এই যে, এখানে সাড়া দিলেন তিনি।
হালকা-পাতলা একজন লোক উঁকি দিল দরজায়। মাথায় সোনালি চুল, বয়েস চল্লিশের কাছাকাছি। পরনের জিনস এতই নতুন, কাপড়ের খসখসে ভাবও কাটেনি। চকচকে পালিশ করা বুটে মুখ দেখা যাবে যেন। গায়ের ওয়েস্টার্ন শার্টটা যেন এইমাত্র প্যাকেট ছিড়ে খুলে পরে এসেছে।
এগিয়ে গেলেন উইলসন। হাত মেলালেন দুজনে।
কুকুরের অসদাচরণের জন্যে ক্ষমা চাইল ম্যাকআরবার।
লোকটার পরিচ্ছদ আর কথাবার্তায় একটা ব্যাপারে শিওর হলো কিশোর, মেকি একটা ভাব রয়েছে তার মধ্যে। একেবারে বানিয়ে বলেনি জিনা। কিন্তু আরেকটা প্রশ্নও জাগছে কিশোরের মনে, টুইন লেকসের মত জায়গায়, এই সুন্দর বিকেলে এছাড়া আর কি পোশাক পরতে পারত ম্যাকআরখার? এমনও তো হতে পারে, এখানে আসার আগে ওরকম কাপড় আর কোনদিন পরেনি সে, আসার সময় নতুন কিনে নিয়ে এসেছে। ওগুলো পুরানো হতে তো সময় লাগবে।
শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি শয়তানটাকে, বলল ম্যাকমারধার। আর জালাবে না আপনাকে।
আরে না না, এটা কিছু না, তাড়াতাড়ি বললেন উইলসন। পোষা জন্তুজানোয়ার থাকলে ওরকম একআধটু অত্যাচার করেই। সেটা নিয়ে মাইণ্ড করে বসে থাকলে চলে নাকি।
ছেলেদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন উইলসন।
ম্যাকআরবারের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে রইল জিনা।
ব্যাপারটা লক্ষ করল ম্যাকআরথার, হাসি হাসি পরিষ্কার নীল চোখের তারা কঠিন হয়ে গেল চকিতের জন্যে। তারপর জিনার শরীর ভেদ করে যেন তার দৃষ্টি গিয়ে পড়ল মডেল টি-এর দিকে। আরে, দারুণ একটা গাড়ি! দুর্লভ জিনিস।
একটু আগে এটার কথাই বলছিলাম ছেলেদেরকে। সময় বের করে শিগগিরই ঠিকঠাক করে নেব।
এগিয়ে গিয়ে গাড়িটার গায়ে হাত রাখল ম্যাকআরবার।
হ্যারি ম্যাকআরথার! হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল মুসা। নামটা আগেও শুনেছি মনে হচ্ছে।
তাই নাকি? ফিরে তাকাল লোকটা।
সিনেমায় কাজ করে আমার বাবা। কিছু দিন আগে খাওয়ার টেবিলে বসে আপনার কথা বলছিল। একটা ছবি বানাচ্ছে এখন, তাতে নাকি একটা পুরানো রিও গাড়ি দরকার। কোথাও পায় না পায় না, শেষে নাকি আপনার কাছ থেকে চেয়ে এনেছে। পুরানো গাড়ি কালেকশনের বাতিক আছে আপনার।
তাই নাকি? ও হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিকই, অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল যেন ম্যাকআরথার।
আপনার সংগ্রহের কথা বলছিল বাবা। বিরাট এক প্রাইভেট গ্যারেজ নাকি আছে আপনার, একজন ফুলটাইম মেকানিক রেখে দিয়েছেন বেতন করে। ওর কাজ শুধু গাড়িগুলোকে সব সময় সচল রাখা। সাধারণ কাজ, কিন্তু গাড়ি এত বেশি তাতেই নাকি হিমশিম খেয়ে যায় বেচারা।
হ্যাঁ। সাধারণ বলছ কেন? কাজটা কঠিনই। পুরানো এঞ্জিন, আধুনিক
মেশিনের মত ভাল না, সচল রাখা যথেষ্ট কঠিন।
রানিং বাগ ছবিতে আপনার সিলভার ক্লাউডটাই তো ব্যবহার হয়েছিল?
সিলভার ক্লাউড? ও, হ্যাঁ। হ্যাঁ হ্যাঁ, একটা স্টুডিওকে ধার দিয়েছিলাম…বেশি দিন আগের কথা নয়।
সিলভার ক্লাউড? বলে উঠলেন উইলসন। আমার মডেল টি-ওতো ওটার কাছে নাতি।
শুরুতে অত কোনো গাড়ি আমারও ছিল না, বিনীত কণ্ঠে বলল ম্যাকারবার। তবে একবার নেশায় পেয়ে বসলে কোখেকে কোথেকে জানি জোগাড় হয়ে যায়। কেনা শুরু করলেই টের পাবেন, এই গোলাঘরে কুলাবে না তখন আর। হয় নতুন বানাতে হবে, কিংবা বাড়াতে হবে।
নতুন আরেকটা গোলাঘর বানানোর কথা এমনিতেও ভাবছি, বললেন উইলসন।
কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন দুজনে। হাত নেড়ে নেড়ে বোঝাচ্ছেন উইলসন, কোন জায়গায় কতবড় করে বানাবেন ঘরটা, পুরানোটার কি করবেন।
কি মনে হলো? দুজনে দূরে চলে গেলে বলল জিনা। এরকম ভণ্ড আর দেখেছ?
কাপড়-চোপড় নতুন, বলল মুসা, তাতে কি? নামটা চেনা চেনা লাগছিল, মডেল টি-র প্রতি আগ্রহ দেখে মনে পড়ে গেল। বাবা বলেছে, লোকটার অনেক টাকা, এমনিতেও পাগল, গাড়িরও পাগল। ম্যানডেভিল ক্যানিয়নে নাকি মস্ত বাড়ি আছে তার, দশ ফুট উঁচু দেয়ালে ঘেরা।
মৃদু কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিল কিশোর। কিন্তু রানিং বাগ এর জন্যে তার সিলভার ক্লাউড ধার দেয়নি, বলল সে। ফিল্ম ফান পত্রিকায় গাড়িটার ওপর একটা আরটিকেল বেরিয়েছিল। ম্যাকআরধারের গাড়ি নয়, ওটা ছিল জোনাথন হ্যামিলটনের। ছবির খরচও তিনিই দিয়েছেন। আর ছবিটা আজকের নয়, বহু আগের।
কেউ তর্ক করল না। ওরা জানে, না জেনে কোন কথা বলে না কিশোর, ও যখন বলছে, ঠিকই বলছে।
লাফিয়ে উঠল জিনা। কি বলেছিলাম? ব্যাটা একটা ভণ্ড। মিখক।
হাসল কিশোর। তা বলা যায় না, জিনা। হ্যারি ম্যাকআরবারের অনেকগুলো গাড়ি আছে। তার মধ্যে একটা গাড়ি কখন কাকে ধার দিল না দিল, মনে না থাকলে মোষ দেয়া যায় না। তাছাড়া তার কাছেই গাড়ি চেয়েছে স্টুডিও এমন না-ও হতে পারে। হয়তো তার কোন কর্মচারীই গাড়ির ব্যাপারগুলো দেখাশোনা করে, হয়তো তার মেকানিকের ওপরই রয়েছে দায়িত্ব।
আমার বিশ্বাস হয় না, গোয়ারের মত হাত নাড়ল জিনা।
অকস্মাৎ পরিবেশটাই কেমন জানি বদলে গেল। অস্বস্তিকর নীরবতা। সহজ করে দিল ভিকি, ডিনারের জন্যে ডাক দিয়ে।
৪
আরে আরও কয়েকটা কেক নাও না, রান্নাঘরে লম্বা টেবিলের কিনার থেকে বলে মৃত্যু খনি উঠল ডিকি। খুব ভাল জিনিস, জ্যাম মেশানো।
মাথা নাড়ল কিশোর, না আর পারব না। অনেক খেয়েছি।