ম্যাকআরআরের দিকে ফিরল কিশোর। খনিতে টাকাগুলো পেয়েছেন আপনি, না?
জোরে মাথা নাড়ল ম্যাকআরথার। না। বলেইছি তো, খনির ভেতরে ঢুকে দেখিনি ভালমত। লাশটা পাওয়া যাওয়ার পর অবশ্য শেরিফ তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন, কিন্তু টাকাটুকা কিছু পাওয়া যায়নি। আসলে কিছুই নেই খনিতে।
কিছুই না, মিস্টার ম্যাকরখার? পকেট থেকে সোনার টুকরো বের করে শূন্যে ছুঁড়ল কিশোর, লুফে নিয়ে বলল, এটাও না? খাটি সোনা।
বিস্মিত হলো ম্যাকআরথার।
স্বর্ণ? ভুরু কোঁচকালেন শেরিফ। ডেথ ট্র্যাপে সোনা আছে বলে তো শুনিনি?
কিন্তু এখন আছে, মুচকি হাসল কিশোর। এটা পেয়েছি…আরেকটা, পকেট থেকে মুড়ি বের করে দেখাল, এই যে, এটাও পেয়েছি। লর্ভর্সবুর্গে জুয়েলারের দোকানে গিয়ে পরীক্ষাও করিয়েছি, খাটি সোনা। তামার সঙ্গে মেশানো।
তাজ্জব হয়ে গেছেন শেরিফ। কিন্তু…কিন্তু ওই খনিতে তো সোনা ছিল না। থাকলে আগে তার চিহ্নও পাওয়া গেল না কেন?
সেটাই তো মজা, হাসল কিশোর। তখন আসলেই ছিল না। পরে পাওয়া সোনার টুকরোটা শেরিফের হাতে দিয়ে বলল, খনির দেয়ালে গেথে ছিল। ভাল করে দেখুন তো কিছু বুঝতে পারেন কিনা?
পারলেন না শেরিফ, মাথা নাড়লেন।
গতরাতে হেলিকপ্টারে বসে ভালমত ভেবেছি, বলল কিশোর। জানি, অন্যান্য ধাতু-এই যেমন, তামা, রূপার সঙ্গে থাকে অনেক সময় স্বর্ণ, কিন্তু তামাই হোক আর রূপাই হোক, এত গায়ে গায়ে মেশামেশি করে থাকে না, এত বেশি পরিমাণে। সন্দেহ হলো। মনে পড়ল টুইন লেকসে এসে পয়লা রাতে গুলির শব্দ শুনেছি।…শেরিফ, আরেকবার ভাল করে দেখুন তো টুকরোটা, কিছু চোখে পড়ে কিনা?
তালুতে রেখে আরেকবার দেখলেন শেরিফ। নকশা।…নকশার মত কি যেন…
নকশাই, মাথা কাত করল গোয়েন্দাপ্রধান। কমলা ফুলের কুঁড়ি আঁকা ছিল। বিয়ের আঙটি ছিল ওটা।
আগে বাড়ল ম্যাকআরথার। কোথায় পেয়েছ তুমি ওটা? খনিতে পেয়েছ, বিশ্বাস করতে বলো একথা?
আমার চেয়ে আপনিই তো ভাল জানেন। এত অসতর্ক হওয়া উচিত হয়নি আপনার। বাজারে সোনার টুকরোও কিনতে পাওয়া যায়। পুরানো গহনা কিনেই তো ভুলটা করেছেন। শেরিফের দিকে ফিরে বলল কিশোর, পুরানো এক খেলা খেলতে চেয়েছিলেন মিস্টার ম্যাকআরহার। শটগানের নলে অলঙ্কার ভরে, চেম্বারে গুলি ভরে ফায়ার করেছেন গিয়ে খনির দেয়ালে। তারপর লোক ডেকে এনেছেন দেখানোর জন্যে যে খনিতে সোনা আছে। যখনই কাউকে দেখাতে এনেছেন, মেকসিকান শ্রমিকদের দিয়ে ডিনামাইট ফাটিয়েছেন ভেতরে, যেন নিয়ম মাফিক খোঁজা হচ্ছে খনি। মনে হয়, বোকা টাকার কুমীরগুলোকে লর্ডসবুর্গে পাকড়াও করেছেন মিস্টার ম্যাকআরথার। ওদের ধরে নিয়ে এসেছেন। দেখিয়েছেন, ডেথ ট্র্যাপে সোনা আছে, টাকা ইনভেস্ট করতে রাজি করিয়েছেন।
কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না, বাধা দিয়ে বললেন আঙ্কেল উইলসন, ম্যাকআরথার এ-কাজ করতে যাবে কেন? সে তো কোটিপতি। টাকার অভাব নেই। কেন তৃতীয় শ্রেণীর ঠগবাজি কুরতে যাবে?
দাঁত বের করে হাসল, না হুমকি দিল ম্যাকআরথার, বোঝা গেল না। বলল, বুঝতে পারছেন না, কারণ আমি এসব করিনি। বাজে গল্প ফেঁদেছে।
খনিতে ঢুকলেই প্রমাণ হয়ে যাবে, বলল কিশোর। গল্প না, সত্যি…।
খবরুদার! রাগে জ্বলে উঠল ম্যাকআরথার। আমার খনিতে ঢুকবে না! আগে আমার উকিলকে ডাকছি…
হ্যাঁ হ্যাঁ, ডাকো, কঠিন কণ্ঠে বললেন শেরিফ। তোমাকে অ্যারেস্ট করছি আমি। দরকার হলে অফিসে গিয়ে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে আসব।
শেরিফ, আপনি ওই পাগল ছেলেটার কথা বিশ্বাস করছেন?
আমার কাছে তো পাগল মনে হচ্ছে না।
থ্যাংক ইউ, শেরিফ, বলল কিশোর। আরেকটা ব্যাপার পরিষ্কার করে দিচ্ছি। হ্যারি আর বিংগোর দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল, মিসেস ফিলটার কোথায়? তোমাদের সঙ্গে কোথায় দেখা করার কথা?
মিসেস ফিলটার? শূন্য দৃষ্টিতে তাকাল হ্যারি।
আরে, ওই বুড়িটা, বলল বিংগো। ওই যে, ওদিকে ওই বাড়িটায় থাকে।
অবাক হলো কিশোর। তুমি তোমার মিসেস ফিলটার তোমাদের দলে ছিলেন না?
মাথা নাড়ল হ্যারি। ভাবে মনে হলো, সত্য কথাই বলছে।
জোরে জোরে কয়েকবার নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। আমি তো ভেবেছিলাম, মিসেস ফিলটারও চারজনের একজন। কিন্তু কোন প্রমাণ পাইনি, শুধু সমস্ত বর্ণনা পুরোপুরি মিলে যায়। ডাকাতির পর পরই ফিনিক্স থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। তারপর, বাড হিলারি আর ডাকাতির ব্যাপারটা যখন তদন্ত করছি আমরা, আবার গায়েব হলেন তিনি।
চেঁচিয়ে উঠল ম্যাকআরথার, তখন থেকেই বলছি, ছেলেটা পাগল। নইলে মিসেস ফিলটারের মত মহিলাকে সন্দেহ করে? চকিতের জন্যে খনিমুখের দিকে তাকাল সে, দৃষ্টিতে শঙ্কার ছায়া।
আমি না হয় পাগল, কিন্তু আপনি ঘামছেন কেন, মিস্টার ম্যাকআরথার? ভুরু নাচাল কিশোর। হঠাৎ চাপড় মারল নিজের কপালে। আমি একটা আস্ত গাধা, ক্ষমার অযোগ্য, বুদ্ধ। হায়, হায়, কি ভেবেছি? ডাকাতিতে জড়িত ছিলেন বলে তো গায়েব হননি মহিলা! তাকে গায়েব করা হয়েছে! মিস্টার ম্যাকআরথার, আপনাকে চিনে ফেলেছিলেন তিনি, না? আপনার ব্যাপারে অস্বাভাবিক কিছু মনে পড়ে গিয়েছিল তাঁর। কি করেছেন তাকে, কোথায় রেখেছেন?
ঢোক গিলল ম্যাকআরথার। আমি কি জানি? আবার খনিমুখের দিকে তাকাল।
লাফিয়ে উঠে দৌড় দিল কিশোর। শেরিফের গাড়ি থেকে একটা শক্তিশালী টর্চ নিয়ে ছুটল খনির দিকে।