কোডটা আরেকবার বলবে, কিশোর? অনুরোধ করল টনি।
ইন দা আই অভ দা স্কাই হোয়্যার নো ম্যান ক্যান ফাইও ইট।
মানে কি? হাত ওল্টাল টনি। আর এর সঙ্গে পুতুলের কি সম্পর্ক? আর ওই যে বললে, এস্টেটে কাদেরকে নাকি বন্দী করে রাখা হয়েছে?
জবাব দিতে গিয়েও থেমে গেল কিশোর। মিস পেদ্রো ডাকছেন।
টনি? দেখে যা তো। কোথায় গেলি?
সাড়া দিয়ে বেরিয়ে গেল টনি।
হাসি আমিও শুনেছি, স্যার, নিজের কানে, বলল কিশোর। আর পুতুলের সঙ্গে সম্পর্ক হলো, মেসেজ। ভেতরে একটা মেসেজ ছিল। আমি নিজে খুলেছি।
মেসেজ? পুতুলের ভেতর? অবাক মনে হলো ডাংম্যানকে।
বোধহয় সাহায্যের আবেদন। ওই বন্দিদেরই কেউ লিখেছে।
পুলিশকে জানিয়েছ? গভীর হলো ডাংম্যান।
না। গিয়ে কি বলব? পুলিশকে বিশ্বাস করাতে হলে প্রমাণ দরকার।
হুঁ, কিছু ভাবল ডাংম্যান। তুমি কখনও দেখেছ ছায়াটা?
কাল রাতে। টনির সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে, টনির ওপর জোর দিল কিশোর। চারটে বেঁটে লোক দেখেছি, মাথা ছিল না।
পাগল হয়ে গেল নাকি!
ছিল না, মানে দেখা যাচ্ছিল না। বোধহয় চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিয়েছিল।
কী? চেঁচিয়ে উঠল ডাংম্যান। চারজন বন্দী? এই এস্টেটের মধ্যে? মিস পেদ্রোর এলাকায়? তা কি করে হয়?
হাসল কিশোর। হয়েছে বলেই তো বলছি, স্যার। বন্দীদের রাখা হয়েছে একটা হানটিং লজে। চট করে দরজার দিকে তাকাল একবার সে, স্বর খাদে নামিয়ে জিজ্ঞেস করল, টনিকে কতদিন ধরে চেনেন?
টনি? বেশি দিন না তো, চোখ মিটমিট করছে ডাংম্যান। কেন? তাকে সন্দেহ করছ?
হ্যাঁ-না কিছুই বলল না কিশোর, শুধু হাসল।
ঘুরল ডাংম্যান। লম্বা পায়ে ডেস্কের কাছে গিয়ে টান দিয়ে ডয়ার খুলল। আবার যখন ফিরল, তার হাতে একটা পিস্তল।
১২
কঠিন হয়ে উঠেছে ডাংম্যানের চেহারা। শক্ত করে ধরে রেখেছে পিস্তল। বুনো পথ ধরে কিশোরের পিছু পিছু প্রায় ছুটে চলেছে শিকারীর বাংলোটার দিকে।
তোমার ধারণা, বলল ডাংম্যান, যারা পুতুল ছিনিয়ে নিয়েছে, তারাই আমাকে আক্রমণ করেছিল? তোমাদেরও তাড়া করেছিল?
কোন সন্দেহ নেই।
তাহলে ওরাই চারজনকে বন্দী করে রেখেছে। হুঁশিয়ার। বোঝা যাচ্ছে, লোক মোটেই সুবিধের না ওরা।
এতক্ষণ ওখানে আছে কিনা কে জানে। বিশেষ করে, ছায়াটা।
গেলেই দেখা যাবে। আমার মনে হয় না দুটো ছেলের ভয়ে পালাবে। কি করছে ওরা আসলে?
জানি না, স্বীকার করল কিশোর। যাদেরকে ধরে এনেছে, তারা হয়তো জানে গুপ্তধন কোথায় আছে। চাপ দিয়ে ওদের মুখ খোলাতে চাইছে হয়তো ভূতুড়ে ছায়ার মালিক।
হ্যাঁ, এটা হতে পারে। দেখি, হাতে-নাতে ধরতে পারি কিনা।
ঘন বনের ভেতর দিয়ে নিঃশব্দে এগিয়ে চলেছে ওরা। বাটি-আকৃতির উপত্যকার কাছে চলে এল। বাংলোর সামনে ট্রাকটা নেই। রাতের মতই দিনেও রহস্যময় দেখাচ্ছে বাড়িটা।
গাছের আড়ালে কিশোরকে চুপ করে বসে থাকার নির্দেশ দিল ডাংম্যান। গাছপালা আড়ালে আড়ালে নেমে যেতে শুরু করল ঢাল বেয়ে।
বাংলোটার দিকে চেয়ে আছে কিশোর। নির্জন, কোন সাড়া-শব্দ নেই। জানালাগুলোর খড়খড়ি খোলা, সামনের দরজাটাও। দেখে তার দৃঢ় ধারণা হলো, ভেতরে কেউ নেই।
কোন রকম ঝুঁকি নিল না ডাংম্যান। মাথা নিচু করে নিঃশব্দে পৌঁছে গেল উপত্যকার খোলা জায়গাটার ধরে। এক মুহূর্ত থেমে বাড়িটা দেখল। ডেকে বলতে চাইল কিশোর, গিয়ে লাভ হবে না। কিন্তু সে মুখ খোলার আগেই মাথা নিচু করে দৌড় দিল ডাংম্যান। হাতে উদ্যত পিস্তল।
জানালায় গিয়ে উঁকি দিল ডাংম্যান। ঘুরে চলে গেল খোলা দরজার কাছে। ভেতরে ঢুকল।
বসে আছে কিশোর। বাংলোর ভেতর থেকে খুটখাট আর নানা রকম শব্দ কানে আসছে। তারপর দরজায় বেরোল ডাংম্যান। হাতের ইশারায় কিশোরকে ডাকল।
উঠে দৌড় দিল কিশোর।
খালি, বলল নিরামিষভোজী। কেউ নেই। তবে ছিল, দেখো।
ছোট একটা পামাজা দেখাল সে, সাদা কাপড়। এ-রকম কাপড়ই পরে ছিল ওই বাদামী-চামড়ার লোক দুটো, যারা পুতুল ছিনিয়ে নিয়েছে, কিশোর আর রবিনকে পাহাড়ে তাড়া করেছে।
ইনডিয়ান পোশাকের মত লাগছে, বলল ডাংম্যান। তোমার বাদামীরা এখানে এসেছিল মনে হচ্ছে। ট্রাকটাও ঠিকই দেখেছ। পথে তেলের দাগ দেখেছি। শুকিয়ে গেছে। তারমানে ট্রাকটা গেছে যে, অনেকক্ষণ।
কোথায় গেছে আন্দাজ করতে পারেন?
কি করে বলি? চলো, আরেকবার দেখি। কিছু বোঝো কিনা দেখো।
বাংলোয় ঢুকল দুজনে।
খুঁটিয়ে দেখছে কিশোর। তাড়াহুড়ো করে পালিয়েছে লোকগুলো। মদের খালি বোতল পড়ে আছে টেবিলে। প্লেটের অবশিষ্ট খাবার শুকিয়ে মড়মড়ে হয়ে গেছে। সব কিছু নোংরা। কিন্তু ওসব দেখে লোকগুলো কোথায় গেছে অনুমান করার উপায় নেই।
নাহ, এখানে কিছু নেই, বলল সে। এস্টেটের অন্য কোথাও গিয়ে লুকিয়েছে হয়তো।
তাহলে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অনেক বড় এলাকা এটা, পাহাড়-পর্বতের মধ্যে লুকালে কে খুঁজে বের করবে? তবে ওদের প্ল্যান বরবাদ করে দিয়েছ তুমি। ভয় পেয়ে পালিয়েছে।
আমার মনে হয় না, মাথা নাড়ল কিশোর। এত সহজে ভয় পাওয়ার লোক ওরা নয়। আজও আমাকে আর রবিনকে তাড়া করেছিল, আপনার অফিস থেকে বেরোনোর পর।
তাড়া করেছিল? আমার বাড়ির কাছে? বিশ্বাস করতে পারছে না যেন ডাংম্যান। আর কি চায় তোমাদের কাছে?
আমাদের কাছে চায় না, চায় আপনার কাছে।