বড় বড় হয়ে গেল কিশোরের চোখ। দুশো বছরের পুরানো রহস্য?
ইয়েস, মাই বয়েজ, চাম্যাশ হোর্ডের রহস্য।
৫
শোনো, বললেন প্রফেসর, চাম্যাশরা স্বর্ণ ব্যবহার করে না। এদিকে সোনার খনি কখনই ছিল না। পুতুলটা সোনার হলে, নিশ্চয় চাম্যাশ বোর্ড থেকে এসেছে।
চ্যামাশ হোর্ড কি জিনিস, স্যার? জিজ্ঞেস করল রবিন।
সতেরোশো নব্বই সাল থেকে আঠারোশো বিশের মধ্যে, বলে চললেন প্রফেসর, ভয়ানক একদল খুনে চাম্যাশ আড্ডা গেড়েছিল এদিকের পর্বতের মধ্যে। ইয়াকুয়ালিদের মত না হলেও পাহাড়ে চড়ায় ওরাও ওস্তাদ ছিল। পাহাড়ের মধ্যে লুকিয়ে পড়লে খুঁজে বের করা খুব মুশকিল হত। দলটাকে কিছুতেই সামলাতে পারছিল না স্প্যানিশরা। শেষে অন্য ফন্দি করল, সোনার লোভ দেখাল, এটা-ওটা নানারকম সোনার জিনিস উপহার দিল। খারাপ করল আরও। সোনার কদর বুঝে গেল ওই চাম্যাশরা, এতদিন শুধু বশ্যতা স্বীকার করেনি, এবার লুটপাট শুরু করে দিল। স্প্যানিশ জমিদারদের খুন করে লুট করতে লাগল তাদের সম্পদ।
আর কোন উপায় না দেখে সেনাবাহিনীর কাছে ধর্না দিল জমিদারেরা। শেষ করে দেয়া হলো দলটাকে। ধরা পড়ল দলের নেতা ম্যাগনাস ভারদি। অনেক অত্যাচারেও মুখ খুলল না। কিছুতেই বলল না, কোথায় লুকিয়ে রেখেছে ধনরত্নের স্তুপ। মৃত্যুর আগে বলে গেল, এমন এক জায়গায় রেখেছে ওগুলো, যা, কেউ কোনদিন খুঁজে পাবে না। সত্যি, খুঁজে পেল না। কত লোক যে কতভাবে খুঁজেছে, কিন্তু পায়নি। বাতাসে হারিয়ে গেল যেন চাম্যাশ হোর্ড। আমার বিশ্বাস ছিল, পানিতে ফেলে দিয়েছে, সাগরে, যাতে কেউ কোন দিন না পায়।
অনেক দূরে চলে গেছে যেন কিশোরের নজর। এত কষ্টে জোগাড় করেছে, পানিতে ফেলে দেয়ার জন্যে? নিশ্চয় সেটা পারেনি ম্যাগনাস, মন সায় দেয়নি।
হয়তো, বললেন প্রফেসর। আর পুতুলটা হোর্ডের হয়ে থাকলে, আশা করা যায়, গুপ্তধনগুলো ধারে-কাছেই কোথাও রয়েছে। দারুণ এক আবিষ্কার হবে সেটা।
মেসেজে নিশ্চয় হোর্ডের কথা বলা আছে, সামনে ঝুঁকল কিশোর।
মেসেজ? চোখ মিটমিট করলেন প্রফেসর। কাগজটার দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলেন। হায় হায়, ভুলেই গিয়েছিলাম।
মেসেজটা পড়তে পড়তে কুঁচকে গেল প্রফেসরের ভুরু।
আদিম এসব ভাষা অনুবাদ করা কঠিন। আদিম বলছি, তার কারণ, ভাষাটা নতুন হলেও যাদের ভাষা তারা আদিম লোক, প্রাগৈতিহাসিক চিন্তাভাবনা রয়ে গেছে, মনটা কাজ করে সেভাবেই। বলার ভঙ্গিও আদিম। যাই হোক, এটা বলছে। ওয়ারডস স্মােক। সিঙ ডেথ সঙ। ব্রাদার্স হেল্প। ব্যস, এই।
সাহায্যের আবেদন? বলল কিশোর।
মনে হয়, অবাক হয়ে মেসেজটার দিকে চেয়ে আছেন প্রফেসর। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছি না, চাম্যাশ অ্যামিউলেটের ভেতরে ইয়াকুয়ালি মেসেজ কেন? গভীর রহস্য।
সমাধান করে ফেলব, স্যার, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল কিশোর।
হ্যাঁ, করে ফেলো, হাসলেন প্রফেসর। জানিও আমাকে, প্লীজ। চাম্যাশ হোর্ড দেখার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের।
গেটের কাছে ছেলেদেরকে এগিয়ে দিয়ে গেলেন তিনি। রোদে উজ্জ্বল সকাল। বার বার তাকালেন এদিক ওদিক, ভয়, যেকোন সময় ঝোপের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে বাদামী চামড়ার লোকটা।
বাইরে বেরিয়েই কিশোরের দুদিক থেকে চেপে এল রবিন আর মুসা।
কিশোর? প্রায় চেঁচিয়ে বলল রবিন। কি মনে হয় তোমার? চাম্যাশ হোর্ভ পেয়ে গেছে কেউ?
তার কাছ থেকে কেউ ছিনিয়ে নেয়ার তালে আছে? মুসার প্রশ্ন।
হয়তো অ্যামিউলেটটাই সূত্র, আবার বলল রবিন।
কিন্তু ছিনিয়ে নিল যে, কে লোকটা? মুসা বলল। ইনডিয়ান ডাকাতদের আরেকটা দল?।
বাদামী লোকটাকে কিন্তু ইনড়িয়ানের মত লাগল।
পেদ্রোর বাড়িতে সেদিন যে ছায়াটা দেখলাম, নিশ্চয় কোন ইনডিয়ানের প্রেতাত্মা।
গভীর চিন্তায় মগ্ন কিশোর, ঘনঘন চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে, বিরক্ত হয়ে ঘুরে তাকাল। পাগল হয়ে গেছ নাকি? এভাবে অনুমানে কিছু হবে না। কাজ করতে হবে, কাজ। পেদ্রোজ এস্টেটে গিয়ে খোঁজখবর নিতে হবে।
গোপনে? জিজ্ঞেস করল মুসা। মানে লুকিয়ে ঢুকব?
না, লুকিয়ে ঢুকব। হয়তো কিছু জানাতে পারবেন মহিলা। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা করি কিভাবে?
নানারকম প্রস্তাব দিল রবিন আর মুসা। কোনটাই পছন্দ হলো না গোয়েন্দাপ্রধানের। শেষে ঠিক হলো, রবিনের বাবার সাহায্য নেবে। তিনি সাংবাদিক। ক্যালিফোর্নিয়ার পুরানো ইতিহাস জোগাড় করে পত্রিকায় ধারাবাহিক একটা ফিচার করছেন কিছু দিন ধরে। প্রেদ্রোজ এস্টেটে তাঁর পক্ষে সহজে ঢোকা সম্ভব। মহিলার সাক্ষাৎকার নেবেন। তার সঙ্গে ঢুকবে তিন গোয়েন্দা, ফাঁকে ফাঁকে দু-চারটা প্রশ্ন ওরাও হয়তো করতে পারবে।
বাবাকে রাজি করানোর দায়িত্ব নিল রবিন।
হাঁটতে হাঁটতে ইয়ার্ডের কাছে চলে এসেছে ওরা। গেটের দিকে চোখ পড়তেই চেঁচিয়ে উঠল মুসা, আরে, দেখো কে? শুঁটকি! ·
টেঙা, হালকা-পাতলা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে গেটের পাশে, পেছন ফিরে রয়েছে। হ্যাঁ, টেরিয়ার ডয়েলই, তিন গোয়েন্দার পুরানো শত্রু শুঁটকি টেরি। বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলে, রকি বীচে বাড়ি আছে, মাঝে মাঝে ছুটি কাটাতে আসে, জান জ্বালিয়ে ছাড়ে তিন গোয়েন্দার। মুসার দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে, সময়সুযোগমত পেলে ওর চোখা বাঁকা নাকটা এক ঘুসিতে ভোঁতা করে দেবে। কিন্তু রকি বীচে একা নয় টেরিয়ার, অনেক বন্ধু আছে, সবগুলো শয়তান, টেরিয়ারের নীল গাড়িতে চড়া আর হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভালমন্দ খাবার লোভে তার দলে যোগ দিয়েছে। তিন গোয়েন্দার যদিও তেমন কোন ক্ষতি আজতক করতে পারেনি ওরা, তবে যথেষ্ট ভুগিয়েছে।