এখানে কি করছে ব্যাটা? রবিনের জানার খুব ইচ্ছে।
নিচু গলায় তাগাদা দিল কিশোর। জলদি, লাল কুকুরচার।
ঘুরে, পাশ দিয়ে স্যালভিজ ইয়ার্ডের পেছনে চলে এল ওরা, টেরিয়ারের অলক্ষে। বেড়ার গায়ে ওখানে একটা অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য আঁকা, ১৯০৬ সালে স্যান ফ্রানসিসকোয় আগুন লেগেছিল, তারই একটা দৃশ্য। জ্বলন্ত শিখার কাছ থেকে দূরে বসে আগুনের দিকে চেয়ে আছে একটা লাল কুকুর। কাঠের একটা গিট রয়েছে একটা চোখের জায়গায়, অবিকল চোখের মতই দেখা যায়। নখ দিয়ে খুঁচিয়ে ওটা বের করে আনল কিশোর, ভেতরে আঙুল ঢুকিয়ে গোপন সুইচে চাপ দিতেই তিন দিকে সরে গেল তিনটে হার্ডবোর্ডের পান্না। ভেতরে ঢুকে গেল ছেলেরা, সুইচ টিপে আবার পাল্লা বন্ধ করে দিল কিশোর।
জঞ্জালের তলা দিয়ে চলে গেছে পথ, বুকে হেঁটে ট্রেলারের তলায় এসে পৌঁছল ওরা। ঢাকনা তুলে ঢুকল হেডকোয়ার্টারে।
চেয়ারে বসতে না বসতেই স্পীকারে ভেসে এল জোরাল মহিলা-কণ্ঠ, কিশোর? এই কিশোর?
খাইছে! আঁতকে উঠল মুসা। মেরিচাচী। নিশ্চয় জঞ্জালের বোঝা নিয়ে এনেছেন রাশেদ চাচা। মারা পড়ব এখন।
জবাব দিল না কিশোর।
কিশোর? আবার ডাক শোনা গেল। গেল কই ছেলেগুলো? আরে এই কিশোর, শুনছিস? একটা ছেলে দেখা করতে এসেছে তোর সঙ্গে, টনি পেদ্রো। কিশোর?
একে অন্যের দিকে তাকাল ছেলেরা। জনৈক পেদ্রো এসেছে তাদের সঙ্গে দেখা করতে, যখন ওরা পথ খুঁজে পাচ্ছে না কি করে ঢুকবে পেদ্রো এস্টেটে? একেই বলে মেঘ না চাইতেই জল। কিন্তু কে এই টনি পেদ্রো?
মিস ভেরা তো শুনলাম একা থাকেন? রবিন বলল।
চলো, দেখি, দুই সুড়ঙ্গের মুখের দিকে রওনা হলো কিশোর। জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে।
৬
এই যে, বেরিয়েছে, ছেলেদের দেখেই বলে উঠলেন মেরিচাচী। এই, ছিলি কোথায়? এত ডাকাডাকি করছি। একেক সময় ভাবি, ইয়ার্ডটা বানানোই হয়েছে বুঝি তোদের লুকোচুরি খেলার জন্যে। নে, কথা বল। ছেলেটাকে দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলেন তিনি, অফিসে অনেক কাজ।
লম্বা একটা ছেলে, তিন গোয়েন্দার চেয়ে বয়েসে বড়, লম্বা কালো চুল। ধূসর স্যুট পরনে, বিদেশী ছাঁট, আমেরিকান নয়। হেসে হাত বাড়িয়ে দিল সে, আমি টনি পেদ্রো।
বিস্মিত হয়েছে, সে ভাবটা গোপন করে কিশোরও হাত বাড়াল। আমি কিশোর পাশা। ও রবিন মিলফোর্ড, আর ও মুসা আমান।
পরিচিত হয়ে খুশি হলাম, হাসল টনি। তোমাদের এক বন্ধু জানাল, তোমরা নাকি অদ্ভুত ক্যারেকটার।
টেরিয়ার ডয়েল।
অদ্ভুত ক্যারেকটার নয়, বলতে চেয়েছে আসলে আজব চিড়িয়া, বুঝল তিন গোয়েন্দা।
শুঁটকি পাঠিয়েছে তোমাকে? গুঙিয়ে উঠল রবিন।
বলল, তোমাদের মাথায় নাকি ছিট আছে, জবাবটা এড়িয়ে গিয়ে বলল টনি। আছে নাকি? শুনেছি, সব আমেরিকান ছেলের মাথায়ই ছিট কমবেশি থাকে।
ওই শুঁটকি ব্যাটাই খাঁটি আমেরিকান, জোরে হাত নাড়ল মুসা। আমরা কেউ নেই। কিশোর বাঙ্গালী, আমি আফ্রিকান, আর রবিন অর্ধেক আইরিশ। তুমি কি আমেরিকান নাকি?
না না, তাড়াতাড়ি বলল টনি, ইংল্যাণ্ড। ক্যামব্রিজ। মিস ভেরা পেদ্রো আমার দাদী, বাবার ফুফু। ওই যে, পেদ্রোজ এস্টেটের মালিক, নাম নিশ্চয় শুনেছ। কয়েক মাস আগে বাবা মারা যাওয়ার সময় দাদীর কথা বলেছে আমাকে। আগে তো জানতামই না। আমার দাদা, ভেরা-দাদীর ভাই নাকি ফ্রান্সে খুন হয়েছিল, আমার বাবা তখন মায়ের পেটে। কঠিন অসুখে মারা গেছে বাবা। যখন বুঝল বাঁচবে না, দাদীর কাছে চিঠি লিখল। দাদীই আমাকে তার কাছে নিয়ে এসেছে।
সারাক্ষণ হাসি লেগে আছে টনির মুখে, কথা বলার সময়ও। দ্রুত অনেক বেশি কথা বলে, ফলে কথার টান ঠিক বোঝা যায় না। কেউ কিছু বলার আগেই আবার লাগাম ছেড়ে দিল, হ্যাঁ, যে কথা বলতে এসেছি। পুরানো জঞ্জালে বোঝাই হয়ে আছে ভেরাদাদীর ভাড়ার। ওগুলো এবার পরিষ্কার করে ফেলতে চায়। ফেলেই দিতে চেয়েছিল। আমি বুদ্ধি দিলাম, ফেলে কি লাভ? পুরানো বাতিল মাল কেনার পাগলও আছে, তাদের কাছে বেচে দাও। কথাটা খুব মনে ধরল দাদীর, আমাকে খোঁজ নিতে বলল। কাউকে তো চিনি না এদিকে। দাদীর উকিলের কাছে তোমাদের কথা শুনলাম। রকি বীচেই থাকে উকিল সাহেব, তারই বন্ধুর ছেলে টেরিয়ার উয়েল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম স্যালভিজ ইয়ার্ডটা কোথায়, দেখিয়ে দিতে পারবে কিনা। দেখিয়ে দিল বটে, কিন্তু ভেতরে আনতে পারলাম না কিছুতেই। বেশ অবাক হয়েছি।
কি যেন কাজে ওয়ার্কশপের বাইরে এসেছিলেন মেরিচাচী, পুরানো জঞ্জালে বোঝাই কথাটা তার কানে গেছে। বেড়ার এপাশে উঁকি দিলেন। কিশোর, কিসের কথা বলছে রে?।
পুরানো মাল, চাচী, বলে আবার টনির দিকে ফিরল কিশোর। হ্যাঁ, টনি, কখন দেখতে যাব?
এখন গেলেই তো ভাল হয়।
এক্ষুণি? বললেন মেরিচাচী। দুপুর তো হয়ে এল। ঠিক আছে, যা। খেয়ে যা। ফিরতে নিশ্চয় বিকেল হবে।
চাচা কই? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
কি জানি, রোভারকে নিয়ে কোথায় গেল। বোধহয় মালটাল আনতে।
যাব কিসে? ছোট ট্রাকটা আছে?
আছে।
তাড়াতাড়ি খেয়ে নিল তিন গোয়েন্দা। অফিসে বসে রইল টনি।
ট্রাক বের করল বোরিস। চড়ল তিন কিশোর। টনি যাবে তার নিজের গাড়িতে।
গেটের বাইরে বেরিয়ে টেরিয়ারকে খুঁজল টনি, ধন্যবাদ দেয়ার জন্যে, কিন্তু কোথাও দেখা গেল না তাকে। নীল গাড়িটাও নেই। অবাকই হলো টনি।