মাথা ঝাঁকাল ইনডিয়ান।
তাহলে তাই বলো। খুলে বলতে সুবিধে হবে তোমার।
মাথা কাত করল জ্যাকোয়া। গড়গড় করে বলে গেল পুরো কাহিনী, মুসা আর রবিনকে যা যা বলেছে। চুপ করে শুনল সবাই। ডাংম্যানের ওপর বিষিয়ে উঠল মন।
আরও চারটে ছেলে? বলল কিশোর, ঠিক প্রশ্ন নয়। হতেই হবে। আমি গর্দভ তো, তাই তখন বুঝিনি। ইয়াকুয়ালি ছেলেদের ব্যবহার করছে ব্যাটা। ম্যাগনাস ভারদির গুপ্তধন নামিয়ে আনার জন্যে। অথচ, ভুল কথা নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি আমরা।
ভুল? ফ্লেচার বললেন।
তাই তো। আমরা জানি, ইটস ইন দা আই অভ দা স্কাই হোয়্যার নো ম্যান। ক্যান ফাইণ্ড ইট। ম্যান। তারমানে বড়রা পারবে না। কিন্তু একটা ছেলে পারবে।
ছেলে?
হ্যাঁ। ইয়াকুয়ালিরা এমনিতেই আকারে ছোট, ছেলেরা আরও অনেক ছোট। এমন জায়গায় গুপ্তধন লুকিয়েছে ভারদি, যেখানে খুব ছোট একটা ছেলেই শুধু ঢুকতে পারবে। কোনও গুহায় রেখেছে, সুড়ঙ্গমুখটা খুব সরু। পাহাড়ে উঠে ওখান দিয়ে ঢুকতে হবে।
তারমানে, বলতে চাইছ, ইয়াকুয়ালিদের গায়ে গিয়ে চারটে ছেলেকে নিয়ে এসেছে এ-কারণেই?
হ্যাঁ। বড়দের মতই ছোটরাও পাহাড়ে চড়তে ওস্তাদ।
অনেক ওপরে কোথাও লুকানো আছে তাহলে। কিন্তু, এত কষ্টের দরকার কি ছিল? ডিনামাইট দিয়ে কিংবা অন্য কোনভাবে সুড়ঙ্গটা মোটা করে নিলেই পারত?
বোধহয় সম্ভব না, সে জন্যেই করেনি। পাহাড় ধসে পড়তে পারে। তাহলে চিরতরে হারিয়ে যাবে সোনার স্তুপ। তাছাড়া, বোমা মারলে লোকে শুনবে। সে তো চায় চুপচাপ কাজ সারতে।
এসব পরে ভাবলেও তো চলে, বাধা দিলেন মিস্টার মিলফোর্ড। ছেলেগুলোকে আগে বের করে আনা দরকার। জ্যাকোয়া, কোথায় লুকিয়েছে ওদের?
উঁচু পর্বতের দিকে দেখাল জ্যাকোয়া। এ-পথ ধরেই গেছে। ট্রাকে করে।
পর্বতের ভেতরে খোঁজাই তো মুশকিল, চিন্তিত হয়ে পড়লেন ফ্লেচার। দিনে হলে হেলিকপ্টার আনা যেত।
সকাল হতে তো অনেক দেরি! অধৈর্য হয়ে পড়েছেন মিস্টার মিলফোর্ড।
কিন্তু এখন গিয়ে খোঁজাখুঁজি করাটাও ঠিক হবে না। সাড়া পেলে সতর্ক হয়ে যাবে ডাংম্যান, ছেলেদের বিপদ আরও বাড়বে।
চুপ করে কি ভাবছিল কিশোর, হঠাৎ ফিরল জ্যাকোয়ার দিকে। ট্রাকের চাকার দাগ অনুসরণ করতে পারবে?
চাকার দাগ? সি, পারব। খুব সহজ।
তাহলে চলো। সময়মত পৌঁছতে পারলেই হয় এখন।
চাঁদের আলোয় দাগ দেখে দেখে প্রায় ছুটে চলল জ্যাকোয়া। অনুসরণ করুল সবাই।
শক্ত দড়ি দিয়ে কষে বাঁধা হয়েছে মুসা আর রবিনকে। নির্জন পর্বতের ভেতরে চাদের আলোয় তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ডাংম্যান।
ছায়া থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে এল ল্যাঙলী। ছেলেগুলো তৈরি, বস।
চলো।
উজ্জ্বল জ্যোৎস্না ছায়া সৃষ্টি করেছে সর্বত্র। বাক্সের মত গিরিসঙ্কটে ছায়ায় হারিয়ে গেল দুই চোর। পড়ে থেকে দেখল রবিন আর মুসা। তাদের পাশে গোঙাচ্ছে হাত পা বাঁধা জেরমি।
কি করি এখন? রবিন বলল।
কিশোর নিশ্চই খুঁজছে আমাদের।
আমাদের সিগন্যাল কি দেখেছে?
কি করে বলি, বলো। একবার মাত্র পাঠিয়েছি। দেখে থাকলেও কেবিনে যাবে খুঁজতে, এখানে আসবে কেন?
কি জানি। তবে এলে ভাল হত। আমার ভয় করছে, মুসা। মনে হচ্ছে, আগামী ভোর আর দেখব না।
মুসা জবাব দেয়ার আগেই ফিরে এল ডাংম্যান আর ল্যাঙলী।
ঝুঁকে বসে রবিনের বাঁধন খুলল ল্যাঙলী।
ওঠো, ডাকল ডাংম্যান। ল্যাঙলী, মনে আছে তো কি করবে?
আছে বস।
গুড। কয়েক ঘণ্টার বেশি লাগবে না। হুঁশিয়ার থাকবে। তীরে এসে তরী ডোবাতে চাই না।
রবিনের পিঠে ঠেলা দিল ডাংম্যান। তাকে নিয়ে চলে গেল গিরিসঙ্কটের দিকে।
সেদিকে চেয়ে অস্বস্তি বোধ করছে মুসা। রবিনকে নিয়ে গেল কেন?
কোথায় রয়েছে, মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছে সে। এই বক্স-ক্যানিয়নটার কোন নাম নেই, তবে রয়েছে ইনডিয়ান হেড মাউনটেইনের গোড়ায়, পেদ্রোজ এস্টেটের গভীরে। রাস্তা থেকে মাইলখানেক দূরে। ওখানে ট্রাক রেখে এসেছে ডাংম্যান।
ল্যাঙলী, পটানোর চেষ্টা করল মুসা। ডাংম্যান তোমাকে ফেলে যাবে…।
চুপ! রেগে উঠল ল্যাঙলী। বস্ এমন কাজ করবে না।
চুপ হয়ে গেল মুসা। লাভ নেই চেষ্টা করে।
মোড়ামুড়ি করে কোনমতে উঠে বসল জেরমি। ভীষণ হয়ে উঠেছে চেহারা, চোখে বুনো দৃষ্টি, চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তার দিকে চেয়ে হাসল মুসা। জবাব দিল না ইনডিয়ান। ইংরেজি জানে না। মুক্তির জন্যে কিছু করতে হলে মুসাকে একাই করতে হবে, জেরমিকে বলে কিছু বোঝাতে পারবে না।
কিন্তু কি করবে? মাত্র কয়েক ফুট দূরে বসে আছে ল্যাঙলী। কোলে রাইফেল।
মাথা ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক তাকাল মুসা। উপায় খুঁজছে।
হঠাৎ চোখ মিটমিট করল সে। ওগুলো কি সত্যিই দেখা যাচ্ছে! না তার চোখের ভুল?
না, সত্যি। রূপালী ছায়ায় ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে অসংখ্য মূর্তি।
চেঁচিয়ে উঠল মুসা, এই যে, আমি এখানে! এখানে! ছুটে আসতে লাগল মূর্তিগুলো।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল ল্যাঙলী। কোলের ওপর থেকে রাইফেল পড়ে গেল, তোলার চেষ্টা করল না। মহাবিপদ, বুঝে গেছে। পেছন ফিরে দিল দৌড়।
ধরো, ব্যাটাকে, ধরো, পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচারের গলা।
মুহূর্ত পরেই মুসাকে ঘিরে দাঁড়াল কিশোর, মিস্টার মিলফোর্ড আর হ্যানসন। বাঁধন খুলতে শুরু করল। জেরমির পাশে গিয়ে বসল তার ভাই জ্যাকোয়া।