পাগল! রবিন বলল। শুঁটকি যে শুঁটকিই। কে বিশ্বাস করবে তোমার কথা?
সবাই করবে, খিকখিক করে হাসল টেরিয়ার। সামনের দরজায় তালা। পেছনের দরজা তাহলে কে খুলল? তোমরা। নাহলে ঢুকলে কিভাবে? আবার হাসল সে। টনি পেদ্রো তোমাদের কথা বলার পর থেকেই চোখ রাখছিলাম ময়লার ডিপোটার ওপর। আজ বাচ্চা হোমসকে সঙ্গে নিয়ে বেরোতে দেখলাম ফোচাচাকে। কার মুরগীর মরা চামড়া কিনতে গেছে, কে জানে। তোমাদেরও বেরোতে দেখলাম, ঢুকতে দেখলাম, আবার বেরোতে দেখলাম। ধরেই নিলাম, ইবলিস দেখা করেছে তোমাদের সঙ্গে, কিছু একটা নিয়ে মেতেছ। পিছু নিলাম। হি-হি-হিহ!
নরকে পচে মরবি তুই, শুঁটকির বাচ্চা! গাল দিল মুসা। ইবলিস বলেছে বুঝি? হি-হিহ।
ইবলিস নয়, শুঁটকি, বোঝানোর চেষ্টা করল রবিন, মিস্টার ডাংম্যান। তিনি জানেন আমরা এখানে আছি। মিস পেদ্রোর কাজ করছি।
বোকা বানাতে চেয়ো না। টনি পেদ্রো আমাকে বলেছে, একটা দামী পুতুল খুঁজছে সে। তার ধারণা, তোমরা চুরি করেছ ওটা।
তোমার মুণ্ডু! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। টনির সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেছে আমাদের। ও-ই আমাদের অনুরোধ করেছে পুতুলটা খুঁজে দেয়ার জন্যে। তোর গিয়ে লটকে থাকা উচিত জেলেদের জালে, তা না করে ব্যাটা এখানে ভদ্রলোকের পাড়ায় আসিস কিশোর পাশার সঙ্গে পাল্লা দিতে। কিশোর তোর মত দূর?
কে ইঁদুর একটু পরেই বুঝবে। খাঁচায় তো সবে আটকেছ, দারুণ মজা পাচ্ছে টেরিয়ার, রাগছে না তাই। এতই যদি বুদ্ধি বাচ্চা হোমসের, কান্নাকাটি করে তাকেই ডাকো না, এসে তালা খুলে দিয়ে যাক। তো, থাকো তোমরা, ধূলো খাও। আমি বাড়ি যাচ্ছি। গুড বাই। করিডরে পায়ের শব্দ মিলিয়ে গেল।
অস্থির চোখে মুসার দিকে তাকাল রবিন, তারপর দরজায় গিয়ে কান ঠেকাল। নিচ তলায় নেমে যাচ্ছে টেরিয়ার। আরও খানিকক্ষণ পর নিচতলার দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ হলো, যেটা দিয়ে ঢুকেছিল ওরা।
হতাশ চোখে একে অন্যের দিকে তাকাল দুই গোয়েন্দা। সরে এল দরজার কাছ থেকে। ভাল বিপদেই পড়েছে।
জানালায়ও শিক লাগানো, বলল মুসা। অন্য দরজাটায়ও তালা।
পুরানো বাড়ি। দেয়ালে কিংবা মেঝেতে নরম জায়গা থাকতে পারে। খোলা তক্তাক্তা।
সঙ্গে সঙ্গে কাজে লেগে গেল মুসা। মেঝেতে দুর্বল জায়গা খুঁজতে শুরু করল। নেই।
রবিন খুঁজল দেয়াল। পাথরের মত শক্ত, বিষণ্ণ কণ্ঠস্বর।
এখন কিশোর কিংবা ডাংম্যান তাড়াতাড়ি এলেই বাঁচি।
সাইকেল দুটো গলিতে আছে। কিশোরের চোখে পড়বে।
হ্যাঁ, বলল মুসা। তাহলে বুঝবে, আশেপাশেই আছি আমরা।
দুজনেই হাসল, কিন্তু প্রাণ নেই তাতে। নিজেদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছে, মনকে বোঝাচ্ছে, কিশোর এই এল বলে, ওদের উদ্ধার করবে। সময় যাচ্ছে।
দুর্বল গলায় এক সময় বলল রবিন, কিশোর না এলেও ডাংম্যান তো আসবেই। তার বাড়ি যখন।
ধরো, এল না।
তাহলে বেরোনোর উপায় আমাদেরকেই করতে হবে।
আবার সারাটা ঘর খুঁজল ওরা। নেই। জায়গামতই এনে তাদেরকে আটকেছে টেরিয়ার। _ রবিন! চেঁচিয়ে উঠল মুসা, একটা দরজার দিকে চেয়ে আছে। এটা ভেতরের দিকে খোলে। কজাগুলো দেখে যাও। ভেতরে।
স্ক্রু খোলার কথা ভাবছ
হ্যাঁ। সহজ কাজ।
স্ক্রু-ড্রাইভার থাকলে সহজ।
শক্ত ছুরি দিয়েও ভোলা যাবে, ভারি স্কাউট-নাইফটা বের করল মুসা, বিপদের আশঙ্কা থাকে এ-রকম কোন জায়গায় গেলে সঙ্গে নেয়।
যতটা সহজ মনে করল, কাজটা তত সহজ নয়। কজা আর স্কু পুরানো, জং পড়ে গেছে। ঘষে ঘষে আগে মরচে সাফ করল মুসা, তারপর ক্রু খোলার চেষ্টা চালাল।
১৪
ইয়ার্ডে পৌঁছেই আগে হেডকোয়ার্টারে ঢুকল কিশোর। মুসা আর রবিন ফেরেনি। মেসেজ-রিসিভার যন্ত্রটা দেখল, কোন মেসেজ নেই, ফোন আসেনি। বেরিয়ে এসে তাড়াতাড়ি থানায় ছুটল সে।
অফিসেই পাওয়া গেল পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে।
এই যে, ইয়াং ডিটেকটিভ, এসো এসো, হেসে ডাকলেন তিনি। তারপর, কি মনে করে?
একটা কেস, স্যার, বলল কিশোর। আপনার সাহায্য লাগবে।
বসো, চেয়ার দেখালেন তিনি। খুলে বলল, কি হয়েছে?
বাসার সময় নেই, স্যার। ডাংম্যান…
ধীরে, কিশোর। গোড়া থেকে বলো, রিপোর্ট লিখতে হবে তো।
ঠিক আছে, বলল কিশোর। তবে দেরি করা যাবে না, স্যার। পুতুল কুড়িয়ে পাওয়া থেকে শুরু করল, যত তাড়াতাড়ি পারে শেষ করতে চায়।
থামো, থামো, হাত তুললেন চীফ। ভূতের ছায়া? নিশ্চয় ভুল করেছে রবিন আর মুসা। কল্পনা। তোমার কি মনে হয়?
না, স্যার, কাল রাতে আমিও শুনেছি। বিচ্ছিরি হাসি। লম্বা একটা ছায়া, তবে কুঁজো মনে হয়নি আমার। ওরা নাকি লম্বা নাকও দেখেছে, পাখির মাথার মত মাথা, ঝটকা দিয়ে দিয়ে নড়ছিল। কাল রাতে আমি আর মুসা ছায়াটার পিছু নিয়েছিলাম। উপত্যকায় গিয়ে এক জায়গায় একটা ট্রাক এল কোত্থেকে, চারজন মুণ্ডুশূন্য বামনকে নামাল।
কাশলেন চীফ। মুশুন্য বামন?
মাথা দেখা যাচ্ছিল না আরকি। চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রেখেছিল, যাতে কোথায় এসেছে না দেখতে পারে। বন্দী।
ওদেরই কেউ সেরাতে পুতুলটা ছুঁড়ে ফেলেছিল? সাহায্যের জন্যে চেঁচিয়েছিল?
তাই তো মনে হয়, স্যার। বামনদেরই কেউ চুরি করেছে পুতুলটা। তাতে মেসেজ ভরে বাইরে ছুঁড়ে দিয়েছে। আশা, কারও না কারও চোখে পড়বেই, উদ্ধারের ব্যবস্থা হবে।
বেশি আশা করেছে। নির্জন এলাকায় ঝোপের ধারে ফেলেছে ছোট্ট পুতুল, তাতে লুকানো কুঠুরীতে মেসেজ, তা-ও আবার বোঝা যায় না কিছু।