মুচকি হাসল তিন গোয়েন্দা। শুঁটকির ব্যাপারটা কি বলো তো? মুসা বলল।
কি আর? জবাব দিল কিশোর। বরাবর যা করে, নাক গলাবে আমাদের কাজে। ওর কথা ভাবছি না, আমি ভাবছি টনির কথা। বেশি কাকতালীয় হয়ে গেল না? তোমরাও পুতুল পেলে, তার পরদিনই এসে হাজির হলো পেদ্রোদের নাতি, আমাদেরকে এস্টেটে নিয়ে যেতে চায়।
তাই তো? পুতুলটা আমাদের কাছে আছে ভাবছে না তো? রবিনের জিজ্ঞাসা।
ইয়াল্লা! বলল মুসা। এক পুতুল কয় দলে খুঁজছে?
ছিনতাই যে হয়েছে, টনি জানে এটা? বলল রবিন।
হয়তো জানে, কিশোর বলল। তাহলে এটাও জানে মেসেজটা আমাদের কাছে আছে। সেটাই হাতাতে চায় এখন।
তাই কি? দেখে কিন্তু খারাপ মনে হয় না।
খামোকাই হয়তো সন্দেহ করছি। তবে সতর্ক থাকতে হবে আমাদের।
একমত হলো রবিন আর মুসা।
রকি বীচ থেকে বেরিয়ে এসেছে ঝরঝরে ট্রাক, টনির স্পোর্টস কারকে অনুসরণ করে উঠে যাচ্ছে পাহাড়ী পথ ধরে।
আঁকাবাঁকা গিরিপথ শেষ করে এসে এস্টেটের পুরানো লোহার দরজার সামনে থামল দুটো গাড়ি।
পাল্লা খুলল টনি।
ভেতরে ঢুকল গাড়ি দুটো। খোয়া বিছানো আধ মাইল পথ পেরিয়ে এসে থামল বিরাট এক বাড়ির সামনে। স্প্যানিশ ধাঁচের বাড়ি, সাদা দেয়াল, লাল টালির ছাত। মস্ত বড় জানালাগুলোতে মোটা লোহার শিক, দোতলার কয়েকটা দরজার সামনে ঝোলা বারান্দা। দেয়ালের সাদা রঙ মলিন, জায়গায় জায়গায় ছাতলা পড়া, চিড়ও ধরেছে কোথাও কোথাও, অযত্ন আর অবহেলার ছাপ।
পথ দেখিয়ে তিন গোয়েন্দাকে বাড়ির পেছনে আরেকটা বাড়িতে নিয়ে এল টনি, ইটের দেয়াল, গোলাঘর। ভেতরে পুরানো জিনিসপত্র ঠাসা। ভাঙা আসবাবপত্র, গৃহস্থালীর সরঞ্জাম, পুরানো আমলের এমন অনেক জিনিস আছে, যেগুলোর নামও জানে না তিন গোয়েন্দা। ধুলোয় মাখামাখি। দেখে মনে হয়, গত পঞ্চাশ বছরে ওগুলোতে হাত দেয়নি কেউ।
দাদী তত সন্ন্যাসী, বলল টনি। এখানে কি আছে না আছে জানেই না হয়তো।
পুরানো মাল ভালই চেনে কিশোর, কোনটা বিক্রি হবে না হবে, তার চাচার চেয়ে ভাল বোঝে। বলল, আরিবা, এত পুরানো। এই যে, একটা চরকা। ওটা কি? ও, জাহাজের টেবিল, লেখার ডেস্ক।
পুরো এক ঘণ্টা জিনিসপত্র দেখল সে, তাকে সাহায্য করল রবিন আর মুসা। এতই মগ্ন, চাম্যাশ অ্যামিউলেটের কথা ভুলে গেছে, মনেই পড়ছে না কারও মাত্র আগের রাতে ভূত দেখা গেছে এ-বাড়ির কাছে।
টনির দিকে ফিরল অবশেষে কিশোর, হুঁ, দেখলাম। ভালই।
ঘরে, এসে বসো তাহলে, আমন্ত্রণ জানাল টনি। কিছু খাও। দাদীর সঙ্গেও কথা বলা যাবে। তার সঙ্গেই দামদর করো।
এটাই চাইছে তিন গোয়েন্দা, মিস ভেরা পেদ্রোর সঙ্গে কথা বলতে।
খুব ভাল হয় তাহলে, সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল কিশোর। বোরিস, মালগুলোর লিস্ট করে নিন।
হো-কে (ওকে), সায় জানাল বোরিস।
ঠিক আছে, আপনি থাকুন, টনি বলল। বীয়ার পাঠিয়ে দিচ্ছি।
হো-কে। ভেরি গুড।
বিরাট বাড়ির বিশাল ড্রইংরুমে ছেলেদের নিয়ে এল টনি। ঠাণ্ডা ঘর। পুরানো আমলের আসবাবপত্র, গাঢ় রঙ। চাকরানীকে ডেকে লেমোনেড আর বিস্কুট আনার জন্যে বলল সে।
খাবারের ট্রে নিয়ে এল চাকরানী, তার পেছনে এলেন এক বৃদ্ধা। ক্ষীণ-দেহী, ধবধবে সাদা চুল। বয়েসের ভারে ঘোলাটে চোখের তারা, উজ্জ্বল হলো ছেলেদের দেখে।
আমি ভেরা প্রেদ্রো, পরিচয় দিলেন মহিলা। বুঝতে পারছি, টনির সঙ্গে তোমাদের বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। শুনলাম, স্যালভিজ ইয়ার্ড থেকে এসেছ। মাল পছন্দ হয়েছে?
হ্যাঁ, ম্যাডাম, মাথা নোয়াল কিশোর।
সব কিছু ছেড়েই দিয়েছিলাম, বললেন মহিলা। টনি এসে নতুন জীবন দিয়েছে আমাকে। বাঁচার আগ্রহ জাগিয়েছে।
টেবিলে লেমোনেড আর বিস্কুট সাজিয়ে রেখে চলে গেল কাজের মেয়েটা।
ছেলেদের হাতে হাতে খাবার তুলে দিলেন মিস ভেরা, মেহমানদের ভাল লাগছে তার, বোঝা যাচ্ছে। গতরাতে বুঝিয়েছে আমাকে টনি। খামোকা পুরানো মাল ভাঁড়ারে ফেলে রেখে লাভ কি? নষ্ট হচ্ছে। তার চেয়ে বেচে দিলে কিছু পয়সা আসবে।
সতর্ক হয়ে গেল তিন গোয়েন্দা। গত রাতে? বলল কিশোর।
হ্যাঁ, মাথা ঝাকালেন মহিলা। আমাদের নাকের সামনে দিয়ে চুরি হয়ে গেল একটা সোনার পুতুল। দুটো পুতুলের একটা। আমার পাগলা ভাইটার জিনিস, সেই যে বাড়ি থেকে পালাল, আর ফিরল না। ওগুলোই ছিল তার স্মৃতি, তা-ও একটা গেল চুরি হয়ে।
সব দোষ, ভাই, আমার, ছেলেদের শোনাল টনি, কি করে চুরি হয়েছে। বাবা জানত পুতুল দুটোর কথা, আমাকে বলেছে। লাইব্রেরিতে ড্রয়ারে খুঁজে পেয়েছি ওগুলো, নিচের দিকের একটা ড্রয়ারে। লাইব্রেরিতে দরজা খোলা রেখে বেরিয়েছিলাম, আবার ফিরে গিয়ে দেখি একটা পুতুল নেই।
কে নিয়েছে জানো না নিশ্চয়? ঘুরিয়ে প্রশ্ন করল কিশোর।
মিস্টার ডাংম্যান তো বলল একটা ছেলে নিয়েছে। দেখেছে নাকি।
হ্যাঁ, দেখেছি, শোনা গেল ভারি কণ্ঠ।
ফিরে চাইল ছেলেরা।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা, চমত্তার স্বাস্থ্য, গায়ে উজ্জ্বল জ্যাকেট, পরনে হাফপ্যান্ট, লম্বা পায়ের শক্ত মাংসপেশী ফুলে রয়েছে। ধূসর চোখজোড়া চঞ্চল। লালচে চুল। রুক্ষ চেহারা, ঠোঁটের এক কোণে গভীর কাটা একটা দাগ, সারাক্ষণ বিকৃত হাসি ফুটিয়ে রেখেছে যেন বেচারার মুখে।
পরিচয় করিয়ে দিল টনি। জানাল, মিস্টার ডাংম্যান তার দাদীর বন্ধু।