উড়াল দিল আবার হেলিকপ্টার। সোজা পশ্চিমে রওনা হলো হ্যারি আর বিংগোর খোঁজে।
পরস্পরের দিকে চেয়ে হাসল জিনা আর মুসা।
আমি শিওর, বেশি দূর যেতে পারেনি ব্যাটারা, জিনার কষ্ঠে সন্তোষের আমেজ।
১৯
ঠিকই অনুমান করেছে জিনা।
বেশি দূর যেতে পারেনি হ্যারি আর বিংগো। এক ঘণ্টা পরই ওদেরকে হাতকড়া পরা অবস্থায় নামানো হলো ম্যাকআরবারের কেবিনের সামনে উঠানে। দুপাশে পাহারায় রইল পাইলট বোরম্যান আর শেরিফের সহকারী।
করুণ অবস্থা হয়েছে দুই ডাকাতের। রোদে পোড়া, চামড়া, জায়গায় জায়গায় ফোঁসকা পড়ে গেছে, এতই পরিশ্রান্ত-বসে বসে কুকুরের মত জিভ বের করে হাঁপাচ্ছে। ভাগ্য ভাল ওদের, হেলিকপ্টারের চোখে পড়েছে, নইলে মারাই যেত। ট্রাক ছেড়ে যাওয়ার পর মাত্র কয়েক মাইল এগিয়েছিল, তাতেই এ-দশা।
ডাকাতদের আগেই টুইন লেকসে ফিরে এসেছে ছেলেরা। হাতকড়া পরা ডাকাতদের নামতে দেখে আনন্দে হাত তালি দিয়ে উঠল জিনা। …
আঙ্কেল উইলসন আর ভিকিখালাও রয়েছে ওখানে। মেকসিকান শ্রমিকদের সহায়তায় সবাইকে স্যাণ্ডউইচ পরিবেশন করছে ভিকি, দিতে একটু দেরি করলেই রেগে যাচ্ছে শ্রমিকদের ওপর। …
আগের রাতেই ফিরে এসেছিল শ্রমিকেরা, সারারাত বসে কাটিয়েছে কেবিনের দাওয়ায়, ভয়ে কারও সঙ্গে কথা বলেনি। ছেলেদেরকে এখন ঠিকঠাকমত ফিরতে দেখে হাসি ফুটেছে মুখে, স্বেচ্ছায় মেনে নিয়েছে ভিকির তাবেদারী।
কেবিনের পাশে চুপচাপ শুয়ে আছে ম্যাকআরথারের কুকুর, দুই ডাকাতের মতই জিভ বের করে নীরবে হাঁপাচ্ছে। ওষুধের ক্রিয়া শেষ হয়নি এখনও পুরোপুরি।
ম্যাকআরথারকেও তার কুকুরটার মতই দেখাচ্ছে, বিধ্বস্ত, ক্লান্ত।
সবাই তো এল, যেন সভার কাজ শুরু করছে, এমনি ভঙ্গিতে বলল সে, দয়া করে কেউ কি বলবেন, ব্যাপারটা কি? দুই ডাকাতকে দেখিয়ে বলল, কি ঘটেছে এখানে?
ম্যাকআরথারের কথায় কান না দিয়ে কিশোরের দিকে তাকাল জিনা, বলল, ঠিকই আন্দাজ করেছিলে। বাড হিলারি সেই চার ডাকাতের একজন, আর এই যে এখানে দুজন। গতরাতে স্বীকার করেছে ওরা।
আমরা কিছুই স্বীকার করিনি, ঘোষণা করল হ্যারি।
করেছ, জোরে মাথা ঝাঁকাল জিনা। আমাদেরকে ফেলে দেয়ার কথাও বলেছিলে, যাতে কোনদিন ফিরে আসতে না পারি।
মিষ্টি করে হাসল কিশোর। আমাদের কেস প্রায় শেষ। সব কিছুই খাপে খাপে বসে যাচ্ছে।
মানে? জিজ্ঞেস করলেন শেরিফ।
কি ব্যাপার, কিশোর? আংকেল উইলসনও জানতে চাইলেন। আমি তো ঘোর অন্ধকারে। একটু খুলে বলো তো।
বলছি, হাতের বাকি স্যাণ্ডউইচটুকু দুই কামড়ে শেষ করল কিশোর। ঢকঢক করে পুরো এক গেলাস পানি খেয়ে মুখ মুছে শুরু করল, যখন জানলাম, খনিতে পাওয়া লাশটা পাঁচ বছর আগের এক দাগী আসামীর, মনে প্রশ্ন জাগল, ওর মত লোক টুইন লেসের নির্জন খনিতে কি করছিল? মাইনে কেন ঢুকেছিল? প্রথমেই মনে এল, টুইন লেকসের স্থানীয় পত্রিকাটার কথা। গিয়ে খুঁজতে শুরু করলাম।
জানা গেল, পাঁচ বছর আগে এসেছিল বাড হিলারি, খনিতে ঢুকে আর বেরোতে পারেনি, তার আগেই খনির মুখ সীল করে দেয়া হয়। সেদিন একটা পরিত্যক্ত গাড়ি পাওয়া গেল খনির কাছে, লর্ডনবুর্গ থেকে চুরি গিয়েছিল ওটা। অনুমান করলাম, ওই গাড়িতে করেই এসেছিল হিলারি। সুতরাং, গেলাম লর্ডসবুর্গে, তার খোঁজ নেয়ার জন্যে। ওখানকার একটা পত্রিকাতেই ডেথ ট্র্যাপ মাইনের মুখ সীল করার সংবাদ বেরিয়েছিল, জানলাম সেটা।
পাঁচ বছর আগে মিসেস রোজি ফিলটার টুইন লেকসে ফিরে এসে সম্পত্তি কিনেছেন। তার অব্যবহৃত একটা ঘরে আরেকটা পত্রিকা পেলাম, পাঁচ বছরের পুরানো, ফিনিক্স থেকে বেরোয়। সেই সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল একটা ডাকাতির খবর। পত্রিকাটা ছিল খনিমুখ সীল করার আগের দিনের। তার কয়েক মাস পর এসে সম্পত্তি কিনেছেন মিসেস ফিলটার। আন্দাজ করতে কষ্ট হলো না, পত্রিকাটা বাড হিলারিই: এনেছে, খনিতে ঢোকার আগের রাত ওই ঘরে কাটিয়েছে, পরদিন পত্রিকাটা অন্যান্য পত্রিকার স্তুপের ওপর ফেলে রেখে বেরিয়ে গেছে। ধরে নিলাম, চার ডাকাতের একজন সে। এখন তো জানি, ঠিকই আন্দাজ করেছি। বাকি দুজন এই যে, হ্যারি আর বিংগোর দিকে চেয়ে হাসল কিশোর। তারপর, গত হপ্তায় পাওয়া গেল হিলারির লাশ। কৌতূহলীরা ছুটে এল দলে দলে। খবরটা শুনে, তুমি, বিংগোও এসেছ। আঙ্কেল উইলসনের গোলাঘরে ঢুকেছিলে রাতে চুরি করে। আমরা যখন দেখে ফেললাম, ছুরি হাতে বেরিয়ে দৌড়ে গিয়ে লুকালে খেতে, মুসাকে আরেকটু হলেই শেষ করে দিয়েছিলে। কোন কিছু খুঁজতে ঢুকেছিলে তুমি গোলাঘরে। পাওনি। কাজেই বাধ্য হয়ে তোমাকে থাকতে হয়েছে টুইন লেকসে। কোথায় থাকবে। লোকে তো দেখে ফেলবে। ঠাই নিলে গিয়ে মিসেস ফিলটারের অব্যবহৃত ঘরে। তুমিই সেদিন তার রান্নাঘর থেকে খাবার চুরি করেছিলে, সিংকে পোড়া সিগারেটের টুকরো ফেলে গিয়েছিলে। নাকি মিসেস ফিলটারই তোমাকে খাবারগুলো দিয়েছিলেন?
জবাব দিল না বিংগো।
যাই হোক, আবার বলে গেল কিশোর, ধারে-কাছেই কোথাও ছিল হ্যারি। কিন্তু তোমার মত সূত্র রাখেনি। ও কোথায় ছিল কে জানে। যাকগে, তক্কে তক্কে ছিলে, গতকাল বিকেলে পেয়ে গেলে সুযোগ। আশেপাশে কেউ নেই। কুকুরটাকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়ালে। তারপর গিয়ে হ্যারিকে নিয়ে এসে দুজনে খোঁজাখুঁজি শুরু করলে। হ্যাঁ, ওই যে লুট করেছিলে দশ লাখ ডলার, সেগুলো। তোমাদেরকেও ঠকিয়েছিল হিলারি না? সব টাকা নিয়ে পালিয়ে এসেছিল এখানে। পাঁচ বছর পর খোঁজ পেলে।