এর চেয়ে অনেক বেশি দেখেছ, জলদস্যুর দ্বীপে, মনে করিয়ে দিল জিনা।
সে তো সোনার মোহর, নগদ টাকা না।
প্রথমে মিসেস ফিলটারের বাড়ি থেকে শুরু করল ওরা। এক ঘরে একটা : সোফার নিচে পাওয়া গেল আঙ্কেল উইলসনের হারানো ছুরি। কিন্তু টাকা নেই।
খনিতে খোঁজা হলো আরেকবার!!
খনির কাজকর্মের বিল্ডিং, নকল ম্যাকআরথারের কেবিন, চিরুনি দিয়ে উকুন খোঁজার মত করে খোঁজা হলো। তার বিরুদ্ধে যায়, এমন কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেল? বেশ কিছু ধনী লোকের নাম ঠিকানার তালিকা, ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট বই-ধাপ্পা দিয়ে লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওসব অ্যাকাউন্টে জমা করত ঠগটা। কিন্তু লুটের টাকা পাওয়া গেল না।
কেবিনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঘনঘন নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। শেরিফ বেরিয়ে আসতেই বলল, আর একটা মাত্র জায়গা আছে।
কোথায়? ভুরু কোচকালেন শেরিফ।
আংকেল উইলসনের গোলাঘরে।
হই হই করে ছুটল সবাই।
ধুলো আর মাকড়সার জালে ঢাকা কোণা-ঘুপচি কিছুই বাদ দেয়া হলো না? কিন্তু পাওয়া গেল না টাকা।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে কাটতে পুরানো টি-মডেলের দিকে এগোল কিশোর। কি ভেবে ঢুকে গেল ভেতরে। শেরিফের কথা কানে আসছে, বোধহয় টাকাগুলো অন্য কোথাও রেখে এসেছিল ব্যাটা, টুইন লেকসে আনেইনি…
প্রথমেই পেছনের সীটে চাপ দিল কিশোর।
নড়ে উঠল গদি। আলগা।
হ্যাঁচকা টানে সরিয়ে আনল গদি। চেঁচিয়ে উঠল, পেয়েছি। পেয়েছি।
ছুটে এল সবাই। হুড়মুড় করে গাড়িতে উঠে পড়ল জিনা আর মুসা, অন্যেরা পারল না, জায়গা নেই।
আরিব্বাপরে! এত টাকা? চোখ বড় বড় করে ফেলল মুসা। যাক বাবা, চোখ সার্থক হলো।
সুন্দর পরিপাটি করে অনেকগুলো বাণ্ডিল করা হয়েছে নোটের তাড়া দিয়ে, যত্ন করে ভরেছে প্লাসটিকের ব্যাগে।…
একটা ব্যাগ ছিড়ল কিশোর। পাঁচ বছর পরেও আনকোরাই রয়েছে বিশ ডলারের নোটলো, তাজা গন্ধ আসছে।
গুণতে কদিন লাগবে? মুসার প্রশ্ন।
ঈশ্বরই জানে, হাত নাড়লেন শেরিফ। বাইরে দাঁড়িয়ে গাড়ির জানালায় নাকমুখ চেপে রেখেছেন, ধুলো-ময়লায় যে মাখামাখি হচ্ছে খেয়ালই নেই।
২১
কয়েক দিন পর রকি বীচে ফিরে এসেছে তিন গোয়েন্দা। বিখ্যাত চিত্রপরিচালক, মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে এসেছে দেখা করতে, সেই সাথে লেটেস্ট কেসের রিপোর্ট দিতে।
কি ব্যাপার? তিন গোয়েন্দাকে দেখে বললেন চিত্রপরিচালক। টেলিফোনে তো বললে মালির কাজ করতে গেছ? হাতে ফাইল কেন? জবাবটা নিজেই দিলেন। বুঝেছি। এমন একটা জায়গায় গেছ। রহস্য কি আর মিলবে না। তাছাড়া সঙ্গে ছিল জরজিনা পারকার…
হেসে ফাইলটা টেবিলের ওপর দিয়ে পরিচালকের দিকে ঠেলে দিল রবিন।
মন দিয়ে রিপোর্টের প্রতিটি শব্দ পড়লেন পরিচালক। তারপর মুখ তুললেন। মিসেস ফিলটারের কাছে মাপ চেয়েছ তো, কিশোর? ভাগ্য ভাল, বাড়ি গিয়ে তাকে পাওনি সেদিন, নইলে আরও লজ্জা পেতে।
পাইনি বলেই ভুলটা আরও বেশি হয়েছে, স্যার, স্বীকার করল কিশোর। নইলে জানতে পারতাম, নকল ম্যাকআরথারকে চিনে ফেলেছেন তিনি। আরও আগেই ধরা যেত হ্যারি আর বিংগোকে, জিনা আর মুসারও মরু-সফর হত না।
হুঁ, তা ঠিক, মাথা দোলালেন চিত্রপরিচালক। কিন্তু ডাকাতির পর পরই কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছিলেন মহিলা? টুইন লেকসে জায়গা কেনার টাকা পেলেন কোথায়?
ঘটনাগুলো অনেকটা, কি বলব, কোইনসিডেন্সই হয়ে গেছে। ডাকাতিও। হলো, সেই সময় মিসেস ফিলটার খবর পেলেন, তার এক ফুফু মরে মরে অবস্থা। দোকানে খবর দেয়ার সময় পাননি তিনি, আর কিছুটা গাফিলতিও বটে, দেননি। না দিয়েই চলে গেলেন ফুফুকে দেখতে, আল পেসোতে। সেটা মে আর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। জান দিয়ে ফুফুর সেবা করলেন কয়েকদিন। কিন্তু বাঁচলেন না মহিলা, অনেক বয়েস হয়েছিল। চিরকুমারী ছিলেন, আর কোন আত্মীয় নেই। তাই, মৃত্যুর আগে যার কাছ থেকে সেবা পেয়েছেন, সমস্ত সম্পত্তি তাকেই দিয়ে গেছেন। তবে সেটা খুব বেশি কিছু ছিল না। তবু, সেটাই তখন ছিল মিসেস ফিলটারের কাছে অনেক বেশি। ফুফুর জায়গা বিক্রি করে দিয়ে টুইন লেকসে, তাঁর প্রিয় শহরে এসে জায়গা কিনলেন।
বুঝলাম।…তা, নকল ম্যাকআরথারকে কি আদালতে হাজির করেছে?
করেছে। তার আসল নাম জনি হারবার। অনেক জায়গায় তার নামে পুলিশ ওয়ারেন্ট আছে। অনেক জায়গায় ঠগবাজি করে এসেছে। শেষবার করতে চেয়েছে ডাৱাস-এর এক মস্ত ধনীর সঙ্গে। তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল ডেথ ট্র্যাপ মাইন দেখাতে। শুধু ধাপ্পাবাজই নয়, পাকা জালিয়াতও সে। ব্যাঙ্ক সার্টিফিকেট আর জায়গার দলিল জাল করে মক্কেলদের দেখিয়েছে, সে কত বড় লোক। একেক জায়গায় গিয়ে একেক সময় একেক পরিচয় দিয়েছে। শেষবার ম্যাকআরথার সেজে এসেছে।
তবে ডেথ ট্যাপ মাইনে বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি জনি, সময়ও পায়নি অবশ্য। আংকেল উইলসনের কাছ থেকে জায়গা কিনেছে পঁচিশ হাজার ডলারের, কিন্তু দিয়েছে মাত্র এক হাজার। বুঝিয়েছে, স্টক মার্কেটে তার কোটি কোটি টাকা আটকে গেছে, এই ছুটল বলে, তারপর এক সঙ্গে বাকি চব্বিশ হাজার দিয়ে দেবে। আসলে আর এক পয়সাও দিত না। খালি সময় বাড়াত, ইতিমধ্যে বোকা কিছু মক্কেল জুটিয়ে ভাল রকম একটা দাও মেরে সরে পড়ত একদিন। আগেও এ-রকম করেছে বহুবার।