আজ রাতেই গুপ্তধন খুঁজে বের করবে সে, বলল টনি। আমার দোষ সবচেয়ে বেশি। এখানে ঢোকার সুযোগ আমিই করে দিয়েছি তাকে। তোমরা চোর, পুরস্কার ঘোষণা করে পুতুলটা তোমাদের হাত থেকে ফেরত আনার আইডিয়া, সব তার। ও-ই বুদ্ধি দিয়েছে জঞ্জাল বিক্রির ছুতোয় তোমাদের সঙ্গে পরিচয় করতে। দম দেয়া পুতুলের মত খেলিয়েছে সে আমাকে।
আমার দোষও কম নয়, বলে উঠলেন মিস পেদ্রো। ওর দলে ঢুকিয়েছে আমাকে, তার লীগে বেশ কিছু টাকাও চাঁদা দিয়েছি আমি। আমার চেনা অনেক নিরামিষভোজীর কাছু থেকে চিঠি এনেছে, দেখিয়েছে আমাকে।
সব জাল, আমি শিওর, বললেন ফ্লেচার। ইবলিসটা জানে না, এমন কোন শয়তানী নেই।
যা-ই হোক, ওকে এখন খুঁজে বের করে ধরা দরকার, মনে করিয়ে দিল কিশোর। টনি, বাদামী চামড়ার লোক, কিংবা মুছাড়া বামনদের কথা কিছু বলেছে
ডাংম্যান?
মুণ্ডুছাড়া! না-তো!
ভ্রূকুটি করল কিশোর। ওই বামনরাই এ-রহস্যের চাবিকাঠি মনে হচ্ছে। ওদেরই কেউ পুতুলটা চুরি করে মেসেজ ভরে দেয়ালের ওপর দিয়ে ছুঁড়ে ফেলেছিল। ইয়াকুয়ালী ইনডিয়ান হতে পারে। কিন্তু ওদেরকে আটকেছে কেন ডাংম্যান?
ধৈর্য হারালেন মিস্টার মিলফোর্ড। বামন আর পুতুল নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি কেন? মুসা আর রবিনকে খোঁজা দরকার আগে।
কিন্তু ডাংম্যানকে না পেলে ওদের পাওয়া যাবে না, বললেন চীফ। তাকেই আগে দরকার।
ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে মিস পেদ্রোর দিকে ফিরল কিশোর। ম্যাডাম, আপনার ভাই কখনও চাম্যাশ হোর্ডের কথা বলেছিল?
না। ও তখন পালানোর জন্যে অস্থির, বেশি কথা বলার সময়ই ছিল না।
পুতুল দুটোর কথা কি বলেছিল?
তেমন কিছুই না। চলে যাওয়ার আগে পুতুল দুটো আমার হাতে দিয়ে বলল, ওগুলো আর কোন কাজে লাগবে না। হাঁসটাকে নাকি মেরে ফেলেছে সে। কথাটা অনেক ভেবেছি, কি বলতে চেয়েছে কিছুই বুঝিনি।
চোখ মিটমিট করল কিশোর। বলতে চেয়েছে সোনার-ডিম-পাড়া হাঁসটাকে মেরে ফেলেছে। যে লোকটাকে খুন করেছে, নিশ্চয় চাম্যাশ হোর্ড কোথায় আছে জেনেছিল লোকটা। পুতুলের মধ্যে কোন সূত্রই ছিল না। চাম্যাশ হোর্ড আছে, শুধু একথা প্রমাণ করে ওদুটো।
হোর্ড কোথায় আছে জানত না তাহলে ফিয়ারতো, ফ্লেচার বললেন। কিন্তু ডাংম্যান জানে। কিভাবে জানল?
ম্যাগনাস ভারদির ধাধার সমাধান করে ফেলেছে আরকি। কিংবা বাদামী চামড়ার লোক দুটো করেছে। আমাদেরও করতে হবে এখন।
ইন দা আই অভ দা স্কাই হোয়্যার নো ম্যান ক্যান ফাইও ইট, বিড়বিড় করলেন চীফ। মানে কি?কোথায় খুঁজতে হবে?
জবাব নেই কারও মুখে! একে অন্যের দিকে নীরবে তাকাল শুধু।
বাদামী চামড়ার লোকদুটোকে পাই কোথায়? আনমনে বলল কিশোর।
নীরবতা দিয়ে ঠাট্টা করুল যেন তাকে বিশাল বাড়িটা।
১৮
ছুরি হাতে আবছা অন্ধাকার কেবিনে দাঁড়িয়ে আছে লোক দুজন।
ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে রবিন আর মুসা।
টেবিলের কাছে এসে থামল মুসা, হাত বাড়াল লণ্ঠনটার দিকে, ছুঁড়ে মারবে যে কোন একজনের মুখে।
মুসার উদ্দেশ্য বুঝে মাথা নাড়ল একজন, ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলল, না না, আমরু বন্ধু। সাহায্য করব।
স্থির হয়ে গেল রবিন। ইংরেজি জানো?
সি, অল্প। আমি জ্যাকোয়া। ও আমার ভাই জেরমি।
সাহায্য করতে চাইলে পুতুলটা চুরি করেছিলে কেন?
ভাবলাম ভেতরে আমার ভাইয়ের চিঠি আছে। তোমার পিছু নিলাম, পুতুল কেড়ে নিলাম, চিঠি নেই ভেতরে।
মেসেজটা আমরা রেখে দিয়েছি, মুসা জানাল।
কি লেখা? জিজ্ঞেস করল জ্যাকোয়া।
কি লেখা আছে, বলল রবিন।
উত্তেজিত হয়ে মাথা ঝাঁকাল জ্যাকোয়া, বিচিত্র ভাষায় জেরমিকে কি বলল। তার মুখেও উত্তেজনা ফুটল। ছুরি খাপে ভরে রাখল দুজনে।
এই ভয়ই করছিলাম, ইংরেজিতে বলল জ্যাকোয়া। আমাদের ছোট ভাইয়ের বিপদ। ডাংম্যান মিথ্যুক, খারাপ লোক।
তোমরা ইয়াকুয়ালি ইডডিয়ান, মেকসিকো থেকে এসেছ না? জিজ্ঞেস করল রবিন। তোমাদের ভাইকে বন্দি করে রেখেছে ডাংম্যান?
সেদিন আমাদের তাড়া করেছিলে যখন, ইংরেজি বললে না কেন? অনেক কিছু সহজ হয়ে যেত, বলল রবিন।
তখন উত্তেজিত। ইংরেজি মনে ছিল না, বিষণ্ণ জবাব দিল জ্যাকোয়া। ডাংম্যান তোমার ভাইদের ধরে এনেছে কেন? কি করছে সে?
ভাঙা ইংরেজিতে যা বলল জ্যাকোয়া, তার সংক্ষেপ : মাসখানেক আগে, মেকসিকোর সিয়েরা মাদ্রে পর্বতের গভীরে ইয়াকুয়ালিদের গাঁয়ে গিয়েছিল ডাংম্যান। পাবলিক অ্যামিউজমেন্ট পার্কে দড়াবাজিকরের চাকরি দেয়ার লোভ দেখিয়ে চারটে কিশোরকে নিয়ে আসে আমেরিকায়। অভিভাবকরা রাজি ছিল না, কিন্তু ছেলেদের মন, আমেরিকা আর শহর দেখার লোভ সামলাতে পারল না, বলে-কয়ে রাজি করাল বাপ-মাকে। চার কিশোরের একজনের নাম নিউকা।
তারপর, হপ্তাখানেক আগে একটা চিঠি পৌচেছে গাঁয়ে। রকি বীচ থেকে পাঠিয়েছে নিউকা, সাহায্যের আবেদন। চিঠিটা কিভাবে পোস্ট করেছে, সে-ই জানে।
এখানে এলাম, পুরানো গাড়ি জোগাড় করলাম, বলে গেল জ্যাকোয়া। ডাংম্যানকে পর্বতের ভেতরে এক বাড়িতে দেখলাম। নিউকার চিৎকার শুনলাম মনে হলো। সন্ধ্যায় তোমাদেরকে দেখলাম বড় বাড়িটার সামনে। তোমরা কোথায় থাকো, দেখে এলাম। পরদিন সকালে তোমাদের পিছু নিলাম। বড় স্টুডিওতে যেতে দেখলাম। ভাবলাম, ওটার ভেতরে নিউকার লেখা আছে। ছিনিয়ে নিলাম। লেখা পেলাম না। ডাংম্যানকে খুঁজতে খুঁজতে পেলাম আরেকটা বড় বাড়িতে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ছেলেগুলো কোথায়। ঝগড়া লেগে গেল আমাদের সঙ্গে।