মনে হয়, ডাংম্যানের বাড়িতে এমন কিছু আছে, ওরা নিতে চায়। গুপ্তধনের কোন সূত্র-টুত্র হতে পারে।
মারছে! তাই নাকি? আবার গুঙিয়ে উঠল মুসা, দ্রুত তাকাল এদিক ওদিক! তাহলে তো আসবেই।
হ্যাঁ। আর সে-কারণেই চোখ রাখাটা জরুরী।
হঠাৎ, পথের ওপার থেকেই বোধহয়, ভেসে এল চাপা চিৎকার। এ-ভাই, কেউ আছ?
মৃদু কণ্ঠ, কিন্তু তপ্ত দুপুরের এই নীরবতায় স্পষ্ট বোঝা গেল কথা।
এই কেউ আছ? বাঁচাও! আবার এল সাহায্যের আবেদন।
বাড়িটার মধ্যে, ফিসফিস করে বলল মুসা। ওদিকে। ভেজিট্যারিয়ান লীগের পেছনে দিক দেখাল।
ডাংম্যানকে আটকে রাখেনি তো? রবিনের সন্দেহ, চোরেরা?
দ্বিধা করছে দুই গোয়েন্দা। যাবে? চোরেরা কাছেপিঠে নেই তো? তাহলে বেরিয়ে পড়বে মহাবিপদে। কিন্তু অসহায় লোকটাকে সাহায্য করাও দরকার।
কি করি? বুঝতে পারছে না মুসা।
গিয়ে দেখা উচিত। তবে হুশিয়ার থাকতে হবে। বিপদ দেখলেই যাতে পালাতে পারি।
সাবধানে ছুটে নির্জন শূন্য পথটা পেরোল ওরা। সদর দরজা বন্ধ, তাই ওদিকে গেলই না, ঘুরে সোজা চলে এল পেছনে। পেছনের দরজা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করবে।
নবে মোচড় দিয়েই বলে উঠল মুসা, খোলা। ঠেলে পাল্লা খুলে পা রাখল অন্ধকার চওড়া একটা গলিতে।
রান্নাঘরে এসে ঢুকল ওরা। কেউ নেই। সেখান থেকে বেরিয়ে বাড়ির পেছনের ছোট একটা হলঘরে ঢুকল, জিনিসপত্র সব এলোমেলো। ঠাণ্ডা, আবছা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কান পাতলো শোনার জন্যে।
কই, কিছুই শুনছি না, ফিসফিসিয়ে বলল রবিন।
কিন্তু এদিক থেকেই শব্দ হয়েছে। চলো তো, অফিসে দেখি।
সাবধানে দোর খুলল মুসা। ভেতরে উঁকি দিল। নীরব, নির্জন।
আলমারীর দরজার মত একটা দরজার দিকে ইশারা করল রবিন। পা টিপে টিপে সেটার কাছে এসে তাতে কান রাখল দুজনে। ওপাশের শব্দ শোনার চেষ্টা করছে।
কিন্তু পুরো এক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও কিছু শোনা গেল না।
আস্তে করে গিয়ে ডাংম্যানের টেবিল থেকে বড় একটা পেপারওয়েট তুলে নিয়ে এল মুসা। চোখের ইশারায় দরজা খুলতে বললু রবিনকে।
হ্যাঁচকা টানে পাল্লা খুলে ফেলল রবিন। কিন্তু কারও মাথায় পাথরটা বসানোর সুযোগ হলো না মুসার ভেবেছিল ওপাশে ঘর আছে, নেই। আসলেই ওটা আলমারী, দেয়াল আলমারী। শূন্য।
এদিকেই কোথাও থেকে হয়েছে, আবার বলল মুসা।
এমন জায়গায় আছে লোকটা, যেখানে বাতাস ঢোকে না। বেহুশ হয়েযেতে পারে।
তা পারে। তাড়াতাড়ি করা দরকার।
নিচতলার সব কটা ঘর খুঁজল ওরা। নেই। দোতলায় উঠল। তিনটে ছোট ছোট ঘরের পাটিশন সরিয়ে বড় একটা বৈঠক-ঘর করা হয়েছে। এক কিনারে একটা মঞ্চ। ওতে উঠেই ভাষণ দেয় ডাংম্যান, বোঝা গেল, ওখানেই আক্রান্ত হয়েছিল।
তোমরা এসেছ? বাঁচাও! শোনা গেল আবার চিৎকার। মাথার ওপরে।
চেঁচিয়ে উঠল রবিন, তেতলায়।
এসো, সিঁড়ির দিকে দৌড় দিয়েছে মুসা।
তেতলায় আলো খুব সামান্য। জানালার সমস্ত খড়খড়ি নামাল। ধুলোর পুরু আস্তরণ সব কিছুতে। এক ধারে কতগুলো তক্তা পড়ে আছে, তাতেও ধুলো। কয়েকটা দরজা, পাল্লা খোলা, সব কটা থেকে করিডর চলে গেছে দিকে দিকে।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে কান পেতে রয়েছে ছেলেরা।
হঠাৎ এলোমেলো করাঘাতের শব্দ হলো একটা করিডরের শেষ মাথায়। বড় একটা তক্তা তুলে নিয়ে দৌড় দিল মুসা, পেছনে রবিন। আরেকটা দরজা, তারপরে আরেকটা ঘর। খালি।
আবার দাঁড়িয়ে পড়ল ওরা। শব্দের আশায় কান পাতল।
দূরের দরজাটা আগে চোখে পড়ল রবিনের, ঘরের উল্টোধারে। মুসা, ওখানে।
মাথা নুইয়ে সায় জানিয়ে এগোল মুসা।
দরজার নব ধরে মোচড় দিল রবিন। তক্তা তুলে তৈরি রয়েছে মুসা।
তালা দেয়া, জানাল রবিন। ভাঙা যাবে?
দড়াম করে তাদের পেছনে দরজার পাল্লা বন্ধ হলো, যেটা দিয়ে ঢুকেছিল। চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরল দুজনে, চোখ কোটর থেকে ছিটকে বেরোনোর অবস্থা। তক্তা মাথার ওপর তুলে ফেলেছে মুসা। কিন্তু বাড়ি মারার জন্যে কাউকে পেল না। শুধু, খোলা ছিল দরজাটা, এখন বন্ধ।
কিট করে দরজার বাইরে একটা শব্দ হলো।
মুসা! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। তালা লাগিয়ে দিয়েছে।
হা-হা করে হেসে উঠল কেউ ওপাশে। নিজেদেরকে খুব চালাক ভাবো, না মিয়ারা? আবার হাসি। পরিষ্কার চেনা যাচ্ছে এখন গলা। টেরিয়ার ডয়েল।
দরজার কাছে ছুটে গেল দুই গোয়েন্দা। বন্ধ। ধাক্কা দিল মুসা, লাথি মারল, নাড়লও না পাল্লা।
শুঁটকি, জলদি দরজা খোলো! চেঁচাল রবিন।
জলদি, হুমকি দিল মুসা, নইলে বেরিয়ে দেখাব মজা।
বেরোতে তো হবে আগে, ওপাশ থেকে বলল টেরিয়ার। তারপর না মজা দেখানো। আমি যাচ্ছি, বুঝেছ? গরম তো টেরই পাচ্ছ। ঘাম শুকাও। ইস, হোমসের বাচ্চাটাকে পেলাম না, আফসোস, করল সে। ওটাকে শিক্ষা দেয়ার বেশি ইচ্ছা ছিল।
কিশোর তোমার মত গর্দভ নাকি? রেগে গেল রবিন। তোমার মত শুঁটকি?
চুপ! ধমক দিল টেরিয়ার। তার চেয়ে কিশোরের বুদ্ধি বেশি এটা কেউ বললেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে সে। তোমরা গাধারা যে কি বিপদে পড়েছ, বুঝতে পারছ আশা করি?
বিপদে পড়বি ব্যাটা দুই, রাগে কাঁপছে মুসা। ভেবেছিস কি…
কি ভেবেছি? হাসি হাসি গলায় জবাব দিল টেরিয়ার, বলছি, শোনো। একজন ভদ্রলোকের বাড়ি চোরের হাত থেকে বাঁচিয়েছি। দুটো চোরকেই আটকেছি। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, বাড়ির ভেতরে শব্দ শুনে সন্দেহ হলো। ঢুকে দেখি দুটো ছিঁচকে চোর।