আলো ফেলে দেখল কিশোর। আর দুই ফুট পেরোতে পারলেই গুহায় ঢুকতে পারত। টর্চ ঘোরাল সে। হাসিমুখে তার দিকে চেয়ে আছে বাদামী চামড়ার এক কিশোর, বয়েস রবিনের চেয়ে কম।
আলো আরও পিছে সরিয়ে দেখো, হেসে বলল রবিন।
ছোট্ট গুহার শেষ মাথায় আলো ফেলল কিশোর। কেঁপে উঠল হাত, আরেকটু হলেই টর্চ ছেড়ে দিয়েছিল হাত থেকে।
আরও তিনটে ছেলে বসে আছে। তাদের কাছেই রয়েছে গুপ্তধনের স্তুপ। সোনার ছোট-বড় ইঁট, নুড়ি, নানা রকম মোহর, অলঙ্কার, আর প্রায় সব ধরনের মূল্যবান পাথর। টর্চের আলোয় জ্বলছে রামধনুর সাত রঙ সৃষ্টি করে।
চাম্যাশ হোর্ড! বিড়বিড় করল কিশোর। সত্যি পাওয়া গেল তাহলে!
২১
পরদিন বিকেলে। বিশাল ডেস্কের ওপাশ থেকে তিন গোয়েন্দার দিকে চেয়ে হাসলেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ডেভিস ক্রিস্টোফার। চাশ্যাম হোর্ড তাহলে পেলে। দুশো বছর বোকা বানিয়ে রেখেছিল সবাইকে ম্যাগনাস ভারদি।
ইন দা আই অভ দা স্কাই হোয়্যার নো ম্যান ক্যান ফাইণ্ড ইট, কিশোর বলল, সত্যি কথাই বলেছে সে। কেউ বোঝেনি।
তোমরা বুঝেছ। আর ডাংম্যান। তবে তার লাভ হলো না কিছু।
লাভের মধ্যে জেল, হাসল রবিন। আমেরিকার জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়ে পড়বে অস্ট্রেলিয়ায়।
অপরাধীর ভবিষ্যৎ কোন সময়ই ভাল হয় না, শুকনো কণ্ঠে বললেন পরিচালক। তা-ও তো করে লোকে।
হ্যাঁ, স্যার, মুসা মাথা ঝাঁকাল। ডাংম্যানের মত ধড়িবাজ চোরও বাঁচতে পারল না। ম্যাগনাস ভারদির হোর্ড আর ধাধার কথা শুনেছে সে। কোথায় আছে খুঁজে বের করেছে। ইনডিয়ান হেড মাউনটেইনের চূড়ায় উঠে দেখল, সুড়ঙ্গের ভেতরে ঢুকতে পারছে না। তখন সোজা মেকসিকোতে ইয়াকুয়ালিদের গায়ে গিয়ে ফাঁকি দিয়ে তাদের চারটে ছেলেকে নিয়ে এল।
রবিন যোগ করল, সে স্বীকার করেছে, আমেরিকান ছেলেদের দিয়েও কাজটা করাতে পারত। অনেক আমেরিকান ছেলে আছে, পাহাড়ে চড়ায় ওস্তাদ, ইনডিয়ান হেড মাউনটেইনে উঠতে পারবে। কিন্তু ওরা গায়েব হলে হই-চই পড়বে, সতর্ক হয়ে যাবে পুলিশ, তাই গিয়ে দূর গাঁয়ের ইনডিয়ানদের ছেলে নিয়ে এসেছে।
কুটি করলেন বিখ্যাত পরিচালক। মনটা খুবই কালো। ওর শয়তানী থামিয়ে দিয়ে একটা কাজের কাজ করেছ তোমরা।
তবে ছেলেরা চুপ করে ছিল না, কিশোর বলল। নিউকা ইংরেজি বোঝে। ডাংম্যান তার দুই সহকারীর সঙ্গে আলাপ করছিল, সেটা শুনে ফেলেছিল নিউকা। বুঝেছে, তাদেরকে কেন নিয়ে আসা হয়েছে। অনেক কৌশলে কাগজ জোগাড় করে আঙুল কেটে রক্ত দিয়ে চিঠি লিখে ফেলে দিয়েছে ট্রাক থেকে। ভাগ্য ভাল ওদের, একজন পেয়েছিল চিঠিটা, ঠিকানা লেখা ছিল, পোস্ট করে দিয়েছে।
দা ফ্যাকটর অভ চান্স, বললেন পরিচালক। একে মেনে নিতেই হবে। অলৌকিক নয়, কিন্তু অনেক সময় এমন সব ব্যাপার ঘটে, অলৌকিক বলেই মনে হয়। এই যেমন ওই চিঠির ব্যাপারটা। ওটা তো পাওয়ারই কথা না কারও, অথচ পেল, পোস্টও করা হলো। জায়গামত গিয়ে পৌঁছল। নইলে ছেলেগুলো বাঁচত?
তা, ঠিকই বলেছেন, স্যার, একমত হলো কিশোর।
একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, বললেন পরিচালক, গুপ্তধনগুলো আছে। জেনেও এত দেরি করল কেন ডাংম্যান?
তাড়াহুড়ো করে লোকের চোখে পড়তে চায়নি। অনেক ভেবেচিন্তে প্ল্যানপ্রােগ্রাম করে কাজে নেমেছে। টনি আর মিস পেদ্রোর ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছে, ওদের সাহায্য পেলে কাজ হাসিল করতে সহজ হবে ভেবেছে। মিস পেদ্রোর সাহায্য নেয়ার জন্যেই শুধু তার ওই ভেজিট্যারিয়ান লীগের ভাঁওতাবাজি। কিন্তু উল্টে গেল দাবার ছক। নিউকাই দিল সব গোলমাল করে। সোনার পুতুলের ভেতর মেসেজ ভরে ছুঁড়ে দিল দেয়ালের ওপর দিয়ে, আর ভাগ্যের এমনই ফের ডাংম্যানের, ওটা এর্সে পড়ল দুই গোয়েন্দার হাতে। নইলে কে জানত এই খবর? এতক্ষণে হয়তো দক্ষিণ আমেরিকায় থাকত ডাংম্যান, দুনিয়ার টাকার কুমিরদের তালিকায় আরেকটা নাম যোগ হত, থামল সে।
কাহিনীর খেই ধরল মুসা, সেদিন বিকেলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল নিউকা। এস্টেটের কাছে ঘুরঘুর করছিল, তার তিন জাতভাইকে নিয়ে পালানোর উপায় খুঁজছিল। লাইব্রেরির জানালায় উঁকি দিয়ে দেখল, একটা সোনার পুতুল হাতে নিয়ে দেখছে টনি। সোনা সহজে লোকের চোখে পড়বে, পথে পড়ে থাকতে দেখলে আকৃষ্ট হবে ভেবে পুতুলটা চুরি করেছে সে, মেসেজ ভরে ছুঁড়ে ফেলেছে।
এবং তার পর পরই আবার ধরা পড়েছে, রবিন বলল। তার চিৎকারই শুনেছি আমরা।
ওদের ভাগ্য ভাল, পুতুলটা তোমাদের হাতে পড়েছে, বললেন পরিচালক। আচ্ছা, পুতুলে যে মেসেজ লিখে ভরেছে, তাতে হোর্ডের কথা কিছু ছিল?
না, শুধু সাহায্যের আবেদন, বলল কিশোর। তবে পুতুলদুটো প্রমাণ করেছে, চাম্যাশ হোর্ড সত্যিই আছে। প্রথম পুতুলটা জ্যাকোয়া ছিনিয়ে নিয়েছে, তার কারণ, সে আশা করেছিল ওটা নিউকার কাছ থেকে এসেছে। দ্বিতীয় পুতুলটাই ভুল পথে নিয়েছে আমাকে, সেই সুযোগটা নিয়েছে ডাংম্যান। নানা রকম মিথ্যে বলে আমার চোখ সরিয়ে দিয়েছে অন্যদিকে।
ভুল পথে? ভুরু সামান্য তুললেন পরিচালক।
হ্যাঁ, স্যার। টনিকে অপরাধী ভেবেছি, সোনার পূতুলে যে মেসেজ ছিল সেটাকে গুপ্তধনের নির্দেশ ভেবেছি। সত্য থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম। এর জন্যেই সহজে আমাদের বোকা বানাতে পেরেছে ডাংম্যান।