ল্যাঙলীকে ধরে নিয়ে এল দুজন পুলিশ। ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছটফট করছে চোরটা।
ডাংম্যান কোথায়? মুসাকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
হাত তুলে দেখাল মুসা। রবিনকে নিয়ে গেছে।
ছায়ার দিকে তাকালেন মিস্টার মিলফোর্ড।
হোঁতকা ল্যাঙলীর দিকে কড়া চোখে তাকালেন ফ্লেচার। ধমক দিয়ে বললেন, ডাংম্যান কই? ছেলেগুলোকে কোথায় রেখেছে?
দাঁত খিচালো ল্যাঙলী। ওকেই গিয়ে জিজ্ঞেস করো না, পুলিশ।
আরেক ব্যাটা আছে, মুসা জানাল। ওই চোরটার নাম রিগো।
থাকুক, বললেন চীফ। পালাতে পারবে না, ফাঁদে পড়েছে। বক্স-ক্যানিয়ন এটা, আর কোন পথ নেই।
বড় বড় কথা না বলে আগে ধরে দেখাও না, পুলিশ, শুয়োরের মত ঘোৎঘোৎ করে উঠল ল্যাঙলী।
বেশি দূর যায়নি ব্যাটা, ল্যাঙলীর কথায় কান না দিয়ে বলল মুসা। ওই ক্যানিয়নের দিকে।
আর কোথাও যেতেও পারবে না, কিশোর বলল। যেতে হলে আমাদের। এখান দিয়েই যেতে হবে।
হ্যাঁ, বললেন চীফ। নিজের লোকদের নির্দেশ দিলেন, ছড়িয়ে পড়ো।
হাতে রিভলভার নিয়ে তিন দিকে চলে গেল তিনজন পুলিশ।
চাঁদের দিকে মাথা তুলে রয়েছে যেন ইনডিয়ান হেড মাউনটেইনের চূড়া। যেন একটা টাওয়ার।
গিরিসঙ্কটের দিকে এগোল সবাই, পুলিশ তিনজন ছাড়া। কিশোরের চোখ চূড়ার দিকে। তার পেছনে রয়েছে মুসা আর হ্যানসন।
মুসা, দেখো, থেমে গেল কিশোর। কথাটা শেষ করতে পারল না।
গিরিসঙ্কটে ছায়ার ভেতর থেকে শোনা গেল তীক্ষ্ণ অট্টহাসি, পাহাড়ের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনি তুলে মিলিয়ে গেল বুনো হাসির রেশ।
সেই ভূত! জোরে বলতে ভয় পাচ্ছে মুসা।
দেখি, টর্চটা ধরো তো, চেঁচিয়ে বললেন চীফ।
ছায়ার দিকে আলো ফেলল একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পুলিশ।
হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে ডাংম্যান। খুব অসময়ে এসে পড়েছেন। সামান্য নিয়েই খুশি থাকতে হবে এখন আমাকে।
তার কাছেই কোথাও থেকে শুরু হলো আবার বুনো অট্টহাসি, ঢেকে দিল কথা।
২০
নড়ো না, ডাংম্যান, কঠিন গলায় আদেশ দিলেন ফ্লেচার। তাকে ধরার নির্দেশ দিলেন সহকারীদের। ডাংম্যান, আরেকটা চোর কোথায়?
এই যে, স্যার, ধরেছি, অন্ধকার থেকে বলে উঠল একজন পুলিশ।
সার্চ করা হচ্ছে ডাংম্যানকে, হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে সে। তার কাছ থেকে ছোট একটা বস্তা নিয়ে চীফের দিকে বাড়িয়ে দিল একজন পুলিশ। ধাক্কা দিয়ে রিগোকে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো তার বসের পাশে।
বস্তা খুলে ডাংম্যানের দিকে তাকালেন ফ্লেচার। স্বর্ণ। চাম্যাশ হোর্ড পেয়েছ। ভাল চাইলে বলো কোথায় আছে। তোমার কথা সব জানি আমরা।
আমার কথা? হাসছে ডাংম্যান। নোংরা ওই ইনডিয়ানগুলো কিছু বানিয়ে বলেছে?
অস্ট্রিলিয়ান পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি আমি।
হাসি মুছে গেল ডাংম্যানের মুখ থেকে। অস্ট্রেলিয়া? জানলেন কি করে?
কিশোর, মাথা নেড়ে কিশোরকে বলতে ইঙ্গিত করলেন চীফ।
অন্ধকার থেকে উড়ে এসে ডাংম্যানের মাথায় বসল বড় একটা পাখি। কাকের সমান, মাছরাঙার মত লম্বা ঠোঁট, তেমনি খাটো লেজ, শরীরের তুলনায় মাথাটা অনেক বড়, ঝটকা দিয়ে দিয়ে নাড়ছে। বড়সড় মাছরাঙাই বলা যায়।
কি পাখি? অদ্ভুত পাখিটার দিকে তাকিয়ে আছে মুসা।
কেউ জবাবু দেয়ার আগেই ঠোঁট ফাঁক করে হেসে উঠল পাখিটা, বিকট অট্টহাসি ছড়িয়ে দিল পর্বতের কন্দরে কন্দরে।
এই তাহলে ভূতের হাসি! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। হায় হায়, একটা পাখির ভয়ে কাবু হয়ে ছিলাম!
কুক্যাবুরা, মোটেই অবাক হয়নি কিশোর। অস্ট্রেলিয়ায় একে বলে লাফিং জ্যাকাস। চীফ, এই নামটাই মনে করতে পারছিলাম না।
একটা টর্চ নিয়ে বিশেষ অ্যাঙ্গেলে ডাংম্যান আর পাখিটার ওপর আলো ফেলল সে। ছায়া পড়ল গিয়ে পাহাড়ের চেয়ালে। বিচিত্র কুঁজো একটা ছায়া, মাথাটা ঝটকা দিয়ে দিয়ে নড়ে, লম্বা নাক। ওই যে আমাদের ভূতের ছায়া।
বুঝলাম, ডাংম্যান বলল, তুমিই আমার সর্বনাশ করেছ। এই পাখিটাও করেছে অনেকখানি। সরিয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু এত বেশি ভক্ত হয়ে পড়েছে, সরতে চায় না, তাড়িয়ে দিলেও বার বার আসে।
খালি পাখিটার দোষ না, ডাংম্যান, চীফ বললেন, তোমার স্যাণ্ডউইচের মোড়কও দায়ী। আরও হুঁশিয়ার হওয়া উচিত ছিল তোমার।
হুঁ, ছেলেটাকে আণ্ডার এস্টিমেট করেই ভুল করেছি। যাক, যা হয়েছে হয়েছে, কিছু অন্তত পেয়েছি। তো, ছেলেগুলোকে চাই?
চেঁচিয়ে উঠলেন মিস্টার মিলফোর্ড, কি করেছ ওদের?
আর চালাকির চেষ্টা করো না, ডাংম্যান, কড়া গলায় বললেন চীফ। এমনিতেই বহুদিন জেল খাটতে হবে তোমাকে।
তা বোধহয় হবে না, কারণ, আমি চলে যাচ্ছি। পথ-খরচের ব্যবস্থা করেই রেখেছি, হেসে চোখ টিপল ডাংম্যান। ওই বস্তাটায় কিছু সোনা আছে। হোর্ডের তুলনায় খুবই সামান্য, কিন্তু তা-ই বা কম কি? ওগুলো নিয়েই আমি চলে যাব, আপনারা কিছু বলতে পারবেন না। তবে, আসামী যদি একান্তই চান, ল্যাঙলী আর রিগোকে রেখে দিতে পারেন।
শয়তান! ধোকাবাজ! চেঁচিয়ে উঠে বসের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে গেল ল্যাঙলী, কিন্তু দুজন পুলিশ ধরে ফেলল তাকে।
চুঁ-চুঁ, ল্যাঙলী, কি ছেলেমানুষী করছ? তিরস্কার করল ডাংম্যান। তোমাদের ভাগ দেব বলেছিলাম, মাল সব পেলে দিতামও। আমিই তো পেয়েছি এই এত্তোটুকুন। হ্যাঁ, চীফ, একটা প্রস্তাব দিতে চাই। আপনি আমাকে ওই সোনাগুলো আর এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবেন, বিনিময়ে ছেলেরা কোথায় আছে আমি জানাব।