সে-ই তাহলে ঝগড়া শুরু করেছে। তোমরা আক্রমণ করোনি, বলল রবিন।
সি। ভয় দেখাল, পুলিশকে বলে আমাদের জেলে পাঠাবে। ভয়ে পালিয়ে এলাম। চোখ রাখলাম বাড়িটার ওপর। তোমাকে আর আরেকটা ছেলেকে ঢুকতে দেখলাম। বেরিয়ে এলে। কথা বলার জন্যে ডাকলাম, তোমরা দৌড় দিলে। পালালে। আবার বাড়ির ওপর চোখ রাখলাম। তোমাদেরকে আবার ঢুকতে দেখলাম। পরে তোমাদের বেঁধে ট্রাকে তুলতে দেখলাম। পিছু নিয়ে এখানে এসেছি কথা বলতে। ডাংম্যান কোথায় জানো?
জানি না, বলল মুসা।
তোমাদের ছেলেদের দিয়ে কি করাচ্ছে, জানো? জিজ্ঞেস করল রবিন।
নিশ্চয় কোন খারাপ কাজ, বলল জ্যাকোয়া। তারপর মেরে ফেলবে। ওরা জানে, সে কি করছে, তাই মারবে।
নিশ্চয় হোর্ড খোঁজার কাজে লাগিয়েছে, বুঝতে পেরে বলে উঠল মুসা। পাহাড়ে চড়তে ওস্তাদ ওরা। ঠিকই বলেছ, জ্যাকোয়ার কাজ শেষ হলে ওদেরকে মেরে ফেলবে ইবলিসটা।
পুলিশকে জানানো দরকার, রবিন বলল।
বাইরে যেতে চাও? জিজ্ঞেস করল জ্যাকোয়া। এসো।
কি করে? পাহারা আছে। নিশ্চয় বন্দুক আছে তার কাছে, মুসা বলল।
এদিক দিয়ে নামব, খাদের দিকে দেখাল জ্যাকোয়া।
জ্যাকোয়া কি বলছে, আন্দাজে বুঝে মাথা ঝাঁকাল জেরমি। বিচিত্র ভাষায় কিছু বলল। বোধহয় বলেছে, নেমে যাওয়াটা কোন ব্যাপারই নয় ওদের জন্যে।
ওই খাড়া পাড় বেয়ে? আঁতকে উঠল মুসা।
খাড়া কই? বলল জ্যাকোয়া। সহজ।
মুসার দিকে তাকাল রবিন, দৃষ্টি ফেরাল জ্যাকোয়ার দিকে। চলো, যাব। আর কোন পথ যখন নেই।
যাবে? কাঁধ ঝাঁকাল মুসা, হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গিতে।
ঠিক আছে। আগে সঙ্কেত পাঠিয়ে নিই। পড়ে গিয়ে হাড়গোড় ভেঙে তো মরব জানিই, লাশগুলো অন্তত এসে নিয়ে যেতে পারবে।
লণ্ঠন জেলে জানালার কাছে এসে দাঁড়াল মুসা। ঘরের কোণ থেকে খুঁজেপেতে ছোট একটা কাঠের টুকরো এনে দিল রবিন। টুকরোটা লণ্ঠনের সামনে ধরে-সরিয়ে, ধরে-সরিয়ে এস ও এস পাঠাতে শুরু করল মুসা।
তারপর জানালা দিয়ে বেরিয়ে এল চারজনে।
সঙ্গের ঝোলা থেকে চামড়ার তৈরি সরু শক্ত দড়ি আর মোটা দুটো কাঠের গোঁজ বের করল দুই ভাই। পাথরের দুটো গভীর খাঁজে গোজ দুটো ভালমত ঢুকিয়ে দিয়ে দুটো দড়ির এক মাথা বাঁধল। হাতে তৈরি চামড়ার স্ট্রাপ বের করে কাঁধে-পিঠে বেঁধে নিল। স্ট্রাপে চামড়ার আঙটা রয়েছে, ওগুলোর ভেতর দিয়ে ঢুকিয়ে দিল দুটো দড়ির অন্য মাথা। কোন কারণে হাত যদি ছুটেও যায় দড়ি থেকে, ওই আঙটায় আটকে যাবে দড়ি, মারাত্মক পতন ঠেকাবে।
খাদের কিনারে এসে নিচে উঁকি দিল মুসা। অন্ধকার, কিছুই দেখা যায় না। ভালই হলো, বিপদের পরিমাণ চোখে দেখা না গেলে ভয় অনেক কম লাগে।
শক্ত করে ধরে রাখবে গলা আর আঙটা, মুসাকে বলল জ্যাকোয়া। ছাড়বে। আমরা নামতে পারব।
মুসাকে পিঠে নিল জ্যাংকোয়া, জেরমি নিল রবিনেক। তারপর আলগোছে দড়ি ধরে ঝুলে পড়ল।
পাক দিয়ে উঠল মুসার মাথা। ক্ষণিকের জন্যে মনে হলো মহাশূন্যে ভাসছে। জ্যাকোয়ার গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে, আরেক হাতে আঁকড়ে রেখেছে স্ট্র্যাপের পিঠের একটা আঙটা। দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে, ঝাঁকুনির চোটে গোড়া থেকে হাত ছিঁড়ে গেলে যাক, কিন্তু আঙুল ছুটাবে না।
পাহাড়ের দেয়ালে পা ঠেকিয়ে দোল দিতে দিতে নেমে চলেছে দুই ইয়াকুয়ালি। ঠেলে বেরিয়ে থাকা পাথর, খজ, কিছুই রুখতে পারছে না ওদের, গতি কমছে না একটুও।
ধরে থাকতে থাকতে হাত ব্যথা হয়ে গেছে দুই গোয়েন্দার। ওদের মনে হচ্ছে, এ-নামার বুঝি আর শেষ নেই, শেষ হবে না কোনদিন।
হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি লাগল, ধরে রাখতে পারল না মুসা, জ্যাকোয়ার গলা থেকে হাত ছুটে গেল তার। আঙটা থেকে খুলে এল আঙুল। চোখ বন্ধ করে ফলল সে। দড়াম করে আছড়ে পড়ল কঠিন পাথরে। পিঠে তীব্র ব্যথা, চোখা গরম এক শিক ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে যেন মেরুদণ্ডের পাশে। গুঙিয়ে উঠল সে।
হাসি শোনা গেল জ্যাকোয়া আর জেরমির।
হাত ধরে মুসাকে টেনে তুলল জ্যাকোয়া।
চোখ মেলল গোয়েন্দা-সহকারী। লজ্জা পেল। জ্যাকোয়ার পা মাটিতে ঠেকায় ঝুঁকুনি লেগেছিল, আর তাতেই ছুটে গেছে তার হাত।
ব্যথা পাচ্ছে পিঠে, কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দিল না মুসা।
নামলাম তাহলে! রবিনের কণ্ঠে বিস্ময়। বিশ্বাস হচ্ছে না।
আবার হাসল জ্যাকোয়া। সহজ।
কঠিনগুলোর কথা আর বোলো না, সোজা হতে গিয়ে আঁউ করে উঠল মুসা। কোমরের এক পাশে হাত চেপে ধরে দুর্বল কণ্ঠে বলল, তাড়াতাড়ি করা দরকার। তোমাদের গাড়িটা কোথায়?
বাঁয়ে, পথে। পুলিশের কাছে যাব? সাহায্য করবে?
করব, বলল রবিন।
গাড়ির দিকে রওনা হলো ওরা। পথ নেই, কঠিন পাথুরে অঞ্চল, এবড়োখেবড়ো, রুক্ষ। তাড়াতাড়ি হাঁটা যাচ্ছে না।
অবশেষে পথে পার্ক করে রাখা গাড়ির কাছে পৌঁছল ওরা।
ঠিক এই সময় মোড়ের কাছে দুটো হেডলাইট জ্বলে উঠল, চোখ ধাধিয়ে দিল তীব্র আলো। একটা ট্রাক।
আবছা মত দেখা গেল ট্রাকের কেবিন থেকে লাফিয়ে নামল একটা মূর্তি, হাতে রাইফেল। অনেক জ্বালান জ্বালিয়েছ, ডাংম্যানের গলা। আর ছাড়ব না।
কি ভাবে…কথা সরছে না রবিনের, জানলে…আমরা এখানে।
ইয়াল্লা! গুঙিয়ে উঠল মুসা।
হেসে উঠল ডাংম্যান। তার হোঁতকা সঙ্গী ল্যাঙলীও নেমেছে ট্রাক থেকে। তার হাতেও রাইফেল।
বিচিত্র ভাষায় গাল দিয়ে ডাংম্যানের ওপর লাফিয়ে পড়তে গেল জেরমি। সঁ্যাত করে সরে গেল ডাংম্যান, রাইফেলের বাট দিয়ে প্রচণ্ড বাড়ি মারল ইনডিয়ানের মাথায়। মুখ থুবড়ে পড়ল লোকটা, উঠল না। নিথর হয়ে গেছে।