কিশোর থামতেই রবিন বলল, কিন্তু এবার বাদ সাধলেন মিসেস ফিলটার। বুঝে ফেললেন লোকটা ম্যাকআরথার নয়। ফলে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে খনির মুখে গর্তে ফেলে রাখল জনি। পিকআপটা নিয়ে গিয়ে রেখে এল হ্যামবোনে। এমনভাবে সাজল, যেন হঠাৎ জরুরী খবর পেয়ে তাড়াহুড়ো করে বেড়াতে কিংবা অন্য কোন কারণে চলে গেছেন মিসেস ফিলটার, কাউকে কিছু জানানোর সুযোগ পাননি। পিকআপটা হ্যামবোনে নিয়ে ফেলে এসেছে যাতে কেউ খুঁজে না পায়। পার। পেয়েও যেত, কিন্তু এবারে জনির কপাল খারাপ। আমরা গিয়েছি টুইন লেকসে। তছাড়া হ্যারি আর বিংগোও গেছে লুটের টাকার খোঁজে।
মেকসিকান দুই শ্রমিকের ব্যাপারটা কি? জিজ্ঞেস করলেন পরিচালক। জনি হারবারের সহকারী ছিল?
না, জবাব দিল কিশোর। ওদেরকে শ্রমিকের কাজ করার জন্যেই ভাড়া করে এনেছে জনি। বেড়া দেয়া, বাড়িঘর রঙ করানো থেকে শুরু করে খনিতে ডিনামাইট ফাটানো, সব কাজই করত। তবে, ওরাও একেবারে সুধু নয়, সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে এসেছে, বেআইনী অনুপ্রবেশ, তাই জনির শয়তানী কিছুটা বুঝে থাকলেও মুখ বুজে ছিল। আর এ-কারণেই বেছে বেছে ওদেরকে ভাড়া করেছে জনি।
তবেলোকগুলোভাল, মেকসিকোয় কাজের আশায়ই এসেছে, ক্রিমিনাল নয়, রবিন বলল। সব খুলে বলেছে আংকেল উইলসনকে। কর্তৃপক্ষেরসঙ্গে যোগাযোগ করে ওদের কাগজপত্র ঠিক করেছেন আংকেল, নিজের র্যাঞ্চে কাজ দিয়ে রেখে দিয়েছেন। জনির কুকুরটা নিয়ে এসেছে ভিকিখালা। এনেই আগে পেট ভরে। খাইয়েছে, তার ভক্ত হয়ে গেছে কুকুরটা। রাতে তার বিছানার পাশে শোয়। পেট ভরা থাকে, ফলে মুরগীর দিকে ফিরেও তাকায় না আর, চুরির স্বভাবও চলে গেছে।
শুনে সুখি হলাম, চেয়ারে হেলান দিলেন পরিচালক। চমৎকার একটা কেস। কিন্তু পুরোপুরি মীমাংসা হলো না সব কিছুর।
কোনটা, স্যার? জিজ্ঞেস করল মুসা।
বাড হিলারি খনিতে পড়ে মরেছে, এতে কোন সন্দেহ নেই, বললেন পরিচালক। কিন্তু কেন মরেছে, জানা যাবে না। আর টাকাগুলোই বা কেন টিফোর্ডের সীটের তলায় লুকাল?
অনুমান করা যেতে পারে, বলল কিশোর। সাময়িকভাবে হয়তো গাড়িতে টাকাগুলো লুকিয়েছিল হিলারি, তারপর খনিতে গিয়ে ঢুকেছিল আরও ভাল কোন জায়গা খোঁজার আশায়। তারপর কোন কারণে আর বেরোতে পারেনি। কারণটা কি, কোনদিন জানা যাবে না। আরও একটা ব্যাপার জানা যাবে না, খনিমুখ যখন বন্ধ করা হয়, তখন সে জীবিত ছিল, না মৃত…।
মৃতই হবে, বাধা দিয়ে বলল মুসা। নইলে হাঁকডাক শুনে মুখের কাছে চলে আসত। দেখলে তো আর তখন তাকে ভেতরে রেখে সীল করা যেত না।
কিন্তু তার আগেই যদি গর্তে পড়ে গিয়ে থাকে? পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মরে গেলে তো বেঁচে গেছে, কিন্তু যদি জীবিত থাকে? ক্ষুধাতৃষ্ণায় ধুকে ধুকে মরেছে বেচারা…
এত বড় শাস্তি আল্লা পম শত্রুকেও না দিক, কথাটা অন্তর থেকে বেরোল মুসার।
আরেকটা ব্যাপার, বললেন পরিচালক, লাশটা নিশ্চয় আগেই দেখেছিল জনি?
হ্যাঁ, কিশোর বলল, এ-জন্যে কাউকে খনিতে ঢুকতে দিত না, জানাজানি হলেই লোক ছুটে আসবে দলে দলে। চোরের মন পুলিশ পুলিশ। জনির হয়েছে। তাই বেশি লোক যাতায়াত করলে কত রকম গোলমালই হতে পারে, তার আসল কাজে বাধা আসতে পারে, তাই ব্যাপারটা চেপে রাখতে চেয়েছিল।
হুঁম, মাষ্টা দোলালেন পরিচালক।
আপনার জন্যে একটা জিনিস নিয়ে এসেছি, স্যার, পকেটে হাত ঢোকাল কিশোর। একটা ছোট স্যুভনির। তামা মেশানো সোনার টুকরোটা বের করে দিল।
খুব আগ্রহ দেখিয়ে জিনিসটা নিলেন পরিচালক। থ্যাংক ইউ। খনি থেকে পাওয়া কাঁচা সোনার টুকরো বেশ কয়েকটা আছে আমার, কিন্তু ওগুলো কৃত্রিম, আসল একটাও নেই। তার ওপর আবার নকশা কাটা…আচ্ছা, তামা মিশল কি করে? কার্তুজের ভেতরে তো জানি, সীসা বা লোহার বল থাকে?
সেটাও জনি হারবারের কীর্তি, হেসে বলল কিশোর। নিজেই কার্তুজ বানিয়ে নিয়েছে সে, লোহার বলের জায়গায় ছোট ছোট তামার টুকরো ভরেছে।
হুঁ, চালাক ঠিকই। ফেঁসে গেছে কপাল খারাপ বলে।…নুড়িটা কি করেছ?
জিনাকে দিয়ে দিয়েছি।
ওটা ওর প্রাপ্য, মুসা বলল, আরিবারে, অনেক মেয়ে দেখেছি, কিন্তু ওর মত মেয়ে খুনে ডাকাতগুলোর সঙ্গেও যা…ইয়ে, যা…
গোয়ার্তুমি, শব্দটা ধরিয়ে দিলেন চিত্রপরিচালক।
হ্যাঁ, যা গোয়ার্তুমি করল। কিছুঁতেই হেঁটে যেতে রাজি হলো না ভাকাতগুলোর সঙ্গে। গেলে আর আমাদের খুঁজে পেত না হেলিকপ্টার। এই কেসই হত তিন গোয়েন্দার শেষ কেস।