পালাচ্ছে! চেঁচিয়ে উঠল ল্যাঙলী। আরেকটা পালাচ্ছে!
চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরল ডাংম্যান, রাইফেল তুলল, কিন্তু তার আগেই অন্ধকারে হারিয়ে গেল জ্যাকোয়া।
যাক, বলল ডাংম্যান। একটু পরেই মাল নিয়ে হাওয়া হয়ে যাব আমরা। ওই ব্যাটার তোয়াক্কা না করলেও চলবে।
অস্বস্তি বোধ করছে ল্যাঙলী। ঠিক তো, বস? সত্যিই পারব?
পারব না মানে? যাও, রিগোকে ডেকে নিয়ে এসো, আর পাহারার দরকার নেই। এই বিচ্ছ দুটো বেশি জ্বালাচ্ছে। ঠাণ্ডা করে দেয়া দরকার।
১৯
কিভাবে? হতাশা ঢাকতে পারলেন না মিস্টার মিলফোর্ড। কোথায় আছি কিছুই জানি না। কোন সূত্র নেই। ধারণা নেই। কি করে খুঁজব?
সবাই বেরিয়ে এসেছে বাড়ির বাইরে। চাঁদের আলোয় প্রতিটি জিনিসকে কেমন রহস্যময়, ভূতুড়ে দেখাচ্ছে। গাড়ি বারান্দায় পায়চারি করতে করতে হঠাৎ থমকে দাঁড়াল কিশোর।
চীফ, কয়েকটা ব্যাপার আলোচনা করে দেখা যাক, বলল সে। এক, পর্বতের মধ্যেই কোথাও রয়েছে গুপ্তধন। দুই, ডাংম্যানের একটা কার একটা ট্রাক আছে। তিন, আজ রাতেই গুপ্তধন সরানোর মতলব করেছে সে।
তাতে কি? প্রশ্ন করল টনি।
তাতে? একটা ব্যাপার শিওর, কোন একটা পথ ব্যবহার করতে হবে তাকে। আর সেই পথটা রয়েছে এই এস্টেটেরই কোথাও। পর্বতের ভেতরে, এখান থেকে বেশি দূরে নয়। গেট দিয়ে ঢুকেছে যে পথ, সেটা নয়, হান্টিং লজে যেটা গেছে, সেটাও নয়, তৃতীয় আরেকটা পথ আছে কোথাও। মিস পেদ্রো হয়তো বলতে পারবেন।
মাই গড। কিশোর, ঠিকই বলেছ, একমত হলেন ফ্লেচার। মিস পেদ্রোর দিকে ফিরলেন। মিস পেদ্রো, মিস্টার মিলফোর্ড, টনি, হ্যানসন সবাই তাকিয়ে আছে পুবের অন্ধকার পাহাড় শ্রেণীর দিকে। মিস পেদ্রো, আর কোন পথ আছে, জানেন?
ভেবে বললেন মহিলা, খুব বেশি ঘোরাঘুরি করিনি এস্টেটের ভেতরে…
চেঁচিয়ে উঠল টনি, আরে, ওটা কি? আলো! জ্বলছে নিভছে।
ঘুরে আরেক দিকের পাহাড়ের দিকে তাকাল সবাই। দম বন্ধ করে ফেলল। ম্লান আলো ঝিলিক দিয়েই নিভে গেল, আকাশের অনেক নিচে, কাছের গাছগুলোর মাথার ওপর দিয়ে দেখা গেছে আলোটা।
এস ও এস, কিশোর বলল। বাজি রেখে বলতে পারি, মুসা আর রবিন। বন্দি করে রেখেছে ওদেরকে।
চার পাঁচ মাইল হবে, বললেন ফ্লেচার। পর্বতের গোড়ায় কোন টিলার মাথায়।
ওই যে, আবার, বলল হ্যানসন।
জ্বলে উঠেই নিভে গেল আলো।
কি আছে ওদিকে, মিস পেদ্রো? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
কি যেন আছে? মাথা চুলকালেন মহিলা, মনে করার চেষ্টা করছেন। অনেক দিন আগের কথা। বাবা বলত…ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে, পুরানো একটা কেবিন। আজকাল আর কেউ যায় না ওদিকে।
কি ভাবে যেতে হয়? জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার মিলফোর্ড।
পথ একটা আছে, খুব সরু। একটা ছোট পাহাড়ের ধার দিয়ে গিয়ে ঢুকেছে পর্বতের ভেতরে। পাহাড়টার চূড়া চ্যাপ্টা, টেবিলের মত অনেকটা, ওই মেসা বলে যাকে। মেসার ওপরই তৈরি হয়েছে কেবিন। ওখানে ওঠা খুব কঠিন।
বন্দি রাখার জন্যে ভাল জায়গাই খুঁজে বের করেছে ডাংম্যান, মন্তব্য করল কিশোর।
পূব দিকে তাকিয়ে রয়েছে সবাই। কিন্তু আর দেখা গেল না আলোর সঙ্কেত। কিছু হলো না তো? উদ্বিগ্ন মনে হলো মিস্টার মিলফোর্ডকে।
চলুন, বললেন চীফ, গিয়ে দেখি।
রোলস-রয়েসে উঠল কিশোর, ইয়ান ফ্লেচার, মিস্টার মিলফোর্ড আর টনি। পুলিশের গাড়িতে এখন তিনজন পুলিশ, একজন রয়ে গেল মিস পেদ্রোর পাহারায়। কোন দিক দিয়ে কিভাবে যেতে হবে, বলে দিয়েছেন মিস পেদ্রো। সেভাবেই, হাইওয়ে দিয়ে ঘুরে এসে সরু পথটায় নামল গাড়ি দুটো।
পাহাড়ী পথে নেমেই নিভিয়ে দেয়া হলো গাড়ির আলো। আশপাশে টিলাটক্কর আর পাহাড়, ফলে চাদের আলো ভালমত পড়ছে না পথে, আবছা অন্ধকার।
বিশাল পর্বতের গোড়ায় এসে থামল গাড়ি। সবাই নামল।
মেসার মাথায় কেবিনটা দেখাল কিশোর, ওই যে।
অন্ধকার কেন? ফিসফিস করে কথা বললেন মিস্টার মিলফোর্ড।
সাবধান! হুঁশিয়ার করলেন ফ্লেচার। ফাঁদ হতে পারে।
তাড়াতাড়ি করুন, চীফ। কি বিপদে আছে ছেলেগুলো কে জানে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
খাড়া সরু পথ ধরে মেসায় উঠতে শুরু করল চীফ আর তার তিন সহকারী। শব্দ শুনে থেমে গেল। হঠাৎ, ফিরে তাকাল।
রোলস-রয়েসের কাছ থেকে খানিক দূরে একটা লোককে ধরে ফেলেছেন মিস্টার মিলফোর্ড আর হ্যানসন। ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছে লোকটা।
বাদামী চামড়া! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।
ধরে রাখুন, ছাড়বেন না, চেঁচিয়ে বললেন চীফ। ছুটে এলেন দুজন পুলিশ সঙ্গে নিয়ে।
টেনেহিঁচড়ে লোকটাকে পথের ওপর নিয়ে আসা হলো। কিশোরকে দেখেই হাসল জ্যাকোয়া। চিনতে পেরেছে। তুমি কিশোর না? আমি জ্যাকোয়া। ইয়াকুয়ালি বন্ধু। পালিয়েছি।
বন্ধু কিনা বোঝা যাবে এখনি, কঠিন গলায় বললেন চীফ। ছেলেদের তাড়া করেছিলে কেন?
ভুল। ভেবেছি ওরা খারাপ-মানুষ ডাংম্যানের লোক। ভুল করেছি, অন্য ছেলেদের বলেছি। বিশ্বাস করেছে।
রবিন আর মুসাকে দেখেছো? জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার মিলফোর্ড। কোথায়? জলদি বলো।
হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল জ্যাকোয়া। খারাপ-মানুষ ডাংম্যান ধরে নিয়ে গেছে। আমার ভাই জেরমিকেও নিয়েছে। নিউকা আর অন্য ছেলেদের আটকে রেখেছে।
জোরে নিঃশ্বাস ফেললেন ফ্লেচার। গোড়া থেকে বলো। খুলে বলো সব।
এক মিনিট, চীফ, সামনে এগোল কিশোর। জ্যাকোয়া, ইংরেজি তো ভাল বলতে পারো না। স্প্যানিশ পারো?