মানে?
ঠোঁট কামড়াল কিশোর, চোখ মুখ কুঁচকে গেছে। কি যেন একটা আছে, স্যার, মনে পড়ি পড়ি করেও পড়ছে না। আচ্ছা, টনির কথায় টান আছে। বলেছে ইংল্যাণ্ড থেকে এসেছে, মিছে কথাও হতে পারে। হয়তো অস্ট্রেলিয়ান। আসল টনি নয় সে।
তাহলে ডাংম্যানের কথা বাদ দিচ্ছে কেন? তার কথায়ও তো টান রয়েছে।
উজ্জল হলো কিশোরের চোখ। অস্ট্রেলিয়ান টান? ব্রিটিশ যে নয়, এটা
ঠিক।
বোঝা যায় না। অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের সঙ্গে কথা বললেই বুঝতে পারব, লোকটার বদনাম থাকলে জানাবে। চলো যাই।
কিশোরকে স্যালভিজ ইয়ার্ডের গেটে নামিয়ে দিয়ে গেল পুলিশের গাড়ি।
সোজা এসে হেডকোয়ার্টারে ঢুকল সে। রবিন আর মুসা নেই। কোন মেসেজও পাঠায়নি।
দুজনের বাড়িতে ফোন করল কিশোর। জানল, দুপুরে খেয়ে যে বেরিয়েছে, আর ফেরেনি।
আর নিশ্চিন্ত থাকা যায় না। পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ফোন করে চীফকে খরবটা জানাল কিশোর। তারপর ফোন করল রেন্ট-আ-রাইড অটো কোম্পানিতে। রোলস-রয়েস গাড়িটা দরকার।
১৫
পনেরো মিনিট পর সবুজ ফটক এক দিয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে এল কিশোর। উঠল রাজকীয় রোলস-রয়েসে। চকচকে কালো শরীরে সোনালি অলঙ্করণ, চমত্তার একটা গাড়ি, যদিও মডেলটা পুরানো।
ভেজিট্যারিয়ান লীগ, হ্যানসন। জলদি, ঠিকানা বলল কিশোর।
ছুটতে শুরু করল রোলস-রয়েস। ইঞ্জিনের শব্দ প্রায় নেই বললেই চলে। উড়ে চলল যেন। দেখতে দেখতে এসে পড়ল লা পামা স্ট্রীটে। উৎকণ্ঠায় দুলছে কিশোরের মন, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, যেন আশা করছে, যে-কোন
মুহূর্তে বাদামী চোরদেরকে দেখা যাবে।
রোলস রয়েসটা গথিক-বাড়ির রকখানেক দূরে থাকতেই শাঁ করে ছুটে এল ডাংম্যানের গাড়ি। ধুলোর মেঘ উড়িয়ে চলে গেল পাশ দিয়ে। চেঁচিয়ে ডাকল কিশোর, কিন্তু লোকটার কানেই যেন ঢুকল না। তাকালও না রোলস-রয়েসের দিকে। স্টিয়ারিঙের ওপর নুয়ে রয়েছে, গভীর।
চেনেন নাকি? জিজ্ঞেস করল হ্যানসন। পেছনে যাব?
না, দ্রুত দূরে সরে যাওয়া গাড়িটার দিকে চেয়ে আছে কিশোর, চিন্তিত। বলল আজ বেরোবে না, মুসা আর রবিনের খবর শোনার অপেক্ষায় থাকবে। তাহলে? নতুন কিছু ঘটল?
গথিক-বাড়ির সামনে এসে থামল রোলস-রয়েস। ঝটকা দিয়ে দরজা খুলে বুলেটের মত বেরোল কিশোর, ছুটল বাড়ির সদর দরজার দিকে। তার পেছনে এল হ্যানসন। দরজা খোলা। ছুটে ঢুকে পড়ল কিশোর। কান খাড়া।
শুনছেন কিছু? হ্যানসনকে জিজ্ঞেস করল।
না, মাথা নাড়ল ইংরেজ শোফার।
আশ্চর্যবোধক চিহ্ন দেখা যায় কিনা দেখুন।
ওরা কোন বিপদে পড়েছে?
জানি না, বলল কিশোর। পুলিশের ধারণা কারও পিছু নিয়ে গেছে। হয়তো তাই। কিন্তু তাহলেও কোন চিহ্ন রেখে যাবে।
হ্যাঁ, শান্তকণ্ঠে বলল হ্যানসন।
ওপরের সব ঘর খোঁজা হয়েছে। আপনি গিয়ে দেখুন আরেকবার। আমি বাইরে গিয়ে দেখি।
ঠিক আছে।
পুরো রকটা খুঁজে দেখল কিশোর, দেয়াল, বেড়া, পথ, সব। গাছ, কাঁচা রাস্তায়ও সঙ্কেত খুঁজল, নেই। পাশরের পিরামিডটা ছাড়া আর কোন নিশানাই রেখে যায়নি ওরা।
বাড়িতে এসে ঢুকল আবার কিশোর।
সিঁড়ি দিয়ে নামছে হ্যানসন। মাথা নাড়ল, কিচ্ছু নেই।
ঠোঁট কামড়াল কিশোর। ডাংম্যান গেল কোথায়? এত তাড়াহুড়ো করে? আনমনে বলল সে।
হয়তো মিস্টার ফ্লেচার ডেকেছেন। আচ্ছা, গ্রাউণ্ড ফ্লোর কিন্তু দেখলাম না।
আমি তখন দেখেছি ভালমতই।
মিসও তত হতে পারে। অনেকবার দেখলে ক্ষতি কি?
রাজি হলো কিশোর। কয়েকটা ঘরে দেখে গিয়ে ঢুকল ডাংম্যানের অফিসে। দেয়াল, মেঝে, আসবাবপত্র, সব দেখল, কোথাও কোন চিহ্ন নেই।
ডেস্কের ওপর থেকে ময়লা ফেলার ঝুড়ির দিকে চোখ ফেরাল কিশোর। সরে আসতে গিয়েও থমকে গেল। ঝুঁকে ঝুড়ি থেকে তুলে নিল একটা কাগজ। চেঁচিয়ে উঠল হঠাৎ, হ্যানসন, দেখুন।
ছুটে এল শোফার। মোম মাথানো কাগজটা নিল কিশোরের হাত থেকে। স্যাণ্ডউইচের কাগজ। এতে এমন কি দেখার আছে?
দাগগুলো দেখছেন? গন্ধ শুকে দেখুন।
দেখল হ্যানসন। সরিষা, আর মাংসের গন্ধ। তেলের দাগ। স্যাণ্ডউইচে থাকবেই।
কিন্তু হ্যানসন, মিস্টার ডাংম্যান ভেজিট্যারিয়ান। লীগের প্রেসিডেন্ট, নিরামিষভোজীদের সর্দার। বুঝলেন না? শজিভোজীদের যে নেতা মাংস আর সরিষা খায়, সে একটা ভণ্ড।
এগুলো ডাংম্যানই খেয়েছে, আপনি শিওর?
শিওর মানে? ও নিজে বলেছে তখন, পুলিশের সামনে। সে ভণ্ড, তারমানে পুরো লীগটাই একটা ভোগলামী। গল্প শুনিয়েছে, অনেক বড় সংগঠন আছে ডাংম্যানের, অনেক দেশ ঘুরে এবার রকি বীচে এসেছে নিরামিষভোজীর সংখ্যা বাড়াতে, সব শয়তানী, এখন বুঝতে পারছি। কোথাও কোন সংগঠন নেই তার।
এ-তো রীতিমত ক্রাইম, তীক্ষ্ণ হলো হ্যানসনের কণ্ঠ। কি কারণ থাকতে পারে? লোক ঠকিয়ে টাকা আদায়?
না, অন্য কিছু। সে জেনেছে, মিস ভেরা পেদ্রো নিরামিষভোজী, হয়তো ইংল্যাণ্ডে টনিই তাকে জানিয়েছে সেকথা। জেনেছে চাম্যাশ হোর্ডের কথা। টনিকে ব্যবহার করার ইচ্ছেয় যোগাযোগ করেছে মিস, পেদ্রোর সঙ্গে, নিরামিষভোজীদের প্রেসিডেন্ট বলে নিজেকে চালিয়ে দিয়ে খাতির করেছে। পেদ্রোজ এস্টেটে ঢোকার খুব চমৎকার এবং সহজ বুদ্ধি।
টনি কে?
জানাল কিশোর। সোনার পুতুল ছিনতাইয়ের কথাও বলল।
এমনও তো হতে পারে, শুনে বলল হ্যানসন, চাম্যাশ হোর্ডের কথা আগে থেকেই জানে ডাংম্যান। ওগুলো খুঁজে বের করার প্ল্যান করেছে। সেই প্ল্যানমাফিকই যেচে এসে পরিচিত হয়েছে টনির সঙ্গে।