জিনা? নিচ থেকে ডাকলেন উইলসন। তুই ওখানে কি করছিস?
দেখছি, জবাব দিয়ে বেয়ে সিঁড়ির মাথায় উঠে গেল জিনা। চাচা, দেখে যাও। ম্যাকআরথারই গুলি করেছে।
জিনা, কয়েক ধাপ উঠে এলেন উইলসন, নাহ, ম্যাকআর্যার রোগেই ধরল দেখি তোকে। মাথাটা খারাপ করে দিল। ও কিছু না, বুঝলি। কেউ খরগোশ মারছে। কিংবা কয়োট।
কে? প্রশ্ন করল জিনা। পুরো এলাকাটা দেখতে পাচ্ছি আমি। কাউকে দেখছি। কথােট হলে আমাদের মুরগীগুলো খেতে আসে না কেন?
কি করে আসবে? ওদিকেই আগে হানা দিয়েছিল, গুলি করে তরে ফেলেছে, বললেন উইলসন। যা, নিচে, শো গিয়ে। ওদেরকে ঘুমোতে দে।
ধ্যাত্তোর! বিরক্তি চাপতে পারল না জিনা। সিঁড়ি বেয়ে নামতে যাবে, জানালার কাছ থেকে ডাকল কিশোর।
এগিয়ে গেল জিনা।
কেবিনের বাইরের খোলা জায়গায় বেরিয়ে এসেছে ম্যাকআরথার। বগলতলায় চেপে ধরে রেখেছে শটগান। পাহাড়ের দিকে ফিরে কি দেখল সে, তারপর বন্দুক কাধে ঠেকিয়ে ফায়ার করল।
আরেকবার রাতের নীরবতা ভাঙল বন্দুকের গর্জন। আবার চেঁচিয়ে উঠল কুকুরটা। এগিয়ে গিয়ে ঝুঁকে ওটার মাথায় চাপড় দিল ম্যাকআরথার।
ঘেউ ঘেউ থামাল কুকুরটা, কেবিনে ঢুকে গেল তার মনিব। ঠিকই বলেছ, জিনা, মুসা বলল পাশ থেকে, ম্যাকআরথারই।
তোমার চাচা ঠিকই বলেছেন, বলল রবিন। কয়োটই। ওই যে তাড়াল ম্যাকআরথার।
নাক দিয়ে বিচিত্র শব্দ করল জিনা। নেমে গেল নিজের ঘরে।
ম্যাকআরবারের পেছনে ভালমত লেগেছে জিনা, বাংকে উঠে বলল রবিন। এখন যা-ই করুক লোকটা, জিনা তার অন্য অর্থ করবে। খালি বলবে কুমতলব আছে।
আমি যদি কখনও খনির মালিক হই, বিছানায় উঠতে উঠতে বলল কিশোর, আর জিনা যদি ভেতরে ঢুকে দেখতে চায়, সঙ্গে সঙ্গে দেখিয়ে দেব। ওর শত্রু হয়ে বিপদে পড়তে চাই না।
রসিকতায় হাসল তিনজনেই।
আবার ঘুমিয়ে পড়ল মুসা আর রবিন। কিশোরের চোখে ঘুম এল মা। অন্ধকারে শুয়ে শুয়ে ভাবছে আর কান পেতে শুনছে ক্রিস্টমাস পাতার মরমর।
হঠাৎ উঠে বসল সে। জোরে জোরে বলল, পয়লা গুলিটার সময় কোথায় ছিল ম্যাকআরধার?।
উঁম? ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরল মুসা।
আঁ…কী? রবিন জেগে গেছে।
বলছি পয়লা গুলিটা কোথা থেকে করেছে ম্যাকআরথার? আবার বলল কিশোর।
পয়লা গুলি? মুসার ঘুম ভেঙে গেছে। বাড়ির ভেতর থেকে।
বাড়ির ভেতর থেকে বেরোতে দেখেছ তাকে? প্রশ্ন করল কিশোর। দ্বিতীয় গুলিটা করার আগে কোথা থেকে বেরিয়েছে, দেখেছ?।
না তো। জিনা আর তার চাচার কথা শুনছিলাম তখন।
রবিন?
দেখেছি।
মাটি খুঁড়ে উদয় হয়নি নিশ্চয়, বলল কিশোর। মুসা দেখেনি-না হয় ধরলাম সে তাকায়নি। কিন্তু তুমিও দেখোনি, আমিও দেখিনি। তাছাড়া কোথা থেকে গুলি করলে ওরকম ভোতা শব্দ শোনা যাবে? খনির ভেতরে থেকে।
তাতে কি? বুঝতে পারছে না মুসা।
হয়তো কিছুই না, বলল কিশোর। তবে খনির ভেতর কয়োট ঢুকেছিল, এটাও বিশ্বাস করব না আমি। কয়োটের সাড়া পেলেই চেমোনো শুরু করত কুকুরটা। কিন্তু গুলির শব্দের আগে রা করেনি। এমনও তো হতে পারে, খনির ভেতরে গুলি ছুড়েছিল ম্যাকআরথার, তারপর বাইরে বেরিয়ে দেখল পড়শীরা জেগে উঠেছে। তা যদি হয়, আর সন্দেহমুক্ত হতে চায়, কি করবে তাহলে?
চুপ করে রইল অন্য দুজন।
বাইরে খোলা জায়গায় বেরিয়ে গুলি করবে না? নিজেকেই প্রশ্ন করছে কিশোর। বোঝাতে চাইবে না, কয়োট তাড়ানোর জন্যে গুলি করেছে?
জিনার মতই সন্দেহ রোগে ভুগতে শুরু করেছ তুমি, রবিন বলল।
হয়তো বা, অস্বীকার করল না কিশোর। তবে মিস্টার হ্যারি ম্যাকআরথারের আচার-আচরণও সন্দেহ করার মতই। মনে হচ্ছে, ধীরে ধীরে একটা কেস দাঁড়িয়ে যাচ্ছে তিন গোয়েন্দার জন্যে।
৫
পরদিন সকালে বেলা করে ঘুম ভাঙল কিশোরের। জানালা দিয়ে বাইরের উজ্জ্বল রোদের দিকে চেয়ে গত রাতের কথা মনে পড়ল, সব কিছু এখন হাস্যকর মনে হলো। কাপড় পরে নেমে পড়ল, এল নিচে রান্নাঘরে। মুসা আর রবিন খাচ্ছে। টেবিলের এক মাথায় বসে আছেন উইলসন। ভিকি গরম কেক নামিয়ে বেড়ে দিচ্ছে টেবিলে।
কিশোরকে দেখে হাত তুলল মুসা, এসেছ। ডাকতে যাচ্ছিলাম। জিনা গেছে ঘোড়া দৌড়াতে। কয়েক কামড় কেক চিবিয়ে নিয়ে বলল কিশোর।
রুচি বদল হবে, বলল কিশোর।
ইয়ার্ডে মালপত্র গোছানো একঘেয়ে হয়ে গিয়েছিল।
ও। গাছকাটা মনে হয় ভালই লাগবে তোমাদের, হাসলেন উইলসন। আমার তো লাগে। এর মাঝে শিল্প আছে, অনেকটা নিজ হাতে গড়ার মত মজা। বেয়াড়া রকম বেড়ে ওঠা গাছকে হেঁটে নিজের মত সাজিয়ে নেয়া। দিনটা ভালই কাটবে তোমাদের। কিন্তু পয়লা দিনেই বেশি খাটাখাটনি কোরো না। ঘণ্টাখানেক পর পর কিছুক্ষণ করে জিরিয়ে নিও।
নাস্তা সেরে গোলাঘর থেকে তিনটে ছুরি নিয়ে এলেন উইলসন। ছেলেদেরকে নিয়ে খেতে চললেন।
র্যাঞ্চ হাউস আর পথের মাঝের একটা খেতে এল ওরা। ছুরি দিয়ে কুপিয়ে কেটে দেখিয়ে দিলেন উইলসন, কিভাবে কতখানি হাঁটতে হয়। বললেন, গাছের বেশি কাছে যেও না। দূরে দাঁড়িয়ে পাশ থেকে কোপ দেবে, যাতে পায়ে এসে না লাগে।
কোপাতে শুরু করল তিন কিশোর। দাঁড়িয়ে থেকে দেখলেন খানিকক্ষণ উইলসন। যখন বুঝলেন, ছেলেরা শিখে গেছে, বাড়িতে ফিরে গেলেন। কয়েক মিনিট পর ভিকিকে নিয়ে স্টেশন ওয়াগনে করে চলে গেলেন কোথাও।