আমার কাছে? আমার কাছে কি চায়?
হয়তো কিছু আছে। আমাদের কাছ থেকে পুতুলটা ছিনিয়ে নেয়ার পর আপনাকে আক্রমণ করেছিল। তারপর আমরা আপনার বাড়ি থেকে বেরোলে তাড়া করল আমাদেরকে। হয়তো ভেবেছে, জিনিসটা আমাদেরকে দিয়েছেন আপনি।
আ-আমি…কি জিনিস! ও হ্যাঁ হ্যাঁ, চেঁচিয়ে উঠল ডাংম্যান। আছে আরেকটা পুতুল। অফিসে নিয়ে রেখেছি। একটা পুতুল চুরি হওয়ার পর ঘাবড়ে গেলেন মিস পেদ্রো, আরেকটাও চুরি হতে পারে। আমিই পরামর্শ দিয়েছি, আমার কাছে নিয়ে রাখার জন্যে, নিরাপদে থাকবে। কি ভুলো মন আমার, ভুলেই গিয়েছিলাম। ওই পুতুলটাও চায় হয়তো ব্যাটারা।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। দুটো পুতুল এক করলে হয়তো গুপ্তধনের খোঁজ মিলবে, সে-জন্যে চায়।
হ্যাঁ, হতে পারে। কিন্তু জানল কি করে, আরেকটা পুতুল আমার কাছে?
আপনাকে নিতে দেখেছে হয়তো।
অসম্ভব। বাক্সে ভরে পকেটে ঢুকিয়ে তারপর বেরিয়েছি। অফিসে লুকিয়ে রাখার আগেও আশেপাশে ভালমত দেখে নিয়েছি, কেউ ছিল না।
আপনার সহকারীরাও না?
না। আর ওরা দেখলেও কিছু হত না, খুব বিশ্বাসী অনেকদিন ধরে আছে। আমার সঙ্গে, আমাকে গুরু মানে।
নিচের ঠোঁট কামড়ালো কিশোর। মিস পেদ্রো জানেন…।
তাতে কি? বাধা দিল ডাংম্যান। উনি চোরের সঙ্গে হাত মেলাননি। আর গুপ্তধন চাইলে আগেও তো অনেক সুযোগ ছিল, দুটো পুতুলই অনেক বছর ছিল তাঁর কাছে। শুধু মিস পেদ্রো আর টনি…
টনি! ডাংম্যানের কথায়ও বাধা দিল কিশোর। সে-ও তো জানে।
হাঁ হয়ে গেল ডাংম্যানের মুখ, চোয়াল ঝুলে পড়ল, ধীরে ধীরে আবার বন্ধ হলো ফাঁক। কিশোর-মিস পেদ্রো:টনি কোন কিছুতে জড়ালে বেচারী খুবই দুঃখ পাবেন, শেষ হয়ে যাবেন!
রবিন আর মুসা যখন পুতুলটা পায়, টনি তখন গেটের কাছে ছিল। গতরাতেও অন্ধকারে এস্টেটের মধ্যে ঘুরঘুর করছিল। কতদিন থেকে চেনেন ওকে, মিস্টার ডাংম্যান?
খুব বেশি দিন না। ইংল্যাণ্ডে পরিচয় হয়েছে, এখানে আসার জন্যে রওনা হয়েছে তখন সে। আমিও লস অ্যাঞ্জেলেসে আসছিলাম। টনিই বলেছে, তার দাদী নিরামিষভোজী, অনেক আগে থেকেই। তাই প্রথমেই এসে তার সঙ্গে দেখা করলাম, থামল ডাংম্যান। গভীর। চলো, টনির সঙ্গে কথা বলা দরকার। তার দাদীকে পরে জানাব।
বুনো পথ ধরে ফিরে চলল আবার দুজনে। খুব জোরে ছুটতে পারে লোকটা, তাল রাখতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে কিশোর।
ট্রাকে মাল বোঝাই শেষ হয়নি। গলদঘর্ম হয়ে উঠেছেন রাশেদ পাশা আর বোরিস। কোথায় গিয়েছিলি? জিজ্ঞেস করলেন রাশেদ পাশা।
এই, একটু ঘুরে দেখতে, বলে কিশোরও এসে হাত লাগাল। তবে কাজে বিশেষ মন নেই, বার বার তাকাচ্ছে বাড়ির সদর দরজার দিকে। ডাংম্যান গেছে টনির সঙ্গে কথা বলতে, কেউই বেরোচ্ছে না।
অবশেষে বেরোল ডাংম্যান। কাছে এসে বলল, টনি গাড়ি নিয়ে কোথায় যেন গেছে। আমি অফিসে যাচ্ছি।
টনি আপনার অফিসে গেলে চোখে পড়বে, জানাল কিশোর। রবিন আর মুসা আছে ওখানে।
বরফ হয়ে গেল যেন ডাংম্যান। কী?
লোকদুটোর ওপর চোখ রাখতে পাঠিয়েছি ওদের।
কিশোর। চেঁচিয়ে উঠল নিরামিষভোজী, চেহারা ফ্যাকাসে, আমার সেফে আরেকটা পুতুল রয়েছে। ভীষণ বিপদে পড়বে ওরা। এখুনি যাচ্ছি আমি। তোমার চাচার বোধহয় হয়ে গেল। রকি বীচে ফিরেই পুলিশের কাছে যাবে।
গাড়ির দিকে ছুটল ডাংম্যান।
১৩
লাঞ্চ শেষে ইয়ার্ডে ফিরে হেডকোয়ার্টারে ঢুকল আবার রবিন আর মুসা। ফোনধরার যন্ত্রটা দেখল। না, কোন মেসেজ কোড করা নেই, কেউ ফোন করেনি তাদের অবর্তমানে। বেরিয়ে এসে ভেজিট্যারিয়ান লীগ-এ রওনা হলো দুজনে।
খুব সতর্ক রয়েছে ওরা। লোক দুটোকে চোখে পড়ল না। কোন নড়াচড়া, কোন রকম সাড়া নেই গথিক-বাড়িটার ভেতরে বাইরে। ডাংম্যানের গাড়িটা নেই। সদর দরজা তালাবন্ধ।
এস্টেটে গেছে, অনুমান করল মুসা।
তাহলে কিশোরের সঙ্গে দেখা হবে। আমরা এখানেই থাকি। লোকগুলো আসতে পারে।
ভেজিট্যারিয়ান লীগের উল্টোধারে দুটো বাড়ির মাঝে সরু একটা গলি। ওখানে সাইকেল রেখে ঘাপটি মেরে থাকবে ঠিক করল দুই গোয়েন্দা। তা-ই করল। রুক্ষ পাহাড়ের দিকে চোখ। গরম রোদ পাঁউরুটির মত সেঁকছে যেন পাহাড়টাকে, বাতাসে বাস্পের অদ্ভুত ঝিলিমিলি। অনেক ওপরে ডানা মেলে ভাসছে একটা গলাছেলা ধাড়ী শকুন, পাক দিয়ে দিয়ে ঘুরছে।
কুৎসিত পাখিটাকে দেখে অস্বস্তিতে ভরে গেছে মুসা আমানের মন। আমাদের কথা ভাবছে না তো ইবলিস পাখিটা?
গালাগাল করছ কেন? খুব ভাল পাখি ওরা, প্রতিবাদ করল রবিন। পচা-গলা খেয়ে সাফ করে, জায়গা পরিষ্কার রাখে।
সেজন্যেই তো ভয়। আমিও তো পচতে পারি। আমি মরি, সেই দোয়া করছে কিনা এখন কে জানে? শকুনের দোয়ায় গরু মরে না মরে না করেও তো অনেক মরে।
কেমন যেন শুকনো, জমাট নীরবতা। গত এক ঘণ্টায় একটা গাড়িও যায়নি গরম সড়কটা ধরে। চুপ করে বসে থাকা আর সইল না মুসার, হাতের কাছে কয়েকটা ছোট পাথর দেখে ওগুলো নিয়ে খেলতে শুরু করল। আরও খানিক পর পা সোজা করল। ঝি ঝি ধরে গেছে। গুঙিয়ে উঠল, গোয়েন্দাগিরির এই একটা ব্যাপার মোটেই ভাল্লাগে না আমার। বসে থাকা আর থাকা।
কিশোর তো বলে খুব জরুরী কাজের একটা এটা, গোয়েন্দাদের জন্যে। কখনও কখনও এক জায়গায় হপ্তার পর হপ্তা নাকি কাটাতে হয়।
ওরকম বসে থাকার গোয়েন্দা হতে আমি চাই না, থ্যাংকু, হাত নাড়ল মুসা। চোরা-ব্যাটারা আবার এখানে আসবে এ-ধারণা হলো কেন কিশোরের?