এই যে, সিনর উইলসন, চেঁচিয়ে বলল ভিকি। জিনাও এসেছ। খুব ভাল হয়েছে। তোমরা না থাকলে কেমন খালি খালি লাগে।
উইলসন হাসলেন। সেজন্যেই পূর্ণ করে রেখেছ নাকি?
ওই কুত্তাটার কথা আর বলবেন না, ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল ভিকি। আস্ত চোর!
স্বভাব বদলে যাবে, ভেব না, হাসি মুখে বললেন উইলসন। আকাশে গোলাগুলি চালিয়ে যাও, চুরি না ছেড়ে যাবে কোথায় ব্যাটা। হ্যাঁ, ভিকি, এরা। জিনার বন্ধু। কিশোর পাশারবিন মিলফোর্ড মুসা আমান। হপ্তা দুই বেড়াবে আমাদের এখানে।
ওমা, তাই নাকি? উজ্জ্বল হয়ে উঠল ভিকির কালো চোখ। খুব ভাল, খুব ভাল। বাড়িতে এক দল বাচ্চা-কাচ্চা না থাকলে ভাল লাগে? এসো, আমি খাবার ব্যবস্থা করছি। এতদূর এসেছ, নিশ্চয় খিদে পেয়েছে।
র্যাঞ্চ হাউসের ভেতরে ঢুকে গেল ভিকি।
সত্যিই খিদে পেয়েছে তো তোমাদের? বললেন উইলসন। ভিকির সামনে কম খেলে চলবে না, রেগে যাবে।
কিছু ভাববেন না,অভয় দিল মুসা। আন্তরিক হাসিতে দাঁত বেরিয়ে পড়েছে। কখনও যাতে না রাগে সেই ব্যবস্থাই করব।
গাড়ি থেকে স্যুটকেসগুলো নামিয়ে বারান্দায় রাখতে শুরু করলেন উইলসন। তাড়াতাড়ি তাঁকে সাহায্য করতে এগোল তিন গোয়েন্দা। কয়েক মিনিট পর খোলামেলা বিশাল লিভিং রুমের ওপরে দোতলার বড় একটা বাংকমে জিনিস-পত্র নিয়ে এল ওরা। জিনার ঘর নিচে, চাচার ঘরের পাশে। ভিকির ছোট একটা অ্যাপার্টমেন্টই আছে, রান্নার্থরের পেছনে।
গোসল করবে তোমরা? জিজ্ঞেস করলেন উইলসন। বেশি দেরি কোরো। ডিনারের আগেই আশপাশটা ঘুরিয়ে দেখাতে চাই তোমাদের।
আলমারিতে কাপড় গোছাচ্ছিল মুসা, উইলসনের কথা শুনে গোছানোর আগ্রহ নষ্ট হয়ে গেল। টান দিয়ে বড় একটা তোয়ালে নিয়ে বলল, পরেও গোছানো যাবে। আগে আপনার সঙ্গেই যাই। বাথরুমের দিকে রওনা হলো সে।
খানিক বাদে জিনা আর তার চাচার সঙ্গে বেরোল তিন গোয়েন্দা। ওপরে নিউ মেকসিকোর পরিষ্কার নীল খোলা আকাশ। জিনার হাতে ইয়া বড় বড় দুই টুকরো চিনি, গাড়িপথ ধরে প্রায় দৌড়ে চলল ছোড়র খোয়াড়ের দিকে। ডাকহে, কমেট। কমেট?
ডাক শুনে ফিরে তাকাল ঘোড়াটা, দৌড়ে এল বেড়ার কাছে। গলা বাড়িয়ে দিল বেড়ার বাইরে। আনন্দে নাক দিয়ে বিচিত্র শব্দ করছে। গলা জড়িয়ে ধরে আদর করল জিনা।
দেখো না কাণ্ড, হাসলেন উইলসন, দুদিন মাত্র হয়েছে, অথচ মনে হচ্ছে কত যুগ একে দেখেনি। ওরা থাকুক। তোমরা এসো, গাছ ছাঁটার ছুরি দেখবে।
পিকআপের পাশ কাটিয়ে গোলাবাড়ির কাছে চলে এল ওরা। দরজা খুললেন উইলসন। শুকনো খড়ের গন্ধ লাগল নাকে। উঁকি দিয়ে দেখল ছেলেরা, ঘরের কোণে গাদা করে রাখা আছে খড়ের বোঝ। দোলের হুক থেকে ঝুলছে হোস পাইপের কয়েল। খন্তা, কোদাল, বেলচা, বড় কাঁচি আর নানা রকম দরকারী যন্ত্রপাতি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে একটা ওয়ার্কবেঞ্চের পাশে। কাছেই। একটা র্যাঞ্চে রাখা আছে পাঁচটা বড় বড় ভোজালীর মত ছুরি।
বাড়িতে বাগানের গাছ তো কাঁচি দিয়েই হুঁটি, মুসা বলল।
সে অল্প কয়েকটা গাছের বেলায় সম্ভব, বুঝিয়ে বললেন উইলসন। কিন্তু হাজার হাজার ক্রিস্টমাস গাছ কাঁচি দিয়ে হাঁটতে অনেক সময় লাগবে, ছুরি দিয়ে কোপানো ছাড়া উপায় নেই। তাছাড়া ছুরি দিয়ে এক কোপে ওপর-নিচের অনেকগুলো ভাল তুমি ছেটে ফেলতে পারছ, তাতে সমান হয় বেশি, কাঁচি দিয়ে সেটা হয় না। র্যাঞ্চ থেকে একটা ছুরি নিয়ে এলেন তিনি। আপনা-আপনি সুন্দর হয় না ক্রিস্টমাস ট্ৰী, নিয়মিত যত্ন লাগে। বছর তিনেক আগে জায়গাটা যখন কিনলাম, তখন ভাবতাম, এ আর কি? কয়েকটা চারা মাটিতে পুঁতে দিলেই হলো, নিজে নিজেই বড় হয়ে সাইজমত হয়ে যাবে। এখন বুঝি কত কঠিন। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হয়, ডাল পাতা ছাঁটতে হয়, আর বোজ পানি দেয়া তো আছেই। ছুরি চালানো কিন্তু সহজ ভেব না, কিভাবে চালাতে হয় দেখালেন তিনি। এই যে, এভাবে ধরে, ওপর থেকে নিচে এভাবে কোপ মারতে হয়, সাই করে বাতাস কাটল তীক্ষ্ণ ধার ফলা। খুব সাবধানে কোপাতে হয়। বেশি নিচে যদি নামিয়ে ফেলো, পায়ে এসে লাগবে। ফেড়ে যাবে। পারবে তো?
পারব, বলল মুসা।
সাবধানে আবার জায়গামত ছুরিটা রেখে দিলেন উইলসন।
গোলাবাড়ির একধারে ফেলে রাখা অনেক পুরানো একটা গাড়ি দেখালেন, নিরেট রবারে তৈরি চাকা, ফাঁপা টায়ার নয়। নতুন আরেকটা গোলাঘর বানাব। ওই গাড়িটারও একটা ব্যবস্থা করব তখন।
কাছে গিয়ে গাড়ির আধখোলা একটা জানালা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিল কিশোর। কুচঁকে গেছে সীটের কালো চামড়ার কভার, নগ্ন হয়ে বেরিয়ে আছে কাঠের মেঝে। টি মডেলের ফোর্ড, না? ফিরে জিজ্ঞেস করল সে।
হ্যাঁ, বললেন উইলসন। বাড়িটা যখন কিনি তার আগে থেকেই ছিল, ফাউ পেয়েছি। ওখানেই ছিল ওটা, খড়ের তলায় চাপা পড়ে ছিল। খড় সরিয়েছি, কিন্তু গাড়িটার কিছু করতে পারিনি। সময়ই পাই না। তবে ঠিকঠাক করব, মডেল টি এখন প্রাগৈতিহাসিক জিনিস, সংরক্ষণের বস্তু।
দরজায় দেখা দিল জিনা, ঘোষণা করল, মহামান্য হ্যারি ম্যাকআরথার তশরিফ রাখছেন।
আহ, জিনা, একটু ভদ্রভাবে কথা বল, বিরক্ত হলেন উইলসন। দেখিস, তার সামনে আবার কিছু বলে বসিস না।
চুপ করে রইল জিনা।
বাইরে পায়ের আওয়াজ হলো। ডাক শোনা গেল, মিস্টার উইলসন?