হুঁ, হতে পারে। টনিকে দিয়েও এমন কাজ করিয়েছে, যাতে ওর ওপর চোখ পড়ে আমাদের, সন্দেহ হয়, গুঙিয়ে উঠল কিশোর। ইস, আমি একটা গাধা! সব কথা বলে দিয়েছি ডাংম্যানকে। হায় হায়রে, হুঁশিয়ারও করে দিয়েছি।
বুঝে তো আর বলেননি, সান্তনা দেয়ার জন্যে বলল হ্যানসন। সব্বাইকে বোকা বানিয়েছে ব্যাটা, মহা-ধড়িবাজ।
হ্যাঁ, মাথা কাত করল কিশোর। সব কিছুর মূলেই হয়তো সে। ওই ভূতুড়ে ছায়া, মুণ্ডুশূন্য বন্দি, ঝট করে মুখ তুলল সে। হ্যানসন! জলদি চলুন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার।
চলুন। কোন প্ল্যান করেছেন?
না। তবে ডাংম্যান আরেক শয়তানী করেছে। এস্টেট থেকে বেরিয়ে এখানে পৌঁছতে অনেক দেরি হয়েছে তার, সেটা আমাদের জানার কথা নয়। সে-ই জানিয়েছে। তার ভয়, কৈফিয়ত চেয়ে বসব। তাই আমরা জিজ্ঞেস করার আগেই কৈফিয়তও দিয়ে দিয়েছে, স্যালভিজ ইয়ার্ডে নাকি টনিকে খুঁজতে গিয়েছিল, তাই আসতে দেরি হয়েছে। সব মিথ্যে কথা। আমরা আসার অনেক আগেই এখানে এসেছে। তারমানে রবিন আর মুসার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে তার হাত রয়েছে।
১৬
মরচে ধরা পুরানো একটা লোহার টেবিলের সামনে বসে আছে ডাংম্যান। চেয়ে রয়েছে রঙচটা কাঠের দেয়ালের ধারে বসা মুসা আর রবিনের দিকে।
সত্যি বলছি, তোমাদের ব্যথা দিতে খুব খারাপ লাগছে আমার, হাসল ডাংম্যান।
জবাব দিল না দুই গোয়েন্দা। কি বলবে? শক্ত করে হাত-পা বাঁধা। কোথায় রয়েছে, জানে না। শুধু জানে, একটা পাহাড়ী অঞ্চলে রয়েছে। চোখ বেঁধে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে ওদের। দরজার গুলো সব খুলে ফেলেছিল মুসা, ঠেলা দিতেই বাড়ি কাঁপিয়ে দড়াম করে পড়েছিল পান্না, সেই শব্দ শুনে উঠে এসেছিল ডাংম্যান।
পালাতে পারেনি ওরা। ডাংম্যান আর তার দুই চেলা মিলে ধরে ফেলেছে ওদের, চোখের পলকে হাত-পা-মুখ বেঁধে এনে তুলেছে একটা ট্রাকে। সাইকেল দুটোও তুলে নিয়েছে ট্রাকে। তারপর তাদেরকে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে।
অন্যের ব্যাপারে নাক গলানো উচিত হয়নি তোমাদের, বুঝতে পারছ তো? হাসল ডাংম্যান। চুরি করে আমার বাড়িতে ঢুকেছ, কাজটা ভাল করোনি। আইনের চোখে অপরাধু! পুলিশে দিতে পারতাম, কিন্তু তার চেয়ে এখানে নিয়ে আসাটাই আমার জন্যে নিরাপদ হয়েছে। পুলিশ গেছে আমার বাড়িতে, কিশোরও ছিল তাদের সঙ্গে। না না, বেশি আশা করো না, ওরা কিছুই পায়নি। তোমাদের সমস্ত চিহ্ন নষ্ট করে দিয়েছি। কিছুই বুঝতে পারোনি।
থাকো এখানে, আমার মেহমান হয়ে। কদ্দিন? তা, আমি যতদিন না যাচ্ছি। তবে এখানকার কাজ ফুরিয়ে এসেছে আমার, আর বেশি সময় লাগবে না।
ধৈর্যের বাধ ভাঙল রবিনের। তুমি একটা চোর।
চাম্যাশ হোর্ড চুরির তালে আছ, ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলল মুসা।
হা-হা করে হেসে উঠল ডাংম্যান। তোমরা চালাক ছেলে। ঠিকই আন্দাজ করেছ। আজ রাতেই বের করে আনব ওগুলো।
ছেলেদেরকে আরেকবার দেঁতো হাসি উপহার দিয়ে ঘুরে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল ডাংম্যান।
নীরবে একে অন্যের দিকে তাকাল দুই গোয়েন্দা। জানালার ময়লা কাচের, ভেতর দিয়ে দেখতে পাচ্ছে, সূর্য ডুবছে। রাতের দেরি নেই, ডাংম্যানকে থামানোর কোন উপায় বের করতে পারছে না ওরা।
পেদ্রোজ এস্টেটের কোথাও রয়েছি, অনুমানে বলল মুসা।
কোন চিহ্নও তো রেখে আসতে পারলাম না। দরজাটা অবশ্য ভাঙা…।
ভাঙা নয়, ভ্রু খুলেছিলাম শুধু, শুধরে দিল মুসা। বলল না, কোন চিহ্ন রাখেনি। আমাদেরকে পাঠিয়ে দেয়ার পর নিশ্চয় আবার দরজা লাগিয়ে ফেলেছে। সাইকেলেদুটোও নিয়ে এসেছে, কেউ কিছু বুঝবে না।
হ্যাঁ। দেয়ালে-টেয়ালে চিহ্নও আঁকতে পারলাম না, সময়ই দিল না ব্যাটারা।
তবু, কিশোর আমাদের খুঁজে বের করবেই, বন্ধুর ওপর অগাধ আস্থা মুসার। বাঁধন খোলা গেলে আমরাও চেষ্টা করতে পারতাম।
দরজায় দেখা দিল ডাংম্যান। হাসতে হাসতে ঢুকল কেবিনে। পরাস্ত হবে না কিছুতেই, আঁ। তোমাদের প্রশংসা না করে পারছি না।
এসব করে পার পাবে না তুমি, কঠিন গলায় বলল মুসা।
হাসি মুছল না ডাংম্যানের মুখ থেকে। খুব পাব। তোমরা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছ আরও। কিশোর আর পুলিশ থাকবে তোমাদের খোঁজে, বাদামী চোরদুটোর খোজে, আমাকে সন্দেহ করার সুযোগই পাবে না। দারুণ হয়েছে।
কিশোর পাশাকে চেনো না তুমি, ডাংম্যান, বলল রবিন। তোমার পরিণতি আমি এখনই বলে দিতে পারি। জেল।
নাহ্, তা আর হচ্ছে না, দৃঢ় আত্মবিশ্বাসে বলল ডাংম্যান। অনেক সময় নিয়ে অনেক ভাবনাচিন্তা করে প্ল্যান করেছি, প্ল্যানমাফিক কাজ করেছি, কয়েকটা ছেলে আর ছোট্ট শহরের কয়েকটা পুলিশ আমাকে ঠেকাবে এখন? পারবে না। আমার কথা শুনবে? আমারও সুবিধে, তোমাদেরও।
না, শুনব না, সাফ জবাব দিল মুসা।
হুঁ, সাহস আছে। তবে বোকামি করছ। অবশ্য দুনিয়ায় বোকার সংখ্যাই বেশি, নইলে আমার কপালে চাম্যাশ হোর্ড থাকত না। অনেক আগেই অন্য কেউ তুলে নিয়ে যেত।
এত আশা করছ কেন? রবিন বলল। না-ও তো পেতে পারো।
পাবো, মাই বয়, পাবো। ম্যাগনাস ভারদির ছোট্ট ধাধার সমাধান আমি করে ফেলেছি। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চাম্যাশ হোর্ড এসে যাবে আমার হাতে। ছেলেদের দিকে চেয়ে ডাংম্যানের চোখের পাতা কাছাকাছি হলো। তখন তোমাদের একটা ব্যবস্থা করা যাবে।
বলে ঘুরল সে। দরজার নবে হাত রেখে ফিরে চাইল। পালানোর চেষ্টা কোরো না, লাভ হবে না। পাহাড়ের ওপরে এই কেবিন, তিন ধারে একশো ফুট গভীর খাদ। এক দিক দিয়ে শুধু সরু একটা পথ, তাতে লোক পাহারা রেখেছি। গলাকাটা এক ডাকাত সে। সারাক্ষণ কেবিনের দরজায় চোখ রাখছে। কাজেই পালাতে পারছ না তোমরা।