ডাকাতির কথা তো শুনলে, ডাংম্যান বলল, বিস্তৃত হলো বিকৃত হাসি। কথার টান টনির টানের সঙ্গে ঠিক মেলে না। বোধহয় খাস লণ্ডন শহরের মানুষ। ছেলেদের কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলে গেল, একটা ছেলেকে দেখলাম বাড়ির কাছ থেকে ছুটে পালাচ্ছে। তাড়া করলাম। গেটের কাছে গিয়ে হারিয়ে ফেললাম তাকে, আর খুঁজে পেলাম না। ছেলেটার সঙ্গে আরও এক-আধজন ছিল হয়তো। যা-ই হোক, গেল পুতুলটা, আর পাওয়া যাবে না।
আমরা চেষ্টা করে দেখতে পারি, কিশোর বলল। চোরাই মাল খুঁজে বের করার অভিজ্ঞতা আছে আমাদের।
অনেক জটিল রহস্যের সমাধান করেছি, মুসা জানাল।
হেসে উঠল ডাংম্যান। ডিটেকটিভ মনে হচ্ছে?
হ্যাঁ, স্যার, ডিটেকটিভই, বলে পকেট থেকে কার্ড বের করে দিল কিশোর।
পড়ল ডাংম্যান। আবার হাসল। যাক, আশা হচ্ছে। পাওয়া যেতে পারে পুতুল। মুসার দিকে ফিরল। তুমি যেন কি বললে? রহস্যের সমাধান?
অনেক করেছি। বিশ্বাস না হলে পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।
তাই? আবার কার্ডটার দিকে তাকাল ডাংম্যান।
ঘরের কোণে চেয়ারে বসে আছে টনি, জিজ্ঞেস করল, আশ্চর্যবোধকগুলো কেন? তোমরা অদ্ভুত ছেলে, সেটা বোঝানোর জন্যে?
কড়া জবাব দিতে যাচ্ছিল মুসা, সেটা বুঝে তাড়াতাড়ি বলল কিশোর, ওগুলো আমাদের প্রতীকচিহ্ন। তাছাড়া নানা রকম আজব রহস্য যে সমাধান করি, সেটাও বোঝায় চিহ্নগুলো।
দারুণ, প্রশংসা না ব্যঙ্গ করল টনি, বোঝা গেল না। দাদী, ওদেরকে দাও না একটা সুযোগ?
কিন্তু টনি, দ্বিধা করছেন মহিলা, কোন বিপদে পড়ে যদি ওরা?
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, সুর মেলাল ডাংম্যান। বিপদে পড়তে পারে।
সতর্ক থাকব আমরা, ম্যাডাম, বলল কিশোর। তেমন বুঝলে মিস্টার ফ্লেচারকে গিয়ে ধরব সাহায্যের জন্যে। চোর কোন ছেলেছোকরা হয়ে থাকলে, আমাদের জন্যেই কাজটা উপযুক্ত হবে।
ঠিকই বলেছে ও দাদী, টনি বলল। তাছাড়া পুলিশ চীফের সঙ্গে খাতির আছে ওদের…
ঠিক আছে, নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না মিস পেদ্রো। তবে একটা কথা ঠিক, এত ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে গিয়ে পুলিশের কাছে পাত্তা পাব না আমরা।
হ্যাঁ, সায় দিয়ে বলল ডাংম্যান, পুলিশের অনেক জরুরী কাজ আছে। তারচে ওরাই খুঁজুক, তেমন বুঝলে গিয়ে পুলিশের কাছে বলবে। তবে সাবধানে থাকবে, কথা দিয়ে যেতে হবে।
তা থাকবে, বলে উঠল টনি। জানের মায়া কার না আছে? দাদী, একটা পুরস্কার ঘোষণা করলে কেমন হয়? বিপদ যেমন, তেমন খাটুনিও আছে কাজটায়?
নাতির দিকে চেয়ে হাসলেন মিস পেদ্রো। হ্যাঁ, তা মন্দ হয় না। ধরো, এই একশো ডলার?
কি বলো রাজি? গোয়েন্দাদের দিকে চেয়ে বলল টনি। এক কাজ করো, কাল লাঞ্চের সময় এখানে চলে এসো। কি ভাবে কি করা যায়, চারজনে বসে প্ল্যান করব?
লাঞ্চের সময় এসে কি করবে? তাড়াতাড়ি বলল ডাংম্যান। আমাদের খাবার কি পছন্দ হবে? আমি আর মিস পেদ্রো তত খাই নিরামিষ। তিন কিশোরের দিকে ফিরল। তোমরা হয়তো জানো না, ভেজিট্যারিয়ান লীগের প্রেসিডেন্ট আমি। রকি বীচে লীগটা আমিই শুরু করেছি, অনেক সাহায্য করছেন মিস পেদ্রো। একটা অনুষ্ঠানে তোমরা হাজির থাকতে পারো, লেকচার শুনবে। উপকার হবে। আজ বিকেলেই একটা আছে।
পারলে খুব খুশি হতাম, স্যার, বিনীত কণ্ঠে বলল, কিশোর। কিন্তু আজ অনেক কাজ। এই তো, মালপত্রগুলো নিয়ে যেতে হবে। দেরি করলে চাচী চিন্তা করবে। ম্যাডাম, জিনিসগুলোর দাম…
ও যা হোক কিছু একটা ধরে দিও তোমরা, দরাদরি করতে মহিলা নারাজ। জানাই তো আছে তোমাদের, কেমন মাল, কত দাম হতে পারে। আমাকে আর
এসবে টেনে না।
ঠিক আছে, যাই তাহলে, উঠল কিশোর। বোরিসকে গিয়ে সাহায্য করি। দুই সহকারীকে বলল, এসো।
মূর্তিটার কথা ভুলো না কিন্তু, বলল টনি।
হ্যাঁ, আর পুরস্কারের কথাটাও, হাসল ডাংম্যান।
বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা।
গোলাঘরে মাল গোছাচ্ছে বোরিস।
ভেতরে ঢুকে দ্রুত চারপাশে একবার চেয়ে নিল কিশোর, বোরিস ছাড়া আর কেউ নেই। নিচু গলায় দুই বন্ধুকে বলল সে, ব্যাপারটা খেয়াল করেছ?
কী? অবাক হয়ে বলল মুসা।
আশ্চর্যবোধকের কথা জিজ্ঞেস করল টনি।
এতে অবাক হওয়ার কি আছে? অনেকেই তো করে।
অনেকের করা আর টনির করাটা আলাদা। আমাদের কার্ড দিইনি তাকে।
তাই তো! চোখ মিটমিট করল রবিন। কার্ডটা তো ছিল ডাংম্যানের হাতে।
তারমানে আগে থেকেই আমাদের কথা সব জানে টনি? ভুরু কুঁচকে গেছে মুসার।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। জানে। তারমানে, বেশ কিছু মিথ্যে বলেছে আমাদের কাছে। পুরানো মাল বিক্রি তার একটা বাহানা। সেজন্যে আমাদের খোঁজ করবে কেন? সোজা গিয়ে মেরিচাচীর কাছে বললেই চলত।
চুপ করে আছে অন্য দুজন।
হঠাৎ হাসি ফুটল কিশোরের মুখে।
হাসছ যে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
লোকে যে কত রকমের নাম রাখে। ডাংম্যান! হাহ্হা! জানো, বাংলা করলে কি দাঁড়ায়?
কি?
গোবরমানব, অর্থটা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিল কিশোর। দুই সহকারীগোয়েন্দাও হেসে ফেলল।
৭
আমাদের কার্ড তাহলে কোথায় দেখল সে? মুসার প্রশ্ন।
দেখেনি, রবিন বলল। নিশ্চয় শুঁটকি বলেছে।
মনে হয় না, জোর দিয়ে বলল কিশোর। শুঁটকির কাছে যাওয়ার আগেই আমাদের কথা জেনেছে সে, আমি শিওর। আর শুঁটকি আমাদের সুনাম কিছুতেই করবে না, হিসুংক নাম্বার ওয়ান। তাছাড়া ওর কাছে শুনে থাকলে সেকথা বলত টনি।