তুমি ভেবেছিলে আমরা চুরি করেছি, ঝাঁঝাল মুসার কণ্ঠ।
যা, স্বীকার করল টনি, কিছু মনে করো না। মিস্টার ডাংম্যানকে সে-কথাও বলেছি। সে বলল, তা না-ও হতে পারে। চোর হয়তো তাড়াহুড়োয় পুতুলটা গেটের কাছে ফেলে গেছে, তোমরা কুড়িয়ে পেয়েছ। তাই ঠিক করলাম, পুরস্কার ঘঘাষণা করে পুতুল ফেরত দেয়ার সুযোগ করে দেব তোমাদের।
ওসব ঝামেলা না করে, বলল কিশোর, খোলাখুলি বললেই ভাল করতে।
ওই যে, মিস্টার ডাংম্যান বলল, তোমরা চোর না-ও হতে পারো।
কুড়িয়ে পেয়েছি কিনা, সেটাও তো জিজ্ঞেস করতে পারতে?
সেটাও আলোচনা করেছি আমরা। মিস্টার ডাংম্যান বলল, তোমরা স্বীকার করবে না। ভয় দেখালে কোন দিনই আর দেবে না পুতুলটা।
তাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, আনমনে বলল কিশোর। পুরস্কার ঘোষণা করালে। এমন ভাব দেখালে, যেন জানোই না পুতুলটা আমাদের কাছে আছে।
হ্যাঁ। এখন তো সব খোলাখুলি হয়ে গেল। দিয়ে দাও না ওটা। তুমিই তো পেয়েছ?
রবিন আর মুসা পেয়েছিল।
পেয়েছিল?
হ্যাঁ। হারিয়েছি আবার। সকালে বাদামী চামড়ার এক লোক কেড়ে নিয়ে গেছে।
মাথা নাড়ল কিশোর। না, ফেরত পাওয়ার সুযোগ এখনও আছে। লোকটাকে খুঁজে বের করতে পারলেই…
শব্দ করে হাসল টনি। আমার সাহায্য নেবে? তোমাদের সঙ্গে কাজ করতে খুব ভাল লাগবে আমার।
হ্যাঁ, একটা সাহায্যই করতে পারো, বলল কিশোর। চোখ খোলা রাখো, এস্টেটে কারা আসে যায় খেয়াল রাখো।
ঠিক আছে।
এখন আমাদের বাড়ি যাওয়া দরকার। দেরি হয়ে গেছে।
গেট দিয়ে ওদের বের করে দিল টনি।
অন্ধকার গিরিপথ ধরে সাইকেল চালিয়ে চলল দুই গোয়েন্দা।
কিশোর, একসময় জিজ্ঞেস করল মুসা, আমরা যে ভূত দেখেছি, টনিকে বললে না কেন?
ওকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার ধারণা, কিছু একটা গোপন করছে।
৯
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামল রবিন। তাড়াহুড়ো করে কাপড় পরে নিচতলায় নামল। বাবা-মা ওঠেননি। তাদের দরজায় টোকা দিয়ে ডেকে বলল, মা, আমার নাস্তা খেয়ে নিচ্ছি।
মায়ের ঘুমজড়ানো কণ্ঠ শোনা গেল, ঠিক আছে। কোথায় যাবি?
ইয়ার্ডে।
জানালা দিয়ে রোদ ঢুকছে রান্নাঘরে। রুটি, ভাজা ঠাণ্ডা ডিম আর এক গ্লাস কমলার রস দিয়ে নাস্তা শেষ করে এসে মুসাকে ফোন করল রবিন।
মুসার মা জানালেন মুসা বেরিয়ে গেছে।
ঘর থেকে ছুটে বেরোল রবিন।
ইয়ার্ডে ঢুকেই পড়ে গেল মেরিচাচীর সামনে।
এই যে, একটাকে অন্তত পাওয়া গেল, বলে উঠলেন তিনি। অন্য দুটোকে ডাকাডাকি করলাম, জওয়াবই নেই। পালিয়েছে বোধহয় ভোররাতেই। রবিন, কিশোরকে বলো, আজ তার চাচার সঙ্গে এস্টেটে যেতে হবে।
বলব, আন্টি।
মেরিচাচী অফিসে গিয়ে ঢোকার পর পা বাড়াল রবিন, ওয়ার্কশপের দিকে। দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢুকল হেডকোয়ার্টারে।
মুসা আর কিশোর দুজনেই আছে।
মেরিচাচী কি বললেন? ভুরু নাচাল মুসা।
জানাল রবিন। গম্ভীর হয়ে থাকা কিশোরকে জিজ্ঞেস করল, ভূত-থেকে-ভূতের কি খবর?
মাথা নাড়ল শুধু কিশোর, মুহূর্তের জন্যে চোখ সরাচ্ছে না টেলিফোনের ওপর থেকে।
কাল রাতে কি জেনেছি, জানো? কথা আর পেটে রাখতে পারছে না রবিন।
আমরা কি দেখেছি, শোনো আগে, মুসার অবস্থাও রবিনের মতই। হড়হড় করে উগড়ে দিতে আরম্ভ করল সে। শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেল রবিনের।
নিশ্চই মাথা আছে ওদের, মুসা বামনদের কথায় আসতেই বলল কিশোর। তবে দেখা যায়নি। মরুকগে ব্যাটারা। আমি ভাবছি, ভূত-থেকে ভূতের কি অবস্থা? খবর-টবর আসে না কেন? ওই বাদামী লোকদুটোই সমস্ত রহস্যের চাবিকাঠি, কিন্তু কোথায় ওরা? হ্যাঁ, রবিন, চাম্যাশ হোর্ডের কথা কি জেনেছ কাল?
এখানকার লোকাল হিস্টরি বইতে ব্যাপারটা নিয়ে বেশ ফোলানো-ফাপানো হয়েছে, জানাল রবিন। ডাকাতের দলটা মারা পড়তেই গুপ্তধন খুঁজতে বেরিয়েছিল লোকে, দলে দলে। অনেক দিন ধরে অনেক ভাবে খুঁজেছে, পায়নি। ডাকাতেরা পুরো পর্বত জুড়ে ছড়িয়ে ছিল, একেক দিন একেক জায়গায় সরে যেত। পেদ্রোজ এস্টেটেও গিয়ে লুকিয়েছিল একবার। গুপ্তধনগুলো কোথায় আছে, আন্দাজই করতে পারেনি কেউ।
অ্যামিউলেট দুটোর খবর কি? জিজ্ঞেস করল মুসা। আর মিস ভেরা পেদ্রোর ভাইয়ের নাম?
মিস পেদ্রোর ভাইয়ের নাম ছিল ফিয়ারতো, খুনী। একটা লোককে খুন করে ফেরারী হয়েছিল। অবাকই লাগে, যে লোকটাকে খুন করেছিল, সে ছিল শিকারী, থাকত এস্টেটের হানটিং লজে। কেউ জানে না, কেন তাকে খুন করেছে ফিয়ারতো। অ্যামিউলেট দুটোর কোন কথাই লেখা নেই বইতে। একবার উল্লেখও করা হয়নি।
নিচের ঠোঁটে কামড়ে ধরল কিশোর। আচ্ছা, ম্যাগনাস ভারদি মরার আগে ঠিক কি বলেছিল, বলো তো।
চারটে বইতে তিন রকম লিখেছে, নোটবই বের করল রবিন। একটাতে লিখেছে, হোয়াট ম্যান ক্যান ফাইণ্ড দা আই অভ দা স্কাই? আরেক লেখক বলছেন, দা স্কাইজ আইজ ফাইণ্ড নো ম্যান। অন্য দুটো বইতে একরকম কথা, ইট ইজ ইন দা আইজ অভ দা স্কাই হোয়্যার নো ম্যান ক্যান ফাইও ইট। চাম্যাশ ভাষা থেকে অনুবাদ করতে গিয়েই গড়বড় করে ফেলেছে মনে হয়।
খুব বেশি গোলমাল করেনি, বলল কিশোর। আই অভ দা স্কাই কথাটা সবাই বলছে।
কিন্তু, কিশোর, মুসা বলল, আই অভ দা স্কাইয়ের মানে কি?
আকাশে কি জিনিস আছে, যা দেখতে চোখের মত? পাল্টা প্রশ্ন করল কিশোর।