কঠিন কণ্ঠে ধমকে উঠলেন চীফ, ডাংম্যান!
ওসব ধমক-ধামকগুলো রাখুন এখন। কোন লাভ হবে না, হাসি হাসি ভঙ্গিটা চলে গেল ডাংম্যানের, কর্কশ হয়ে উঠল কণ্ঠস্বর। যা বলছি করুন, নইলে ছেলেগুলোকে জ্যান্ত পাবেন না। ওদের কাছে খাবার পানি কিচ্ছু নেই। আমাকে চলে যেতে দিন। ফোনে জানাব কোথায় আছে ওরা। তা নাহলে মরুক।
এতখানি করার সাহস পাবে না।
পাব, চীফ, পাব। আপনি আমাকে চেনেন না। খিকখিক করে হাসল ডাংম্যান। তার সঙ্গে গলা মেলানোর জন্যেই বুঝি বুনো হাসি হেসে উঠল মাথায় বসা পাখিটা।
অস্থির হয়ে উঠলেন মিস্টার মিলফোর্ড। ফ্লেচারকে কিছু বলার জন্যে এগোলেন, তার আগেই বলে উঠল কিশোর, চীফ, রাজি হবেন না। আমি বুঝে গেছি কোথায় আছে ওরা।
ঝট করে কিশোরের দিকে ফিরল ডাংম্যান।
কোথায়, কিশোর? জলদি বলো? তর সইছে না আর মিস্টার মিলফোর্ডের।
ওই যে ওখানে, টাওয়ারের মত খাড়া হয়ে থাকা পর্বত-চূড়া দেখাল সে। ম্যাগনাস ভারদির কথাগুলো ছিল : ইট ইজ ইন দা আই অভ দা স্কাই হোয়্যার নো ম্যান ক্যান ফাইও ইট। ম্যান কেন বলেছে সেটা তো বুঝলামই, বাকি থাকল আই অভ দা স্কাই। সূর্য কিংবা চাঁদের কথা বলেনি। সত্যি সত্যি চোখের মত দেখতে একটা জিনিসের কথা বলেছে। ওই দেখুন।
জ্যোৎস্নায় আলোকিত আকাশের পটভূমিতে বিরাট একটা মুখ দেখা গেল, মানুষের মুখের আদল, দুটো চোখ, নাক, মুখ-নিখুঁত মানুষ যেন। বিশাল এক পাথর, আবছা আলোয় ওরকম লাগছে।
বাঁ চোখটা দেখছেন? বলল কিশোর। বেশি কালো। মনে হচ্ছে সুড়ঙ্গমুখ। ওটার ভেতরেই রয়েছে চাম্যাশ হোর্ড। রবিন ওখানেই আছে।
তোমার ধারণা আমি উঠেছি ওখানে? ডাংম্যানের কথায় জোর নেই।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ইনডিয়ান ছেলেদের সাহায্যে উঠেছ। অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ জানিয়েছে, বড় বড় দালান বেয়ে উঠে চুরি করেছ তুমি। কাজেই পাহাড়েও উঠতে পেরেছ।
বেশ, ধরলাম আছে ওরা ওখানে। নামাবে কি করে?
জ্যাকোয়া আর জেরমি যাবে।
সঙ্গে সঙ্গে বলল জ্যাকোয়া, সি, সহজ। খুব সহজ।
একটা ছেলের কথা শুনবেন আপনারা? ফ্লেচারকে বলল ডাংম্যান। আগেই বলে দিচ্ছি, পরে আমাকে দুষতে পারবেন না। ওর অনুমান ভুল হলে আমাকে কিছু বলবেন না। পরে আমি কোন কথা শুনব না। যা করার বুঝেসুঝে করুন।
দ্বিধায় পড়ে গেলেন ফ্লেচার। চেয়ে আছেন মিস্টার মিলফোর্ডের দিকে, শোনার জন্যে অধীর।
আস্তে কাশি দিলেন মিস্টার মিলফোর্ড। কিশোরের ওপর ভরসা আছে আমার।
অল রাইট, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন চীফ। জ্যাকোয়া আর জেরমি যাবে। ছেলেদেরকে বেঁধে রেখেছে কিনা কে জানে। তাহলে কাউকে গিয়ে নেমে তুলে আনতে হবে ওদের, কিংবা বাঁধন কেটে দিয়ে আসতে হবে, যাতে ওরা নিজেরাই বেরিয়ে আসতে পারে। জ্যাকোয়া আর জেরমি ঢুকতে পারবে তো?
ওরা ঢুকতে না পারলে নিশ্চয় ডাংম্যানও পারেনি, কিশোর বলল। তারমানে, গুহার মুখে পাথর চাপা দিয়ে এসেছে। একটা ছেলেকে বাধ্য করেছে অন্য চারজনকে বাধতে, তারপর ওই ছেলেটাকেও বেধে ঠেলে ফেলে দিয়েছে ভেতরে। তার ওপর পাথর চাপা…খুব খারাপ লোক তুমি, ডাংম্যান!
ভেতরে ঢুকবে কে তাহলে? চীফের জিজ্ঞাসা।
আমি, এগিয়ে এল মুসা।
তুমি পারবে না, কিশোর বলল। তোমার শরীর না-ও ঢুকতে পারে। আমাকেই যেতে হবে।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত স্থির দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলেন চীফ। তোমরা, সত্যি, অমন ছেলে! ঠিক আছে, যাও।
ওঠার জন্যে তৈরি হলো দুই ইনডিয়ান। কিশোরকে পিঠে তুলে নিল জ্যাকোয়া। উঠতে শুরু কল দেয়াল বেয়ে।
নিচে, গিরিসঙ্কটের অন্ধকার মেঝেতে দাঁড়িয়ে ওপর দিকে চেয়ে আছে দর্শকরা। অনেক ওপরে উঠে গেছে তিনজন। কালো কয়েকটা পোকার মত লাগছে এখন।
উঠে যাচ্ছে দুই ইনডিয়ান। কিশোর সঙ্গে না থাকলে আরও তাড়াতাড়ি উঠতে পারত।
অবশেষে পৌঁছল ওরা বাঁ চোখটার কাছে।
থামল এক মুহূর্ত। তারপর হারিয়ে গেল অন্ধকারে।
পেরেছে! হাঁপ ছাড়লেন ফ্লেচার।
নামবে কি করে আবার, ভাবছি, বিড়বিড় করলেন মিস্টার মিলফোর্ড।
উঠতে যখন পেরেছে, নামতেও পারবে।
বাটির মত একটা গর্ত, তলায় বড় পাথর চাপা দেয়া। মোটা একটা লোহার দণ্ড পড়ে আছে পাথরটার কাছে, আর কিছু স্বর্ণ।
ওই ডাণ্ডা দিয়ে চাড় মেরে পাথর ফেলেছে ডাংম্যান, বলল কিশোর। জ্যাকোয়া, সরাতে হবে।
তিনজনে মিলে সরিয়ে ফেলল পাথরটা। ছোট কালো একটা গর্ত দেখা গেল, সরু সুড়ঙ্গের মুখ। ঠিকই আন্দাজ করেছে কিশোর, জ্যাকোয়া কিংবা জেরমি ঢুকতে পারবে না, মুসারও কষ্ট হত ঢুকতে। বেল্ট থেকে টর্চ খুলে ঢোকার জন্যে তৈরি হলো সে। নিজের এক পায়ে দড়ি বেঁধে নিয়ে অন্য প্রান্ত ধরতে বলল দুই ভাইকে।
আমি তিনবার হ্যাঁচকা টান দিলে টেনে তুলবে আমাকে।
লম্বা হয়ে শুয়ে সুড়ঙ্গে মাথা ঢুকিয়ে দিল কিশোর। কল করে এগোল। খুবই সরু, এক জায়গায় এসে কিশোরও আটকে গেল। জোরাজুরি করে, বান মাছের মত শরীর মুচড়ে পেরোল সে জায়গাটা।
কয়েক ফুট পরে আরও সরু আরেকটা জায়গা, কাঁধ আটকে গেল কিশোরের। কিছুতেই ঢুকতে পারছে না। বাঁয়ে একটা নড়াচড়া টের পেয়ে টর্চ জ্বালল। আঁতকে উঠল, আরেক মুহূর্ত দেরি করলেই পাথরের রাড়ি খেয়ে ছাতু হয়ে যেত মাথা। রবিন!
সাড়া দাওনি কেন? হেসে হাত থেকে পাথরটা ফেলে দিল রবিন। এই একটু আগেও ছেলেগুলোকে বলছিলাম, তুমি আসবে।