অনেক সময় মেঘ ওরকম দেখায়।
আমার মনে হয় সূর্য, রবিন বলল।
মাথা নোয়াল কিশোর। আমারও তাই মনে হয়। চাঁদও হতে পারে। রূপকথার বইতে, ছবিতে চাঁদ আর সূর্যকে মানুষের মুখের মত করে আঁকে অনেকে।
তাহলে কি চাঁদে গিয়ে গুপ্তধন লুকিয়েছে নাকি? প্রশ্ন তুলল মুসা।
না, তা নয়। তবে এমন কোন জায়গা হয়তো বেছে নিয়েছে, যেখানে সব সময় চাঁদ আর সূর্যের আলো পড়ে। প্রাচীন অনেক মন্দির এমনভাবে তৈরি হয়েছে, সব সময় রোদ পড়ে ওগুলোতে।
হ্যাঁ, সায় দিল রবিন। কিছু কিছু মন্দির তো আছে, ওপরের দিক খোলা, সেখান দিয়ে রোদ কিংবা জ্যোৎস্না এসে পড়ে মঞ্চের ওপর।
তাহলে কি ওরকম কোন জায়গা খুঁজতে হবে?
কোথায় খুঁজব? হঠাৎ উজ্জল হলো কিশোরের মুখ। ম্যাগনাস ভারদি অন্য কিছুওঁ বুঝিয়ে থাকতে পারে। কোন গিরিখাত, গিরিপথ বা উপত্যকার কথাও বোঝাতে পারে, যেখান থেকে চাঁদ কিংবা সূর্যকে দেখতে চোখের মত লাগে। কি মুসা, এমন কোন জায়গা চেনো?
কোত্থেকে চিনব? আমার চোখে তো পড়েনি। আর সান্তা মনিকা তো ছোট পর্বত না, সবটাতেই নাকি ঘুরেছিল ভারদির ডাকাতের দল। কোন জায়গা থেকে চাঁদ-সুরুজকে চোখের মত লেগেছে ব্যাটাদের, ওরাই জানে,
হ্যাঁ, মুসার সঙ্গে একমত হলো রবিন। তাছাড়া ভারদি বলেছে, গুপ্তধন কেউ খুঁজে পাবে না, এমন জায়গায়ই রেখেছে।
আমার তা মনে হয় না, বলল কিশোর। নিশ্চয় ব্যাপারটাকে ধাধা বানিয়ে রেখে গেছে ভারদি। বাদামী লোকটা পুতুল দিয়ে কি করবে যদি খালি একথাটা জানতে পারতাম, অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যেত।
ও-মা, কিশোর, ভুলেই গিয়েছি! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। মিস্টার ডাংম্যানকে আক্রমণ করেছিল ওরা।
খুলে বলল সব।
লাফিয়ে উঠল কিশোর। এক্ষুণি মিস্টার ডাংম্যানের কাছে যাওয়া দরকার। জরুরী কিছু হয়তো জানতে পারব। না দুজন নয়, একজন এসো আমার সঙ্গে। আরেকজন থাকো ফোনের কাছে। কে থাকবে?
গতরাতে মুসা গেছে, আজ আমি যাব, বলল রবিন। বেকুব হয়ে সারাক্ষণ একা এখানে বসে থাকতে পারব না।
যাও, খুশি হয়েই বলল মুসা, কাঁটায় লেগে ছড়ে যাওয়া একটা জায়গায় হাত বোলাচ্ছে। আমি আছি।
মুসা, কিশোর বলল, ওয়াকি-টকি নিয়ে যাচ্ছি। ভূত-থেকে-ভূতের কোন খবর এলে সঙ্গে সঙ্গে জানাবে।
ফোন করে ভেজিট্যারিয়ান লীগের ঠিকানা জেনে নিয়ে হেডকোয়ার্টার থেকে বেরোল কিশোর আর রবিন। সাইকেল নিয়ে একটা গোপন পথ দিয়ে ওয়ার্কশপ থেকে বেরোল, মেরিচাচীর চোখে যাতে না পড়ে সেজন্যে এই সতর্কতা।
দশ মিনিটেই বাড়িটা খুঁজে বের করে ফেলল ওরা। শহরের এক প্রান্তে লা পামা স্ট্রীটের শেষ মাথায় ব্লকের মস্ত গথিক-স্টাইলে বানানো পুরানো বাড়িটাকে হেডকোয়ার্টার করেছে ভেজিট্যারিয়ান লীগ। শুকনো বাদামী পাহাড়ের ঢাল নেমে এসে মিশেছে পথের সঙ্গে। পর পর কয়েকটা ব্লকের পেছন দিয়ে আরেকটা সরু পথ চলে গেছে, তার কিনারে সব কটা বাড়ির গ্যারেজ।
গথিক-বাড়ির গেটের কাছে সাইকেল রাখল দুই গোয়েন্দা। সদর দরজায় এসে বেল বাজাল। বেটে তাগড়া এক লোক দরজা খুলে দিল।
মিস্টার ডাংম্যান আছেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ও, তোমরা? লোকটার পেছন থেকে উঁকি দিল ডাংম্যান। এসো, এসো। ল্যাঙলী, সরো, ওদের আমি চিনি। গোয়েন্দাদের দিকে চেয়ে বলল, এত তাড়াতাড়ি আসবে ভাবিনি কিন্তু? লীগে যোগ দিতে এসেছ তো?
বেঁটে লোকটা গিয়ে কাজে লাগল আবার। আবছা আলোকিত হলঘরে অগোছাল হয়ে রয়েছে কিছু বাক্স, ওগুলোই গোছাচ্ছিল বোধহয়, ঘণ্টা শুনে দরজা খুলতে এসেছে।
বিনীত গলায় বলল কিশোর, না, স্যার, এত তাড়াতাড়ি নিরামিষ ধরার ইচ্ছে নেই। আপনার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।
কথা? বেশ, অফিসে এসো। সব অগোছাল হয়ে আছে, দেখেশুনে পা ফেলো। তোমরা লীগে যোগ দিলে খুব খুশি হতাম, অনেক সাহায্য করতে পারতে।
বাক্স, বই, ফাইলিং কেবিনেট, গাদা গাদা বিজ্ঞাপন আর পোস্টার ছড়িয়ে রয়েছে সারা ঘরে, ওগুলোর মাঝ দিয়ে সাবধানে পা ফেলছে ওরা।
ওক কাঠের ভারি দরজা খুলে বড় অরেকটা রোদে-উজ্জল ঘরে ছেলেদের নিয়ে এল ডাংম্যান, এটাই অফিস। প্রাচীন একটা ডেস্কে বসে দুটো প্রাগৈতিহাসিক চেয়ার দেখিয়ে মেহমানদের বসতে বলল।
বলো, কি বলতে এসেছ?
শুনলাম, আপনাকে নাকি মারতে চেয়েছিল? বলল কিশোর।
আর বোলো না, পাগল। বদ্ধ উন্মাদ। দুই জন। এমন হঠাৎ করে মঞ্চে লাফিয়ে উঠল। বক্তৃতা দিচ্ছিলাম তখন। কোন মতে নিজেকে বাঁচিয়েছি। ঠেলাঠেলি, হই-চই জুড়ে দিল মেম্বাররা, পুলিশ ডাকতে গেল, অথচ দুজনকে ধরার কথা মনে এল না কারও। পালাল।
আক্রমণ করেছিল কেন, স্যার? জিজ্ঞেস করল রবিন।
জানি না।
কিছু বলেছে? কিশোর প্রশ্ন করল।
বলেছে, তবে ইংরেজি নয়। অনেক চেঁচামেচি, বকবক করেছে, কি বলেছে ওরাই জানে। একটাকে জাপটে ধরেছিলাম, কিন্তু রাখতে পারলাম না, ঝাড়া দিয়ে ছুটে গেল। পুলিশ আসার আগেই পালাল দুব্যাটা। হয়তো ফ্যানাটিক হবে, নিরামিষভোজীদের দেখতে পারে না। ও-রকম অনেকের পাল্লায় পড়েছি আগেও। কত রকম লোক যে আছে দুনিয়ায়। মতের মিল হলো না, ব্যস, ধরে মারো ব্যাটাকে, এমন অনেক আছে।
জানি। তবে ওদের দুজনের কথা যা শুনলাম, ফ্যানটিক মনে হচ্ছে না।
অবাক হলো ডাংম্যান। নয়? তাহলে কেন মারতে এল? তোমরা অন্য কিছু ভাবছ, অন্য কারণ?