একমত হলো কিশোর। এবং এসবের মূলে সার্কাসের লোকের কুসংস্কার। লোকে যেটার ভয় বেশি করবে, সেটাই বেশি ঘটবে।
কিন্তু রবিদের কারনিভলে তো অন্য ব্যাপার ঘটছে, মুসা মনে করিয়ে দিলো। আপনা-আপনি ঘটছে না। ঘটানো হচ্ছে।
সেটাই শিওর হওয়া দরকার, সেকেণ্ড, কিশোর বললো। একটা ব্যাপার মনে খচখচ করছে, কিঙের ছাড়া পাওয়াটা অন্য দুটো দুর্ঘটনার মতো নয়। প্যাটার্ন মিলছে না। ওদুটো ঘটার সময় কারনিভল খোলা ছিলো না। দর্শকদের ক্ষতি হওয়ার ভয় ছিলো না।
তাহলে এটা হয়তো আসলেই দুর্ঘটনা?
না। ছেড়েই দেয়া হয়েছে, জোর দিয়ে বললো গোয়েন্দাপ্রধান। কারনিভলে। যাওয়া দরকার রবি; এখন তো বন্ধ, আমরা ঢুকতে পারবো?
নিশ্চয় পারবে। আমি সবাইকে বলবো, রিহারস্যাল দেখতে এসেছে। তোমাদের কথা সবাই জানে এখন। বিশেষ করে মুসার কথা। কোনো অসুবিধে হবে না।
কি খুঁজবো আমরা, কিশোর? মুসার প্রশ্ন।
বলতে পারবো না। কড়া নজর রাখার চেষ্টা করবো, যাতে আরেকটা দুর্ঘটনা। ঠেকানো যায়। সাবধান থাকতে হবে আমাদের…, থেমে গেল হঠাৎ।
মেরিচাচী ডাকছেন। দ্রুত গিয়ে সর্ব-দর্শনে চোখ রাখলো মুসা।
রবিন, আবার ডাকলেন তিনি, জলদি বেরিয়ে এসো। তোমার মা ফোন করেছেন। ডাক্তারের কাছে নাকি যাবার কথা?
হায়, হায়, ডেন্টিস্ট। গুঙিয়ে উঠলো রবিন। ভুলেই গিয়েছিলাম!
ভ্রূকুটি করলো কিশোর। কাজে বাধা পড়লে রাগ লাগে তার। মেনে নিতে পারে না। জোরে নিঃশ্বাস ফেলে হাত নেড়ে বললো, কি আর করবে, নথি, যাও। তোমার জন্যে আমাদের বসে থাকা উচিত হবে না। আমি আর মুসা যাচ্ছি। সময়। নষ্ট হলে কখন কি করে বসে…ও হ্যাঁ, একটা দিনিজসপ্রে নিয়ে যাও। যোগাযোগ রাখতে পারবে আমাদের সঙ্গে।
কী সপ্রে! প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো মুসা।
দিনিজসপ্রে, শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর। দিক-নির্দেশক ও জরুরী-সংকেত প্রেরক, সংক্ষেপে বাংলায় দিনিজসপ্রে, গর্বের হাসি হাসলো সে। কাল যেটা বানানো শুরু করেছিলাম তোমাকে নিয়ে, মাঝপথে তো চাচা এসে গামলা রঙ করতে দিলো। আজ সকালে বানিয়ে ফেলেছি। তবে মাত্র দুটো। আপাতত তাতেই চলবে। একটা রবিন নিয়ে যাক, আরেকটা আমরা নেবো। সুবিধে হবে। ওয়াকি টকি দেখলেই লোকে চিনে ফেলে। এটা দেখবেও না, আর দেখলেও সহজে চিনবে না।
ওই যন্ত্র দিয়ে কি হয়, কিশোর? জানতে চাইলো রবি।
ওটা? একধরনের হোমার বলতে পারো। নিজস্ব কিছু আবিষ্কার ঢুকিয়েছি ওটাতে। হোমার আমরা আগেও বানিয়েছি, ব্যবহার করেছি, তবে এখনকারটা আরও আধুনিক সুযোগ-সুবিধে বেশি। প্রথমেই ধরো, সিগন্যাল পাঠাবে এটা। শব্দ করবে। আরেকটা হোমার নিয়ে যতোই কাছে যাবে, বাড়বে শব্দ। একটা ডায়াল আছে, তাতে দিক-নির্দেশক কাটা আছে, যেদিক থেকে শব্দ আসবে সেদিকে ঘুরে যাকে কাটাটা। প্রতিটি দিনিজসপ্রেতে গ্রাহক আর প্রেরক, দুধরনের যন্ত্রই আছে। জরুরী অবস্থার জন্যে ছোট্ট একটা লাল আলোর ব্যবস্থা আছে এতে। সুইচ টেপার ঝামেলা নেই, ভয়েস অপারেটেড মুখে বললেই কাজ শুরু করবে। ধরো, আমাদের মধ্যে কেউ বিপদে পড়লো। আর কিছু করার দরকার নেই, শুধু বলতে হবে সাহায্য। ব্যস, অমনি অন্যদের দিনিজসপ্রের লাল আলো জ্বলতে নিভতে শুরু করবে, এক মুহূর্ত থেমে দম নিলো কিশোর। সব চেয়ে বড় সুবিধে, খুদে এই হোমারটা পকেটেই জায়গা হয়ে যাবে।
বিস্ময় চাপা দিতে পারলো না রবি। চেঁচিয়ে উঠলো, কি সাংঘাতিক, খুব কঠিন করে কথা বলো তুমি, কিশোর! …আর…আর, দুনিয়ার সব কিছুই করতে পারো, তাই না? সব কিছুতেই বিশেষজ্ঞ।
ইয়ে, রবি…, প্রশংসায় খুশি হয় কিশোর। কিন্তু এতো বেশি প্রশংসা করেছে রবি, কিশোর পাশাকেও লজ্জায় ফেলে দিয়েছে, সব কিছু পারা তো একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। অনেক কিছুই করার চেষ্টা করি আরকি। গোয়েন্দাগিরিতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করি। হ্যাঁ, যা বলছিলাম, আমাদের হোমারের সঙ্কেত শুধু আমাদের হোমারই ধরতে পারবে, অন্য কোনো যন্ত্র নয়। রেঞ্জ তিন মাইল।
ডাক পড়লো আবার।এই, রবিন, কোথায়? বেরোচ্ছো না? মেরিচাচী অধৈর্য হয়ে উঠেছেন। তুমি এসো। আমি অফিসে যাচ্ছি।
দাও, কোথায় তোমার দিনিজসপ্রে, কিশোরকে বললো রবিন। যতো তাড়াতাড়ি পারি ডাক্তার দেখিয়েই কারনিভলে চলে যাবো আমি।
বাইরে বেরিয়ে, অফিসে মেরিচাচীকে বলে সাইকেল নিয়ে রওনা হয়ে গেল রবিন। মুসা আর কিশোরও সাইকেল বের করলো। রবি সাইকেল নিয়েই এসেছে। তিনজনে চললো কারনিভলে।
খানিক আগেও রোদ ছিলো, এখন মেঘলা বাতাস। বাতাস বাড়ছে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় না হলে এই সেপ্টেম্বরের গোড়াতেই বৃষ্টি আশা করা যেতো। এখানে এখন বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, কিন্তু সূর্যের মুখ ঢেকে দিয়েছে মেঘ। মন খারাপ-করা আলো।
কারনিভলের কাছে পৌঁছে সাইকেল থেকে নামলো কিশোর। অন্য দুজন। থামতে বললো, রবি, তুমি আগে যাও, আমাদের সাথে গেলে সন্দেহ করতে পারে। শুটিং গ্যালারির আশোঁপাশে কড়া নুজব রাখবে। মুসা মাঠের ওদিকে গিয়ে কর্মীদের রিহারস্যাল দেখবে, ওপাশটায় চোখ রাখবে। আমি টহল দেবো বুঁদ আর তাঁবু গুলোর কাছে। সন্দেহজনক সামান্যতম ব্যাপারও যেন চোখ না এড়ায়। ঠিক আছে?
রবি আর মুসা, দুজনেই মাথা ঝাঁকালো।