.
ডেন্টিস্টের ওখানে পৌঁছে দেখলো রবিন, রোগীর লাইন। তার ডাক চলে গেছে। কাজেই অপেক্ষা করতে হলো। অযথা বসে থাকা স্বভাব নয় তার। সামনের টেবিলে রাখা পত্র-পত্রিকা ঘাটতে লাগলো।
ম্যাগাজিন ওল্টানো শেষ করে দৈনিক পত্রিকা ধরলো। স্থানীয় পত্রিকা। রকি বীচ থেকে বেরোয়। কিং-এর ছাড়া পাওয়ার খবর আছে কিনা খুঁজলো। কোনোটাতে নেই। তবে কারনিভল সম্পর্কে একটা প্রতিবেদন লিখেছে একটা পত্রিকা। বলা যায় এক ধরনের বিজ্ঞাপনঃ কারনিভলটা কতো ভালো, কতো কিছু দেখার আছে এতে, কতো মজা পাওয়া যাবে, এসব। এতো ছোট আর সাধারণ খবর নিয়ে এই বাড়াবাড়ি কেবল ছোট পত্র-পত্রিকাতেই সম্ভব। বিরক্ত হয়ে পত্রিকাটা রেখে দিয়ে আরেকটা তুলে নিলো সে। ওল্টাতেই ছোট বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়লো। আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনঃ
কানা বেড়াল আবশ্যক
বাচ্চাদের খেলাঘরের জন্য স্টাফ করা বেড়াল চাই।
লাল-কালো ডোরাকাটা হতে হবে, শরীরটা কিম্ভুত রকমের বাঁকা,
এক চোখো, গলায় লাল কলার। ওরকম প্রতিটি বেড়ালের জন্যে
১০০ (একশো) ডলার দেয়া হবে।
অতি-সত্বর যোগাযোগ করুনঃ
রকি বীচ, ৫-১২৩৪।
নাড়ির গতি বেড়ে গেল রবিনের। ঠিক এরকম একটা বেড়াল নিয়েই কারনিভলে গোলমাল করেছিলো চোর, পুরস্কার পেয়েও হারিয়েছে মুসা। বিজ্ঞাপন ছিঁড়ে নিয়ে গিয়ে সোজা ডেন্টিস্টের চেম্বারে ঢুকলো রবিন। চেঁচিয়ে বললো, ডাক্তার সাহেব, আজ আমার দাঁত দেখানোর দরকার নেই! আরেকদিন! বলেই
বেরিয়ে এলো হতভম্ব ডেন্টিস্টের ঘর থেকে। সাইকেলের দিকে দৌড় দিলো।
.
০৮.
মেঘাচ্ছন্ন ধূসর বিকেল একদম ভালো লাগে না মুসার। উত্তেজনা আছে বলেই তেমন খেয়াল করছে না এখন। একটা ঘন্টা যে কোন দিক দিয়ে কেটে গেছে, বলতেই পারবে না। মাঠের এখানে ওখানে ঘুরছে। রিহারস্যাল দেখছে কর্মীদের।
নতুন একটা ভাঁড়ামি প্র্যাকটিস করছে দুই ভাঁড়। বেঁটে লোকটার হাতে একটা খাটো ঝাড়ু, লম্বার হাতে একটা ছোট বালতি। বেঁটে ভাড় ঝাড়ু দিয়ে ময়লা তুলে বালতিতে রাখছে, সেটা তুলে নিয়ে তার পেছন পেছন যাচ্ছে লম্বা। কিছু ময়লা জমলেই তার ভারে বালতির তলা খসে যাচ্ছে। বিশেষ কায়দায় আবার তলাটা লাগিয়ে ময়লাগুলো কুড়িয়ে রাখছে লম্বা। তোলার চেষ্টা করলেই আবার। খসে পড়ছে। ক্রমেই বিষণ্ণ হচ্ছে তার চেহারা, আর বেঁটে লোকটা হাসছে। লম্বার দুর্গতি দেখে যেন খুব মজা পাচ্ছে বেঁটে।
তলোয়ারের মাথায় আটকানো তুলোর দলায় আগুন লাগিয়ে নির্দ্বিধায় মুখে পুড়ছে আগুনখেকো। চোখ বড় বড় করে দিচ্ছে মুসার। প্রতিবারেই সে ভাবছে, এইবার লোকটার মুখ পুড়বেই। কিন্তু পোড়ে না।
ভার উত্তোলন, আর মোটা বই টেনে ছেঁড়ার প্র্যাকটিস করছে স্ট্রং ম্যান কোহেন। তাকে সন্দেহ, তাই তার কাছেই বেশি সময় ব্যয় করছে মুসা। সন্দেহজনক কিছুই করছে না লোকটা।
সিংহের খাঁচায় কিংকে নতুন একটা খেলা শেখাচ্ছে মারকাস দ্য হারকিউলিস।
এই দুটো উঁচু খুঁটিতে বাঁধা তারের ওপর ভারসাম্য বজায়ের রোমাঞ্চকর খেলা খেলছে দুজন দড়াবাজ।
সবই দেখছে মুসা। এমন ভাব করছে, যেন শুধু ওসব দেখার জন্যেই এসেছে সে।
কিছুই ঘটলো না মাঠে।
বুদ আর তাঁবুগুলোতে ঘোরাঘুরি করছে কিশোর। রাফনেক আর বুঁদ অপারেটররা রাতের জন্যে সেট সাজাচ্ছে, নষ্ট জিনিস মেরামত করছে। কোনো বুদ। কিংবা তাঁবুই বাদ দিলো না সে, কোনো কোনোটাতে কয়েকবার করে ঢুকলো। কিন্তু সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লো না। ঘূর্ণমান নাগরদোলা দেখার জন্যে থেমেছে, এই সময় সেখানে এলো রবি। শুটিং গ্যালারিতে কাজ শেষ করে এসেছে।
নাগরদোলাটা টেস্ট করবে না, রবি? স্তব্ধ বিশাল চাকাটা দেখালো কিশোর, কাঠের ঘোড়াগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে ক্যানভাস দিয়ে।
চালাতে অনেক খরচ। কারনিভল খোলার আগে চালু করি, একটা মাত্র টেস্ট রান দিয়েই চড়ার জন্যে ছেড়ে দিই।
ওটার জন্যে নিশ্চয় মেকানিক আছে? কিংবা অপারেটর?
আছে। বাবা নিজেই।
চিন্তিত দেখালো কিশোরকে। বিড়বিড় করে কি বললো সে-ই বুঝলো।
কিশোর, রবি বললো। রবিন এসে পড়েছে।
সাইকেল চালিয়ে মুসার কাছে গেল প্রথমে রবিন, তারপর দুজনে মিলে এলো কিশোরদের কাছে। এসেই বললো রবিন, কিশোর, কানা বেড়ালটা চাইছে!
কোনটা? আমরা যেটা হারিয়েছি? রবিনের মতোই চেঁচিয়ে বললো মুসা।
আমার মনে হয় না ওটা হারিয়েছে, গলা আরও চড়ালো রবিন। পকেট থেকে ছেঁড়া বিজ্ঞাপনটা বের করলো। চুরি হয়েছে! কিশোর, দেখো।
গোয়েন্দাপ্রধানকে ঘিরে দাঁড়ালো সবাই। পড়তে পড়তে চোখ উজ্জ্বল হলো। কিশোরের। নিশ্চয় মুসার কানাটার মতো। রবি, ওরকম বেড়াল মোট কটা পেয়েছিলে?
পাঁচটা। রকি বীচেই ছেড়েছি ওগুলো। মুসাকে দিয়েছিলাম শেষটা।
হুমম্, মাথা দোলালো কিশোর, প্রথমবারে চেষ্টা করেছিলো, নিতে পারেনি। দ্বিতীয়বারে সফল হয়েছে। হুঁ, মিলতে শুরু করেছে।
কী? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
কানা বেড়ালটা কারও দরকার, নথি। হয়তো পাঁচটাই দরকার। কিংকে ছেড়ে দেয়ার কারণ বোঝা যাচ্ছে।
কি কারণ? মুসা জানতে চাইলো।
আমাদের নজর অন্যদিকে সরানোর জন্যে। প্রথমবার বেড়ালটা নিতে না পেরে পালিয়ে গিয়েছিলো লোকটা, সেই গোঁফ আর কালো চশমাঅলা। তারপর। ঘুরে এসে আবার ঢুকেছে শুটিং গ্যালারিতে, মুসাকে পুরস্কার জিততে দেখেছে। বুদ্ধি করে ফেলেছে তখনই। গিয়ে কিংকে বের করেছে। তোমরা বেরোতেই ওকে নিয়ে গিয়ে ঠেলে দিয়েছে তোমাদের সামনে। উদ্দেশ্য সফল হয়েছে তার। দুজন গেছে মারকাসকে খবর দিতে। মুসা বেড়াল ফেলে সিংহ সামলাতে ব্যস্ত। সেই সুযোগে ওটা তুলে নিয়ে চলে গেছে চোরটা।