকে, ট্রেলারটা এনে আমাদের, ট্রাকের সঙ্গে আটকে রাখি। বার্গলার অ্যালার্ম আছে, চুরির চেষ্টা হলেই বেজে, ওঠে। কতোবার যে ওটা চুরি ঠেকিয়েছে। বেশির ভাগই ছোট ছেলেমেয়ে। ট্রাকের কাছে এসে ঘুরঘুর করে, পুরস্কারের জিনিসগুলো খুব লোভনীয় ওদের কাছে। শো যখন চলে, ট্রেলারটা এনে বুদের পেছনে রাখি, তখনও তালা লাগিয়ে।
বোঝা যাচ্ছে, তোমাদের চোখ এড়িয়ে ট্রেলার থেকে বেড়াল চুরি করা খুব কঠিন।
হ্যাঁ। তালা ভাঙ্গা সহজ, কিন্তু জিনিস নিয়ে পালানো কঠিন। তালা ভেঙে জিনিস বের করে নিয়ে দৌড় দিতে দিতে দেখে ফেলবো।
হ্যাঁ, বললো গোয়েন্দাপ্রধান। দুই সহকারী যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, তীব্র গতিতে ঘুরছে তার মগজের বুদ্ধির চাকাগুলো। তাহলে, পাঁচটা কানা বেড়াল নিয়ে, স্যান মেটিও থেকে রওনা হয়েছিলে। সোজা এসেছে এখানে। স্যান মেটিও আর রকি বীচের মাঝে বেড়ালগুলো চুরি করা কঠিন ছিলো। এখানে এসেও ট্রেলার থেকে চুরি করতে পারেনি, কারণ, সেটাও কঠিন। চোখে পড়ার ভয়। এখানে শো করে প্রথমেই চারটে বেড়াল দিয়ে দিলে। বাকি থাকলো একটা। সেটা ছিনিয়ে নিতে চাইলো গোঁফওয়ালা, কালো চশমা পরা বুড়ো। ব্যর্থ হলো। মুসা পেয়ে গেল। বেড়ালটা। কিং ছাড়া পেলো, মুসা বেড়াল হারালো। এখন পেপারে বিজ্ঞাপনঃ ওরকম বেড়াল চায়।
সবই বুঝলাম। কিন্তু কেন চায়? কি মানে এসবের?
গোয়েন্দাপ্রধানের চোখে অদ্ভুত চাহনি। কিশোর পাশার এই চাহনির অর্থ। জানা আছে তার দুই সহকারীর-রহস্যের সমাধান করে ফেলেছে সে, কিংবা জরুরী কোনো তথ্য আবিষ্কার করেছে। তর্জনী নাচালো কিশোর। কাল রাতের আগে বেড়ালগুলো ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়নি। দুটো সম্ভাবনা, স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাতে। চকচক করছে তার চোখ। হঠাৎ করে দামি হয়েছে ওগুলো। আর যার কাছে দামি, সে এই কারনিভলেরই কেউ।
.
০৯.
কিন্তু, কিশোর, প্রতিবাদ জানালো রবি, ওরকম চেহারার কেউ নেই কারনিভলে।
ছদ্মবেশ নেয়া সহজ ব্যাপার। পুরু গোঁফ, হ্যাট টেনে দিয়েছে, যাতে চেহারাটা ভালোমতো দেখা না যায়। তার ওপর কালো চশমা। আবছা আলোয়। আসল চেহারা বোঝা মুশকিল।
কারনিভলের লোক হলে ওভাবে নিতে আসবে কেন? প্রশ্ন তুললো মুসা। ট্রেলার থেকেই তো নিয়ে নিতে পারতো।
হ্যাঁ, তাই তো, রবিনও মুসার সঙ্গে সুর মেলালো। এতো চালাকির দরকার কি. ছিলো তার? কোনো এক ফাঁকে ট্রেলার থেকেই নিয়ে নিতে পারত। রবি খেয়ালই করতো না।
ট্রেলার থেকে নেয়ার চেষ্টা করেনি বলেই আমার সন্দেহ বেড়েছে, কিশোর জবাব দিলো। বাইরের কেউ হলে সে-চেষ্টাই কুরতো প্রথমে। কঠিন বুঝলেও করতো। আর চিনে ফেলবে, এই ভয়ও করতো না।
তাহলে?
ওই যে বললাম, কারনিভলেরই কেউ। তার জানা আছে, ট্রেলার থেকে নেয়া। প্রায় অসম্ভব। দেখে ফেললে মুশকিলে পড়বে, জবাবদিহি করতে হবে রবির বাবার। কাছে। সব চেয়ে বড় কথা, ওই বেড়ালসহ ধরা পড়লে অনেকেরই সন্দেহ হবে। ওগুলোতে দামি কিছু আছে।
ঠিক তাই। কানা বেড়ালের ওপর কারো নজর পড়ুক এটাই চায়নি সে। ভেতরের লোক নিলে স্পষ্ট হবে, জিনিসটা দামি। বাইরের কেউ নিলে, কাল। যেভাবে ছিনিয়ে নিতে চাইলো, মনে হবে লোকটা পাগল। কিংবা খেপাটে, সংগ্রহকারী। আর যা-ই ভাবুক, চোর ভাববে না কেউ।