তুমি তাহলে মানুষ চেনো কলতে চাও, হাসল মুসা।
সবাইকে চিনি বলাটা ঠিক হবে না, রাগল না জিনা, কিন্তু মুসার খেচাটা ফিরিয়ে দিল, তবে হদ্দ বোকা, আর হারামী লোক দেখলেই চিনতে পারি। কিশোরের দিকে ফিরল। চাচা যে জায়গাটা কিনেছে, সেটা আগে মাইনিং কোম্পানির ছিল। একটা খনি এখনও আছে, নাম ডেথ ট্যাপ মাইন।
মৃত্যুখনি, বিড়বিড় করুল কিশোর।, আরিাব, সাংঘাতিক নাম তো,চোখ বড় বড় করল মুসা। তা কি পাওয়া যায় এই খনিতে? ডাইনোসরের হাড়?
রূপা, মুসার কথা গায়ে মাখল না জিনা। খনিটা এখন মৃত। রূপাও ফুরিয়েছে। ওরকম নাম দেয়ার কারণ, এক মহিলা ওটাতে পড়ে মরেছিল। টুইন লেকসে খনির আশেপাশে এখনও নাকি মাঝে-সাঝে ওই মহিলার ভূত দেখা যায়। আমি এর একটা বর্ণও বিশ্বাস করি না। তবে শয়তানের ছোঁয়া আছে ওখানে। খনি আর তার আশপাশের অনেক জায়গা কিনে নিয়েছে এক ব্যাটা। রোদে পোড়া গালের চামড়ায় রক্ত জমল তার। কিছু একটা কুকাজ করছে হারামীটা, বদমতলব আছে। আরও মজা কি জানো, ব্যাটা জমেছেও টুইন লেকসে।
সেটা কি অপরাধ নাকি? অবাক হলো রবিন।
না। তবে কেউ জন্মের পর পরই যদি কোনও জায়গা ছেড়ে চলে গিয়ে কোটিপতি হয়ে ফিরে আসে, অনেক জায়গা কিনে বসবাস শুরু করে আর ভাব দেখায়, আহা আমার মাতৃভূমি, আমি তোমায় কত ভালবাসি।তাহলে গা জ্বলে? আস্ত ভণ্ড! লোকটা ব্যাটল সাপের চেয়েও বদ। খনির মুখ আবার খুলেছে সে। লোহার গ্রিল দিয়ে বন্ধ করা ছিল, সে খুলেছে, তারপর খনির মুখে পাহারায় রেখেছে এক বাঘা কুকুর। ওই মরা খনিতে কি পাহারা দেয়? ঝকঝকে নতুন জিনস আর শক্ত হ্যাট পরে ঘুরে বেড়ায় ব্যাটা, একেবারেই বেমানান। মেয়েদের মত নখের যত্ন করে আবার। বলল, ব্যাটাছেলের এই ন্যাকামি সহ্য হয়? চুপ করল জিনা। ছেলেরা কেউ কিছু বলছে না দেখে আবার মুখ খুলল, খনির ধারে-কাছে ঘেঁষতে দেয় না কাউকে। ব্যাপার সুবিধে ঠেকছে না আমার। চাচার ঠিক নাকের সামনে কিছু একটা করছে সে। চাচা বুঝতে পারছে না বটে, কিন্তু আমি সন শয়তানী বের করেই ছাড়ব।
আল্লাহ তোমার সহায় হোন, শান্তকণ্ঠে বলল মুসা।
মুসার ছাল ছাড়ানোর জন্যে মুখ খুলতে যাচ্ছিল জিনা, এই সময় স্পীকারে ডাক শোনা গেল, জিনা?
উঠে গিয়ে ট্রেলারের ছাতে বসানো পেরিস্কোপ সর্বদর্শন-এ চোখ রাখল রবিন। একজন লোক, সাদা চুল, বড় গোঁফ। মেরিচাচীও সঙ্গে আছেন।
আমার চাচা, উঠে দাঁড়াল জিনা। বলে এসেছিলাম আমি এখানে থাকব। তোমরা দেখা করবে চাচার সঙ্গে? খুব ভাল মানুষ, আমি খুব পছন্দ করি।
উঠল কিশোর।
বেরিয়ে এল ওরা চারজনেই।
এই যে, দেখেই বলে উঠলেন মেরিচাচী। গর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে শেয়াললো। এত চেষ্টা করলাম, গর্তটার মুখ খুজে পেলাম না আজক।
চাচী, কেমন আছেন? জিজ্ঞেস করল জিনা।
ভাল। তুমি কেমন?
শুধু মাথা কাত করে বোঝাল জিনা, ভালই আছে।
এগিয়ে এলেন মিস্টার উইলসন, একে একে হাত মেলালেন তিন কিশোরের সঙ্গে। আন্তরিক হাসিতে উদ্ভাসিত মুখ।
তোমরাই তাহলে তিন গোয়েন্দা। তোমাদের প্রশংসা এত করেছে জিনা…
দর, কই এত বললাম, লজ্জা পেয়েছে জিনা, অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
পকেট থেকে কার্ড বের করে বাড়িয়ে ধরল কিশোর। আমাদের কার্ড। যদি কখনও দরকার লাগে…
কার্ডটা পড়লেন উইলসন। ভুরু কোঁচকালেন, আশ্চর্যবোধকগুলো কেন?
আমাদের মনোগ্রাম, গভীর মুখে জবাব দিল কিশোর। সব রকম আজব রহস্যের কিনারা করতে আমরা প্রস্তুত, এটা তারই সঙ্কেত।
হুঁ, হাসলেন তিনি। রহস্য সমাধান করতে তোমাদের দরকার কখনও পড়বে না… তবে হ্যাঁ, অন্য একটা কাজে সাহায্য করতে পারো। মালির কাজ করেছ কখনও?
তা বোধহয় করেনি, হেসে বলল জিনা। তবে ইয়ার্ডে জোগালীর কাজ প্রায়ই করে। গুনেছি, তার জন্যে টাকাও নেয় আবার।
তাই নাকি? তাহলে তো খুব ভাল। তোমরা গাছ ছাঁটতে পারবে?
গাছ? রবিন বলল।
ক্রিস্টমাস গাছ, বললেন উইলসন। হেঁটে হেঁটে ডাল পাতা ঠিক রাখতে হয়, নইলে বড়দিনের সময় মাপমত থাকে না, বেয়াড়া রকম ছড়িয়ে যায় এদিক ওদিক। টুইন লেকসে লোক পাচ্ছি না। এখন তো তোমাদের ছুটি, চলো না কাল আমাদের সঙ্গে। দুই হপ্তায় অনেক উপকার হবে আমার।
চাচীর দিকে তাকাল কিশোর নীরবে।
ইঙ্গিতটা বুঝলেন উইলসন। মেরিচাচীকে বললেন, কোন অসুবিধে হবে না ওদের, মিসেস পাশ। অনেক ঘর খালি আছে আমার, খাওয়া-দাওয়ার কোন অসুবিধে নেই। কিশোরকে যাওয়ার অনুমতি দিন আপনি, মুসা আর রবিনের মায়ের সঙ্গে আমি নাহয় কথা বলবো।
আমি বললেও রাজি হবে, ভাবলেন মেরিচাচী। কিন্তু কথা সেটা না। ইয়ার্ডেও অনেক কাজ। ভাবছিলাম, জঞ্জাল অনেক জমেছে, ওদের স্কুল যখন ছুটি, সাফ করে ফেলত পারত।
চাল, এগিয়ে গিয়ে চাচীর দুই কাঁধে হাত রাখল কিশোর, তোমার কাজ পরেও করে দিতে পারব আমরা। মেকসিকোয় যাওয়ার শখ আমার অনেকদিনের, সুযোগ পাইনি। আঙ্কেল এত করে বলছেন,
চাচী, মানা করবেন না, প্লীজ, জিনাও কিশোরের সঙ্গে সুর মেলাল। ওদের খাওয়ার দিকে আমি খেয়াল রাখব, নিজে…
ঠিক আছে, আর অমত করলেন না মেরিচাচী।
কিশোরের দিকে চেয়ে চোখ টিপল জিনা, মুখে রহস্যময় হাসি।
হঠাৎ বুঝে ফেলল কিশোর, ফাদে ফেলেছে ওদেরকে জিনা। বেশ কায়দা করে রাজি করিয়ে নিয়েছে। গাছকাটা না ছাই, আসলে জিনার ইচ্ছে, একবার তিন গোয়েন্দাকে নিউ মেসিকোয় নিয়ে গিয়ে ফেলতে পারলে হয়, হারামী লোকটার রহস্য সমাধানে সাহায্য না করে যাবে কোথায়?