যাব, চাচী। তুমি যাও, আমি এক্ষুণি আসছি।
তাড়াতাড়ি আয়, বলে অফিসের দিকে চলে গেলেন মেরিচাচী।
দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে হেডকোয়ার্টারে ঢুকল দুই গোয়েন্দা।
দেখেই হাঁ হাঁ করে উঠল মুসা। কি ব্যাপার, লাইন কাটলে কেন? জরুরী খবর ছিল; দুটো ছেলে লা পামা স্ট্রীটে গাড়িটা দেখেছে। লোক দুটোকেও। খানিক পর
আবার ফোন করে বলল, লোকগুলো নাকি দুই জন কিশোরকে তাড়া করেছে।
জানি, মুখ বাকাল রবিন। আমরাই।
সংক্ষেপে সব বলল কিশোর।
খাইছে! শুনে চেঁচিয়ে উঠল মুসা। বড় বাঁচা বেঁচেছ।
এখন কথা হলো, বলল কিশোর, গথিক-বাড়িটার কাছে ঘোরাঘুরি করেছে কেন ওই দুজন? ডাংম্যানকে আবার আক্রমণ করার সুযোগ খুঁজছে? এস্টেটে গিয়ে হুঁশিয়ার করব।
তোমরা যাওয়ার আগেই যদি আবার অফিসে ফিরে যায়? রবিন বলল।
যেতে পারে। সেজন্যেই তোমাদের গিয়ে ওখানে বসে থাকা দরকার।
আমি এখন পারব না, সাফ মানা করল মুসা। পেটে আগুন জ্বলছে।
আমারও, রবিন বলল।
তাহলে লাঞ্চ সেরেই যাও। লোক দুটো এলে ওদের ওপরও চোখ রাখবে।
কিন্তু কিশোর, এইমাত্র ওদের হাত থেকে বেঁচে ফিরলাম। আবার দেখলে…
আর কোন উপায় নেই, চিন্তিত শোনাল গোয়েন্দাপ্রধানের কণ্ঠ। ওদের ওপর চোখ রাখলে মূল্যবান সূত্র পাওয়ার আশা আছে। খুব সাবধানে। তোমাদের যেন দেখে না ফেলে।
সেটা আর বলে দিতে হবে না, কাজটা বিশেষ পছন্দ হচ্ছে না মুসার।
কি ভাবছ? কিশোরকে জিজ্ঞেস করল রবিন। ওরা সত্যি ইয়াকুয়ালি?
তাই তো মনে হয়। কোনভাবে হয়তো চাম্যাশ হোর্ডের খবর জেনেছে। আমার ধারণা, ম্যাগনাস ভারদির মেসেজের মানে ওরা বুঝতে পারবে।
জিভ দিয়ে বিচিত্র শব্দ করল মুসা। ইস, আমরাও যদি পারতাম।
হ্যাঁ, পারলে ভাল হত, একমত হলো কিশোর। ইন দা আই অভ দা স্কাই হোয়্যার নো ম্যান ক্যান ফাইও ইট, কথাটার মধ্যেই রয়েছে জবাব। দেখি, পরে ভেবে মানে বোঝার চেষ্টা করব।
মেরিচাচীর ডাক শোনা গেল। কিশোর? কি হলো? আবার গিয়ে ঢুকেছিস?
যা বললাম, মনে থাকে যেন, তাড়াতাড়ি বলল কিশোর। ডাংম্যানকে হুঁশিয়ার করবে। লোকগুলো এলে তাদের ওপর চোখ রাখবে, বাড়িটার কাছে ঘুরঘুর করছে কেন, বোঝার চেষ্টা করবে। আমি যাই।
রবিন আর মুসা দুজনেই মাথা নাড়ল।
বেরিয়ে এল কিশোর।
বড় ট্রাকটা বের করা হয়েছে। ড্রাইভিং সিটে বোরিস, তার পাশে রাদেশচাচা।
রকি বীচ থেকে বেরিয়ে এসেছে ট্রাক। আঁকাবাঁকা গিরিপথ ধরে ছুটছে। এস্টেটে পৌঁছতে বেশিক্ষণ লাগল না।
গেট খোলা। ট্রাক নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল বোরিস। ভাড়ারের কাছে এসে থামল।
কেবিন থেকে লাফ দিয়ে নামল কিশোর। তার পরেই রাশেদ পাশা। উত্তেজিত দেখাচ্ছে। পুরানো মাল কিনতে এলে ওরকম হয় তার। জঞ্জালের ভেতর থেকে পছন্দসই জিনিস খুঁজে বের করতে ভাল লাগে।
বড় বাড়িটা থেকে বেরোলেন মিস পেদ্রো। হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। আপনিই মিস্টার প্যাশা। খুশি হলাম। আপনার ভাতিজা তো কাল পছন্দ করে গেছে। দেখুন আপনার পছন্দ হয় কিনা। অনেক দিন পড়ে ছিল, অনেক জিনিসই নষ্ট হয়ে গেছে।
কিশোরের পছন্দ হলে আমারও হবে, আশ্বাস দিলেন রাশেদ পাশা। মস্ত গোফে পাক দিলেন। সত্যি বিক্রি করবেন তো? দাম তেমন না পেলেও?
আমি তো ফেলেই দিতে চেয়েছিলাম। টনি বোঝাল, যা পাওয়া যায় তাই লাভ। ভেবে দেখলাম, ঠিকই বলেছে। আজকাল তো একটা সুতোও পয়সা ছাড়া মেলে না। টনি এসে আমার সব ওলট-পালট করে দিচ্ছে। ভাবছি, আবার ঠিকঠাক করে নেব এস্টেটটা।
যাই, মাল দেখি, বললেন রাশেদ পাশা। আপনি আসবেন?
চলুন, হেসে বললেন মিস পেদ্রো।
সবার পেছনে রইল কিশোর। রাশেদচাচাকে নিয়ে মিস পেদ্রো ভাড়ারে। ঢুকলেন, পেছনে গেল বোরিস। ব্যস, চোখের পলকে ঘুরে বাড়ির দিকে ছুটল কিশোর।
দেখা হয়ে গেল টনির সঙ্গে। কিছু তদন্ত করতে এসেছ?
তদন্ত ঠিক নয়, বলল কিশোর। আসলে, মিস্টার ডাংম্যানের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
লাইব্রেরিতে। কিশোরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে এল টনি।
খবরের কাগজ পড়ছিল ডাংম্যান। কিশোরকে দেখে প্রায় ছুটে এল। কাল রাতে তোমরা এসেছিলে, টনি বলেছে আমাকে। তোমাদের চোর ভেবেছি, কিছু মনে রেখো না। লোভ দেখিয়ে পুতুলটা তোমাদের কাছ থেকে বের করার জন্যেই পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
বুঝতে পেরেছি, স্যার, শান্ত কণ্ঠে বলল কিশোর।
গুড। ঠিক করে বলো তো, পুতুলটা কি হয়েছে?
পুতুলটা কি ভাবে পেয়েছে মুসা আর রবিন, সেখান থেকে শুরু করল কিশোর। চুপচাপ শুনছে ডাংম্যান, মাঝে মাঝে ভ্রুকুটি করছে শুধু।
ভূতুড়ে হাসির কথা কিশোর বলতেই চেঁচিয়ে উঠল টনি, একটা ছায়া তো? পাগলের মত হাসে? আমিও শুনেছি কাল রাতে। অদ্ভুত হাসি।
টনির কথায় কান দিল না ডাংম্যান। ঠিক শুনেছ তো, কিশোর? মানে, বাতাসের শব্দ-টক হয়? কিংবা কল্পনা?
না। এই এস্টেটের মধ্যেই রয়েছে কোথাও ভূতটা। কয়েকজনকে বন্দী করে রেখেছে।
বন্দী? কি বলছ! চোখমুখ বিকৃত করে ফেলেছে টনি।
কে কাকে বন্দী করল। কি বলছ, কিছুই তো বুঝছি না। কেন এসব করবে?
চাম্যাশ হোর্ডের জন্যে। আমি শিওর।
কী?
গুপ্তধন। সোনার সুপ! খুলে বলল কিশোর।
আই সী, বিড়বিড় করল ডাংম্যান। বিশ্বাস করা শক্ত। তাহলে তোমার বিশ্বাস, ডাকাতেরা ওই সোনার পিছে লেগেছে? বিপদের কথা। কয়েকটা বাচ্চাকে ঢোকালাম এসবের মধ্যে।