ম্যাকআরথারকে দেখিয়ে গর্জে উঠলেন শেরিফ, এ-ব্যাটাকে আটকাও, সহকারীকে নির্দেশ দিয়েই দৌড় দিলেন কিশোরের পেছনে। তাদেরকে অনুসরণ করল জিনা, মুসা, রবিন, আংকেল উইলসন।
ঢালু সুড়ঙ্গ ধরে প্রায় দৌড়ে নামতে লাগল কিশোর। তার ঠিক পেছনেই রয়েছে অন্যেরা।
যে দেয়ালে সোনার টুকরো পাওয়া গেছে, তার পাশ কাটিয়ে এল ওরা। মোড় নিয়ে সেই করিডরে ঢুকে পড়ল, যেটার শেষ মাথায় রয়েছে গর্ত, যাতে পাওয়া গেছে হিলারির লাশ।
ঠিকই অনুমান করেছে কিশোর।
খাদের ভেতরে পড়ে আছেন মিসেস ফিলটার। হাত-পা বাঁধা, মুখে রুমাল গোজা। অসহায়।
২০
উজ্জ্বল হলো মিসেস ফিলটারের চোখ।
তাড়াতাড়ি ফিরে গিয়ে একটা মই এনে গর্তে নামলেন শেরিফ।
ইস্, খুব কষ্ট পেয়েছি, মুখ থেকে রুমাল সরাতেই বললেন মিসেস ফিলটার। আমি তো ভাবছিলাম আর বুঝি কেউ আসবেই না।
হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিতেই স্বচ্ছন্দে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। বাঁধা জায়গাগুলো বার কয়েক ডলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে নিলেন, হাত দিয়ে কাপড়ের ধুলো ঝেড়ে এসে মই ধরলেন।
মিসেস ফিলটারের সুটকেসটা তুলে আনলেন শেরিফ।
ঠগটা কোথায়? ওপরে উঠে জিজ্ঞেস করলেন মিসেস ফিলটার।
মিস্টার ম্যাকআরথার? পাল্টা প্রশ্ন করল কিশোর।
ও ম্যাকআরথার নয়। বাচ্চাটার মাঝে অদ্ভুত কি ছিল, পরে মনে হয়েছে। জন্মের সময়ই ওর চোখ ছিল বাদামী। এমনিতে, নীল চোখ নিয়ে জন্মায় যে কোন বাচ্চা, বড় হলে ধীরে ধীরে চোখের রঙ বদলায়, একেক জনের একেক রকম হয়। কিন্তু ম্যাকআরথারের জন্মের সময় যা ছিল, পরেও তাই রয়েছে, কয়েক বছর তো দেখেছি, এখনও নিশ্চয় ওরকমই আছে। নীল বদলে বাদামী হয়, কিন্তু বাদামী বদলে নীল হয়েছে শুনিনি।
লোকটাকে বলেছেন নাকি একথা?
বলেই তো পড়লাম বিপদে। বন্দুক ধরে রেখে আমাকে সুটকেস গোছাতে বাধ্য করল। এখানে এনে ফেলল। কোথায় সে?
বাইরে, জানালেন শেরিফ। আরেকটু পরেই হাজতে ঢুকবে।
হাজত তার জন্যে অনেক ভাল জায়গা, এই শাস্তি পছন্দ হচ্ছে না মিসেস ফিলটারের।
আপাতত এরচে খারাপ জায়গা আর পাচ্ছি না, মিসেস ফিলটার, হেসে বললেন শেরিফ। পরে অন্য ব্যবস্থা করব।
আসামীদেরকে হাজতে নিয়ে গেলেন শেরিফ।
সেই বিকেলেই ফিরে এলেন আবার আংকেল উইলসনের র্যাঞ্চে, একা। ইতিমধ্যে হ্যামবোনে গিয়ে মিসেস ফিলটারের পিকআপটা চালিয়ে নিয়ে এসেছেন উইলসন আর ভিকি।
উইলসনের ঘরেই রয়েছেন মিসেস ফিলটার, চা খাচ্ছেন বসে।
কি খবর, শেরিফ? শেরিফকে দেখে হাসলেন তিনি।
শেরিফও হাসলেন। একে একে তাকালেন তিন গোয়েন্দা আর জিনার দিকে। ঠিকই বলেছ তোমরা। ওই দুই ব্যাটা ডাকাতিতে জড়িত। একেবারে দাগী আসামী। অপকর্ম এর আগেও অনেক করেছে। চারটে স্টেটের পুলিশ খুঁজছে
ওদেরকে। আর হ্যাঁ, বাড হিলারিও ছিল ওদের দলে।
হারামীটার কি করলেন? জানতে চাইলেন মিসেস ফিলটার।
উকিলকে ফোন করেছে। লাভ হবে কচু। ওর আঙুলের ছাপ নিয়ে ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছি। আমার ধারণা, পুলিশের খাতায় রেকর্ড মিলবেই। লোক ঠকানোয় ওস্তাদ তো, সেটা একবারে হয়নি। ঠিকই ধরেছেন, ম্যাকআরথার নয় সে, আসল ম্যাকআরথারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে এলাম।
শুরু থেকেই বলছি, ওটা একটা আস্ত ভণ্ড! সুযোগ পেয়ে ঝাল ঝাড়ল জিনা। কেউ শুনলেন না আমার কথা। পুরানো গাড়িটার কথা যখন মিথ্যে বলল, তখনই বোঝা উচিত ছিল আমার চাচারু।
যা হবার হয়েছে, মিস জিনা, ভুল স্বীকার করছি, যাও, হাত-জোড় করে দেখিয়ে জিনার রাগ কমালেন শেরিফ। এখন তো ধরা পড়েছে। সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে এসেছি, বাড়ি তল্লাশি করব ওর।
আরও প্রমাণ খুঁজছেন? জিজ্ঞেস করল রবিন।
হ্যাঁ। এবং দশ লাখ ডলার।
খবরটা হজম করার সময় দিলেন সবাইকে, তারপর বললেন, হ্যারি আর বিংগো মুখ খুলেছে। ওদের সঙ্গে যে মেয়েমানুষটা ছিল, তার নাম ভিকি নরমা…না না, ভিকি, তুমি চমকে ওঠো না, তুমি না। আরেকজন। জেলে পচছে এখন। ডাকাতি করে সোজা লঙর্সবুর্গে গিয়ে এক হোটেলে উঠেছিল চারজনে। কিন্তু পরদিন অন্য তিনজনকে ফাঁকি দিয়ে সব টাকা নিয়ে কেটে পরে চোরের সর্দার বাড হিলারি। পালিয়ে আসে টুইন লেকসে। তারপর থেকে তার আর কোন খবর পায়নি সহকারীরা। ইতিমধ্যে আরেক চুরির কেসে ফেঁসে গিয়ে ধরা পড়ল ভিকি। কিন্তু হ্যারি আর বিংগোকে ধরতে পারেনি পুলিশ। তারা হিলারির লাশ পাওয়া গেছে শুনে ছুটে এসেছে টুইন লেকসে, টাকার সন্ধানে।
কিন্তু ম্যাকআরথার পেয়ে গিয়ে যে কোথাও লুকিয়ে রাখেনি, কি করে জানছেন? প্রশ্ন রাখল মুসা।
না, তা মনে হয় না, মাথা নাড়ল কিশোর। এত টাকা পেলে ও ঠগবাজি করার জন্যে আর এখানে বসে থাকত না এক মুহূর্তও। টাকাগুলো নিয়ে সোজা, নিখোঁজ হয়ে যেত। আমি ডাকাত হলে অন্তত তাই করতাম।
আমিও, শেরিফ বললেন। সেজন্যেই ভাবছি, টাকাগুলো কাছাকাছিই কোথাও রয়েছে। কিন্তু কোথায়? খনিতে নেই, আমি শিওর। লাশটা পাওয়ার পর খনির ভেতরে কোথাও খোঁজা বাদ রাখিনি, টাকা খুঁজিনি অবশ্য, সূত্র খুঁজেছি।
মিসেস ফিলটারের কোন ঘরে লুকায়নি তো? বলে উঠল জিনা। ওখানেই তো প্রথমে উঠেছিল হিলারি।
অসম্ভব না, একমত হলো মুসা। চলো, খোঁজা শুরু করি। আরিব্বাপরে, দশ লাখ। জিন্দেগীতে এক সঙ্গে চোখে দেখিনি।